রংপুর মিঠাপুকুরে

হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ চেষ্টা

আ’লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা : নারীসহ আহত ১০ থানায় মামলা-পুলিশ নিষ্ক্রিয়

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ঈদুলপুর এলাকায় শত বছর ধরে বসবাস করা ১২টি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুরো জায়গা দখল করার অপচেষ্টায় বাধা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে তার দলবলের হামলায় নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা এ ঘটনায় কলেজছাত্রীর গলাটিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না বরং উল্টো আসামিরা সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করলেও আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এলাকাবাসী ও পুলিশ এবং নির্যাতিতারা অভিযোগ করেছেÑ শত বছর ধরে ১২টি হিন্দু পরিবার মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের জায়গীরহাট ঈদুলপুর গ্রামে সরকারের ১৮ শতক জমিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। জায়গাটি জায়গীরহাট বাজারসংলগ্ন হওয়ায় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনের। বেশ কিছুদিন ধরে ওই স্থানে বসবাসকারী ১২টি হিন্দু পরিবারকে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাবার জন্য নানানভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল তার লোকজন। গত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ইউপি মেম্বার সাজু এনামুল হক আবুল কালামসহ অর্ধ শতাধিক দলবল নিয়ে সেখানে একটি ক্লাব ঘর স্থাপন করে সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে সেখানে বসবাসকারী অঞ্জলি মোহন্তসহ অন্যরা বাঁধা প্রদান করলে আওয়ামী লীগ নেতার লেলিয়ে দেয়া লোকজন তাকে বেদম মারধর করে। এ সময় তার কন্যা রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তার মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন নিজেই মেয়েটির গলা টিপে ধরে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয় দফায় দফায় তাকে মারধর করে। (পুরো দৃশ্য ভিডিও করা আছে) এ সময় সেখানে অবস্থানরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করা হয়। তারা নারীদের শ্লীলতাহানি করে। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাদের রক্ষা করে।

এ ঘটনায় অঞ্জলি মোহন্তের স্বামী রহত মোহন্ত বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে পরের দিন শনিবার বিকেলে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। যার মামলা নম্বর ৩২ তারিখ ১২.০৯.২০ইং। ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৫৪ দ-বিধি। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয় বলে বাদী রতন মোহন্ত জানান।

এদিকে মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে মামলা দায়ের করার পর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন প্রকাশ্যই তাদের ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করছে। তার লোকজন ওই এলাকা থেকে চলে না গেলে তাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিবে ও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে বসবাসকারী হিন্দু পরিবারগুলো জানায়, তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। অঞ্জলি রানী, সমাপ্তি মোহন্ত, বাবু, দুলালীসহ অন্যরা অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে তাদের শত বছর ধরে বসবাস করা স্থান থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্যই কলেজছাত্রী সমাপ্তি মোহন্তকে মারধর ও গলাটিপে ধরেছে এ ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচার এবং নিরাপত্তা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি হামলা চালাতে নয় তাদের সেভ করতে সেখানে গিয়েছিলাম তাদের ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছি ঠিক এটা নির্যাতন নয় শাসন। আসলে কোন রাজনৈতিক মহল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে স্থানীয় লতিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ম-লের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিন্দু পরিবারগুলো তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে, লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরেও যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু আইনেই সমাধান হবে তবে তাদের উপর যেন ন্যায় বিচার হয়, সেটা তিনি চান বলে জানান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

রংপুর মিঠাপুকুরে

হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ চেষ্টা

আ’লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা : নারীসহ আহত ১০ থানায় মামলা-পুলিশ নিষ্ক্রিয়

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ঈদুলপুর এলাকায় শত বছর ধরে বসবাস করা ১২টি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুরো জায়গা দখল করার অপচেষ্টায় বাধা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে তার দলবলের হামলায় নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা এ ঘটনায় কলেজছাত্রীর গলাটিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না বরং উল্টো আসামিরা সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করলেও আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এলাকাবাসী ও পুলিশ এবং নির্যাতিতারা অভিযোগ করেছেÑ শত বছর ধরে ১২টি হিন্দু পরিবার মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের জায়গীরহাট ঈদুলপুর গ্রামে সরকারের ১৮ শতক জমিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। জায়গাটি জায়গীরহাট বাজারসংলগ্ন হওয়ায় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনের। বেশ কিছুদিন ধরে ওই স্থানে বসবাসকারী ১২টি হিন্দু পরিবারকে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাবার জন্য নানানভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল তার লোকজন। গত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ইউপি মেম্বার সাজু এনামুল হক আবুল কালামসহ অর্ধ শতাধিক দলবল নিয়ে সেখানে একটি ক্লাব ঘর স্থাপন করে সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে সেখানে বসবাসকারী অঞ্জলি মোহন্তসহ অন্যরা বাঁধা প্রদান করলে আওয়ামী লীগ নেতার লেলিয়ে দেয়া লোকজন তাকে বেদম মারধর করে। এ সময় তার কন্যা রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তার মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন নিজেই মেয়েটির গলা টিপে ধরে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয় দফায় দফায় তাকে মারধর করে। (পুরো দৃশ্য ভিডিও করা আছে) এ সময় সেখানে অবস্থানরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করা হয়। তারা নারীদের শ্লীলতাহানি করে। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাদের রক্ষা করে।

এ ঘটনায় অঞ্জলি মোহন্তের স্বামী রহত মোহন্ত বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে পরের দিন শনিবার বিকেলে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। যার মামলা নম্বর ৩২ তারিখ ১২.০৯.২০ইং। ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৫৪ দ-বিধি। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয় বলে বাদী রতন মোহন্ত জানান।

এদিকে মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে মামলা দায়ের করার পর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন প্রকাশ্যই তাদের ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করছে। তার লোকজন ওই এলাকা থেকে চলে না গেলে তাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিবে ও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে বসবাসকারী হিন্দু পরিবারগুলো জানায়, তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। অঞ্জলি রানী, সমাপ্তি মোহন্ত, বাবু, দুলালীসহ অন্যরা অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে তাদের শত বছর ধরে বসবাস করা স্থান থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্যই কলেজছাত্রী সমাপ্তি মোহন্তকে মারধর ও গলাটিপে ধরেছে এ ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচার এবং নিরাপত্তা দাবি করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি হামলা চালাতে নয় তাদের সেভ করতে সেখানে গিয়েছিলাম তাদের ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছি ঠিক এটা নির্যাতন নয় শাসন। আসলে কোন রাজনৈতিক মহল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে স্থানীয় লতিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ম-লের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিন্দু পরিবারগুলো তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে, লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরেও যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু আইনেই সমাধান হবে তবে তাদের উপর যেন ন্যায় বিচার হয়, সেটা তিনি চান বলে জানান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।