বিনা অনুমতিতে ১০ বছর ভাড়া ছাড়া সর. কোয়ার্টারে বাস!

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমান মালি আব্দুল বারিক ও সাবেক মালি বুলবুল হোসেন দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাড়ি ভাড়া ব্যবহৃত বিদ্যুত বিল না দিয়েই সরকারি বাসা ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও’র খুঁটির জোরে তাদের বাড়ি ভাড়ার প্রায় ১০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বুলবুল হোসেন ও আব্দুল বারিকের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামে। তারা সম্পর্কে চাচা ও ভাতিজা। উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে একই উপজেলার হিসাবরক্ষণ অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত বুলবুল ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউএনওর বাসায় ও অফিসে কর্মরত থাকলেও মূলত তিনি ছিলেন উপজেলা পরিষদের মালি। এরপর ২০১৩ সালে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ইউএনও’র সহযোগিতায় একই সালে ভাতিজা আব্দুল বারিককে তিনি তার নিজের পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এরপর আব্দুল বারিক তার ছোট ভাই সুজনকে ইউএনও’র সহযোগিতায় একই উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করে পারিবারিক শক্তি পাকাপোক্ত করেন। অভিযোগ আছে, বুলবুল মালি পদে যোগদানের পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই উপজেলা পরিষদ এলাকায় কর্মচারীদের জন্য নির্মিত সরকারি ‘সুরমা’ বাসভবনের নীচতলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর বসবাসের পর গত তিন বছর যাবত অন্য একটি ফ্ল্যাটে তার ভাতিজা আব্দুল বারিক তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সরকারি বাড়িতে বসবাস করলে প্রতি মাসে বাসা ভাড়ার টাকা বেতনের ৪০ শতাংশ হিসেবে কেটে বেতন উত্তোলন করতে হয়। কিন্তু বুলবুল এবং আব্দুল বারিক যোগদানের পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত প্রায় ১ যুগ বেতন থেকে বাড়ি ভাড়ার ১ টাকাও পরিশোধ করেননি। এভাবে বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে তারা আত্মসাত করেছেন। উপজেলার এক কর্মকর্তার বলেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলদার হোসেনের সময় বুলবুলের নিকট সরকারি বাসা ভাড়া বাবদ প্রায় ৭ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এ বিষয়ে বুলবুলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল। তিনি বলেন, পদে বারিক মালি হলেও ইউএনও’র মদদপুষ্ট ও আস্থাভাজন হওয়ায় তার দাপটে অফিসে প্রবেশ করাই মুশকিল। ইউএনওর কারণেই বুলবুল বাসা ভাড়া দেননি এবং অন্য একটি ফ্ল্যাটে ভাতিজা বারিককে তুলেছেন। সরকারি বাস ভবন সুরমাতে দীর্ঘদিন বসবাসের বিষয়টি স্বীকার করে বুলবুল ও আব্দুল বারিক বলেন, আমরা যে ভবনে বসবাস করছি, সেটি অনেক পুরনো এবং পরিত্যক্ত ভবন। তবে পরিত্যক্ত ভবনে অন্য স্টাফরা কিভাবে বসবাস করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তারা বলেন এসব বিষয় ইউএনও স্যার জানেন এবং তিনিই আমাদের এখানে থাকতে বলেছেন। ধামইরহাট উপজেলা আলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলদার হোসেন বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বুলবুলকে ভাড়া পরিশোধ করে বাসাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য বারবার তাগাদা এবং নোটিস দেয়া হয়েছে কিন্তু ইউএনওর শক্তির কারণে তিনি বাসাও ছাড়েন নাই ভাড়াও দেননি। তার খুটির জোর এতোটাই বেশি যে, তার আরও দুই ভাতিজাকে এখানে চাকুরির সুযোগের পাশাপাশি গত ৩ বছর পূর্বে বারিক নামে এক ভাতিজাকে এই সরকারি বাসভবনের একটি ফ্ল্যাটে তুলেছেন এবং সেও নাকি ভারা দেয়নি। বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের স্টাফদের জন্য নির্মিত ‘সুরমা’ ভবনটি পরিত্যক্ত নয়। ওই ভবনে দুজন বাসা বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন। অথচ আব্দুল বারিক প্রায় ৩ বছর যাবত এবং বুলবুল প্রায় ১০ বছর যাবত কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এবং ভাড়া না দিয়ে সরকারি বাড়ি ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গনপতি রায় দীর্ঘদিন বাসা ভাড়া না দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, উপজেলা পরিষদের এই ভবনটি বেশ পুরনো এবং পরিত্যক্ত। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কোন রেজুলেশন করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এখনো করা হয়নি তবে আগামী মাসের সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭

বিনা অনুমতিতে ১০ বছর ভাড়া ছাড়া সর. কোয়ার্টারে বাস!

জেলা বার্তা পরিবেশক, নওগাঁ

image

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমান মালি আব্দুল বারিক ও সাবেক মালি বুলবুল হোসেন দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাড়ি ভাড়া ব্যবহৃত বিদ্যুত বিল না দিয়েই সরকারি বাসা ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও’র খুঁটির জোরে তাদের বাড়ি ভাড়ার প্রায় ১০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বুলবুল হোসেন ও আব্দুল বারিকের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামে। তারা সম্পর্কে চাচা ও ভাতিজা। উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে একই উপজেলার হিসাবরক্ষণ অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত বুলবুল ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউএনওর বাসায় ও অফিসে কর্মরত থাকলেও মূলত তিনি ছিলেন উপজেলা পরিষদের মালি। এরপর ২০১৩ সালে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় ইউএনও’র সহযোগিতায় একই সালে ভাতিজা আব্দুল বারিককে তিনি তার নিজের পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এরপর আব্দুল বারিক তার ছোট ভাই সুজনকে ইউএনও’র সহযোগিতায় একই উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করে পারিবারিক শক্তি পাকাপোক্ত করেন। অভিযোগ আছে, বুলবুল মালি পদে যোগদানের পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই উপজেলা পরিষদ এলাকায় কর্মচারীদের জন্য নির্মিত সরকারি ‘সুরমা’ বাসভবনের নীচতলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর বসবাসের পর গত তিন বছর যাবত অন্য একটি ফ্ল্যাটে তার ভাতিজা আব্দুল বারিক তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সরকারি বাড়িতে বসবাস করলে প্রতি মাসে বাসা ভাড়ার টাকা বেতনের ৪০ শতাংশ হিসেবে কেটে বেতন উত্তোলন করতে হয়। কিন্তু বুলবুল এবং আব্দুল বারিক যোগদানের পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত প্রায় ১ যুগ বেতন থেকে বাড়ি ভাড়ার ১ টাকাও পরিশোধ করেননি। এভাবে বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে তারা আত্মসাত করেছেন। উপজেলার এক কর্মকর্তার বলেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলদার হোসেনের সময় বুলবুলের নিকট সরকারি বাসা ভাড়া বাবদ প্রায় ৭ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এ বিষয়ে বুলবুলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল। তিনি বলেন, পদে বারিক মালি হলেও ইউএনও’র মদদপুষ্ট ও আস্থাভাজন হওয়ায় তার দাপটে অফিসে প্রবেশ করাই মুশকিল। ইউএনওর কারণেই বুলবুল বাসা ভাড়া দেননি এবং অন্য একটি ফ্ল্যাটে ভাতিজা বারিককে তুলেছেন। সরকারি বাস ভবন সুরমাতে দীর্ঘদিন বসবাসের বিষয়টি স্বীকার করে বুলবুল ও আব্দুল বারিক বলেন, আমরা যে ভবনে বসবাস করছি, সেটি অনেক পুরনো এবং পরিত্যক্ত ভবন। তবে পরিত্যক্ত ভবনে অন্য স্টাফরা কিভাবে বসবাস করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তারা বলেন এসব বিষয় ইউএনও স্যার জানেন এবং তিনিই আমাদের এখানে থাকতে বলেছেন। ধামইরহাট উপজেলা আলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলদার হোসেন বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বুলবুলকে ভাড়া পরিশোধ করে বাসাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য বারবার তাগাদা এবং নোটিস দেয়া হয়েছে কিন্তু ইউএনওর শক্তির কারণে তিনি বাসাও ছাড়েন নাই ভাড়াও দেননি। তার খুটির জোর এতোটাই বেশি যে, তার আরও দুই ভাতিজাকে এখানে চাকুরির সুযোগের পাশাপাশি গত ৩ বছর পূর্বে বারিক নামে এক ভাতিজাকে এই সরকারি বাসভবনের একটি ফ্ল্যাটে তুলেছেন এবং সেও নাকি ভারা দেয়নি। বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের স্টাফদের জন্য নির্মিত ‘সুরমা’ ভবনটি পরিত্যক্ত নয়। ওই ভবনে দুজন বাসা বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন। অথচ আব্দুল বারিক প্রায় ৩ বছর যাবত এবং বুলবুল প্রায় ১০ বছর যাবত কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এবং ভাড়া না দিয়ে সরকারি বাড়ি ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গনপতি রায় দীর্ঘদিন বাসা ভাড়া না দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, উপজেলা পরিষদের এই ভবনটি বেশ পুরনো এবং পরিত্যক্ত। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কোন রেজুলেশন করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এখনো করা হয়নি তবে আগামী মাসের সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।