সওজ-বিটিসিএলের সমন্বয়হীনতায় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক সংস্কার বন্ধ

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ৯৪০ মিটার রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তার পাশে ভুগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি তার না সরানোর কারণে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে বাংলাদেশ বিটিসিএলের সমন্বয়হীনতার কারণে কাজটি শুরু হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

মেহেরপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের-গাংনী-কুষ্টিয়া সড়কটির পূনার্ঙ্গভাবে কাজ হয়েছিল বছর দশেক আগে। তারপরে আর কাজ হয়নি। সড়কের গাংনী মহিলা কলেজ মোড় ও সাবেক সংসদ সদস্যর বাসার সামনেসহ অধিকাংশস্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়াও সড়কটির চোখতোলা মাঠের ৯৪০ মিটার একবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই ওইস্থানে কোন রকম চলাচলের জন্য ব্যয় করা হয় কয়েক লাখ টাকা।

সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কারকরণের লক্ষ্যে পুনরায় টেন্ডার করা হয়। কাজ পায় জহিরুল লিমিটেড। মোট ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজটির কার্যাদেশ পান চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি। এ সময় কাজটি শুরু করা হলে ভুগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি তারের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনার কারণে কাজটি বন্ধ রাখা হয়। বিষয়টি মেহেরপুর জেলা বিটিসিএলকে জানানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ আজও তার সরিয়ে না নেয়ায় কাজটি আর শুরু করা সম্ভব হয়নি। বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন সদুত্তোর মেলেনি।

মেহেরপুর বিটিসিএল বলছে অন্য কথা। তাদের ভাষ্য, সড়ক ও জনপথ বিভাগের চিঠি বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ ক্ষতিপূরণ না দিলে ভুগর্ভস্থ তার সরানো সম্ভব নয়। অনেক খরচের বিষয় থাকায় জেলা কার্যালয়ের সম্ভব হচ্ছে না তার সরানো। ফলে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, গাংনীর চোখতোলা নামক স্থানের সড়কটির সমস্যা অন্তত ৫০ বছর ধরে। প্রতি সপ্তাহে সড়ক ও জনপথের লোকজন রাস্তার দেবে যাওয়া অংশে ইট দিয়ে ভর্তি করে যান চলাচলের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে। প্রতিদিনই ভাঙ্গা রাস্তায় কোন না কোন যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছে স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যানবাহন। এছাড়াও মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়ার খলিশাকুন্ডি নামক স্থান পর্যন্ত সারাবছরই ছোট ছোট গর্তে পাথর দিয়ে তার ওপর বিটুমিন ছিটিয়ে চলছে পুটিংয়ের কাজ।

আন্তঃজেলা চলাচলকারী এইচআর পরিবহনের চালক সবুজ হোসেন বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কসহ সব সড়কেই বাধা ধরা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। চোখতোলা মাঠের এই রাস্তার এ কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই ৫ মিনিট চলে যায়। যথাসময়ে পৌঁছতে না পারলে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা গুণতে হয়। বিশেষ করে চোখতোলার সড়কের গর্তে পড়ে মাঝে মাঝে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। একই কথা জানালেন এমএম পবিহনের চালক আঙ্গুর আলী।

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই রাস্তা সংস্কারের জন্য বছরের প্রথম দিকেই কার্যাদেশ দিয়েছিলাম। ঠিকাদারও যথা সময়ে কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু রাস্তার পাশেই ভুগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি তার থাকায় কাজ বন্ধ করে দেয় বিটিসিএল। টিঅ্যান্ডটির তার সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে দুইবার চিঠি দেয়া হলেও কোন সাড়া মেলেনি। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই বিশেষ ব্যবস্থায় আবার কাজ শুরু করা হবে। বাংলাদেশ বিটিসিএলের মেহেরপুরের সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমদের ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় তার সরানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি আবারও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখবো কিভাবে সরানোর ব্যবস্থা করা যায়। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম জানান, রাস্তাটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিরসনের ব্যবস্থা করব।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

সওজ-বিটিসিএলের সমন্বয়হীনতায় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক সংস্কার বন্ধ

প্রতিনিধি, মেহেরপুর

image

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ৯৪০ মিটার রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। রাস্তার পাশে ভুগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি তার না সরানোর কারণে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে বাংলাদেশ বিটিসিএলের সমন্বয়হীনতার কারণে কাজটি শুরু হচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

মেহেরপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুরের-গাংনী-কুষ্টিয়া সড়কটির পূনার্ঙ্গভাবে কাজ হয়েছিল বছর দশেক আগে। তারপরে আর কাজ হয়নি। সড়কের গাংনী মহিলা কলেজ মোড় ও সাবেক সংসদ সদস্যর বাসার সামনেসহ অধিকাংশস্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়াও সড়কটির চোখতোলা মাঠের ৯৪০ মিটার একবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই ওইস্থানে কোন রকম চলাচলের জন্য ব্যয় করা হয় কয়েক লাখ টাকা।

সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কারকরণের লক্ষ্যে পুনরায় টেন্ডার করা হয়। কাজ পায় জহিরুল লিমিটেড। মোট ৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজটির কার্যাদেশ পান চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি। এ সময় কাজটি শুরু করা হলে ভুগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি তারের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনার কারণে কাজটি বন্ধ রাখা হয়। বিষয়টি মেহেরপুর জেলা বিটিসিএলকে জানানো হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ আজও তার সরিয়ে না নেয়ায় কাজটি আর শুরু করা সম্ভব হয়নি। বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন সদুত্তোর মেলেনি।

মেহেরপুর বিটিসিএল বলছে অন্য কথা। তাদের ভাষ্য, সড়ক ও জনপথ বিভাগের চিঠি বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ ক্ষতিপূরণ না দিলে ভুগর্ভস্থ তার সরানো সম্ভব নয়। অনেক খরচের বিষয় থাকায় জেলা কার্যালয়ের সম্ভব হচ্ছে না তার সরানো। ফলে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, গাংনীর চোখতোলা নামক স্থানের সড়কটির সমস্যা অন্তত ৫০ বছর ধরে। প্রতি সপ্তাহে সড়ক ও জনপথের লোকজন রাস্তার দেবে যাওয়া অংশে ইট দিয়ে ভর্তি করে যান চলাচলের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে। প্রতিদিনই ভাঙ্গা রাস্তায় কোন না কোন যানবাহন নষ্ট হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছে স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যানবাহন। এছাড়াও মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়ার খলিশাকুন্ডি নামক স্থান পর্যন্ত সারাবছরই ছোট ছোট গর্তে পাথর দিয়ে তার ওপর বিটুমিন ছিটিয়ে চলছে পুটিংয়ের কাজ।

আন্তঃজেলা চলাচলকারী এইচআর পরিবহনের চালক সবুজ হোসেন বলেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কসহ সব সড়কেই বাধা ধরা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। চোখতোলা মাঠের এই রাস্তার এ কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই ৫ মিনিট চলে যায়। যথাসময়ে পৌঁছতে না পারলে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা গুণতে হয়। বিশেষ করে চোখতোলার সড়কের গর্তে পড়ে মাঝে মাঝে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। একই কথা জানালেন এমএম পবিহনের চালক আঙ্গুর আলী।

মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই রাস্তা সংস্কারের জন্য বছরের প্রথম দিকেই কার্যাদেশ দিয়েছিলাম। ঠিকাদারও যথা সময়ে কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু রাস্তার পাশেই ভুগর্ভস্থ টিঅ্যান্ডটি তার থাকায় কাজ বন্ধ করে দেয় বিটিসিএল। টিঅ্যান্ডটির তার সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে দুইবার চিঠি দেয়া হলেও কোন সাড়া মেলেনি। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই বিশেষ ব্যবস্থায় আবার কাজ শুরু করা হবে। বাংলাদেশ বিটিসিএলের মেহেরপুরের সহকারী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমদের ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় তার সরানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি আবারও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখবো কিভাবে সরানোর ব্যবস্থা করা যায়। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম জানান, রাস্তাটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিরসনের ব্যবস্থা করব।