গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করুন

করোনাভাইরাসের মহামারীতে জনজীবন স্থবির হয়ে থাকলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। বরং ইয়াবা পাচারে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে, বাহক হিসেবে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে? ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পথ পরিবর্তন করা হয়েছে, ইয়াবার রঙও পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রচলিত গোলাপি বা লালচে রঙের বদলে, হলুদ, বাসন্তী, হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের ইয়াবা বড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে। মায়ানমার থেকে সীমান্তপথে প্রতিদিন লাখ লাখ পিস ইয়াবা ঢুকছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। সীমান্তের উভয় পাশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো চোরাচালানের মূল ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেকনাফ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইয়াবা পাচারের পথটি টেকনাফ থেকে সরে গিয়ে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্টে এসেছে। কক্সবাজার এবং বান্দরবানভিত্তিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মায়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ইয়াবা চালান গ্রহণ করে।

ইয়াবাসহ মাদক পাচার বন্ধে দুই বছর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। জোরেশোরে চলে কথিত বন্দুকযুদ্ধও। এ সময় বিশেষ নজর দেয়া হয় ইয়াবা পাচারের সদর দরজাখ্যাত টেকনাফে। তখন অনেকে ধরে নিয়েছিলেন এবার হয়তো মাদকের পাচার ও কেনাবেচা কমে যাবে। কিন্তু এতদিন পরও এর কোন সমাধান মেলেনি। বরং এর উল্টো চিত্রই দৃশ্যমান হয়েছে।

এর মূল কারণ মাদকবিরোধী অভিযানে কোন গডফাদার বা মূল ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়নি? যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের মধ্যে গডফাদাররা নেই? তারা মূলত বাহক? ফলে ইয়াবার মূল ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে? এবং বেশিরভাগ গদফাদার রাজনৈতিক বা অন্য কোন পরিচয় বা আশ্রয় ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই অবস্থান করছে? শুধু বাহক হিসেবে নতুন অনেক লোক যুক্ত হয়েছে? কৌশলে পরিবর্তন হয়েছে, রুট বদলেছে?

যদিও এসব কথা গণমাধ্যমে বারবার আলোচিত হয়েছে। মাদক পাচারের গডফাদারদের ব্যাপারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়েছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। মূল অপরাধীরা রহস্যজনক কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ফলে ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়নি।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীব্যাপীই মাদকের চোরাচালান হচ্ছে। যে দেশের সরকারের সদিচ্ছা আছে তারাই মাদক নির্মূল করতে পারছে। আর যে সরকারের সদিচ্ছা নেই তারা পারছে না। কাজেই সরকারের সত্যিকারের সদিচ্ছা থাকলে দেশ থেকে শুধু ইয়াবা নয় সব ধরনের মাদকদ্রব্য নির্মূল করা সম্ভব। এবং এও উল্লেখ্য যে, সরকার যতদিন পর্যন্ত আন্তরিক না হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মাদক বন্ধ করা যাবে না।

মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশ, সমাজ ও তারুণ্যকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে। মাদক গডফাদারদের আত্মসমর্পণ নয়, তাদের নির্মূল করার লক্ষ্যে। মাদকের ব্যবহার ও পাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা, আইনের ফাঁকফোকর বন্ধের বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। মাদকের চোরাচালান রোধে পুলিশ বাহিনীকে আরও কমিটেড, তৎপর, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয় যে, তারা জানে, কারা ইয়াবা পাচার করে, কোন কোন পথে চোরাচালান হয়। প্রশ্ন হল, তারা যদি সেটা জেনেই থাকে তবে সে পথ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? কেন মাদক কারবারিদের মূলোৎপাটন করা হচ্ছে না? এর একমাত্র কারণ মাদকের গডফাদাররা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান বন্ধ না হলে পুলিশের জোরালো পদক্ষেপেও মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধ করা হলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সত্যিকার অর্থে সক্রিয় হলে দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা দুরূহ হবে না।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

ইয়াবা পাচার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করুন

করোনাভাইরাসের মহামারীতে জনজীবন স্থবির হয়ে থাকলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। বরং ইয়াবা পাচারে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে, বাহক হিসেবে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে? ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পথ পরিবর্তন করা হয়েছে, ইয়াবার রঙও পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রচলিত গোলাপি বা লালচে রঙের বদলে, হলুদ, বাসন্তী, হালকা গোলাপি ও সাদা রঙের ইয়াবা বড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে। মায়ানমার থেকে সীমান্তপথে প্রতিদিন লাখ লাখ পিস ইয়াবা ঢুকছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। সীমান্তের উভয় পাশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো চোরাচালানের মূল ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেকনাফ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইয়াবা পাচারের পথটি টেকনাফ থেকে সরে গিয়ে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্টে এসেছে। কক্সবাজার এবং বান্দরবানভিত্তিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মায়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ইয়াবা চালান গ্রহণ করে।

ইয়াবাসহ মাদক পাচার বন্ধে দুই বছর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। জোরেশোরে চলে কথিত বন্দুকযুদ্ধও। এ সময় বিশেষ নজর দেয়া হয় ইয়াবা পাচারের সদর দরজাখ্যাত টেকনাফে। তখন অনেকে ধরে নিয়েছিলেন এবার হয়তো মাদকের পাচার ও কেনাবেচা কমে যাবে। কিন্তু এতদিন পরও এর কোন সমাধান মেলেনি। বরং এর উল্টো চিত্রই দৃশ্যমান হয়েছে।

এর মূল কারণ মাদকবিরোধী অভিযানে কোন গডফাদার বা মূল ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়নি? যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের মধ্যে গডফাদাররা নেই? তারা মূলত বাহক? ফলে ইয়াবার মূল ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে? এবং বেশিরভাগ গদফাদার রাজনৈতিক বা অন্য কোন পরিচয় বা আশ্রয় ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই অবস্থান করছে? শুধু বাহক হিসেবে নতুন অনেক লোক যুক্ত হয়েছে? কৌশলে পরিবর্তন হয়েছে, রুট বদলেছে?

যদিও এসব কথা গণমাধ্যমে বারবার আলোচিত হয়েছে। মাদক পাচারের গডফাদারদের ব্যাপারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়েছে, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। মূল অপরাধীরা রহস্যজনক কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ফলে ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়নি।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবীব্যাপীই মাদকের চোরাচালান হচ্ছে। যে দেশের সরকারের সদিচ্ছা আছে তারাই মাদক নির্মূল করতে পারছে। আর যে সরকারের সদিচ্ছা নেই তারা পারছে না। কাজেই সরকারের সত্যিকারের সদিচ্ছা থাকলে দেশ থেকে শুধু ইয়াবা নয় সব ধরনের মাদকদ্রব্য নির্মূল করা সম্ভব। এবং এও উল্লেখ্য যে, সরকার যতদিন পর্যন্ত আন্তরিক না হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মাদক বন্ধ করা যাবে না।

মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশ, সমাজ ও তারুণ্যকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে। মাদক গডফাদারদের আত্মসমর্পণ নয়, তাদের নির্মূল করার লক্ষ্যে। মাদকের ব্যবহার ও পাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা, আইনের ফাঁকফোকর বন্ধের বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। মাদকের চোরাচালান রোধে পুলিশ বাহিনীকে আরও কমিটেড, তৎপর, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয় যে, তারা জানে, কারা ইয়াবা পাচার করে, কোন কোন পথে চোরাচালান হয়। প্রশ্ন হল, তারা যদি সেটা জেনেই থাকে তবে সে পথ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? কেন মাদক কারবারিদের মূলোৎপাটন করা হচ্ছে না? এর একমাত্র কারণ মাদকের গডফাদাররা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান বন্ধ না হলে পুলিশের জোরালো পদক্ষেপেও মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধ করা হলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সত্যিকার অর্থে সক্রিয় হলে দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা দুরূহ হবে না।