জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলে বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশের সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে নষ্ট হচ্ছে মিষ্টি পানির আধার। আর ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত উত্তোলন সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই বর্সা মৌসুমে চারিদিকে পানি থাকলেও সেখানে নিরাপদ খাবার পানির বড়ই অভাব। তাই মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে মানুষের কর্মঘণ্টা ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। উন্নত জীবনযাপনের প্রয়োজনে মানুষের দৈনিক মাথাপিছু পানির চাহিদা বেড়ে চলেছে। এরপর নানামুখী অপচয়ের কারণে অনেক স্থানে সুপেয় পানির উৎস সংকুচিত, দূষিত ও ধ্বংস হচ্ছে। এসব কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এ সংকট সর্বাধিক। সেখানকার বেশিরভাগ ইউনিয়নেই গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। সেখানে বসবাসরত মানুষ বর্ষা মৌসুমে মূলত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বছরের ২-৩ মাস পান করে। শুষ্ক মৌসুমে সীমিতসংখ্যক পুকুরই তখন হয়ে ওঠে সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এসব সংরক্ষিত পুকুরের সংখ্যা এতই সীমিত যে, গ্রামবাসী ৪-৫ ঘণ্টা ব্যয় করে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে পুকুরের পানিও শুকিয়ে যায়। অবস্থাপন্নরা তখন উচ্চমূল্যে পানি সংগ্রহ করতে পারলেও দরিদ্রদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়।

বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, উপকূলের অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির সংকট থাকলেও বাগেরহাট অঞ্চলে বেশী। বিশেষ করে সুন্দরবন ঘেষা মংলা ও রামপাল উপজেলায়। ওই অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবেশ বন ও জলবায়ু উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তার সুপারিশে ‘জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্যে বাগেরহাট জেলার দুস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ট্রাস্টি বোর্ডের ৫১তম সভায় ৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের আওতায় রামপাল ও মংলায় গরিব ও দুস্থ মানুষের মাঝে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে সংক্রিয় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে গত ২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে প্রকল্পের মেয়াদ গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরুর কথা বলা হলেও দাপ্তরিক কাজ শেষ হতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই দু’টি উপজেলার ২০২টি পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপনের স্থান নির্ধারণেও আরও কিছু সময় পার হয়ে যায়। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে গত মাসে মংলা থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে। মংলা থেকে রামপালে কাজ শুরু হবে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা।

তবে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে। এই ফান্ডের অর্থায়নে গৃহীত সব কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী তা প্রশংসিত হয়েছে। তবে প্রতিটি প্রকল্পই যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেটা যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় খেয়াল রাখে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও বেশী মনোযোগী ও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশের (এনসিসিবি) রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান অপু বলেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এই প্রকল্পটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। গরিব মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে প্রকল্পটি যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য প্রকল্প কাজে তদারকি বাড়াতে হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. ইসকান্দার হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে মংলা উপজেলা বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে রামপাল উপজেলায়ও কাজ শুরু করা হবে।

প্রকল্প সম্পর্কে জানেন না স্থানীয় জনগণ। প্রকল্প এলাকায় সাইন বোর্ড দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের সুদেব গোলদার জানান, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহে সৌরচালিত পানি প্রকল্প চালু’র কথা বলা হচ্ছে। যার মাধ্যমে অনেক মানুষ সুপেয় পানি পাবে। কিন্তু কবে চালু হবে তা জানানো হয়নি। তবে বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ১৫টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল বাকি ৪ মাস। এই সময়ের মধ্যে দুই উপজেলায় আরও ১৮৭টি ইউনিট স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের কাজের বিষয়ে মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বলেন, কিসের প্রকল্প আর কি কাজ, কোথায় হচ্ছে কিছুই জানেন না তারা। তবে গ্রাহকদের কাছে জানতে পারে ৭৫০ লিটারের দুটি পানির ট্যাঙ্ক, ৫টি প্যানেল, একটি সোলার বসানো হয়েছে, যা এক একটি স্থানে কোন রকম ফেলে রাখা হয়েছে, যা শুরুতেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জোটের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, সংকট মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বায়ো সেন্ড ফিল্টার, পিএসএফ (পুকুরপাড়ে বালির ফিল্টার) ও রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট এবং জলাধার সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। এমতাবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি সরাসরি দেখভাল করা হচ্ছে। উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

[লেখক : সাংবাদিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী]

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৩ মহররম ১৪৪২, ২৫ ভাদ্র ১৪২৭

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলে বাড়ছে সুপেয় পানির সংকট

সাকিলা পারভীন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশের সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে নষ্ট হচ্ছে মিষ্টি পানির আধার। আর ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত উত্তোলন সংকট বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই বর্সা মৌসুমে চারিদিকে পানি থাকলেও সেখানে নিরাপদ খাবার পানির বড়ই অভাব। তাই মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে মানুষের কর্মঘণ্টা ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানির চাহিদা। উন্নত জীবনযাপনের প্রয়োজনে মানুষের দৈনিক মাথাপিছু পানির চাহিদা বেড়ে চলেছে। এরপর নানামুখী অপচয়ের কারণে অনেক স্থানে সুপেয় পানির উৎস সংকুচিত, দূষিত ও ধ্বংস হচ্ছে। এসব কারণে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এ সংকট সর্বাধিক। সেখানকার বেশিরভাগ ইউনিয়নেই গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। সেখানে বসবাসরত মানুষ বর্ষা মৌসুমে মূলত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বছরের ২-৩ মাস পান করে। শুষ্ক মৌসুমে সীমিতসংখ্যক পুকুরই তখন হয়ে ওঠে সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এসব সংরক্ষিত পুকুরের সংখ্যা এতই সীমিত যে, গ্রামবাসী ৪-৫ ঘণ্টা ব্যয় করে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে পুকুরের পানিও শুকিয়ে যায়। অবস্থাপন্নরা তখন উচ্চমূল্যে পানি সংগ্রহ করতে পারলেও দরিদ্রদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়।

বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, উপকূলের অধিকাংশ এলাকায় সুপেয় পানির সংকট থাকলেও বাগেরহাট অঞ্চলে বেশী। বিশেষ করে সুন্দরবন ঘেষা মংলা ও রামপাল উপজেলায়। ওই অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবেশ বন ও জলবায়ু উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তার সুপারিশে ‘জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্যে বাগেরহাট জেলার দুস্থ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ট্রাস্টি বোর্ডের ৫১তম সভায় ৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের আওতায় রামপাল ও মংলায় গরিব ও দুস্থ মানুষের মাঝে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে সংক্রিয় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে গত ২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে প্রকল্পের মেয়াদ গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরুর কথা বলা হলেও দাপ্তরিক কাজ শেষ হতেই অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই দু’টি উপজেলার ২০২টি পানি বিশুদ্ধকরণ ইউনিট স্থাপনের স্থান নির্ধারণেও আরও কিছু সময় পার হয়ে যায়। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণেও প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে গত মাসে মংলা থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে। মংলা থেকে রামপালে কাজ শুরু হবে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা।

তবে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে। এই ফান্ডের অর্থায়নে গৃহীত সব কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী তা প্রশংসিত হয়েছে। তবে প্রতিটি প্রকল্পই যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেটা যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় খেয়াল রাখে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও বেশী মনোযোগী ও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশের (এনসিসিবি) রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান অপু বলেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এই প্রকল্পটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। গরিব মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে প্রকল্পটি যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়, সেজন্য প্রকল্প কাজে তদারকি বাড়াতে হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. ইসকান্দার হোসেন বলেন, কিছু দিন আগে মংলা উপজেলা বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে রামপাল উপজেলায়ও কাজ শুরু করা হবে।

প্রকল্প সম্পর্কে জানেন না স্থানীয় জনগণ। প্রকল্প এলাকায় সাইন বোর্ড দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের সুদেব গোলদার জানান, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহে সৌরচালিত পানি প্রকল্প চালু’র কথা বলা হচ্ছে। যার মাধ্যমে অনেক মানুষ সুপেয় পানি পাবে। কিন্তু কবে চালু হবে তা জানানো হয়নি। তবে বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ১৫টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল বাকি ৪ মাস। এই সময়ের মধ্যে দুই উপজেলায় আরও ১৮৭টি ইউনিট স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের কাজের বিষয়ে মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বলেন, কিসের প্রকল্প আর কি কাজ, কোথায় হচ্ছে কিছুই জানেন না তারা। তবে গ্রাহকদের কাছে জানতে পারে ৭৫০ লিটারের দুটি পানির ট্যাঙ্ক, ৫টি প্যানেল, একটি সোলার বসানো হয়েছে, যা এক একটি স্থানে কোন রকম ফেলে রাখা হয়েছে, যা শুরুতেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জোটের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, সংকট মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বায়ো সেন্ড ফিল্টার, পিএসএফ (পুকুরপাড়ে বালির ফিল্টার) ও রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্লান্ট এবং জলাধার সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। এমতাবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি সরাসরি দেখভাল করা হচ্ছে। উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায় প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

[লেখক : সাংবাদিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী]