উইলমিনটনের সমাবেশে জলবায়ু পরিবর্তনকে ট্রাম্পের অস্বীকার

পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলকে ঘিরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্প বিবৃতিতে গতকাল বলেছেনÑ ‘আমার মনে হয় না বিজ্ঞান সব জানে’। জলবায়ু পরিবর্তনকে এভাবে অস্বীকার করায় বাইডেন উইলমিনটনে পাল্টা জবাবে বলেছেন- ‘যদি আমরা আরও ৪ বছরে ট্রাম্পের জলবায়ু অস্বীকার করি, তাহলে কত শহরতলি দাবানলের আগুনে পুড়বে, কত শহরতলির আশপাশের অঞ্চল প্লাবিত হবে, কত শহরতলিকে সুপারস্টর্ম উড়িয়ে দেবে সেটি রীতিমতো অনিশ্চিত’। নভেম্বরের ৩ তারিখের নির্বাচনকে ঘিরে সমসাময়িক এ বিষয়গুলো নিয়ে দু’জনের নির্বাচনী বাকযুদ্ধ চলছেই। ফিন্যান্স ওয়াচডগ, ইউএসএ টুডে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দুর্বলতা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টির ইতিহাস অনেক পুরনো। দেশটির ক্ষমতাবানরা শুরু থেকেই ভোটাধিকার শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বাকিদের এ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা গণতন্ত্রে তাদের আস্থা রেখেছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে তারা ভোটাধিকারের ওপর মারাত্মক সব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কে ভোট দিতে পারবেন আর কে পারবেন না, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব মার্কিন সংবিধানে ছেড়ে দেয়া হয় রাজ্যগুলোর ওপর। এটিকে মার্কিন সংবিধান এবং গণতন্ত্রের একটি বড় দুর্বলতা মনে করা হতো। সেই সূত্র ধরে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ হওয়া সত্ত্বেও কিছু ত্রুটির কারণে উপযুক্ত শাসক মিলছে না রাষ্ট্রটিতে। নির্বাচনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে এবারের নির্বাচনে শুরু থেকে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় পদপ্রার্থীর পালাটাপাল্টি দোষারোপের চর্চা চলছে। অপরদিকে দেশজুড়ে বর্ণবাদে একের পর এক সংহিসতা ঘটেই চলেছে। পাশাপাশি পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের ভয়াবহতায় সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। এছাড়াও ২০১৬’র নির্বাচনের পর থেকে মার্কিন গোয়েন্দারা বিদেশি হস্তক্ষেপের জোরালো অভিযোগ তুলছেন।

কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হবেন, কে যোগ্যতার ভিত্তিতে দাঁড়াবেন, পদপ্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সংবিধান অনুসারে তাকে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়সী একজন হতে হবে, যে আদি আমেরিকান অর্থাৎ ‘প্রাকৃতিকভাবে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক’ এবং ১ জন যুক্তরাষ্ট্রীয় বাসিন্দার বয়স অন্তত ১৪ বছর হতে হবে। বেশিরভাগ প্রার্থীর রাজনীতির পটভূমি রয়েছে এবং তারা সিনেটর, গভর্নর, সহ-রাষ্ট্রপতি বা কংগ্রেসের সদস্যের মতো নির্বাচিত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা মাঝেমধ্যে সামরিক বাহিনী থেকে আগত প্রাক্তন সেনা জেনারেল ডুইট আইজেনহোভারের মতো, বা ব্যবসায়িক জগতে প্রাক্তন রিয়েল এস্টেট বিকাশকারী এবং রিয়েলিটি টিভি তারকা ট্রাম্পের মতো প্রার্থী আসে। বেশিরভাগ আধুনিক প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এবং অর্ধশতাধিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইন বিষয়ে স্নাতক হন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭’র জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজের চাবি পেয়েছিলেন এবং সেদিনই তার পুনর্নির্বাচনের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায়, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ দ্বারা সমাবেশ করে আসছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়া বা হওয়ার চেষ্টা করা চোখ ধাঁধানো ব্যয়বহুল হতে পারে জেনেও প্রার্থীর সমর্থকদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষমতা বা নিজের নগদ ব্যয় করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। হিলারি ক্লিনটন বনাম ট্রাম্প ২০১৬’র নির্বাচনের জন্য সম্মিলিতভাবে ব্যয় হয়েছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন।

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৬ মহররম ১৪৪২, ২৮ ভাদ্র ১৪২৭

উইলমিনটনের সমাবেশে জলবায়ু পরিবর্তনকে ট্রাম্পের অস্বীকার

image

পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলকে ঘিরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্প বিবৃতিতে গতকাল বলেছেনÑ ‘আমার মনে হয় না বিজ্ঞান সব জানে’। জলবায়ু পরিবর্তনকে এভাবে অস্বীকার করায় বাইডেন উইলমিনটনে পাল্টা জবাবে বলেছেন- ‘যদি আমরা আরও ৪ বছরে ট্রাম্পের জলবায়ু অস্বীকার করি, তাহলে কত শহরতলি দাবানলের আগুনে পুড়বে, কত শহরতলির আশপাশের অঞ্চল প্লাবিত হবে, কত শহরতলিকে সুপারস্টর্ম উড়িয়ে দেবে সেটি রীতিমতো অনিশ্চিত’। নভেম্বরের ৩ তারিখের নির্বাচনকে ঘিরে সমসাময়িক এ বিষয়গুলো নিয়ে দু’জনের নির্বাচনী বাকযুদ্ধ চলছেই। ফিন্যান্স ওয়াচডগ, ইউএসএ টুডে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দুর্বলতা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথে বাধা সৃষ্টির ইতিহাস অনেক পুরনো। দেশটির ক্ষমতাবানরা শুরু থেকেই ভোটাধিকার শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে বাকিদের এ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা গণতন্ত্রে তাদের আস্থা রেখেছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে তারা ভোটাধিকারের ওপর মারাত্মক সব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কে ভোট দিতে পারবেন আর কে পারবেন না, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব মার্কিন সংবিধানে ছেড়ে দেয়া হয় রাজ্যগুলোর ওপর। এটিকে মার্কিন সংবিধান এবং গণতন্ত্রের একটি বড় দুর্বলতা মনে করা হতো। সেই সূত্র ধরে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ হওয়া সত্ত্বেও কিছু ত্রুটির কারণে উপযুক্ত শাসক মিলছে না রাষ্ট্রটিতে। নির্বাচনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে এবারের নির্বাচনে শুরু থেকে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় পদপ্রার্থীর পালাটাপাল্টি দোষারোপের চর্চা চলছে। অপরদিকে দেশজুড়ে বর্ণবাদে একের পর এক সংহিসতা ঘটেই চলেছে। পাশাপাশি পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের ভয়াবহতায় সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। এছাড়াও ২০১৬’র নির্বাচনের পর থেকে মার্কিন গোয়েন্দারা বিদেশি হস্তক্ষেপের জোরালো অভিযোগ তুলছেন।

কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হবেন, কে যোগ্যতার ভিত্তিতে দাঁড়াবেন, পদপ্রার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সংবিধান অনুসারে তাকে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়সী একজন হতে হবে, যে আদি আমেরিকান অর্থাৎ ‘প্রাকৃতিকভাবে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক’ এবং ১ জন যুক্তরাষ্ট্রীয় বাসিন্দার বয়স অন্তত ১৪ বছর হতে হবে। বেশিরভাগ প্রার্থীর রাজনীতির পটভূমি রয়েছে এবং তারা সিনেটর, গভর্নর, সহ-রাষ্ট্রপতি বা কংগ্রেসের সদস্যের মতো নির্বাচিত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তারা মাঝেমধ্যে সামরিক বাহিনী থেকে আগত প্রাক্তন সেনা জেনারেল ডুইট আইজেনহোভারের মতো, বা ব্যবসায়িক জগতে প্রাক্তন রিয়েল এস্টেট বিকাশকারী এবং রিয়েলিটি টিভি তারকা ট্রাম্পের মতো প্রার্থী আসে। বেশিরভাগ আধুনিক প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এবং অর্ধশতাধিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইন বিষয়ে স্নাতক হন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭’র জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজের চাবি পেয়েছিলেন এবং সেদিনই তার পুনর্নির্বাচনের কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায়, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ দ্বারা সমাবেশ করে আসছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়া বা হওয়ার চেষ্টা করা চোখ ধাঁধানো ব্যয়বহুল হতে পারে জেনেও প্রার্থীর সমর্থকদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষমতা বা নিজের নগদ ব্যয় করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। হিলারি ক্লিনটন বনাম ট্রাম্প ২০১৬’র নির্বাচনের জন্য সম্মিলিতভাবে ব্যয় হয়েছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে এবারের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন।