ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাকশিল্প

দেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে করোনাকালীন বিপর্যয় পেছনে ফেলে। পোশাক খাত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী প্রণোদনা প্যাকেজ এ ক্ষেত্রে জাদুকরী প্রভাব বিস্তার করেছে। উদ্যোক্তাদের আশাবাদ করোনা-পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক খাত যে লাভবান হবে এমন আলামতও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ক্রেতারা চীনের বদলে বিকল্প অন্যান্য দেশের দিকে দৃষ্টি দেয়ায় লাভবান হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ।

করোনাভাইরাসকালে অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার পর বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছেন। ভোক্তাদের আস্থা ধরে রাখতে পারলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে পোশাক শিল্প মালিকরা যাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে না ওঠেন সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। মহামারী করোনাভাইরাস শুরুর পর অচলাবস্থা কাটিয়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এপ্রিলের তুলনায় আগস্টে অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে। যদিও আগস্টে ঈদসহ বেশ কিছুদিন ছুটির কারণে কর্মদিবস কম ছিল। উদ্যোক্তাদের মতে, পোশাক শিল্পের সামনের দিনে আপাতদৃষ্টিতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

করোনা মহামারী মোকাবিলা করে ইউরোপের দেশগুলো যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। ফলে জুলাই ও আগস্টের ইতিবাচক পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে কিনা তা দেখার বিষয়। পোশাক খাতে গত আগস্টের অগ্রগতি আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প। করোনাভাইরাস-পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে চীনকে এড়ানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে যেসব অর্ডার চীনে যাওয়ার কথা তার একাংশ যাবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোয়। এর ফলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশও লাভবান হবে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ৪০ লাখ মানুষ কর্মরত। দেশের রফতানি বাণিজ্যের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। এ খাতের সমৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে লাভবান করবে। করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেও তা অনুপ্রেরণা জোগাবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব বিশ্বখ্যাত নামি-দামি ব্র্যান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত অথবা কমিয়ে দিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে। পুরনো ক্রয়াদেশ দিচ্ছে নতুন করে। এমনকি নতুন ক্রয়াদেশও দিচ্ছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্থগিত রফতানি আদেশের অন্তত ৮০ শতাংশই ফিরে এসেছে। নতুন ক্রয়াদেশও আসছে নতুন নতুন দেশ থেকে। যেমন- চীন ও তুরস্ক থেকে যেসব ক্রয়াদেশ সরে গেছে করোনার কারণে তারও একটি বড় অংশ আসছে বাংলাদেশে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, করোনায় ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতে ক্ষতি হয়েছিল কমপক্ষে ৩১৮ কোটি ডলার। এখন আবার সেসব ক্রয়াদেশ আসছে অথবা পথে রয়েছে। তাতে ক্ষতি পুষিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত। অন্তত চলতি বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত শুভ বড়দিন ও খ্রিস্ট নববর্ষ উপলক্ষে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে সুনিশ্চিত আশা করা যেতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে সরকারের স্বল্প সুদে রফতানিকারকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলও যথেষ্ট সহায়তা করেছে। সুতরাং পোশাক শিল্পে আর শ্রমিক ছাঁটাই নয়। বেতন-ভাতা পরিশোধে গড়িমসিও নয় প্রত্যাশিত।

বৈশ্বিক অর্থনীতি করোনার কারণে বাধাপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের পোশাক খাত ও চামড়া শিল্পের কিছুটা ক্ষতি হয় কতিপয় দেশ ক্রয়াদেশ বাতিল করায়। তবে এর পরিমাণ উদ্বেগজনক পর্যায়ের ছিল না। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেছে যে, তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করবে না। অন্যদিকে মার্কিন মুলুকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে নতুন তৈরি পোশাক পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ইত্যাদি রফতানি শুরু করেছে। অন্যদিকে করোনার উৎসস্থল চীনকে নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কিছু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অস্বস্তি থাকার কারণে অন্যকিছু দেশের কার্যাদেশও চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। আসছেও। কেননা, বাংলাদেশে শ্রমমজুরি সস্তা ও সাশ্রয়ী এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। এর পাশাপাশি স্বল্প সুদে শিল্পঋণ সুবিধা তো আছেই। পোশাক শিল্প মালিকরা এর সর্বোত্তম ব্যবহার করবেন বলেই প্রত্যাশা।

আরকে চৌধুরী

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাকশিল্প

দেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে করোনাকালীন বিপর্যয় পেছনে ফেলে। পোশাক খাত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী প্রণোদনা প্যাকেজ এ ক্ষেত্রে জাদুকরী প্রভাব বিস্তার করেছে। উদ্যোক্তাদের আশাবাদ করোনা-পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক খাত যে লাভবান হবে এমন আলামতও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ক্রেতারা চীনের বদলে বিকল্প অন্যান্য দেশের দিকে দৃষ্টি দেয়ায় লাভবান হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ।

করোনাভাইরাসকালে অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার পর বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সাড়া দিচ্ছেন। ভোক্তাদের আস্থা ধরে রাখতে পারলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে পোশাক শিল্প মালিকরা যাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে না ওঠেন সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। মহামারী করোনাভাইরাস শুরুর পর অচলাবস্থা কাটিয়ে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এপ্রিলের তুলনায় আগস্টে অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে। যদিও আগস্টে ঈদসহ বেশ কিছুদিন ছুটির কারণে কর্মদিবস কম ছিল। উদ্যোক্তাদের মতে, পোশাক শিল্পের সামনের দিনে আপাতদৃষ্টিতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

করোনা মহামারী মোকাবিলা করে ইউরোপের দেশগুলো যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। ফলে জুলাই ও আগস্টের ইতিবাচক পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে কিনা তা দেখার বিষয়। পোশাক খাতে গত আগস্টের অগ্রগতি আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প। করোনাভাইরাস-পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে চীনকে এড়ানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে যেসব অর্ডার চীনে যাওয়ার কথা তার একাংশ যাবে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোয়। এর ফলে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশও লাভবান হবে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ৪০ লাখ মানুষ কর্মরত। দেশের রফতানি বাণিজ্যের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। এ খাতের সমৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে লাভবান করবে। করোনাকালীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেও তা অনুপ্রেরণা জোগাবে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব বিশ্বখ্যাত নামি-দামি ব্র্যান্ড তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল, স্থগিত অথবা কমিয়ে দিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে। পুরনো ক্রয়াদেশ দিচ্ছে নতুন করে। এমনকি নতুন ক্রয়াদেশও দিচ্ছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে স্থগিত রফতানি আদেশের অন্তত ৮০ শতাংশই ফিরে এসেছে। নতুন ক্রয়াদেশও আসছে নতুন নতুন দেশ থেকে। যেমন- চীন ও তুরস্ক থেকে যেসব ক্রয়াদেশ সরে গেছে করোনার কারণে তারও একটি বড় অংশ আসছে বাংলাদেশে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, করোনায় ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতে ক্ষতি হয়েছিল কমপক্ষে ৩১৮ কোটি ডলার। এখন আবার সেসব ক্রয়াদেশ আসছে অথবা পথে রয়েছে। তাতে ক্ষতি পুষিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত। অন্তত চলতি বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত শুভ বড়দিন ও খ্রিস্ট নববর্ষ উপলক্ষে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে সুনিশ্চিত আশা করা যেতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে সরকারের স্বল্প সুদে রফতানিকারকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলও যথেষ্ট সহায়তা করেছে। সুতরাং পোশাক শিল্পে আর শ্রমিক ছাঁটাই নয়। বেতন-ভাতা পরিশোধে গড়িমসিও নয় প্রত্যাশিত।

বৈশ্বিক অর্থনীতি করোনার কারণে বাধাপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের পোশাক খাত ও চামড়া শিল্পের কিছুটা ক্ষতি হয় কতিপয় দেশ ক্রয়াদেশ বাতিল করায়। তবে এর পরিমাণ উদ্বেগজনক পর্যায়ের ছিল না। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেছে যে, তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করবে না। অন্যদিকে মার্কিন মুলুকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে নতুন তৈরি পোশাক পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ইত্যাদি রফতানি শুরু করেছে। অন্যদিকে করোনার উৎসস্থল চীনকে নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কিছু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অস্বস্তি থাকার কারণে অন্যকিছু দেশের কার্যাদেশও চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। আসছেও। কেননা, বাংলাদেশে শ্রমমজুরি সস্তা ও সাশ্রয়ী এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। এর পাশাপাশি স্বল্প সুদে শিল্পঋণ সুবিধা তো আছেই। পোশাক শিল্প মালিকরা এর সর্বোত্তম ব্যবহার করবেন বলেই প্রত্যাশা।

আরকে চৌধুরী