পাকটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ ঘোষিত মিলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা নগদ ও সঞ্চয়পত্রে পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর ডেমরায় করিম জুটমিলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ৩০ জনের হাতে পাওনার চেক ও সঞ্চয়পত্র তুলে দিয়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি চালু মিলে কর্মরত সব স্থায়ী শ্রমিকের প্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকরি অবসায়ন করে উৎপাদন কার্যক্রম চলতি বছর ১ জুলাই থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ ঘোষিত ২৫টি পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পরে অবসরপ্রাপ্ত ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় এক হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিনটি অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়। পরে শ্রমিকদের আর্থিক দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে পুরো পাওনা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, করিম জুট মিলের অবসানকৃত এক হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা ১৯২ কোটি টাকা, ৬১২ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের বকেয়া পাওনা ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ২ হাজার ৬২৫ জন বদলি শ্রমিকের পাওনা ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকাসহ মোট ২৫১ কোটি ৫৮ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পাটকল শ্রমিকদের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজেএমসির বন্ধ ঘোষিত মিলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা নগদ ও সঞ্চয়পত্রে পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হলো। প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা শেষে একই প্রক্রিয়ায় বাকি মিলগুলোর শ্রমিকদের পাওনাও খুব শীঘ্রই পরিশোধ করা হবে।’

পাটগুলো পুনরায় চালুর পদ্ধতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পিপিপিতে যাব নাকি জিটুজিতে যাব- এ নিয়ে অনেকগুলো মিটিং করেছি। বেশিরভাগ আছেন, যারা মিল চালান, তারা লিজ পদ্ধতিতে মিল পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন। আমরাও সেভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি। এখন আমরা লিজ পদ্ধতিতে যেতে চেষ্টা করছি। কারণ এখন আধুনিক যুগে তৎকালীন ষাট সালের মেশিন দিয়ে চলে না। এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান করতে হলে নতুন মেশিন আনতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে। কম বিদ্যুতে বেশি প্রোডাকশন করতে হবে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে মিলগুলো চালু করব।’

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘মিলগুলোর উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখে শ্রমিকদের পাওনাদি বুঝিয়ে দিয়ে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে। এজন্য আজকে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার অনুষ্ঠান হচ্ছে। সুদূরপ্রসারী ও সুচিন্তিত মতামতের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রথম পদক্ষেপ আজকে করিম জুট মিলের এই চত্বরে। এই সোনালী আঁশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন চটকলগুলো প্রয়োজন, পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত চটকলগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া কৃষকের এক সিজনের পাট যাতে আরেক সিজনে না থাকে-এটা আমরা নিশ্চিত করে থাকি। আমি মনে করি, আমাদের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মহোদয় এটা মাথায় রেখে কাজ করবেন।’ এদিকে লোকসান থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হচ্ছে বলে গত ২৮ জুন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।

১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে সভার পর গত ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্ধ ঘোষণা করা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রতিজন শ্রমিক গড়ে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। সরকার তাদের পাওনার অর্ধেক নগদে পরিশোধ ও বাকি অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র দেবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পুনর্বিন্যাস করে বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো জরুরিভিত্তিতে ফের চালু করা হবে। এজন্য মিলগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগ জিটুজি বা লিজ মডেলে পরিচালনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আবার উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৬ মহররম ১৪৪২, ২৮ ভাদ্র ১৪২৭

পাকটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ ঘোষিত মিলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা নগদ ও সঞ্চয়পত্রে পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর ডেমরায় করিম জুটমিলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ৩০ জনের হাতে পাওনার চেক ও সঞ্চয়পত্র তুলে দিয়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি চালু মিলে কর্মরত সব স্থায়ী শ্রমিকের প্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকরি অবসায়ন করে উৎপাদন কার্যক্রম চলতি বছর ১ জুলাই থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ ঘোষিত ২৫টি পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পরে অবসরপ্রাপ্ত ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় এক হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিনটি অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়। পরে শ্রমিকদের আর্থিক দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে পুরো পাওনা চলতি অর্থবছরে এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, করিম জুট মিলের অবসানকৃত এক হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা ১৯২ কোটি টাকা, ৬১২ জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকের বকেয়া পাওনা ৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ২ হাজার ৬২৫ জন বদলি শ্রমিকের পাওনা ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকাসহ মোট ২৫১ কোটি ৫৮ লাখ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পাটকল শ্রমিকদের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিজেএমসির বন্ধ ঘোষিত মিলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা নগদ ও সঞ্চয়পত্রে পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হলো। প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা শেষে একই প্রক্রিয়ায় বাকি মিলগুলোর শ্রমিকদের পাওনাও খুব শীঘ্রই পরিশোধ করা হবে।’

পাটগুলো পুনরায় চালুর পদ্ধতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পিপিপিতে যাব নাকি জিটুজিতে যাব- এ নিয়ে অনেকগুলো মিটিং করেছি। বেশিরভাগ আছেন, যারা মিল চালান, তারা লিজ পদ্ধতিতে মিল পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন। আমরাও সেভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি। এখন আমরা লিজ পদ্ধতিতে যেতে চেষ্টা করছি। কারণ এখন আধুনিক যুগে তৎকালীন ষাট সালের মেশিন দিয়ে চলে না। এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান করতে হলে নতুন মেশিন আনতে হবে। আধুনিকায়ন করতে হবে। কম বিদ্যুতে বেশি প্রোডাকশন করতে হবে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে মিলগুলো চালু করব।’

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘মিলগুলোর উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখে শ্রমিকদের পাওনাদি বুঝিয়ে দিয়ে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে। এজন্য আজকে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার অনুষ্ঠান হচ্ছে। সুদূরপ্রসারী ও সুচিন্তিত মতামতের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রথম পদক্ষেপ আজকে করিম জুট মিলের এই চত্বরে। এই সোনালী আঁশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন চটকলগুলো প্রয়োজন, পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত চটকলগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া কৃষকের এক সিজনের পাট যাতে আরেক সিজনে না থাকে-এটা আমরা নিশ্চিত করে থাকি। আমি মনে করি, আমাদের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মহোদয় এটা মাথায় রেখে কাজ করবেন।’ এদিকে লোকসান থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হচ্ছে বলে গত ২৮ জুন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী।

১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে সভার পর গত ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্ধ ঘোষণা করা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রতিজন শ্রমিক গড়ে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। সরকার তাদের পাওনার অর্ধেক নগদে পরিশোধ ও বাকি অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র দেবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পুনর্বিন্যাস করে বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো জরুরিভিত্তিতে ফের চালু করা হবে। এজন্য মিলগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগ জিটুজি বা লিজ মডেলে পরিচালনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আবার উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।