সিটি করপোরেশনের সারমেয়নীতি

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ঢাকার দক্ষিণ থেকে ৩০ হাজার কুকুর সরিয়ে নেবে। সিটি করপোরেশনের কর্তা ব্যক্তিদের ধারণা হয়েছে, এর মাধ্যমে ঢাকা শহর মানুষের জন্য আরও নিরাপদ ও আরামপ্রদ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ধারা-৭ মোতাবেক ‘কোন মালিকবিহীন প্রাণী নিধন বা অপসারণ করা যাবে না’। অনেকে নতুন দায়িত্ব পেয়ে নতুন উদ্যোমে নতুন কাজ করে চমক সৃষ্টি করতে চান। একবার শহর থেকে সব ভিক্ষুক ধরে নিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছিল; আরেকবার সব হকারদের বিশেষ বিশেষ গলি বা রাস্তায় বন্ধের দিনে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু ওই সব তুঘলকি কা- ফলপ্রসূ হয়নি। ৩০ হাজার কুকুরকে যেখানে স্থানান্তর করা হবে সেখানে খাদ্য না দিলে শত শত মাইল রাস্তা পার হয়ে তারা আবার জনপদেই ফিরে আসবে। কুকুর ধরার সময় কুকুরগুলোর উপর যে মাত্রায় অমানবিকতা ও নির্যাতন করা হবে তাতে কুকুরগুলো হিংস্র হয়ে উঠতে পারে; কোন একটি কুকুরও যদি ধরার সময় কামড় দেয় তখন ফলাও করে তা প্রচার করা হবে এবং কুকুরগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পক্ষে দুরভিসন্ধির লোকগুলো পর্যাপ্ত যুক্তি দাঁড় করতে পারবে।

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে প্রতিদিন অসংখ্য প্রাণী মানুষের নির্মমতার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। চায়ের দোকানের আশেপাশে কুকুরগুলো ঘুরঘুর করলে কেউ কেউ নিজেদের খাবারের অংশবিশেষ তাদের খেতে দেয়, কেউ কেউ আবার গরম চা বা গরম পানি কুকুরের গায়ে ঢেলা দিয়ে কুকুরের আর্তচিৎকার শুনে আনন্দ পায়। কয়েক দিন আগে সিলেটের একটি গ্রামে একটি বানরকে গ্রামবাসী শুধু হত্যা করেনি, হত্যা করার পর সেই বানরের মৃতদেহ ধারালো রডে বিদ্ধ করে আনন্দ মিছিল করেছে। জামালপুরেও সাম্প্রতিক বন্যার প্রানিতে ভেসে আসা ৫০ এর অধিক শিয়াল, বেজি, গন্ধগোকুলসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী গ্রামবাসী উল্লাস করতে করতে হত্যা করেছে। নিরীহ প্রাণীগুলো বন্যার পানির কারণে তাদের আশ্রয় ত্যাগ করে বাঁচার জন্য শুকনো মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল, মানুষের কাছে আসা অসহায় প্রাণীগুলোকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারার আনন্দ খোঁজার এই মানুষগুলোকে শাস্তি দেয়ার আইন থাকলেও তার প্রয়োগে কেউ মাথা ঘামায় না। কারণ যে প্রাণীদের মারা হয়েছে তাদের ভোট নেই।

সরকারের সংরক্ষিত বনেও মানুষের নির্মম নির্যাতনে পশু-পাখি প্রাণ হারাচ্ছে। কিছু দিন আগে মাহামুহুরী নদীর উজানে সংরক্ষিত বনে একটি দুর্লভ প্রজাতির কালো ভাল্লুক শিকার করেছে আদিবাসীরা। সংরক্ষিত বন মানে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম, কোন ভয়ভীতি ছাড়াই সংরক্ষিত বনের পশুরা চলাচল করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করার কথা। বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র আজব দেশ যেই দেশে কোন একটি এলাকাকে পশুর জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করার পরেও সেই এলাকায় পশুর নিরাপত্তা বিধান করা হয় না।

আজ এই লেখাটি বন্যপ্রাণীর হত্যার জন্য নয়, বরং এমন একটি প্রাণীর অধিকারের জন্য লেখা যারা আমাদের এই স্বার্থপর সমাজের নিঃস্বার্থ পাহারাদার। আদিম মানুষ যখন গুহা থেকে বের হয়ে এসে জনবসতি গড়ে তোলে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে থাকা শুরু করে তখন থেকে যে বন্যপ্রাণীটি মানুষকে ভালোবেসে মানুষের সঙ্গে থাকার জন্য সর্বপ্রথম বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে বসবাস শুরু করে সেই প্রাণীটি হলো কুকুর। সেই সময় কুকুর মানুষকে শিকারে সাহায্য করেছে, রাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের ঘর পাহারা দিয়েছে। এরপর কেটে গেছে হাজার হাজার বছর। কালের বিবর্তনে সেই কুকুর এখন উন্নত দেশে আর্মি ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এবং বোম্ব ডিটেকশন বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ উপাধি ও মেডেল পাচ্ছে। লুকিয়ে রাখা মাদক, গুম করা মানুষের লাশ উদ্ধারসহ জটিল রোগ সনাক্তকরণের পাশাপাশি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য মানবজাতি যে প্রাণিটির ঘ্রাণশক্তির উপর নির্ভরশীল তার নাম কুকুর। উন্নত দেশে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ মানুষগুলোর পথপ্রদর্শক এই কুকুর, এই কুকুরই তাদের পথ চলায় নিরাপত্তা বিধান করে। ওই সকল সভ্য দেশে মানুষের চেয়ে কুকুর অনেক বেশি বিশ্বস্ত। অভিজ্ঞতায় পরিলক্ষিত হয়েছে, মানুষ মানুষের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে, বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে চুরি করে, হত্যা করে; কিন্তু যেই প্রাণীটি নিজের জীবন বিপন্ন করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকে, কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না সেই প্রাণীটি হলো কুকুর। যুগে যুগে প্রভু ভক্তির অসংখ্য উদাহরণ তৈরি করেছে কুকুর। একটু খাবার আর একটু ভালোবাসাপূর্ণ সাহচর্যের বিনিময়ে কুকুর ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সব মানুষকেই ভালোবাসে, ভালোবাসার লোকদের জন্য জীবন দেয়।

গবেষণায় প্রমাণিত, যে গলি বা বাড়িতে কুকুর থাকে সেই গলি বা বাড়ির প্রতিটি মানুষকে তার ঘ্রাণশক্তি দিয়ে চিনে রাখে; এই জন্য কুকুর খারাপ উদ্দেশ্যে আগত অপরিচিত মানুষকে সহজেই শনাক্ত করে তার আগমন বার্তা পরিচিত মানুষদের চিৎকার করে জানিয়ে দেয়। গ্রামে এখনও প্রায় সব বাড়িতে কুকুর লালন-পালন করা হয়, শহরের কুকুরগুলোর মতো এত অবহেলিত নয়। বাড়ির উচ্ছিষ্ট খেয়ে উঠানের পাশেই এরা ঘুমিয়ে থাকে। ঢাকা শহরে রাস্তার নেড়ি কুকুরগুলো ডাস্টবিন হতে খাবার খেয়ে রাতের বেলায় এলাকার বাড়ির আশেপাশে ঘুমিয়ে থাকে। এখন এই কুকুরগুলোকে সহ্য করতে পারছে না দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশন। শহরের মানুষের বৈধ-অবৈধ সম্পদ পাহারা দেয়ার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী আছে, ঝুঁকিমুক্ত লোহার সিন্ধুক আছে, তাই তাদের কুকুরের দরকার হয় না। তাদের দরকার নির্বিঘœ ঘুম। তাই শহরের কিছু মানুষ ঘুমের ব্যাঘাতের অজুহাতে কুকুর নিধনের পক্ষে ওকালতি করে থাকেন।

ঢাকা মহানগরীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বহু বছর ধরে জলাতঙ্ক রোগ রোধ এবং কুকুর বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে, এই কাজের সঙ্গে কিছু এনজিও জড়িত। ইতোমধ্যে সারা দেশে নাকি ৭০% কুকুরকে প্রথম পর্যায়ের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। তবে আমি কাউকে এই কাজগুলো করতে কোথাও দেখিনি। মনিটরিং ও জবাবদিহিতা না থাকলে এ সব কাজে অর্থের নয়ছয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পেও দৃশ্যমান কোন সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট এনজিওর এই সব কার্যক্রম থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে জলাতঙ্ক এবং কুকুর বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পের নাম করে যারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেও কুকুর সরানোর পরিকল্পনা মাথায় আসতে পারে। কিন্তু বর্তমান মেয়র তো এই দুর্নীতির অংশীদার নন, তাই তার অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা প্ররোচিত হবার কোন কারণ থাকতে পারে না।

পশু-পাখী, পোকা-মাকড় প্রভৃতির ভয়ভীতি এক একজনের এক এক রকম। কেউ কেউ মাকড়সা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠেন, কেউ কেউ তেলাপোকা দেখে আর্তনাদ করে আশেপাশের সবাইকে চমকে দেন। এই ভয় পাওয়াও রোগ; আরকানোফোবিয়া নামের মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিই শুধু মাকড়সাকে ভয় পান। যারা কোনো কারণ ছাড়াই কুকুর ভয় পান তারাও মূলত: সায়নোফোবিয়া নামক রোগের মানসিক রোগী। কুকুর নিয়ে আমাদের সমাজে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সব থেকে ভুল ধারণা হলো- কুকুর কামড় দিলেই জলাতঙ্ক রোগ হয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই সত্য নয়; সব কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয় না। বিগত ১০ বছর যাবত কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের (অবসরপ্রাপ্ত) পশু চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ মাকসুদুল হাসান হাওলাদার আমাদের পরিবারের পোষা কুকুর নারগাল ও সামায়্যালের চিকিৎসক; তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পোষা কুকুরেরও চিকিৎসক ছিলেন। তার মতে, শুধু জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুর আঁচড় বা কামড় দিলেই জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুরের সংখ্যা খুবই কম। লাখ লাখ কুকুরের মধ্যেও জলাতঙ্কে রোগে আক্রান্ত কোন কুকুর পাওয়া যাবে না। এছাড়া একটি সুস্থ কুকুরও নিজে আক্রান্ত না হলে কখনোই মানুষকে কামড়ায় না। আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলে বা বাচ্চারা যখন ঢিল মেরে অতিষ্ঠ করে তোলে কুকুর শুধু তখন নিজে বাঁচার তাগিদে দূর থেকে ঘেউ ঘেউ করে, ভয় দেখায়।

পশু-পাখি পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুকুর একটি সর্বভুক প্রাণী; প্রতিদিন ১টি কুকুর গড়ে ১ কেজি করে ময়লা আবর্জনা খায়। যখন কুকুরদের একটি নির্দিষ্ট এলাকা হতে বিতাড়িত করা হবে তখন সেখানে শূন্যস্থান পূরণের জন্য বাড়বে কাক আর ইঁদুরের সংখ্যা। ইঁদুরের যন্ত্রণা কুকুরের চেয়ে কম নয়। বন্ধ্যাকরণ সঠিকভাবে করা হলে কুকুর সরানোর প্রয়োজন হবে না, আপনি আপনি কুকুরের সংখ্যা কমে যাবে। এছাড়াও কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণের পর কুকুরগুলো অনেকটা শান্ত হয়ে যায়, তাদের চিৎকার বা দৌড়াদৌড়ি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। জলাতঙ্ক প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দিয়েও মানুষের অহেতুক ভীতি দূর করা যায়। কুকুর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মেয়র মহোদয়ও নাকি আদালতে কুকুর প্রেমিকদের পক্ষ হয়ে লড়েছেন। কোন একটি স্পর্শকাতর শ্রেণির কুকুর ভীতি তাড়ানোর অভিপ্রায়ে শহর থেকে কুকুর সরানোর একপেশে পদক্ষেপ কুকুর প্রেমিকদের আহত করবে।

তবে অনেক সভ্য দেশের আগেই বাংলাদেশ ১৯৭৪ সনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন করেছে; এইটুকুই গৌরবের, কিন্তু কখনও হয়নি সেই আইনের কার্যকরী প্রয়োগ। আমার ফেসবুক বন্ধু সাবেক সচিব আলী কবির সেরনিয়াবাত এই সব প্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছেন। এক ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে মারার সময় কোন মানুষ এগিয়ে না এলেও একটি কুকুরকে মাস্তানদের এমন নির্মম পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ করতে দেখেছি। হায়দারাবাদে নেকড়ে বাঘের আক্রমণ থেকে একটি অসহায় লোককে সম্প্রতি উদ্ধার করেছে আশেপাশের রাস্তার কুকুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সব ছাত্রছাত্রী ওখানকার কুকুরদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে থাকে; খাবার দেয়। শাহবাগের মোড়ে ফুল বিক্রেতা শিশুদেরও নিজেদের সামান্য খাবারের একটি অংশ কুকুরকে খাওয়াতে দেখেছি; তারা কুকুরগুলোর পিঠে চড়ে বসে, জড়িয়ে ধরে মাটিতে শুইয়ে দেয়, শিশুরা দৌড় দিলে কুকুরগুলো শোয়া থেকে উঠে শিশুগুলোর পেছনে পেছনে দৌড়াতে থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকা শহরে খাবারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় রাস্তার অভুক্ত কুকুরদের নিয়মিত খাবার দিয়েছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। জয়া কুকুর অপসারণের বিরুদ্ধে বলায় কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় তাকে গালাগাল করেছে। কুকুর নিধনের পক্ষে মানববন্ধনকারী লোকদের অভিযোগ- রাতে এবং ভোরে মসজিদে যাওয়ার সময় তাদের কুকুর তাড়া করে। এমন মসজিদগামী লোকদের সঙ্গে আমিও মাঝে মাঝে যাই, এদের কুকুর কখনোই তাড়া করে না, প্রকৃতপক্ষে এরা কুকুর পছন্দ করেন না, কুকুরকে তারা নাপাক মনে করেন। পবিত্র কোরআনে মানুষের মতো প্রতিটি প্রাণী-জাতিকে স্বীকার করা হয়েছ। বিশুদ্ধ হাদিসে কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে ব্যভিচারী নারীকেও জান্নাত দান করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিকারী কুকুরের শিকার করা আনা খাবারও হালাল। আবার কিছু হাদিসে কুকুরের বিরুদ্ধে বলা হলেও কোরআনে কুকুরের পক্ষেই বলা আছে, বিপক্ষে কোন কথা আমি পাইনি। শহর থেকে সত্যিই যদি কাউকে অপসারণ বা তাড়ানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে মশা তাড়ানো যেতে পারে, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ধর্ষক ও ভন্ডদের তাড়ানো যায়। এই শ্রেণীর লোকগুলোর তুলনায় কুকুরের অপরাধ একেবারেই নগণ্য।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

সিটি করপোরেশনের সারমেয়নীতি

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ঢাকার দক্ষিণ থেকে ৩০ হাজার কুকুর সরিয়ে নেবে। সিটি করপোরেশনের কর্তা ব্যক্তিদের ধারণা হয়েছে, এর মাধ্যমে ঢাকা শহর মানুষের জন্য আরও নিরাপদ ও আরামপ্রদ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ধারা-৭ মোতাবেক ‘কোন মালিকবিহীন প্রাণী নিধন বা অপসারণ করা যাবে না’। অনেকে নতুন দায়িত্ব পেয়ে নতুন উদ্যোমে নতুন কাজ করে চমক সৃষ্টি করতে চান। একবার শহর থেকে সব ভিক্ষুক ধরে নিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছিল; আরেকবার সব হকারদের বিশেষ বিশেষ গলি বা রাস্তায় বন্ধের দিনে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু ওই সব তুঘলকি কা- ফলপ্রসূ হয়নি। ৩০ হাজার কুকুরকে যেখানে স্থানান্তর করা হবে সেখানে খাদ্য না দিলে শত শত মাইল রাস্তা পার হয়ে তারা আবার জনপদেই ফিরে আসবে। কুকুর ধরার সময় কুকুরগুলোর উপর যে মাত্রায় অমানবিকতা ও নির্যাতন করা হবে তাতে কুকুরগুলো হিংস্র হয়ে উঠতে পারে; কোন একটি কুকুরও যদি ধরার সময় কামড় দেয় তখন ফলাও করে তা প্রচার করা হবে এবং কুকুরগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পক্ষে দুরভিসন্ধির লোকগুলো পর্যাপ্ত যুক্তি দাঁড় করতে পারবে।

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে প্রতিদিন অসংখ্য প্রাণী মানুষের নির্মমতার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। চায়ের দোকানের আশেপাশে কুকুরগুলো ঘুরঘুর করলে কেউ কেউ নিজেদের খাবারের অংশবিশেষ তাদের খেতে দেয়, কেউ কেউ আবার গরম চা বা গরম পানি কুকুরের গায়ে ঢেলা দিয়ে কুকুরের আর্তচিৎকার শুনে আনন্দ পায়। কয়েক দিন আগে সিলেটের একটি গ্রামে একটি বানরকে গ্রামবাসী শুধু হত্যা করেনি, হত্যা করার পর সেই বানরের মৃতদেহ ধারালো রডে বিদ্ধ করে আনন্দ মিছিল করেছে। জামালপুরেও সাম্প্রতিক বন্যার প্রানিতে ভেসে আসা ৫০ এর অধিক শিয়াল, বেজি, গন্ধগোকুলসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী গ্রামবাসী উল্লাস করতে করতে হত্যা করেছে। নিরীহ প্রাণীগুলো বন্যার পানির কারণে তাদের আশ্রয় ত্যাগ করে বাঁচার জন্য শুকনো মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল, মানুষের কাছে আসা অসহায় প্রাণীগুলোকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারার আনন্দ খোঁজার এই মানুষগুলোকে শাস্তি দেয়ার আইন থাকলেও তার প্রয়োগে কেউ মাথা ঘামায় না। কারণ যে প্রাণীদের মারা হয়েছে তাদের ভোট নেই।

সরকারের সংরক্ষিত বনেও মানুষের নির্মম নির্যাতনে পশু-পাখি প্রাণ হারাচ্ছে। কিছু দিন আগে মাহামুহুরী নদীর উজানে সংরক্ষিত বনে একটি দুর্লভ প্রজাতির কালো ভাল্লুক শিকার করেছে আদিবাসীরা। সংরক্ষিত বন মানে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম, কোন ভয়ভীতি ছাড়াই সংরক্ষিত বনের পশুরা চলাচল করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করার কথা। বাংলাদেশই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র আজব দেশ যেই দেশে কোন একটি এলাকাকে পশুর জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করার পরেও সেই এলাকায় পশুর নিরাপত্তা বিধান করা হয় না।

আজ এই লেখাটি বন্যপ্রাণীর হত্যার জন্য নয়, বরং এমন একটি প্রাণীর অধিকারের জন্য লেখা যারা আমাদের এই স্বার্থপর সমাজের নিঃস্বার্থ পাহারাদার। আদিম মানুষ যখন গুহা থেকে বের হয়ে এসে জনবসতি গড়ে তোলে একসঙ্গে দলবদ্ধভাবে থাকা শুরু করে তখন থেকে যে বন্যপ্রাণীটি মানুষকে ভালোবেসে মানুষের সঙ্গে থাকার জন্য সর্বপ্রথম বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে বসবাস শুরু করে সেই প্রাণীটি হলো কুকুর। সেই সময় কুকুর মানুষকে শিকারে সাহায্য করেছে, রাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের ঘর পাহারা দিয়েছে। এরপর কেটে গেছে হাজার হাজার বছর। কালের বিবর্তনে সেই কুকুর এখন উন্নত দেশে আর্মি ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এবং বোম্ব ডিটেকশন বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ উপাধি ও মেডেল পাচ্ছে। লুকিয়ে রাখা মাদক, গুম করা মানুষের লাশ উদ্ধারসহ জটিল রোগ সনাক্তকরণের পাশাপাশি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য মানবজাতি যে প্রাণিটির ঘ্রাণশক্তির উপর নির্ভরশীল তার নাম কুকুর। উন্নত দেশে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ মানুষগুলোর পথপ্রদর্শক এই কুকুর, এই কুকুরই তাদের পথ চলায় নিরাপত্তা বিধান করে। ওই সকল সভ্য দেশে মানুষের চেয়ে কুকুর অনেক বেশি বিশ্বস্ত। অভিজ্ঞতায় পরিলক্ষিত হয়েছে, মানুষ মানুষের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে, বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে চুরি করে, হত্যা করে; কিন্তু যেই প্রাণীটি নিজের জীবন বিপন্ন করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকে, কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না সেই প্রাণীটি হলো কুকুর। যুগে যুগে প্রভু ভক্তির অসংখ্য উদাহরণ তৈরি করেছে কুকুর। একটু খাবার আর একটু ভালোবাসাপূর্ণ সাহচর্যের বিনিময়ে কুকুর ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সব মানুষকেই ভালোবাসে, ভালোবাসার লোকদের জন্য জীবন দেয়।

গবেষণায় প্রমাণিত, যে গলি বা বাড়িতে কুকুর থাকে সেই গলি বা বাড়ির প্রতিটি মানুষকে তার ঘ্রাণশক্তি দিয়ে চিনে রাখে; এই জন্য কুকুর খারাপ উদ্দেশ্যে আগত অপরিচিত মানুষকে সহজেই শনাক্ত করে তার আগমন বার্তা পরিচিত মানুষদের চিৎকার করে জানিয়ে দেয়। গ্রামে এখনও প্রায় সব বাড়িতে কুকুর লালন-পালন করা হয়, শহরের কুকুরগুলোর মতো এত অবহেলিত নয়। বাড়ির উচ্ছিষ্ট খেয়ে উঠানের পাশেই এরা ঘুমিয়ে থাকে। ঢাকা শহরে রাস্তার নেড়ি কুকুরগুলো ডাস্টবিন হতে খাবার খেয়ে রাতের বেলায় এলাকার বাড়ির আশেপাশে ঘুমিয়ে থাকে। এখন এই কুকুরগুলোকে সহ্য করতে পারছে না দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশন। শহরের মানুষের বৈধ-অবৈধ সম্পদ পাহারা দেয়ার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী আছে, ঝুঁকিমুক্ত লোহার সিন্ধুক আছে, তাই তাদের কুকুরের দরকার হয় না। তাদের দরকার নির্বিঘœ ঘুম। তাই শহরের কিছু মানুষ ঘুমের ব্যাঘাতের অজুহাতে কুকুর নিধনের পক্ষে ওকালতি করে থাকেন।

ঢাকা মহানগরীতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বহু বছর ধরে জলাতঙ্ক রোগ রোধ এবং কুকুর বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে, এই কাজের সঙ্গে কিছু এনজিও জড়িত। ইতোমধ্যে সারা দেশে নাকি ৭০% কুকুরকে প্রথম পর্যায়ের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। তবে আমি কাউকে এই কাজগুলো করতে কোথাও দেখিনি। মনিটরিং ও জবাবদিহিতা না থাকলে এ সব কাজে অর্থের নয়ছয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পেও দৃশ্যমান কোন সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট এনজিওর এই সব কার্যক্রম থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে জলাতঙ্ক এবং কুকুর বন্ধ্যাকরণ প্রকল্পের নাম করে যারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেও কুকুর সরানোর পরিকল্পনা মাথায় আসতে পারে। কিন্তু বর্তমান মেয়র তো এই দুর্নীতির অংশীদার নন, তাই তার অসৎ ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা প্ররোচিত হবার কোন কারণ থাকতে পারে না।

পশু-পাখী, পোকা-মাকড় প্রভৃতির ভয়ভীতি এক একজনের এক এক রকম। কেউ কেউ মাকড়সা দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠেন, কেউ কেউ তেলাপোকা দেখে আর্তনাদ করে আশেপাশের সবাইকে চমকে দেন। এই ভয় পাওয়াও রোগ; আরকানোফোবিয়া নামের মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিই শুধু মাকড়সাকে ভয় পান। যারা কোনো কারণ ছাড়াই কুকুর ভয় পান তারাও মূলত: সায়নোফোবিয়া নামক রোগের মানসিক রোগী। কুকুর নিয়ে আমাদের সমাজে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সব থেকে ভুল ধারণা হলো- কুকুর কামড় দিলেই জলাতঙ্ক রোগ হয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই সত্য নয়; সব কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয় না। বিগত ১০ বছর যাবত কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের (অবসরপ্রাপ্ত) পশু চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ মাকসুদুল হাসান হাওলাদার আমাদের পরিবারের পোষা কুকুর নারগাল ও সামায়্যালের চিকিৎসক; তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পোষা কুকুরেরও চিকিৎসক ছিলেন। তার মতে, শুধু জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুর আঁচড় বা কামড় দিলেই জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত কুকুরের সংখ্যা খুবই কম। লাখ লাখ কুকুরের মধ্যেও জলাতঙ্কে রোগে আক্রান্ত কোন কুকুর পাওয়া যাবে না। এছাড়া একটি সুস্থ কুকুরও নিজে আক্রান্ত না হলে কখনোই মানুষকে কামড়ায় না। আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলে বা বাচ্চারা যখন ঢিল মেরে অতিষ্ঠ করে তোলে কুকুর শুধু তখন নিজে বাঁচার তাগিদে দূর থেকে ঘেউ ঘেউ করে, ভয় দেখায়।

পশু-পাখি পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুকুর একটি সর্বভুক প্রাণী; প্রতিদিন ১টি কুকুর গড়ে ১ কেজি করে ময়লা আবর্জনা খায়। যখন কুকুরদের একটি নির্দিষ্ট এলাকা হতে বিতাড়িত করা হবে তখন সেখানে শূন্যস্থান পূরণের জন্য বাড়বে কাক আর ইঁদুরের সংখ্যা। ইঁদুরের যন্ত্রণা কুকুরের চেয়ে কম নয়। বন্ধ্যাকরণ সঠিকভাবে করা হলে কুকুর সরানোর প্রয়োজন হবে না, আপনি আপনি কুকুরের সংখ্যা কমে যাবে। এছাড়াও কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণের পর কুকুরগুলো অনেকটা শান্ত হয়ে যায়, তাদের চিৎকার বা দৌড়াদৌড়ি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। জলাতঙ্ক প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দিয়েও মানুষের অহেতুক ভীতি দূর করা যায়। কুকুর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মেয়র মহোদয়ও নাকি আদালতে কুকুর প্রেমিকদের পক্ষ হয়ে লড়েছেন। কোন একটি স্পর্শকাতর শ্রেণির কুকুর ভীতি তাড়ানোর অভিপ্রায়ে শহর থেকে কুকুর সরানোর একপেশে পদক্ষেপ কুকুর প্রেমিকদের আহত করবে।

তবে অনেক সভ্য দেশের আগেই বাংলাদেশ ১৯৭৪ সনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন করেছে; এইটুকুই গৌরবের, কিন্তু কখনও হয়নি সেই আইনের কার্যকরী প্রয়োগ। আমার ফেসবুক বন্ধু সাবেক সচিব আলী কবির সেরনিয়াবাত এই সব প্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছেন। এক ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে মারার সময় কোন মানুষ এগিয়ে না এলেও একটি কুকুরকে মাস্তানদের এমন নির্মম পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ করতে দেখেছি। হায়দারাবাদে নেকড়ে বাঘের আক্রমণ থেকে একটি অসহায় লোককে সম্প্রতি উদ্ধার করেছে আশেপাশের রাস্তার কুকুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সব ছাত্রছাত্রী ওখানকার কুকুরদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে থাকে; খাবার দেয়। শাহবাগের মোড়ে ফুল বিক্রেতা শিশুদেরও নিজেদের সামান্য খাবারের একটি অংশ কুকুরকে খাওয়াতে দেখেছি; তারা কুকুরগুলোর পিঠে চড়ে বসে, জড়িয়ে ধরে মাটিতে শুইয়ে দেয়, শিশুরা দৌড় দিলে কুকুরগুলো শোয়া থেকে উঠে শিশুগুলোর পেছনে পেছনে দৌড়াতে থাকে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে থাকা শহরে খাবারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় রাস্তার অভুক্ত কুকুরদের নিয়মিত খাবার দিয়েছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। জয়া কুকুর অপসারণের বিরুদ্ধে বলায় কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় তাকে গালাগাল করেছে। কুকুর নিধনের পক্ষে মানববন্ধনকারী লোকদের অভিযোগ- রাতে এবং ভোরে মসজিদে যাওয়ার সময় তাদের কুকুর তাড়া করে। এমন মসজিদগামী লোকদের সঙ্গে আমিও মাঝে মাঝে যাই, এদের কুকুর কখনোই তাড়া করে না, প্রকৃতপক্ষে এরা কুকুর পছন্দ করেন না, কুকুরকে তারা নাপাক মনে করেন। পবিত্র কোরআনে মানুষের মতো প্রতিটি প্রাণী-জাতিকে স্বীকার করা হয়েছ। বিশুদ্ধ হাদিসে কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে ব্যভিচারী নারীকেও জান্নাত দান করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিকারী কুকুরের শিকার করা আনা খাবারও হালাল। আবার কিছু হাদিসে কুকুরের বিরুদ্ধে বলা হলেও কোরআনে কুকুরের পক্ষেই বলা আছে, বিপক্ষে কোন কথা আমি পাইনি। শহর থেকে সত্যিই যদি কাউকে অপসারণ বা তাড়ানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে মশা তাড়ানো যেতে পারে, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ধর্ষক ও ভন্ডদের তাড়ানো যায়। এই শ্রেণীর লোকগুলোর তুলনায় কুকুরের অপরাধ একেবারেই নগণ্য।

[লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক]

ahmedzeauddin0@gmail.com