গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আজ ১৫ সেপ্টেম্বর। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত ও গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য এ বিশেষ দিনটি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকেই প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে। এর আগে এ দিবসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিত হতো নভেম্বরে, নাইজেরিয়ায় ২৬ মে। কিন্তু জাতিসংঘের এ ঘোষণা দেওয়ার পর পুরো বিশ্বে ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিনটিতে জাতিসংঘ তার সকল সদস্য রাষ্ট্রকে নিজ নিজ জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের গুরুত্ব, তাৎপর্য, নীতি ও আচরণসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানায়।

১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) গণতন্ত্র বিষয়ে ইউনিভার্সাল ডিকারেশন অন ডেমোক্র্যাসি নামের একটি প্রস্তাব আনে। তাতে গণতন্ত্রের নীতি, আদর্শ, উপাদান, গণতান্ত্রিক সরকারের চর্চা এবং গণতন্ত্র সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরির বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়। ফ্রান্সের এ প্রস্তাবের আগেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। ফিলিপাইনে ফার্ডিনান্ড মার্কোজের ২০ বছরের স্বৈরশাসনের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর এ সম্মেলন হয়। সম্মেলনটির নাম ছিল ‘দি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন নিউ অ্যান্ড রিস্টোরড ডেমোক্র্যাসিজ’ তথা আইসিএনআরডি। ২০০৬ সালে আইসিএনআরডির ষষ্ঠতম সম্মেলনটি হয় কাতারের রাজধানী দোহায়। কাতারের এ সম্মেলনে গণতন্ত্রের মূলনীতি, মূল্যবোধ কার্যকরকরণ ও সম্প্রসারণে একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। এর অংশ হিসেবে একটি উপদেষ্টা বোর্ডও গঠন করা হয়। বোর্ডে কাতার একটি আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রস্তাব আনে। পরবর্তীতে কাতারের নেতৃত্বে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ ও প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। পরে ফ্রান্সের আইপিইউ ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে নির্ধারণে প্রস্তাব করলে প্রস্তাবটি ২০০৭ সালের ৮ নভেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

আজ আন্তর্জাতিকভাবে গণতন্ত্র দিবস পালিত হলেও সারাবিশ্বের কত শতাংশ মানুষ গণতন্ত্রের সুফল পাচ্ছে সেই প্রশ্নই আজ আলোচনার বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশে গণতন্ত্রের নামে যা চর্চা হচ্ছে, দৃশ্যত গণতান্ত্রিক মনে হলেও মর্মবস্তুর দিক থেকে তা আদৌ গণতান্ত্রিক কি-না সেই প্রশ্নই এখন প্রধান হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমানে আমরা এমন এক বিশ্বে অবস্থান করছি যখন বিভিন্ন দেশে কর্তৃত্ববাদী নেতাদের শাসন পরিলক্ষিত, এমনকি স্বৈরশাসকরা নিজেদের গণতন্ত্রের রক্ষক বলে দাবি করে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম কোম্পানি দি ইকোনমিস্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সূত্রমতে, গত এক বছরে (২০১৯) বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে। ২০০৬ সালের পর এই বছর খারাপ অবস্থানে আছে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক অবস্থা। কিন্তু সেই সিচুয়েশনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার জন্য আশার বাণী শুনিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইইইউ)। গণতন্ত্র সূচকে এ বছর আট ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগের বছর বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর নিয়ে ৮৮তম অবস্থানে ছিল কিন্তু এ বছর ৫ দশমিক ৮৮ স্কোর নিয়ে ৮ ধাপ এগিয়ে ৮০তম স্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের এমন উন্নতিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছে ইইইউ।

বিশ্বের যে দেশগুলো আজ গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে স্বৈরশাসনের ওপর ভিত্তি করে চলছে সেগুলোতে কবে গণতন্ত্রের পূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই অপেক্ষায় আজ দিন গুনছে বিশ্ববাসী। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে এটাই সবার প্রত্যাশা যে, গণতন্ত্রের পূর্ণ চর্চা বাস্তবায়িত হোক বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকে প্রতিটি ভূখণ্ডে।

ফজলে রাব্বি ফরহাদ

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও খবর

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আজ ১৫ সেপ্টেম্বর। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে গণতন্ত্র চর্চাকে উৎসাহিত ও গণতন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য এ বিশেষ দিনটি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর থেকেই প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে। এর আগে এ দিবসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিত হতো নভেম্বরে, নাইজেরিয়ায় ২৬ মে। কিন্তু জাতিসংঘের এ ঘোষণা দেওয়ার পর পুরো বিশ্বে ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিনটিতে জাতিসংঘ তার সকল সদস্য রাষ্ট্রকে নিজ নিজ জনগণের মাঝে গণতন্ত্রের গুরুত্ব, তাৎপর্য, নীতি ও আচরণসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে গণসচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানায়।

১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) গণতন্ত্র বিষয়ে ইউনিভার্সাল ডিকারেশন অন ডেমোক্র্যাসি নামের একটি প্রস্তাব আনে। তাতে গণতন্ত্রের নীতি, আদর্শ, উপাদান, গণতান্ত্রিক সরকারের চর্চা এবং গণতন্ত্র সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরির বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হয়। ফ্রান্সের এ প্রস্তাবের আগেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। ফিলিপাইনে ফার্ডিনান্ড মার্কোজের ২০ বছরের স্বৈরশাসনের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর এ সম্মেলন হয়। সম্মেলনটির নাম ছিল ‘দি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন নিউ অ্যান্ড রিস্টোরড ডেমোক্র্যাসিজ’ তথা আইসিএনআরডি। ২০০৬ সালে আইসিএনআরডির ষষ্ঠতম সম্মেলনটি হয় কাতারের রাজধানী দোহায়। কাতারের এ সম্মেলনে গণতন্ত্রের মূলনীতি, মূল্যবোধ কার্যকরকরণ ও সম্প্রসারণে একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। এর অংশ হিসেবে একটি উপদেষ্টা বোর্ডও গঠন করা হয়। বোর্ডে কাতার একটি আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রস্তাব আনে। পরবর্তীতে কাতারের নেতৃত্বে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ ও প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। পরে ফ্রান্সের আইপিইউ ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে নির্ধারণে প্রস্তাব করলে প্রস্তাবটি ২০০৭ সালের ৮ নভেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

আজ আন্তর্জাতিকভাবে গণতন্ত্র দিবস পালিত হলেও সারাবিশ্বের কত শতাংশ মানুষ গণতন্ত্রের সুফল পাচ্ছে সেই প্রশ্নই আজ আলোচনার বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশে গণতন্ত্রের নামে যা চর্চা হচ্ছে, দৃশ্যত গণতান্ত্রিক মনে হলেও মর্মবস্তুর দিক থেকে তা আদৌ গণতান্ত্রিক কি-না সেই প্রশ্নই এখন প্রধান হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমানে আমরা এমন এক বিশ্বে অবস্থান করছি যখন বিভিন্ন দেশে কর্তৃত্ববাদী নেতাদের শাসন পরিলক্ষিত, এমনকি স্বৈরশাসকরা নিজেদের গণতন্ত্রের রক্ষক বলে দাবি করে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম কোম্পানি দি ইকোনমিস্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সূত্রমতে, গত এক বছরে (২০১৯) বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবনমন ঘটেছে। ২০০৬ সালের পর এই বছর খারাপ অবস্থানে আছে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক অবস্থা। কিন্তু সেই সিচুয়েশনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার জন্য আশার বাণী শুনিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইইইউ)। গণতন্ত্র সূচকে এ বছর আট ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগের বছর বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর নিয়ে ৮৮তম অবস্থানে ছিল কিন্তু এ বছর ৫ দশমিক ৮৮ স্কোর নিয়ে ৮ ধাপ এগিয়ে ৮০তম স্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের এমন উন্নতিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছে ইইইউ।

বিশ্বের যে দেশগুলো আজ গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে স্বৈরশাসনের ওপর ভিত্তি করে চলছে সেগুলোতে কবে গণতন্ত্রের পূর্ণ শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই অপেক্ষায় আজ দিন গুনছে বিশ্ববাসী। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে এটাই সবার প্রত্যাশা যে, গণতন্ত্রের পূর্ণ চর্চা বাস্তবায়িত হোক বিশ্বের প্রতিটি দেশ থেকে প্রতিটি ভূখণ্ডে।

ফজলে রাব্বি ফরহাদ

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।