রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত হবে

রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না গেলে উগ্রবাদের বিকাশ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। গত শনিবার আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। উক্ত বৈঠকে মায়ানমার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসিয়ানের সহায়তা চান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা না হলে যে আঞ্চলিক শান্তি বিঘিœত হবে সেটা আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছি। রোহিঙ্গা সংকট শুধু এ অঞ্চলেই প্রভাব ফেলবে তা নয়। এ সংকটের সমাধান না হলে গোটা বিশ্বকেই এক সময় এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পৃথিবী নামক এ গ্রহ আজ বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে।

এক দেশের উন্নয়ন-উদ্ভাবন যেমন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তেমন এক দেশের সংকটে অন্যান্য দেশও বিপর্যস্ত হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, কোন একটি সংকটে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ থাকা কতটা জরুরি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, এ মহামারীতেও দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। যার জন্য মানুষকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকটকে কেউ যদি শুধু মায়ানমার বা বাংলাদেশের সমস্যা বলে মনে করেন সেটা ভুল হবে। এটা গোটা মানব জাতির সমস্যা। সংশ্লিষ্ট সব দেশকে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এ সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, অনেক পরাশক্তি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কূট রাজনীতি করছে। এ কারণেই মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া বা মায়ানমারের সেনাবাহিনীর বিচারের যে দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠেছে তা মায়ানমার সরকার উপেক্ষা করে আসছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি দেশটির মনোভাব বদলায়নি। যে কারণে শরণার্থী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশে ফিরতে চাচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ উপস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে কেন্দ্র করে নানা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী অপতৎপরতা শুরু করেছে। চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে হত্যা, ধর্ষণ, মানব পাচারের মতো অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী একাধিক চক্র রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে যে, ক্যাম্পে থাকা লক্ষাধিক রোহিঙ্গার হদিস মিলছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

রোহিঙ্গারা যতদিন নিজ দেশে ফিরে না যাবে ততদিন এ সমস্যার টেকসই সমাধান হবে না। মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা টেকসই সমাধান মায়ানমারকে রাজি করাতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে নিয়মিত বাংলাদেশকে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি এ ইস্যুতে চীন, রাশিয়া, ভারতকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে উল্লিখিত দেশগুলোর ভূমিকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাদের পাশে পেতে হলে দূরদর্শী কূটনীতি প্রয়োজন পড়বে।

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭

রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত হবে

রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করা না গেলে উগ্রবাদের বিকাশ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। গত শনিবার আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। উক্ত বৈঠকে মায়ানমার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসিয়ানের সহায়তা চান। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা না হলে যে আঞ্চলিক শান্তি বিঘিœত হবে সেটা আমরা গোড়া থেকেই বলে আসছি। রোহিঙ্গা সংকট শুধু এ অঞ্চলেই প্রভাব ফেলবে তা নয়। এ সংকটের সমাধান না হলে গোটা বিশ্বকেই এক সময় এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পৃথিবী নামক এ গ্রহ আজ বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে।

এক দেশের উন্নয়ন-উদ্ভাবন যেমন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তেমন এক দেশের সংকটে অন্যান্য দেশও বিপর্যস্ত হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, কোন একটি সংকটে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ থাকা কতটা জরুরি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, এ মহামারীতেও দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। যার জন্য মানুষকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকটকে কেউ যদি শুধু মায়ানমার বা বাংলাদেশের সমস্যা বলে মনে করেন সেটা ভুল হবে। এটা গোটা মানব জাতির সমস্যা। সংশ্লিষ্ট সব দেশকে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এ সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, অনেক পরাশক্তি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কূট রাজনীতি করছে। এ কারণেই মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া বা মায়ানমারের সেনাবাহিনীর বিচারের যে দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠেছে তা মায়ানমার সরকার উপেক্ষা করে আসছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি দেশটির মনোভাব বদলায়নি। যে কারণে শরণার্থী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশে ফিরতে চাচ্ছে না।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ উপস্থিতির কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে কেন্দ্র করে নানা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী অপতৎপরতা শুরু করেছে। চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে হত্যা, ধর্ষণ, মানব পাচারের মতো অপরাধে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী একাধিক চক্র রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছে। ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে যে, ক্যাম্পে থাকা লক্ষাধিক রোহিঙ্গার হদিস মিলছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

রোহিঙ্গারা যতদিন নিজ দেশে ফিরে না যাবে ততদিন এ সমস্যার টেকসই সমাধান হবে না। মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা টেকসই সমাধান মায়ানমারকে রাজি করাতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ফোরামে নিয়মিত বাংলাদেশকে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি এ ইস্যুতে চীন, রাশিয়া, ভারতকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে উল্লিখিত দেশগুলোর ভূমিকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাদের পাশে পেতে হলে দূরদর্শী কূটনীতি প্রয়োজন পড়বে।