নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তৎপর হোন

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের কর্মপ্রত্যাশী তরুণ-বেকারদের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশে তরুণদের কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আইএলও প্রকাশ করেছে গত মাসে। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মপ্রত্যাশী তরুণ বেকার হয়েছে। গত বছর তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। কৃষি, খুচরা বিক্রি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অভ্যন্তরীণ পরিবহন, বস্ত্র ও নির্মাণ খাতে তরুণরা বেশি কাজ হারিয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বেকারত্বের হার এমনিতেই বেশি। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেকারত্ব আরও বাড়ছে। কেবল তরুণদের মধ্যেই বেকারত্ব সীমাবদ্ধ নেই। মহামারীর প্রভাবে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। কৃষি খাত যে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেÑ সেটা বোঝা যায় এই খাতে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের কাজ হারানোর মধ্য দিয়ে। কৃষি খাত কেবল করোনার জন্য নয়, দফায় দফায় বন্যার জন্যও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাত অবদান রেখে যাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও কৃষি খাতনির্ভর। কৃষির বিপর্যয় কাটাতে যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে তার সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গ্রামকেন্দ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নেই কোন বৈচিত্র্য। ফসল উৎপাদন করে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে তুলে দেয়াই যেন কৃষকের কাজ। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য আনা গেলে কর্মসংস্থান বাড়ানো যেত।

সরকার বস্ত্র খাতকে বিভিন্ন সময় নানান সুবিধা দিয়ে আসছে। মহামারীতে সাধারণ ছুটির সময়ও পোশাক কারখানা চালু ছিল। আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পোশাক শিল্প পুরনো ক্রয় আদেশ ফিরে পেয়েছে। নতুন ক্রয় আদেশও আসছে। এরপরও এই খাতে বেকারত্ব বাড়ছে। রফতানি পণ্য বহুমুখী করা না গেলে কেবল পোশাক খাত দিয়ে বেকারত্ব কমানো যাবে না। পাট, চামড়া, প্রভৃতি খাতের রফতানি বাড়াতে হবে।

দেশের কর্মসংস্থানের বড় একটি ক্ষেত্র হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এ খাতেই দেশের ৯০ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে টেকসই করা যাবে না। সরকারকে উৎপাদন খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের নির্ভরতা কমাতে হবে। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যাংক ঋণ যেন খেলাপি না হয় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রকৃত ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের ঋণ বা প্রণোদনা দিতে হবে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা না গেলে প্রবৃদ্ধি বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে কোন লাভ হবে না। দেশে যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না তা নয়। তবে যে পরিমাণ কাজ তৈরি হচ্ছে তার তুলনায় অনেক বেশি মানুষ প্রতিদিন কর্মবাজারে হাজির হচ্ছে।

এদিকে শ্রমবাজারও সংকুচিত হয়ে আসছে। কাজেই অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। ইপিজেডগুলোতে মানসম্মত বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। মহামারীর কারণে শিল্পোন্নত অনেক দেশ নতুন বিনিয়োগক্ষেত্র খুঁজছে। বাংলাদেশকে এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তৎপর হোন

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের কর্মপ্রত্যাশী তরুণ-বেকারদের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশে তরুণদের কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আইএলও প্রকাশ করেছে গত মাসে। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মপ্রত্যাশী তরুণ বেকার হয়েছে। গত বছর তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। কৃষি, খুচরা বিক্রি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অভ্যন্তরীণ পরিবহন, বস্ত্র ও নির্মাণ খাতে তরুণরা বেশি কাজ হারিয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে বেকারত্বের হার এমনিতেই বেশি। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেকারত্ব আরও বাড়ছে। কেবল তরুণদের মধ্যেই বেকারত্ব সীমাবদ্ধ নেই। মহামারীর প্রভাবে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। কৃষি খাত যে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেÑ সেটা বোঝা যায় এই খাতে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের কাজ হারানোর মধ্য দিয়ে। কৃষি খাত কেবল করোনার জন্য নয়, দফায় দফায় বন্যার জন্যও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাত অবদান রেখে যাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি এখনও কৃষি খাতনির্ভর। কৃষির বিপর্যয় কাটাতে যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে তার সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গ্রামকেন্দ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নেই কোন বৈচিত্র্য। ফসল উৎপাদন করে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে তুলে দেয়াই যেন কৃষকের কাজ। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য আনা গেলে কর্মসংস্থান বাড়ানো যেত।

সরকার বস্ত্র খাতকে বিভিন্ন সময় নানান সুবিধা দিয়ে আসছে। মহামারীতে সাধারণ ছুটির সময়ও পোশাক কারখানা চালু ছিল। আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পোশাক শিল্প পুরনো ক্রয় আদেশ ফিরে পেয়েছে। নতুন ক্রয় আদেশও আসছে। এরপরও এই খাতে বেকারত্ব বাড়ছে। রফতানি পণ্য বহুমুখী করা না গেলে কেবল পোশাক খাত দিয়ে বেকারত্ব কমানো যাবে না। পাট, চামড়া, প্রভৃতি খাতের রফতানি বাড়াতে হবে।

দেশের কর্মসংস্থানের বড় একটি ক্ষেত্র হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এ খাতেই দেশের ৯০ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে টেকসই করা যাবে না। সরকারকে উৎপাদন খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোর ওপর সরকারের নির্ভরতা কমাতে হবে। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যাংক ঋণ যেন খেলাপি না হয় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রকৃত ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের ঋণ বা প্রণোদনা দিতে হবে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা না গেলে প্রবৃদ্ধি বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে কোন লাভ হবে না। দেশে যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না তা নয়। তবে যে পরিমাণ কাজ তৈরি হচ্ছে তার তুলনায় অনেক বেশি মানুষ প্রতিদিন কর্মবাজারে হাজির হচ্ছে।

এদিকে শ্রমবাজারও সংকুচিত হয়ে আসছে। কাজেই অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হবে। ইপিজেডগুলোতে মানসম্মত বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। মহামারীর কারণে শিল্পোন্নত অনেক দেশ নতুন বিনিয়োগক্ষেত্র খুঁজছে। বাংলাদেশকে এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে।