টিআইএন ছাড়াই সঞ্চয়পত্র পাবে পাটকল শ্রমিক

শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার ওপর উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় ১০ শতাংশ হারে। পাটকল শ্রমিকদের জন্য তা বহন করা কষ্টকর। আবার এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর না থাকায় এটি ছাড়াই পাট শ্রমিকদের সঞ্চয়পত্র দেয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল শ্রমিকের চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ সুবিধার আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এসব মিলের শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকার অর্ধেক পাবেন নগদে, বাকি অর্ধেক পাবেন তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। জানা গেছে, ২৫টি পাটকলের মধ্যে ইতোমধ্যেই করিম জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে ২২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এই বরাদ্দে ২ হাজার ৩৭১ জন শ্রমিক তাদের পাওনা টাকা পাবেন। এরমধ্যে ২ হাজার ১৮২ জনের পাওনা ২ লাখ টাকার বেশি।

বরাদ্দ পত্রে বলা হয়, তাদের টাকা ৫০ শতাংশ নগদে দেয়া হবে এবং বাকিটা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। মাত্র ১৮৯ জন শ্রমিকের পাওনা ২ লাখ টাকার মধ্যে। তারা টাকা পাবেন এককালীন তথা নগদ। এ শ্রমিকেরা তাদের পাওনা টাকার অর্ধেক পাবেন তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তা কিনতে হবে শুধু সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। অথচ সোনালী ব্যাংকের অনেক শাখায় সঞ্চয়পত্র খোলার অনুমতি নেই। আবার বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর নেই। আবার ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার ওপর উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় ১০ শতাংশ হারে। পাটকল শ্রমিকদের জন্য তা বহন করা কষ্টকর। এসব প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব ছাড়াই শেষ হয়েছে ‘বিজেএমসির অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনার অংশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ’ শীর্ষক বৈঠক। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান। অর্থ বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠকে থাকলেও কেউ কোন সমাধান বের করতে পারেননি।

বৈঠকে উঠে আসে, অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর পাওয়া যাবে না। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এমনকি ব্যাংক হিসাবও নেই। নতুন করে এগুলো খোলা সময়সাপেক্ষ। বৈঠকে আরও কিছু বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। যেমন- তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ সীমা রয়েছে। ফলে এ সীমার বাইরে যারা থাকবেন, তাদের নামে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যাবে না। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সোনালী ব্যাংকের কোন কোন শাখায় সঞ্চয়পত্র খোলার অনুমতি না থাকলেও অন্য কোন শাখার পাসওয়ার্ড খুলে দেয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আর শ্রমিকদের ক্ষেত্রে টিআইএন থাকার বিষয়টি শিথিল করা হতে পারে।

বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এতে পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বন্ধের আগে সরকার যুক্তি দিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে পাটকলগুলো।

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭

টিআইএন ছাড়াই সঞ্চয়পত্র পাবে পাটকল শ্রমিক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার ওপর উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় ১০ শতাংশ হারে। পাটকল শ্রমিকদের জন্য তা বহন করা কষ্টকর। আবার এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর না থাকায় এটি ছাড়াই পাট শ্রমিকদের সঞ্চয়পত্র দেয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল শ্রমিকের চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ সুবিধার আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এসব মিলের শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকার অর্ধেক পাবেন নগদে, বাকি অর্ধেক পাবেন তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। জানা গেছে, ২৫টি পাটকলের মধ্যে ইতোমধ্যেই করিম জুট মিলের স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে ২২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এই বরাদ্দে ২ হাজার ৩৭১ জন শ্রমিক তাদের পাওনা টাকা পাবেন। এরমধ্যে ২ হাজার ১৮২ জনের পাওনা ২ লাখ টাকার বেশি।

বরাদ্দ পত্রে বলা হয়, তাদের টাকা ৫০ শতাংশ নগদে দেয়া হবে এবং বাকিটা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। মাত্র ১৮৯ জন শ্রমিকের পাওনা ২ লাখ টাকার মধ্যে। তারা টাকা পাবেন এককালীন তথা নগদ। এ শ্রমিকেরা তাদের পাওনা টাকার অর্ধেক পাবেন তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তা কিনতে হবে শুধু সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। অথচ সোনালী ব্যাংকের অনেক শাখায় সঞ্চয়পত্র খোলার অনুমতি নেই। আবার বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর নেই। আবার ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই মুনাফার ওপর উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় ১০ শতাংশ হারে। পাটকল শ্রমিকদের জন্য তা বহন করা কষ্টকর। এসব প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব ছাড়াই শেষ হয়েছে ‘বিজেএমসির অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনার অংশ সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ’ শীর্ষক বৈঠক। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান। অর্থ বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠকে থাকলেও কেউ কোন সমাধান বের করতে পারেননি।

বৈঠকে উঠে আসে, অনেক শ্রমিকের টিআইএন নম্বর পাওয়া যাবে না। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এমনকি ব্যাংক হিসাবও নেই। নতুন করে এগুলো খোলা সময়সাপেক্ষ। বৈঠকে আরও কিছু বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। যেমন- তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ সীমা রয়েছে। ফলে এ সীমার বাইরে যারা থাকবেন, তাদের নামে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যাবে না। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সোনালী ব্যাংকের কোন কোন শাখায় সঞ্চয়পত্র খোলার অনুমতি না থাকলেও অন্য কোন শাখার পাসওয়ার্ড খুলে দেয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। আর শ্রমিকদের ক্ষেত্রে টিআইএন থাকার বিষয়টি শিথিল করা হতে পারে।

বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকলের শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় গত ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এতে পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বন্ধের আগে সরকার যুক্তি দিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে পাটকলগুলো।