কুড়িগ্রাম-সুন্দরগঞ্জে বিলীন স্কুল মসজিদসহ ৩ শতাধিক বাড়িঘর

কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙন চলছে উলিপুরের বজরা ইউনিয়ন এলাকায়। এই এলাকায় গাইবান্ধা জেলার নদী বিচ্ছিন্ন অংশ কাশিমবাজারেও চলছে তা-ব। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে গত দু’সপ্তাহে দুই জেলার তিন শতাধিক বাড়িঘরসহ স্কুল ও মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। একমাত্র পাকা সড়ক পথের দুশো মিটার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। দুই জেলার সীমানা হওয়ায় রশি টানাটানি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। এ নিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করলেও বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভাঙনকবলিত এলাকার গফুর মিয়া জানান, ‘তিনবার বাড়ি ভাঙছি। এরপর শ্বশুরের ভিটায় আশ্রয় নিছি। সেটাও ভাঙি গেইছে। হামরা এ্যালা কোটে যামো।’

জরিমন নামে এক বিধবা জানান, প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়া অনেক কষ্ট করি বাঁচি আছি। এপাকে বাড়ি ভাঙবের নাগছে। কাঁইয়ো জাগা দিবার নাগছে না। খাবারও নাই। গাছের ডাল কাটি বিক্রি করি কোনমতে বাঁচি আছি। তোমরা নদীটা বান্ধি দেও।’ কৃষিক মোজাম্মেল হক জানান, ‘বাহে ১২ একর জমি আছিল। ৭ বার বাড়ি ভাঙছি। সম্পদ সউগ নদী খায়া গেইছে। এ্যালা বাড়িভিটাসহ ৩০ শতক জমি আছে। সেটাও যাবার নাগছে। এটা গেইলে নিঃস্ব হয়া যামো।

সরেজমিন দেখা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চরবজরা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন ও কুড়িগ্রামের সাথে লাগোয়া লখিয়ারপাড়া, পাড়াসাদুয়া, মাদারীপাড়া ও ঐতিহ্যবাহী কাশিমবাজার হাট, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদ্রাসা এবং ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও এই এলাকায় একমাত্র চলাচলের পথ চিলমারী, কাশিমমবাজার টু উলিপুর সড়কের প্রায় ২শ’ মিটার সড়কপথ পানিগর্ভে চলে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষজন। যেভাবে ভাঙছে তাতে কয়েক দিনে উলিপুরের বজরা ও হরিপুরের কাশিমবাজার এলাকার দু’হাজার পরিবারের ভিটেমাটি তিস্তার পেটে চলে যাবে। কাশিমবাজার এলাকার অধিবাসী ফরহাদ আলী সরকার, শিমুল, আতিয়ার মাস্টার, আবু তালেব, আশরাফ মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান, নদী বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধা জেলার এই অংশটুকু কুড়িগ্রামের মাটিতে পরায় এলাকার মানুষ সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এই করোনায় আমরা কোনো বরাদ্দ পাই নাই। এলাকার তিন ভাগের দুই ভাগ অঞ্চল নদীগর্ভে চলে গেলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে এলাকার সুধীজন মোস্তাফিজার রহমান বাবুল, আবদুস সবুর ও মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে আমরা দু’জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ছোটাছুটি করেছি। গাইবান্ধা বলে আপনারা কুড়িগ্রামের সাথে যোগাযোগ করুন। এখান থেকে নদী পেরিয়ে কাজ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রাম থেকে তীব্র নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও তা কাজে লাগছে না। শুকনো মৌসুমে কাজের কথা বললেও তারা শোনে না। এখন শুধু ঠিকাদার দিয়ে অর্থের অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বরাদ্দ ও বাজেট না পাওয়ায় কাজে বিঘœ ঘটছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা নদীর ৬৭টি পয়েন্টে প্রায় ৮ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি পয়েন্টে ৬ কি.মি জায়গায় জরুরিভিত্তিতে কাজ চলছে।

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৭ মহররম ১৪৪২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৭

কুড়িগ্রাম-সুন্দরগঞ্জে বিলীন স্কুল মসজিদসহ ৩ শতাধিক বাড়িঘর

প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম-সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

image

কুড়িগ্রামে ভয়াবহ ভাঙন চলছে উলিপুরের বজরা ইউনিয়ন এলাকায়। এই এলাকায় গাইবান্ধা জেলার নদী বিচ্ছিন্ন অংশ কাশিমবাজারেও চলছে তা-ব। তিস্তা নদীর প্রবল স্রোতে গত দু’সপ্তাহে দুই জেলার তিন শতাধিক বাড়িঘরসহ স্কুল ও মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে। একমাত্র পাকা সড়ক পথের দুশো মিটার ভাঙনে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। দুই জেলার সীমানা হওয়ায় রশি টানাটানি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। এ নিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করলেও বরাদ্দ না পাওয়ার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভাঙনকবলিত এলাকার গফুর মিয়া জানান, ‘তিনবার বাড়ি ভাঙছি। এরপর শ্বশুরের ভিটায় আশ্রয় নিছি। সেটাও ভাঙি গেইছে। হামরা এ্যালা কোটে যামো।’

জরিমন নামে এক বিধবা জানান, প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়া অনেক কষ্ট করি বাঁচি আছি। এপাকে বাড়ি ভাঙবের নাগছে। কাঁইয়ো জাগা দিবার নাগছে না। খাবারও নাই। গাছের ডাল কাটি বিক্রি করি কোনমতে বাঁচি আছি। তোমরা নদীটা বান্ধি দেও।’ কৃষিক মোজাম্মেল হক জানান, ‘বাহে ১২ একর জমি আছিল। ৭ বার বাড়ি ভাঙছি। সম্পদ সউগ নদী খায়া গেইছে। এ্যালা বাড়িভিটাসহ ৩০ শতক জমি আছে। সেটাও যাবার নাগছে। এটা গেইলে নিঃস্ব হয়া যামো।

সরেজমিন দেখা যায়, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চরবজরা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের নদী বিচ্ছিন্ন ও কুড়িগ্রামের সাথে লাগোয়া লখিয়ারপাড়া, পাড়াসাদুয়া, মাদারীপাড়া ও ঐতিহ্যবাহী কাশিমবাজার হাট, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদ্রাসা এবং ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও এই এলাকায় একমাত্র চলাচলের পথ চিলমারী, কাশিমমবাজার টু উলিপুর সড়কের প্রায় ২শ’ মিটার সড়কপথ পানিগর্ভে চলে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষজন। যেভাবে ভাঙছে তাতে কয়েক দিনে উলিপুরের বজরা ও হরিপুরের কাশিমবাজার এলাকার দু’হাজার পরিবারের ভিটেমাটি তিস্তার পেটে চলে যাবে। কাশিমবাজার এলাকার অধিবাসী ফরহাদ আলী সরকার, শিমুল, আতিয়ার মাস্টার, আবু তালেব, আশরাফ মাস্টারসহ স্থানীয়রা জানান, নদী বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধা জেলার এই অংশটুকু কুড়িগ্রামের মাটিতে পরায় এলাকার মানুষ সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এই করোনায় আমরা কোনো বরাদ্দ পাই নাই। এলাকার তিন ভাগের দুই ভাগ অঞ্চল নদীগর্ভে চলে গেলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে এলাকার সুধীজন মোস্তাফিজার রহমান বাবুল, আবদুস সবুর ও মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ভাঙন ঠেকাতে আমরা দু’জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ছোটাছুটি করেছি। গাইবান্ধা বলে আপনারা কুড়িগ্রামের সাথে যোগাযোগ করুন। এখান থেকে নদী পেরিয়ে কাজ করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রাম থেকে তীব্র নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও তা কাজে লাগছে না। শুকনো মৌসুমে কাজের কথা বললেও তারা শোনে না। এখন শুধু ঠিকাদার দিয়ে অর্থের অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত তিস্তা নদীর ভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবি জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, বরাদ্দ ও বাজেট না পাওয়ায় কাজে বিঘœ ঘটছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলা নদীর ৬৭টি পয়েন্টে প্রায় ৮ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি পয়েন্টে ৬ কি.মি জায়গায় জরুরিভিত্তিতে কাজ চলছে।