খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত আরও ৬ মাস

দুর্নীতির মামলায় সাজাপাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাজার কার্যকারিতা আগের দুই শর্তে আরও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে সরকার। খালেদা জিয়ার পরিবারের আবদনে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার পর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ গতকাল এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবার তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছিল। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমাদের কাছে সুপারিশ এসেছে। তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। শর্ত অনুযায়ী, এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে গত ছয় মাস খালেদা জিয়ার পরিবার তার কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। এই বিবেচনায় তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব না, তাকে বিদেশ নেয়া দরকার। সাজা স্থগিতের জন্য দেয়া দুই শর্তকে ‘অমানবিক’ বলেছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো কোর্টের বিষয়। সেখান থেকে তাকে অনুমতি দেবে কী না, সেটা কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে। তারা আবেদনে অনেক কিছুই চেয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যেগুলো বিবেচনা করেছেন সেগুলো আপনাদের জানালাম। এছাড়া তিনিতো এখনও জেলে বন্দি, শুধু বাসায় অবস্থান করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেটুকু করণীয়, সেটা তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করেছি। এছাড়া আমাদের কোনো ডাক্তার বলেননি যে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবা বাংলাদেশে চলবে না।’

দুর্নীতির দুই মামলায় দ-িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তার দ-ের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারামুক্ত হন। ওই মুক্তির মেয়াদ ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই শামীম এস্কেন্দার গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। তাতে তার অসুস্থ বোনের কারামুক্তির পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি। প্রথমবার খালেদা জিয়াকে ছাড়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই শামীমের আবেদনও পাঠানো হয় সেখানে।

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৬ মহররম ১৪৪২, ২৮ ভাদ্র ১৪২৭

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত আরও ৬ মাস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দুর্নীতির মামলায় সাজাপাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাজার কার্যকারিতা আগের দুই শর্তে আরও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে সরকার। খালেদা জিয়ার পরিবারের আবদনে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার পর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ গতকাল এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবার তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছিল। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমাদের কাছে সুপারিশ এসেছে। তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। শর্ত অনুযায়ী, এই সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে গত ছয় মাস খালেদা জিয়ার পরিবার তার কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। এই বিবেচনায় তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব না, তাকে বিদেশ নেয়া দরকার। সাজা স্থগিতের জন্য দেয়া দুই শর্তকে ‘অমানবিক’ বলেছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো কোর্টের বিষয়। সেখান থেকে তাকে অনুমতি দেবে কী না, সেটা কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে। তারা আবেদনে অনেক কিছুই চেয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যেগুলো বিবেচনা করেছেন সেগুলো আপনাদের জানালাম। এছাড়া তিনিতো এখনও জেলে বন্দি, শুধু বাসায় অবস্থান করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেটুকু করণীয়, সেটা তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করেছি। এছাড়া আমাদের কোনো ডাক্তার বলেননি যে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবা বাংলাদেশে চলবে না।’

দুর্নীতির দুই মামলায় দ-িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তার দ-ের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারামুক্ত হন। ওই মুক্তির মেয়াদ ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ভাই শামীম এস্কেন্দার গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। তাতে তার অসুস্থ বোনের কারামুক্তির পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি। প্রথমবার খালেদা জিয়াকে ছাড়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই শামীমের আবেদনও পাঠানো হয় সেখানে।

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।