অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুই মামলায় স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্নীতির মাফিয়াখ্যাত স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী আবজাল হোসেনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৪ দিনের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল করাগার থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আবজালকে নিয়ে আনা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম তাকে প্রথম দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বর্তমানে দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজতখানায় আছেন আফজাল হোসেন।
দুদক সূত্র জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ পৃথক দুই মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন। রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবজালকে কারাগার থেকে দুদক হেফাজতে নিয়ে আসে। গতকাল প্রথমদিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আবজাল বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এর আগে গত ২৬ আগস্ট সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে আবজাল আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে বিকেলে আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৭ জুন দুদক উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ কার্যালয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি করেন। মামলা দুটিতে আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৬১ হাজার ৪৯৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় দীর্ঘ সময় ধরে স্থানাস্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ২৮৪ কোটি ৫১ লাখ ১৩ হাজার ২০৭ টাকার মানি লন্ডারিং অপরাধের অভিযোগও করা হয়েছে। আবজালের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি দুদকে পেশ করা সম্পদ বিবরণীতে দুই কোটি ২ লাখ ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৮৫ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম ও আবজালকে যৌথভাবে আসামি করে করা মামলায় ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকার সম্পদের কথা বলা হয়েছে। তিনি দুদকের কাছে ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, আবজালের নামে থাকা সম্পদের চেয়ে তার স্ত্রীর নামে সম্পদের পরিমাণ বেশি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তিনি স্ত্রীর নামে সম্পদ করেছেন। এসব সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবজালের নামে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকার মানিলন্ডারিং অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকার মানি লন্ডারিং অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানে আবজাল দম্পতির নানা কাহিনী বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে আবদালও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। অনুসন্ধানে আবদাল দম্পতির হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগ অনুসন্ধানের পর্যায়ে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে আত্মগোপন করে আবজাল দম্পতি। তখন প্রচার হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে আবজাল দম্পতি। মূলত পদ্মার চরে আত্মগোপন করে আবজাল। দেশ থেকে পালিয়ে গেছে প্রচার হওয়ার পর আবদাল দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন দুদক মনে করেছিল আবজাল দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ নিয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশনের কাছেও তথ্য চায় দুদক। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। শেষ মেষ দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকার পর আবদাল গোপনে জামিন নিতে আসে। এরপর জামিন নিতে আসার পর ধরা পড়ে। তখন পরিষ্কার হয় মূলত পদ্মার চরে আত্মগোপনে ছিল আবজাল।
সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুই মামলায় স্বাস্থ্য সেক্টরে দুর্নীতির মাফিয়াখ্যাত স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী আবজাল হোসেনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৪ দিনের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল করাগার থেকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আবজালকে নিয়ে আনা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম তাকে প্রথম দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বর্তমানে দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজতখানায় আছেন আফজাল হোসেন।
দুদক সূত্র জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ পৃথক দুই মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেন। রিমান্ড হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবজালকে কারাগার থেকে দুদক হেফাজতে নিয়ে আসে। গতকাল প্রথমদিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আবজাল বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এর আগে গত ২৬ আগস্ট সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে আবজাল আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে বিকেলে আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৭ জুন দুদক উপপরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ কার্যালয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দুটি করেন। মামলা দুটিতে আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৬১ হাজার ৪৯৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় দীর্ঘ সময় ধরে স্থানাস্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ২৮৪ কোটি ৫১ লাখ ১৩ হাজার ২০৭ টাকার মানি লন্ডারিং অপরাধের অভিযোগও করা হয়েছে। আবজালের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি দুদকে পেশ করা সম্পদ বিবরণীতে দুই কোটি ২ লাখ ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৮৫ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম ও আবজালকে যৌথভাবে আসামি করে করা মামলায় ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকার সম্পদের কথা বলা হয়েছে। তিনি দুদকের কাছে ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়, আবজালের নামে থাকা সম্পদের চেয়ে তার স্ত্রীর নামে সম্পদের পরিমাণ বেশি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তিনি স্ত্রীর নামে সম্পদ করেছেন। এসব সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবজালের নামে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকার মানিলন্ডারিং অপরাধের প্রমাণ মিলেছে। রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকার মানি লন্ডারিং অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানে আবজাল দম্পতির নানা কাহিনী বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে আবদালও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। অনুসন্ধানে আবদাল দম্পতির হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগ অনুসন্ধানের পর্যায়ে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে আত্মগোপন করে আবজাল দম্পতি। তখন প্রচার হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে আবজাল দম্পতি। মূলত পদ্মার চরে আত্মগোপন করে আবজাল। দেশ থেকে পালিয়ে গেছে প্রচার হওয়ার পর আবদাল দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন দুদক মনে করেছিল আবজাল দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ নিয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশনের কাছেও তথ্য চায় দুদক। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। শেষ মেষ দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকার পর আবদাল গোপনে জামিন নিতে আসে। এরপর জামিন নিতে আসার পর ধরা পড়ে। তখন পরিষ্কার হয় মূলত পদ্মার চরে আত্মগোপনে ছিল আবজাল।