তিস্তার ভাঙনে ভিটেহারা দুই শতাধিক পরিবার

তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে গত ২০ দিনের ব্যবধানে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত লাগোয়া চর বজরা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ার লখিয়ার পাড়া গ্রামের মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিমুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী কাশিম বাজার হাট, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সিনিয়র মাদ্রাসা, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২ হাজার পরিবার। ভাঙ্গনে ইতোমধ্যেই কাশিমবাজার-উলিপুর পাকা সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভাঙন রোধে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা নামে মাত্র বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা কোন কাজে আসছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ডাম্পিং করতে শুধুমাত্র সময় ক্ষেপণ করার কারণে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। এছাড়া আগে থেকেই কার্যকরী জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, সর্বস্ব হারিয়ে ভাঙ্গন কবলিত পরিবারের মানুষজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে। ঘর-বাড়ি হারা সর্বশান্ত মানুষের আহাজারীতে এলাকার বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠছে।

সরেজমিনে শনিবার বিকেলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা চর বজরা ও লখিয়ার পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কাশিম বাজার- উলিপুর সড়কের চর বজরা এলাকার পাকা সড়কের প্রায় ১ হাজার ফুট রাস্তার বেশিরভাগ অংশ নদীতে দেবে গেছে। এর আগে রাস্তার পশ্চিমাংশে টেপরির মোড় এলাকায় তিস্তা নদীতে ভাঙন শুরু হলে মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি, আবাদি জমিসহ চরবজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কদমতলা নখিয়ার পাড়া জামে মসজিদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উলিপুর-কাশিম বাজার পাকা সড়কের ১ হাজার ফুট নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে উলিপুরের সঙ্গে কাশিমবাজার এলাকার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টেপরির মোড় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, শিক্ষক মজিবর রহমান, বকুল মিয়া, বন্দে আলী তাদের পাকা বাড়ি যে কোন মুহূর্তেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কাশিম বাজার হাটম, নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদরাসা ও ২টি মসজিদসহ সরকারি বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাকা অবকাঠামো ও বিশাল জনবসতি পূর্ণ এলাকা ও আবাদি জমি নদীর তীব্র ভাঙনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনরোধে জরুরী কার্যক্রম চলছে, শুধু চর বজরা কাশেম বাজার নিয়ে পড়ে থাকলেও হবে না। ভাঙন রোধে ১০ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং চলছে, প্রয়োজনে আরও ডাম্পিং করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭

তিস্তার ভাঙনে ভিটেহারা দুই শতাধিক পরিবার

আনিছুর রহমান মিয়াজী, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

image

তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে গত ২০ দিনের ব্যবধানে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত লাগোয়া চর বজরা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ার লখিয়ার পাড়া গ্রামের মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিমুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী কাশিম বাজার হাট, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সিনিয়র মাদ্রাসা, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২ হাজার পরিবার। ভাঙ্গনে ইতোমধ্যেই কাশিমবাজার-উলিপুর পাকা সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভাঙন রোধে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা নামে মাত্র বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং করলেও তা কোন কাজে আসছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ডাম্পিং করতে শুধুমাত্র সময় ক্ষেপণ করার কারণে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। এছাড়া আগে থেকেই কার্যকরী জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, সর্বস্ব হারিয়ে ভাঙ্গন কবলিত পরিবারের মানুষজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে। ঘর-বাড়ি হারা সর্বশান্ত মানুষের আহাজারীতে এলাকার বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠছে।

সরেজমিনে শনিবার বিকেলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা চর বজরা ও লখিয়ার পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কাশিম বাজার- উলিপুর সড়কের চর বজরা এলাকার পাকা সড়কের প্রায় ১ হাজার ফুট রাস্তার বেশিরভাগ অংশ নদীতে দেবে গেছে। এর আগে রাস্তার পশ্চিমাংশে টেপরির মোড় এলাকায় তিস্তা নদীতে ভাঙন শুরু হলে মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি, আবাদি জমিসহ চরবজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কদমতলা নখিয়ার পাড়া জামে মসজিদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উলিপুর-কাশিম বাজার পাকা সড়কের ১ হাজার ফুট নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে উলিপুরের সঙ্গে কাশিমবাজার এলাকার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টেপরির মোড় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, শিক্ষক মজিবর রহমান, বকুল মিয়া, বন্দে আলী তাদের পাকা বাড়ি যে কোন মুহূর্তেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কাশিম বাজার হাটম, নাজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদরাসা ও ২টি মসজিদসহ সরকারি বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাকা অবকাঠামো ও বিশাল জনবসতি পূর্ণ এলাকা ও আবাদি জমি নদীর তীব্র ভাঙনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনরোধে জরুরী কার্যক্রম চলছে, শুধু চর বজরা কাশেম বাজার নিয়ে পড়ে থাকলেও হবে না। ভাঙন রোধে ১০ হাজার জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ডাম্পিং চলছে, প্রয়োজনে আরও ডাম্পিং করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।