বাঙালির ভাষা রাষ্ট্রের পিতা ভাষা আন্দোলন ও মুজিব নির্যাতন

মোস্তাফা জব্বার

এটা সবাই জানেন যে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ঘিরে ১৯৪৮ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দি করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিমউদ্দীন সরকারের ৮ দফা সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। কিন্তু অচিরেই তার জীবনে শুরু হয় দীর্ঘ কারাবাস। মুক্তি পাবার দেড় মাসের মাথায় ১৯৪৯ সালের ২৯ এপ্রিল তাকে EPPPSO এর ১৮(২) ধারা মোতাবেক আইন অমান্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দেড় মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কি আইন অমান্য করেন তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করার বিষয়টি পাকিস্তানি পুলিশ কখনও মাথায়ই আনেনি। এ যাত্রায় গ্রেপ্তার করার পর কত তারিখ পর্যন্ত তিনি এই যাত্রায় জেলে ছিলেন, কত তারিখে মুক্তি পেয়েছেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ১৯৪৯ সালের সরকারি কোন নথি না পাওয়ায় এ পর্যন্ত সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ লেখক ২৭ জুলাই পর্যন্ত শেখ মুজিব জেলে ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ফরিদপুর DIB Memo No 486/61-49 dated the 21st Nov.1950 to the Spl.Supdt of Police, I B E. B-Dacca- ডিআইবি মেমো নং ৪৮৬/৬১-৪৯ ২১ নভেম্বর ১৯৫০ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট, আইবিইবি ঢাকা কে লেখা নথির তৃতীয় অংশের বিবরণ নিম্নরূপ:

On 19.7.49 Sk. Mujibur Rahman s/o lutfar Rahman of tangipara, Gopalganj and Abdul Salam Khan, M.A,B.L. s/o late Abdul Latif of Bejra, P.S, Muksudpur and of Faridpur town, two important members of the Awami Muslim League, held a public meeting, at Gopalganj in defiance of prohibitive orders u/s 144 Cr.P.C.They were prosecuted u/s 144 Cr P.C. and the case is subjudice.

অনুবাদ : ১৯-০৭-৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান পিতা লুৎফর রহমান টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ এবং আবদুল সালাম খান, এমএবিএল পিতা মৃত আবদুল লতিফ, বেজরা, ফরিদপুর শহরের মকসুদপুর থানা মুসলীম লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই সদস্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গোপালগঞ্জে জনসভা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে এবং মামলাটি বিচারাধীন।

বোঝা যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান এবং আবদুস সালাম খান ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে উক্ত সভা করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হয়। তবে ২৩ ও ২৪ জুন আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার সময় শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। শেখ মুজিব সম্ভবত জুলাই মাসের কোন এক সময় মুক্তি লাভ করেছিলেন। নিচে উদ্ধৃত ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে পুলিশের গোপন রিপোর্টে শেখ মুজিব সম্পর্কে সরকারের মনোভাব লক্ষণীয় :

The student of Gopalgonj town have been trying to organise is separate Student Organisation within the fold of the official Muslim League distinguished from the so-called Muslim students League (belonging to the group of Sk. Mujibur Rahman s/o Lutfar Rahman of tungipara, P.S Gopalganj, Dist- Faridpur). To this end in view they have been issuing liaflets depicting the organisation of Mr.H.S Suhrawardz to mislead the people of Pakistan and to hurl abuses to the late Quaid-I- Azam for his (Mr. Suhrawardz’s) selfish ends.

On 11.8.49 while some students were distributing the leaflets a band of students of the counter bloc named below snatched away the leaf lets and assailed the distributors.A case u/s 147/379 I.P.C was started at Gopalganj,P.S against all the accused students, who were arrested and subsequently released on bail.(19) (Ref: Extract from the weekly cnfdl.Report of the supdt. Of Police, Faridpur for week studzing Thursday, the 20th August, 1949.File No 482-49 KR(10) Page-No-(F/N-606-48.PF.Part-3)

অনুবাদ : গোপালগঞ্জ শহরের ছাত্ররা সরকারি মুসলিম লীগ তথাকথিত মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠনের নামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে (যারা শেখ মুজিবুর রহমানের দলের অন্তর্ভুক্ত যার পিতা শেখ লুৎফর রহমান, ফরিদপুর জেলা গোপালগঞ্জ থানা)। সোহরাওয়ার্দীর সংগঠ? পাকিস্তানের জনগণকে ভুল বোজাচ্ছে এবং ভুল চিত্র তুলে ধরে এবং সোহরাওয়ার্দীর কৃতকর্মের জন্য প্রয়াত কায়েদে আজমকে গালি দেয়। লিফলেট বিতরণ করার সময় কিছু ছাত্র এসে বিতরণকারীদের থেকে লিফলেট কেড়ে নিয়ে তাদের আক্রমণ করে। গোপালগঞ্জ থানায় অভিযুক্ত সব শিক্ষার্থীর নামে ১৪৭/৩৭৯ ধারায় মামলা শুরু হয়। যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মুক্তি পেয়েছিল। (Ref: Extract from the weekly cnfdl.Report of the supdt. Of Police, Faridpur for week studzing Thursday, the 20th August, 1949.File No 482-49 KR(10) Page-No-(F/N-606-48.PF.Part-3)

শেখ মুজিবকে এর মধ্যে কয়েকবার গ্রেপ্তার করার সরকারি গোপন নির্দেশ ছিল বলে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়। ১৭ অক্টোবর ১৯৪৯ সালের পূর্ব বাংলা আই বি রিপোর্ট নম্বর ১৫৬ তে উল্লেখ করা হয়-

On certain information, the officer of the E-P.Awami League at 150 Mughultali was searched at about 4-30 am. Today (17-10-49) for the arrest of Sheikh Mujibar Rahman and Shoukat Ali, the two militant members of the organisation who are evading arrest in connection with Kotwali P.S. case No 19(10)49 u/s 147/325 I P.C. and 7(3) B.S.P.O name of them was found there and nothing incriminating was seized. (২০) (প্রাগুক্ত নথি)

অনুবাদ : নির্দিষ্ট তথ্যের ভিক্তিতে ৪:৩০ এর দিকে ১৫০ মোগলটুলি ইপি আওয়ামী লীগের অফিসারের অনুসন্ধান করা হয়। জঙ্গি সংগঠনের দুই সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান এবং শওকত আলীকে আজ গ্রেপ্তারের জন্য যারা কতোয়ালি থানা মামলা নং ১৯(১০)৪৯ ধারা ১৪৭/৩২৫ আইপিসি এ গ্রেপ্তার এড়িয়ে আছেন এবং ৭(৩) বিএসপিও এর নাম সেখানে পাওয়া গেছে এবং দোষী সাব্যস্ত করার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

এটি এক অসাধারণ ভাবনার বিষয় যে পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য একের পর এক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখছেন। একটু ফাঁক পেলেই তিনি সভা সমাবেশও করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আরমানিটোলা ময়দানে ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সেদিনের গোপন পুলিশ রিপোর্ট হচ্ছে:

After the meeting a procession headed by Maulana Abdul Hamid Khan, Mvi samsul haq, M.L.A. and Sk Mujibur Rahman came Towards Ramna side via Nawabpur Road. Police Had to Resort to tear gas and a mild Lathi charge to disperse the processions. Ninteen persons including Mvi samsul haq, M.L.A were arrested on the spot and Case No 19 (10) 49 u/s 147,325 I.P.C and 7(3) 13. S.P.O was started at Kotwali P.S. (২১) (প্রাগুক্ত নথি)

অনুবাদ : বৈঠক শেষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এমভি শামসুল হক এমএলএ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল নবাবপুর রোড় হয়ে রমনার দিকে এসেছিল। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে। এমভি শামসুল হক, এমএলএসহ ১৯ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা নং ১৯(১০)৪৯ ইউ/এস ১৪৭,৩২৫ আই.পি.সি এবং ৭(৩)১৩. এস.পি.ও কতোয়ালি থানায় শুরু হয়েছিল। (২১)

পরবর্তী সময়ের পুলিশ রিপোর্টে দেখা যায় যে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে থানা এবং আদালতে ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে বিশেষ মামলা রুজু করা হয়েছিল। এতদসম্পর্কিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট নিম্নরূপ:

charge sheet no 211 dated 26.12.49 u/s 147/325 I. P.C and 7(3) B.S.P.O has been submitted in Kotwali P.S. case no 19, dated 11-10-49 against the following person: Acced. Sk. Mujibur Rahman who was absconding so long, has since been arrested and forwarded to court. (22) (Ref: Extract of Dacca DIB.Memo No 690/214-49.dated the 24th Jan.,1950 to the spurt of police,I B.,E.B.Dacca. Ref: This office No 375,dated12.1.50.F/N-606-48P.F Part-3)

অনুবাদ : নিম্নলিখিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইপিসি ১৪৭/৩২৫ ধারায় চার্জশিট নং ২১১, তারিখ ২৬-১২-৪৯ এবং ৭(৩) বিএসপিও জমা দেয়া হয়েছে কতোয়ালি থানায়। যার কেস নং ১৯, তারিখ ১১-১০-৪৯।

রেফারেন্স: ঢাকা ডিআইবি রিপোর্ট. মেমো নং ৬৯০/২১৪-৪৯. তারিখ ২৪ জানুয়ারি, ১৯৫০ পুলিশ রিপোর্ট.আইবি.ই.বি.ঢাকা.রেফা: অফিস নং ৩৭৫, তারিখ ১২.১.৫০.এফ/এন-৬০৬-৪৮পি.ই পার্ট-৩

১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসেই শেখ মুজিব সাংগঠনিক কাজে পশ্চিম পাকিস্তান সফর করেন। পাঞ্জাব পুলিশ রিপোর্ট থেকে তার সাংগঠনিক তৎপরতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

it will be recalled that before his departure for Dacca Mujibar Rahman got the East Bengal Muslim student League affiliated with the all Pakistan Muslim students Federation, Lahore. (23)( Ref: Extract from D.O.No 1908/BDSS dated 15.2.50 from S-P(D)west Pinjab,coPz to DIG,I.B,E-B Dacca. F/N 606-48 PF.Part-3)

অনুবাদ: এটি স্মরণ রাখা দরকার যে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার মুসলিম ছাত্রলীগকে লাহোরের, পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।

রেফারেন্স: ডি.ও রিপোর্ট নং ১৯০৮/বিডিএসএস তারিখ ১৫-২-৫০ থেকে এস-পি(ডি) পশ্চিম পাঞ্জাব, ডিআইজি অনুলিপি, আই.বি, ই-বি ঢাকা. এফ/এন ৬০৬-৪৮ পিই.পার্ট-৩

তার লাহোর যাওয়ার বিষয়টি পুলিশ রিপোর্টের আরও উল্লেখ করা হয়:

A temporary committee of the E.P.A.M.L was formed with Salimul Haq of 274, Nawabpur Road, Dacca, as president (১৪-১০-৪৯ তারিখ মাওলানা ভাসানীকে বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়-লেখক) and Yar Muhammad, s/o saleh Muhammad of 18, karkunbari Lane, P.S. sutrapur, as secretary SK. Mujibur Rahman left for Lahore from Calcutta to see H-S.Suharawardz with a view to bring some money from him for the party work in E.B. (24) (CoPz of Page 38,39,40 File No 125-50 GL.F/N 606-48 PF-Part-3)

অনুবাদ : সলিমুল হককে নিয়ে নবাবপুর রোড় ঢাকায় ইপিএএমএলের একটি অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। যার সভাপতি ছিলেন ইয়ার মুহাম্মদ। সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান ইবি পার্টির কাজের জন্য সোহরাওয়ার্দী থেকে কিছু টাকা আনার লক্ষ্যে এবং তাকে দেখতে কলকাতা থেকে লাহোরের উদ্দেশ্যে যান।

তখন পর্যন্ত কলকাতা ও দিল্লি হয়ে করাচি বা লাহোর যেতে হতো। লাহোর থেকে তিনি ডিসেম্বরের কত তারিখ ফিরে আসেন সে সম্পর্কে কোন সরকারি তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সাধারণভাবে বিভিন্ন বই-পুস্তকে তা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বলে উল্লেখ করা হয়। পূর্ববাংলায় ফেরার পরই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি নথিতে বলা হয়:

Sk. Mujibur Rahman who was also wanted in connection with the above noted case (No 19 (10) 49 u/s 147,354 I PC and 7 (3) BSPO- was arrested on 31. 12-49 from 69/1, khaje Dewan. He is a Securety prisoner in Dacca Jail. (২৫) (প্রাগুক্ত নথি)

অনুবাদ: শেখ মুজিবুর রহমান যিনি উপরোক্ত উল্লেখিত মামলার সঙ্গে অভিযুক্ত ছিলেন। (মামলা নং: ১৯(১০) ৪৯ ধারা ১৪৭/৩৫৪ আই পিসি এবং ৭(৩) বিএসপিও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি ঢাকা জেলের সুরক্ষা বন্দী।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

ঢাকা। প্রথম লেখা ২৩ জানুয়ারি, ২০২০। সর্বশেষ সম্পাদনা ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

mustafajabbar@gmail.com

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৫ মহররম ১৪৪২, ২৭ ভাদ্র ১৪২৭

বাঙালির ভাষা রাষ্ট্রের পিতা ভাষা আন্দোলন ও মুজিব নির্যাতন

মোস্তাফা জব্বার

এটা সবাই জানেন যে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ঘিরে ১৯৪৮ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দি করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিমউদ্দীন সরকারের ৮ দফা সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। কিন্তু অচিরেই তার জীবনে শুরু হয় দীর্ঘ কারাবাস। মুক্তি পাবার দেড় মাসের মাথায় ১৯৪৯ সালের ২৯ এপ্রিল তাকে EPPPSO এর ১৮(২) ধারা মোতাবেক আইন অমান্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দেড় মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কি আইন অমান্য করেন তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করার বিষয়টি পাকিস্তানি পুলিশ কখনও মাথায়ই আনেনি। এ যাত্রায় গ্রেপ্তার করার পর কত তারিখ পর্যন্ত তিনি এই যাত্রায় জেলে ছিলেন, কত তারিখে মুক্তি পেয়েছেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ১৯৪৯ সালের সরকারি কোন নথি না পাওয়ায় এ পর্যন্ত সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ লেখক ২৭ জুলাই পর্যন্ত শেখ মুজিব জেলে ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ফরিদপুর DIB Memo No 486/61-49 dated the 21st Nov.1950 to the Spl.Supdt of Police, I B E. B-Dacca- ডিআইবি মেমো নং ৪৮৬/৬১-৪৯ ২১ নভেম্বর ১৯৫০ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট, আইবিইবি ঢাকা কে লেখা নথির তৃতীয় অংশের বিবরণ নিম্নরূপ:

On 19.7.49 Sk. Mujibur Rahman s/o lutfar Rahman of tangipara, Gopalganj and Abdul Salam Khan, M.A,B.L. s/o late Abdul Latif of Bejra, P.S, Muksudpur and of Faridpur town, two important members of the Awami Muslim League, held a public meeting, at Gopalganj in defiance of prohibitive orders u/s 144 Cr.P.C.They were prosecuted u/s 144 Cr P.C. and the case is subjudice.

অনুবাদ : ১৯-০৭-৪৯ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান পিতা লুৎফর রহমান টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ এবং আবদুল সালাম খান, এমএবিএল পিতা মৃত আবদুল লতিফ, বেজরা, ফরিদপুর শহরের মকসুদপুর থানা মুসলীম লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ দুই সদস্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গোপালগঞ্জে জনসভা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে এবং মামলাটি বিচারাধীন।

বোঝা যাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান এবং আবদুস সালাম খান ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে উক্ত সভা করেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হয়। তবে ২৩ ও ২৪ জুন আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার সময় শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। শেখ মুজিব সম্ভবত জুলাই মাসের কোন এক সময় মুক্তি লাভ করেছিলেন। নিচে উদ্ধৃত ১৯৪৯ সালের আগস্ট মাসে পুলিশের গোপন রিপোর্টে শেখ মুজিব সম্পর্কে সরকারের মনোভাব লক্ষণীয় :

The student of Gopalgonj town have been trying to organise is separate Student Organisation within the fold of the official Muslim League distinguished from the so-called Muslim students League (belonging to the group of Sk. Mujibur Rahman s/o Lutfar Rahman of tungipara, P.S Gopalganj, Dist- Faridpur). To this end in view they have been issuing liaflets depicting the organisation of Mr.H.S Suhrawardz to mislead the people of Pakistan and to hurl abuses to the late Quaid-I- Azam for his (Mr. Suhrawardz’s) selfish ends.

On 11.8.49 while some students were distributing the leaflets a band of students of the counter bloc named below snatched away the leaf lets and assailed the distributors.A case u/s 147/379 I.P.C was started at Gopalganj,P.S against all the accused students, who were arrested and subsequently released on bail.(19) (Ref: Extract from the weekly cnfdl.Report of the supdt. Of Police, Faridpur for week studzing Thursday, the 20th August, 1949.File No 482-49 KR(10) Page-No-(F/N-606-48.PF.Part-3)

অনুবাদ : গোপালগঞ্জ শহরের ছাত্ররা সরকারি মুসলিম লীগ তথাকথিত মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠনের নামে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে (যারা শেখ মুজিবুর রহমানের দলের অন্তর্ভুক্ত যার পিতা শেখ লুৎফর রহমান, ফরিদপুর জেলা গোপালগঞ্জ থানা)। সোহরাওয়ার্দীর সংগঠ? পাকিস্তানের জনগণকে ভুল বোজাচ্ছে এবং ভুল চিত্র তুলে ধরে এবং সোহরাওয়ার্দীর কৃতকর্মের জন্য প্রয়াত কায়েদে আজমকে গালি দেয়। লিফলেট বিতরণ করার সময় কিছু ছাত্র এসে বিতরণকারীদের থেকে লিফলেট কেড়ে নিয়ে তাদের আক্রমণ করে। গোপালগঞ্জ থানায় অভিযুক্ত সব শিক্ষার্থীর নামে ১৪৭/৩৭৯ ধারায় মামলা শুরু হয়। যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মুক্তি পেয়েছিল। (Ref: Extract from the weekly cnfdl.Report of the supdt. Of Police, Faridpur for week studzing Thursday, the 20th August, 1949.File No 482-49 KR(10) Page-No-(F/N-606-48.PF.Part-3)

শেখ মুজিবকে এর মধ্যে কয়েকবার গ্রেপ্তার করার সরকারি গোপন নির্দেশ ছিল বলে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়। ১৭ অক্টোবর ১৯৪৯ সালের পূর্ব বাংলা আই বি রিপোর্ট নম্বর ১৫৬ তে উল্লেখ করা হয়-

On certain information, the officer of the E-P.Awami League at 150 Mughultali was searched at about 4-30 am. Today (17-10-49) for the arrest of Sheikh Mujibar Rahman and Shoukat Ali, the two militant members of the organisation who are evading arrest in connection with Kotwali P.S. case No 19(10)49 u/s 147/325 I P.C. and 7(3) B.S.P.O name of them was found there and nothing incriminating was seized. (২০) (প্রাগুক্ত নথি)

অনুবাদ : নির্দিষ্ট তথ্যের ভিক্তিতে ৪:৩০ এর দিকে ১৫০ মোগলটুলি ইপি আওয়ামী লীগের অফিসারের অনুসন্ধান করা হয়। জঙ্গি সংগঠনের দুই সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান এবং শওকত আলীকে আজ গ্রেপ্তারের জন্য যারা কতোয়ালি থানা মামলা নং ১৯(১০)৪৯ ধারা ১৪৭/৩২৫ আইপিসি এ গ্রেপ্তার এড়িয়ে আছেন এবং ৭(৩) বিএসপিও এর নাম সেখানে পাওয়া গেছে এবং দোষী সাব্যস্ত করার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

এটি এক অসাধারণ ভাবনার বিষয় যে পুলিশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের জন্য একের পর এক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক কর্মকা- অব্যাহত রাখছেন। একটু ফাঁক পেলেই তিনি সভা সমাবেশও করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আরমানিটোলা ময়দানে ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সেদিনের গোপন পুলিশ রিপোর্ট হচ্ছে:

After the meeting a procession headed by Maulana Abdul Hamid Khan, Mvi samsul haq, M.L.A. and Sk Mujibur Rahman came Towards Ramna side via Nawabpur Road. Police Had to Resort to tear gas and a mild Lathi charge to disperse the processions. Ninteen persons including Mvi samsul haq, M.L.A were arrested on the spot and Case No 19 (10) 49 u/s 147,325 I.P.C and 7(3) 13. S.P.O was started at Kotwali P.S. (২১) (প্রাগুক্ত নথি)

অনুবাদ : বৈঠক শেষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এমভি শামসুল হক এমএলএ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল নবাবপুর রোড় হয়ে রমনার দিকে এসেছিল। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে। এমভি শামসুল হক, এমএলএসহ ১৯ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা নং ১৯(১০)৪৯ ইউ/এস ১৪৭,৩২৫ আই.পি.সি এবং ৭(৩)১৩. এস.পি.ও কতোয়ালি থানায় শুরু হয়েছিল। (২১)

পরবর্তী সময়ের পুলিশ রিপোর্টে দেখা যায় যে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে থানা এবং আদালতে ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে বিশেষ মামলা রুজু করা হয়েছিল। এতদসম্পর্কিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট নিম্নরূপ:

charge sheet no 211 dated 26.12.49 u/s 147/325 I. P.C and 7(3) B.S.P.O has been submitted in Kotwali P.S. case no 19, dated 11-10-49 against the following person: Acced. Sk. Mujibur Rahman who was absconding so long, has since been arrested and forwarded to court. (22) (Ref: Extract of Dacca DIB.Memo No 690/214-49.dated the 24th Jan.,1950 to the spurt of police,I B.,E.B.Dacca. Ref: This office No 375,dated12.1.50.F/N-606-48P.F Part-3)

অনুবাদ : নিম্নলিখিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইপিসি ১৪৭/৩২৫ ধারায় চার্জশিট নং ২১১, তারিখ ২৬-১২-৪৯ এবং ৭(৩) বিএসপিও জমা দেয়া হয়েছে কতোয়ালি থানায়। যার কেস নং ১৯, তারিখ ১১-১০-৪৯।

রেফারেন্স: ঢাকা ডিআইবি রিপোর্ট. মেমো নং ৬৯০/২১৪-৪৯. তারিখ ২৪ জানুয়ারি, ১৯৫০ পুলিশ রিপোর্ট.আইবি.ই.বি.ঢাকা.রেফা: অফিস নং ৩৭৫, তারিখ ১২.১.৫০.এফ/এন-৬০৬-৪৮পি.ই পার্ট-৩

১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসেই শেখ মুজিব সাংগঠনিক কাজে পশ্চিম পাকিস্তান সফর করেন। পাঞ্জাব পুলিশ রিপোর্ট থেকে তার সাংগঠনিক তৎপরতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

it will be recalled that before his departure for Dacca Mujibar Rahman got the East Bengal Muslim student League affiliated with the all Pakistan Muslim students Federation, Lahore. (23)( Ref: Extract from D.O.No 1908/BDSS dated 15.2.50 from S-P(D)west Pinjab,coPz to DIG,I.B,E-B Dacca. F/N 606-48 PF.Part-3)

অনুবাদ: এটি স্মরণ রাখা দরকার যে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার মুসলিম ছাত্রলীগকে লাহোরের, পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।

রেফারেন্স: ডি.ও রিপোর্ট নং ১৯০৮/বিডিএসএস তারিখ ১৫-২-৫০ থেকে এস-পি(ডি) পশ্চিম পাঞ্জাব, ডিআইজি অনুলিপি, আই.বি, ই-বি ঢাকা. এফ/এন ৬০৬-৪৮ পিই.পার্ট-৩

তার লাহোর যাওয়ার বিষয়টি পুলিশ রিপোর্টের আরও উল্লেখ করা হয়:

A temporary committee of the E.P.A.M.L was formed with Salimul Haq of 274, Nawabpur Road, Dacca, as president (১৪-১০-৪৯ তারিখ মাওলানা ভাসানীকে বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়-লেখক) and Yar Muhammad, s/o saleh Muhammad of 18, karkunbari Lane, P.S. sutrapur, as secretary SK. Mujibur Rahman left for Lahore from Calcutta to see H-S.Suharawardz with a view to bring some money from him for the party work in E.B. (24) (CoPz of Page 38,39,40 File No 125-50 GL.F/N 606-48 PF-Part-3)

অনুবাদ : সলিমুল হককে নিয়ে নবাবপুর রোড় ঢাকায় ইপিএএমএলের একটি অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়। যার সভাপতি ছিলেন ইয়ার মুহাম্মদ। সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান ইবি পার্টির কাজের জন্য সোহরাওয়ার্দী থেকে কিছু টাকা আনার লক্ষ্যে এবং তাকে দেখতে কলকাতা থেকে লাহোরের উদ্দেশ্যে যান।

তখন পর্যন্ত কলকাতা ও দিল্লি হয়ে করাচি বা লাহোর যেতে হতো। লাহোর থেকে তিনি ডিসেম্বরের কত তারিখ ফিরে আসেন সে সম্পর্কে কোন সরকারি তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সাধারণভাবে বিভিন্ন বই-পুস্তকে তা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বলে উল্লেখ করা হয়। পূর্ববাংলায় ফেরার পরই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি নথিতে বলা হয়:

Sk. Mujibur Rahman who was also wanted in connection with the above noted case (No 19 (10) 49 u/s 147,354 I PC and 7 (3) BSPO- was arrested on 31. 12-49 from 69/1, khaje Dewan. He is a Securety prisoner in Dacca Jail. (২৫) (প্রাগুক্ত নথি)

অনুবাদ: শেখ মুজিবুর রহমান যিনি উপরোক্ত উল্লেখিত মামলার সঙ্গে অভিযুক্ত ছিলেন। (মামলা নং: ১৯(১০) ৪৯ ধারা ১৪৭/৩৫৪ আই পিসি এবং ৭(৩) বিএসপিও ৬৯/১ খাজে দেওয়ান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি ঢাকা জেলের সুরক্ষা বন্দী।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

ঢাকা। প্রথম লেখা ২৩ জানুয়ারি, ২০২০। সর্বশেষ সম্পাদনা ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

mustafajabbar@gmail.com