চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার অর্ধশত জাল এনআইডি ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস
নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের ২ অপারেটরের সহায়তায় তৈরি করা হয় জাল এনআইডি। ব্যাংক ঋণের আবেদনসহ নানা কাজে এসব জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার হয়ে আসছিল। ইতোমধ্যে জাল এনআইডি দিয়ে একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়েছে। ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি লালবাগ) অভিযানে নির্বাচন কমিশন অফিসের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের ২ অপারেটরসহ ৫ জনকে গ্রেফতারের পর এমন ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে ডিবি। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদের তত্ত্বাবধায়নে এ অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডের থানায় মামলা রুজু হয়েছে। গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, ভয়ঙ্কর অপরাধীদের জন্য জাল জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, গত শনিবার চিড়িয়াখানা রোডের এলাকা থেকে জালিয়াত চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রফতারকৃতরা হলেনÑ নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের কর্মকর্তা সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর (৩২) মো. আনোয়ারুল ইসলাম (২৬) মো. সুমন পারভেজ (৪০), মো. মজিদ (৪২), ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (৪১)। গ্রেফতারকৃত চক্রের কাছ থেকে বেশি কিছু জাল এনআইডি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদের আরও কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ জানান, গত ২ থেকে আড়াই বছর ধরে নির্বাচন কমিশন অফিসের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের কর্মকর্তা সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর এবং আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ভয়াবহ এ জালিয়াতি চলে আসছিল। ইতোমধ্যে তারা অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির জাল তৈরি এনআইডি করেছে। একটি জাল বিপরীতে ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা নিতো। চক্রটি প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্রের ডুব্লিকেট তৈরি করে নটিফিকেশন দিয়ে রাখতো। নটিফিকেশনের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে কোন তথ্য পেতো না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আমরা ধারণা করছি চক্রটি অন্যান্য অপরাধীদের ক্ষেত্রেও এ কাজ করতো।
ডিবি সূত্র জানায়, চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলনে সহায়তায় সবচেয়ে বেশি দ্বৈত, জাল ও ডুপ্লিকেট এনআইডি তৈরি করতো। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কেউ ঋণ খেলাপি হলে তাদের সিআইবি খারাপ হয় ফলে পুনরায় তারা ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন না। গ্রেফতারকৃত সুমন ও মজিদ লোন পাস করে দিবে মর্মে প্রথমে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা গ্রহণ করতেন। পরবর্তী সময়ে লোন পাস হলে লোনের সমুদয় টাকার ১০% হারে দিতে হবে মর্মে চুক্তি করতেন। চুক্তিতে একমত হলে তারা প্রথমে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন। পরে লোন পাস হলে চুক্তি অনুযায়ী লোনের সম্পূর্ণ টাকার ১০% হারে নিয়ে নিতেন। এসব টাকা চক্রটি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন।
ডিবি জানায়, সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলাম ই-জোন কোম্পানির মাধ্যমে আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পেয়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে খিলগাঁও ও গুলশান অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করে। এ কারণে তারা নির্বাচন কমিশন অফিসের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজেই জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে পারতেন। তারা এ পন্থা অবলম্বন করে এমন অনেককে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলন করে দিয়েছেন ।
সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭
চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার অর্ধশত জাল এনআইডি ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের ২ অপারেটরের সহায়তায় তৈরি করা হয় জাল এনআইডি। ব্যাংক ঋণের আবেদনসহ নানা কাজে এসব জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার হয়ে আসছিল। ইতোমধ্যে জাল এনআইডি দিয়ে একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়েছে। ঢাকা মহানগর অপরাধ তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি লালবাগ) অভিযানে নির্বাচন কমিশন অফিসের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের ২ অপারেটরসহ ৫ জনকে গ্রেফতারের পর এমন ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে ডিবি। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদের তত্ত্বাবধায়নে এ অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডের থানায় মামলা রুজু হয়েছে। গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, ভয়ঙ্কর অপরাধীদের জন্য জাল জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, গত শনিবার চিড়িয়াখানা রোডের এলাকা থেকে জালিয়াত চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রফতারকৃতরা হলেনÑ নির্বাচন কমিশনের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের কর্মকর্তা সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর (৩২) মো. আনোয়ারুল ইসলাম (২৬) মো. সুমন পারভেজ (৪০), মো. মজিদ (৪২), ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (৪১)। গ্রেফতারকৃত চক্রের কাছ থেকে বেশি কিছু জাল এনআইডি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদের আরও কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. রাজীব আল মাসুদ জানান, গত ২ থেকে আড়াই বছর ধরে নির্বাচন কমিশন অফিসের ডাটা এন্ট্রি বিভাগের কর্মকর্তা সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর এবং আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ভয়াবহ এ জালিয়াতি চলে আসছিল। ইতোমধ্যে তারা অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির জাল তৈরি এনআইডি করেছে। একটি জাল বিপরীতে ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা নিতো। চক্রটি প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্রের ডুব্লিকেট তৈরি করে নটিফিকেশন দিয়ে রাখতো। নটিফিকেশনের ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে কোন তথ্য পেতো না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আমরা ধারণা করছি চক্রটি অন্যান্য অপরাধীদের ক্ষেত্রেও এ কাজ করতো।
ডিবি সূত্র জানায়, চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলনে সহায়তায় সবচেয়ে বেশি দ্বৈত, জাল ও ডুপ্লিকেট এনআইডি তৈরি করতো। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কেউ ঋণ খেলাপি হলে তাদের সিআইবি খারাপ হয় ফলে পুনরায় তারা ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন না। গ্রেফতারকৃত সুমন ও মজিদ লোন পাস করে দিবে মর্মে প্রথমে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা গ্রহণ করতেন। পরবর্তী সময়ে লোন পাস হলে লোনের সমুদয় টাকার ১০% হারে দিতে হবে মর্মে চুক্তি করতেন। চুক্তিতে একমত হলে তারা প্রথমে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতেন। পরে লোন পাস হলে চুক্তি অনুযায়ী লোনের সম্পূর্ণ টাকার ১০% হারে নিয়ে নিতেন। এসব টাকা চক্রটি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতেন।
ডিবি জানায়, সিদ্দার্থ শংকর সূত্রধর ও আনোয়ারুল ইসলাম ই-জোন কোম্পানির মাধ্যমে আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পেয়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে খিলগাঁও ও গুলশান অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করে। এ কারণে তারা নির্বাচন কমিশন অফিসের সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজেই জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে পারতেন। তারা এ পন্থা অবলম্বন করে এমন অনেককে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলন করে দিয়েছেন ।