ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী-বিধবা ও ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মঙ্গার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুস্থদের ভিজিএফ এবং ভিজিডি’র চাল ভুয়া তালিকার মাধ্যমে লোপাট, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভুক্তভোগীসহ ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মঙ্গা ওই ইউনিয়নে ২শ’ জন দুস্থ মহিলার নামে দুই বছর মেয়াদি ভিজিডি কার্ডের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেন। তালিকায় নাম থাকা দুস্থরা প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। এদিকে ভিজিডি চাল বিতরণের ২০ মাস পেড়িয়ে গেলেও অনেকেই জানেন না তালিকায় তাদের নাম রয়েছে এমনকি প্রতি মাসে তাদের নামে চাল উত্তোলন করা হলেও তারা তা জানেন না।

এমন অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নিমাই চন্দ্রের স্ত্রী তরুবালা (ভিজিডি কার্ড নম্বর-২৮৯৪, সিরিয়াল নম্বর-১৫৪), ৩নং ওয়ার্ডের জহুরুল হকের স্ত্রী জোসনা বেগম (কার্ড নম্বর-২৮৩৫, সিরিয়াল নম্বর-৯৫), ১নং ওয়ার্ডের আবদুর রশিদের স্ত্রী মল্লিকা বেগম (কার্ড নম্বর-২৭৯০, সিরিয়াল নম্বর-৫০), একই ওয়ার্ডের আবদুল মমিনের স্ত্রী বিলকিছ বেগম (কার্ড নম্বর-২৭৭৯, সিরিয়াল নম্বর-৩৯) সহ অনেকেই। বঞ্চিত দুস্থরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার প্রতি মাসে আমাদের নামে চাল বরাদ্দ দিলেও আমরা তা জানি না।

এছাড়া উত্তর পান্ডুলের বরিজ উদ্দিনের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবদুল হামিদের কাছ থেকে ভাতার ৯ হাজার টাকার মধ্যে ৬ হাজার টাকা চেয়ারম্যান কেটে নেন বলে ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অভিযোগ করেছেন। একই এলাকার লক্ষী বালা রানী অভিযোগ করে বলেন, তার বিধবা ভাতার ৬ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা ও তার নাতনী বাকপ্রতিবন্ধী অনিকা রানীর ভাতার ৯ হাজার টাকার মধ্যে ৮ হাজার টাকা চেয়ারম্যান কেটে নেন।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ তুলে পান্ডুল ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন দফতরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ, ঈদুল আযাহার পূর্বে ওই ইউনিয়নের ৫ হাজার ৫৩ জন দুস্থ মানুষের বিপরীতে ১০ কেজি করে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু ওই তালিকায় চেয়ারম্যান কৌশলে একই ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর কোথাও ৩ বার, কোথাও ২ বার করে একাধিক ওয়ার্ডের সিরিয়াল নম্বর ব্যবহার করেছেন। ওই ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে আ. সামাদের নাম ভিন্ন ভিন্ন সিরিয়ালে দুইবার ব্যবহার করেছেন (সিরিয়াল নম্বর-৩৩৬২ ও ৩২০৫, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৮৬৫৮৫৭৪৫১৫)। একইভাবে ৩নং ওয়ার্ডের আম ভদ্রপাড়া এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে ফজলুল হকের নাম তিন বার (সিরিয়াল নম্বর-৩১৮১, ৪৭১৮ ও ৯৮০, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর-৬৮৫৮৪৩৬৮৬৪) ব্যবহার করা হলেও তারা কেউ ভিজিএফ এর চাল পাননি। এভাবে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে চাল উত্তোলনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান।

পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মঙ্গা তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভিজিএফ ও ভিজিডির তালিকা ইউপি সদস্য ও দলীয়ভাবে জমা হয়। ভুল করলে তারা করেছেন। আমাকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী চাল বিতরন করা হয়েছে। দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধী এবং বিধবা ভাতার টাকা কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাদের চিনিও না, জানিও না। একটি মহল আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করে আসছেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহানা আক্তার জানান, পান্ডুল ইউনিয়নের ভিজিডির বিষয়ে আমার দফতরে অভিযোগ জমা পড়েছে সেটি দেখতে হবে, জানতে হবে, তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে-এ-জান্নাত রুমি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদেন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অভিযোজন তহবিল বৃদ্ধিতে জোরালো বৈশ্বিক সমর্থন কামনা প্রধানমন্ত্রীর
ওজোন ক্ষয়কারী দ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার রোধে জীববৈচিত্র্যকে ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব প্রধানমন্ত্রী
মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়নসহ ৪ প্রকল্প অনুমোদন
চিকিৎসকদের আবাসন ও আইসোলেশন ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
জয় বাংলা টেলিমেডিসিন অ্যাপ উদ্বোধন কাদেরের
ভরাট হয়ে গেছে লৌহজং চ্যানেল ‘বিকল্প চ্যানেল খনন করা হচ্ছে’
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ ফের চালু করতে ভারতকে অনুরোধ
আরও অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক আবজাল দম্পতির
অবৈধ বিল বোর্ড ও সাইনবোর্ড উচ্ছেদ চলছে
লালমনিরহাটের ১৪ কারারক্ষী স্ট্যান্ড রিলিজ
সাহেদ করিমের অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ
বিটিসিএলকে সেবামুখী করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে
এসপির বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৬ মহররম ১৪৪২, ২৮ ভাদ্র ১৪২৭

কুড়িগ্রাম

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী-বিধবা ও ভিজিডির চাল আত্মসাতের অভিযোগ

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মঙ্গার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুস্থদের ভিজিএফ এবং ভিজিডি’র চাল ভুয়া তালিকার মাধ্যমে লোপাট, প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভুক্তভোগীসহ ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মঙ্গা ওই ইউনিয়নে ২শ’ জন দুস্থ মহিলার নামে দুই বছর মেয়াদি ভিজিডি কার্ডের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেন। তালিকায় নাম থাকা দুস্থরা প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। এদিকে ভিজিডি চাল বিতরণের ২০ মাস পেড়িয়ে গেলেও অনেকেই জানেন না তালিকায় তাদের নাম রয়েছে এমনকি প্রতি মাসে তাদের নামে চাল উত্তোলন করা হলেও তারা তা জানেন না।

এমন অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নিমাই চন্দ্রের স্ত্রী তরুবালা (ভিজিডি কার্ড নম্বর-২৮৯৪, সিরিয়াল নম্বর-১৫৪), ৩নং ওয়ার্ডের জহুরুল হকের স্ত্রী জোসনা বেগম (কার্ড নম্বর-২৮৩৫, সিরিয়াল নম্বর-৯৫), ১নং ওয়ার্ডের আবদুর রশিদের স্ত্রী মল্লিকা বেগম (কার্ড নম্বর-২৭৯০, সিরিয়াল নম্বর-৫০), একই ওয়ার্ডের আবদুল মমিনের স্ত্রী বিলকিছ বেগম (কার্ড নম্বর-২৭৭৯, সিরিয়াল নম্বর-৩৯) সহ অনেকেই। বঞ্চিত দুস্থরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার প্রতি মাসে আমাদের নামে চাল বরাদ্দ দিলেও আমরা তা জানি না।

এছাড়া উত্তর পান্ডুলের বরিজ উদ্দিনের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবদুল হামিদের কাছ থেকে ভাতার ৯ হাজার টাকার মধ্যে ৬ হাজার টাকা চেয়ারম্যান কেটে নেন বলে ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অভিযোগ করেছেন। একই এলাকার লক্ষী বালা রানী অভিযোগ করে বলেন, তার বিধবা ভাতার ৬ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা ও তার নাতনী বাকপ্রতিবন্ধী অনিকা রানীর ভাতার ৯ হাজার টাকার মধ্যে ৮ হাজার টাকা চেয়ারম্যান কেটে নেন।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ তুলে পান্ডুল ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন দফতরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ, ঈদুল আযাহার পূর্বে ওই ইউনিয়নের ৫ হাজার ৫৩ জন দুস্থ মানুষের বিপরীতে ১০ কেজি করে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু ওই তালিকায় চেয়ারম্যান কৌশলে একই ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর কোথাও ৩ বার, কোথাও ২ বার করে একাধিক ওয়ার্ডের সিরিয়াল নম্বর ব্যবহার করেছেন। ওই ইউনিয়নের গাবতলী এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে আ. সামাদের নাম ভিন্ন ভিন্ন সিরিয়ালে দুইবার ব্যবহার করেছেন (সিরিয়াল নম্বর-৩৩৬২ ও ৩২০৫, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৮৬৫৮৫৭৪৫১৫)। একইভাবে ৩নং ওয়ার্ডের আম ভদ্রপাড়া এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে ফজলুল হকের নাম তিন বার (সিরিয়াল নম্বর-৩১৮১, ৪৭১৮ ও ৯৮০, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর-৬৮৫৮৪৩৬৮৬৪) ব্যবহার করা হলেও তারা কেউ ভিজিএফ এর চাল পাননি। এভাবে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তির নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে চাল উত্তোলনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান।

পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার মঙ্গা তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভিজিএফ ও ভিজিডির তালিকা ইউপি সদস্য ও দলীয়ভাবে জমা হয়। ভুল করলে তারা করেছেন। আমাকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী চাল বিতরন করা হয়েছে। দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধী এবং বিধবা ভাতার টাকা কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তাদের চিনিও না, জানিও না। একটি মহল আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করে আসছেন।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহানা আক্তার জানান, পান্ডুল ইউনিয়নের ভিজিডির বিষয়ে আমার দফতরে অভিযোগ জমা পড়েছে সেটি দেখতে হবে, জানতে হবে, তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে-এ-জান্নাত রুমি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদেন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।