বদরগঞ্জে নদী খননের কোটি টাকার বালু হরিলুট ! প্রশাসন নির্বিকার

রংপুরের বদরগঞ্জে নদী খননের স্তূপ করা কোটি টাকার বালুতে চলছে হরিলুট কারবার। এতে সরকার রাজস্ব হারালেও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন এলাকার অসাধু ব্যক্তিরা। আর প্রশাসন বলছে, এলাকার মানুষজন অসচেতন হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায় ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের অধীনে রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরের ভাংড়ীরঘাট হতে রাধানগর ইউনিয়নের পাঠানের হাট ব্রিজ পর্যন্ত চিকলী নদীর ১১ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ শেষ হয়েছে আট মাস আগে। কাজটি করেছেন রংপুরের মেসার্স রূপান্তর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফরহাদ হোসেন। নদী খনন করা হয় এক্সেভেটর ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে। ড্রেজার মেশিনের বালু নদীর দুই ধার ঘেঁষে ওপরের জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। নদী খননের সময়ে রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের বরাত দিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সেই সময় মাইকে প্রচার করা হয়, চিকলী নদী খননের স্তূপ করা বালু সরকারি সম্পদ। এই বালু কেউ বিক্রি করতে পারবে না, যদি কেউ বালু বিক্রি কিংবা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, স্তূপ করা বালুতে চলছে হরিলুট কারবার। এজন্য এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে নানাধরনের সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট প্রধানরা হলেন- দামোদরপুর ইউনিয়নের বারবিঘা গ্রামের আনিছুল হক, তারাজুল, আবু ও মমিনুল, পাঠানেরহাট এলাকার ইউপি সদস্য সামছুল হক, আমরুলবাড়ি এলাকার পলিপাড়ার আশরাফুল, রাধানগর পেলকাপাড়ার এনামুল হক ও আফতাবগঞ্জ দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ। কালিরহাট ও কদমতলী এলাকায় বালু বিক্রি করছেন আশরাফুল, এনামুল হক এবং আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার পাশেই বালু বিক্রি করছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ। প্রতি ট্রলি বালু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায় এবং বড় ট্রাক্টরে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। এলাকার লোকজন জানান, আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার পাশে এখনও কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার বালুর স্তূপ রয়েছে। এছাড়া কালিরহাট ও কদমতলীতে যে বালুর স্তূপ রয়েছে তার মূল্য কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। এ সময় ট্রাক্টরচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পেটের দায়ে ট্রাক্টর চালাই। মাটি ও বালুর ভাড়া মেরে সামান্য আয় করি। নদীর বালু আমরা কখনই চুরি করি না, নগদ টাকায় কিনে নেই। কিন্তু একজন বালু ব্যবসায়ী দিনে প্রকাশ্যে কমপক্ষে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার বালু বিক্রি করছেন। শাহাপুর গ্রামের ট্রাক্টর মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, বালু লুটেরারা বালু বিক্রি করে আর আমরা নগদ টাকা দিয়ে বালু কিনে নেই। অথচ আমরা প্রশাসনের চোখে আমরাই চোর, আর বালু লুটেরারা ভালো মানুষ।

কথা হয়, আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আনিছুল হকের সাথে। তিনি বলেন, নদীর ১১ কিলোমিটার অংশজুড়ে খননের কোটি টাকার বালুর স্তূপ ছিল। শুধুমাত্র প্রশাসনের তদারকির অভাবে বেশির ভাগ বালুই লুট হয়েছে। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারালেও অসাধু ব্যক্তিরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।

দামোদরপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ভ্যাবল বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করার দায়িত্ব দামোদরপুর ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের। কিন্তু তাকে ম্যানেজ করেই বালু লুট করা হচ্ছে। তার কথার সত্যতা মেলে বালু লুটেরা আশরাফুলের কথায়। তিনি বলেন, কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করে তো বালু উত্তোলন করতেই হয়। তবে কাকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এটা বলতে তিনি রাজি হননি।

তবে দামোদরপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। কারণ দু’দিন আগে আশরাফুল ও এনামুলের বিরুদ্ধে বালু বিক্রির অভিযোগ পেয়ে আমার অফিস সহায়ক আবদুর রাজ্জাককে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যদি আমার নাম করে তাদের কাছে টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে আমি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, এলাকার লোকজনের অসচেতনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। আমার অফিসিয়াল অনেক কাজ থাকে। শুধুমাত্র বালু নিয়ে পড়ে থাকলে কি চলবে?

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৭ মহররম ১৪৪২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৭

বদরগঞ্জে নদী খননের কোটি টাকার বালু হরিলুট ! প্রশাসন নির্বিকার

প্রতিনিধি, বদরগঞ্জ (রংপুর)

image

রংপুরের বদরগঞ্জে নদী খননের স্তূপ করা কোটি টাকার বালুতে চলছে হরিলুট কারবার। এতে সরকার রাজস্ব হারালেও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন এলাকার অসাধু ব্যক্তিরা। আর প্রশাসন বলছে, এলাকার মানুষজন অসচেতন হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায় ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের অধীনে রংপুরের বদরগঞ্জ পৌর শহরের ভাংড়ীরঘাট হতে রাধানগর ইউনিয়নের পাঠানের হাট ব্রিজ পর্যন্ত চিকলী নদীর ১১ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ শেষ হয়েছে আট মাস আগে। কাজটি করেছেন রংপুরের মেসার্স রূপান্তর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফরহাদ হোসেন। নদী খনন করা হয় এক্সেভেটর ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে। ড্রেজার মেশিনের বালু নদীর দুই ধার ঘেঁষে ওপরের জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। নদী খননের সময়ে রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের বরাত দিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সেই সময় মাইকে প্রচার করা হয়, চিকলী নদী খননের স্তূপ করা বালু সরকারি সম্পদ। এই বালু কেউ বিক্রি করতে পারবে না, যদি কেউ বালু বিক্রি কিংবা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, স্তূপ করা বালুতে চলছে হরিলুট কারবার। এজন্য এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে নানাধরনের সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট প্রধানরা হলেন- দামোদরপুর ইউনিয়নের বারবিঘা গ্রামের আনিছুল হক, তারাজুল, আবু ও মমিনুল, পাঠানেরহাট এলাকার ইউপি সদস্য সামছুল হক, আমরুলবাড়ি এলাকার পলিপাড়ার আশরাফুল, রাধানগর পেলকাপাড়ার এনামুল হক ও আফতাবগঞ্জ দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ। কালিরহাট ও কদমতলী এলাকায় বালু বিক্রি করছেন আশরাফুল, এনামুল হক এবং আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার পাশেই বালু বিক্রি করছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ। প্রতি ট্রলি বালু বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায় এবং বড় ট্রাক্টরে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। এলাকার লোকজন জানান, আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার পাশে এখনও কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার বালুর স্তূপ রয়েছে। এছাড়া কালিরহাট ও কদমতলীতে যে বালুর স্তূপ রয়েছে তার মূল্য কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। এ সময় ট্রাক্টরচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পেটের দায়ে ট্রাক্টর চালাই। মাটি ও বালুর ভাড়া মেরে সামান্য আয় করি। নদীর বালু আমরা কখনই চুরি করি না, নগদ টাকায় কিনে নেই। কিন্তু একজন বালু ব্যবসায়ী দিনে প্রকাশ্যে কমপক্ষে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার বালু বিক্রি করছেন। শাহাপুর গ্রামের ট্রাক্টর মালিক জয়নাল আবেদিন বলেন, বালু লুটেরারা বালু বিক্রি করে আর আমরা নগদ টাকা দিয়ে বালু কিনে নেই। অথচ আমরা প্রশাসনের চোখে আমরাই চোর, আর বালু লুটেরারা ভালো মানুষ।

কথা হয়, আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আনিছুল হকের সাথে। তিনি বলেন, নদীর ১১ কিলোমিটার অংশজুড়ে খননের কোটি টাকার বালুর স্তূপ ছিল। শুধুমাত্র প্রশাসনের তদারকির অভাবে বেশির ভাগ বালুই লুট হয়েছে। এতে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারালেও অসাধু ব্যক্তিরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।

দামোদরপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ভ্যাবল বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করার দায়িত্ব দামোদরপুর ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের। কিন্তু তাকে ম্যানেজ করেই বালু লুট করা হচ্ছে। তার কথার সত্যতা মেলে বালু লুটেরা আশরাফুলের কথায়। তিনি বলেন, কাউকে না কাউকে ম্যানেজ করে তো বালু উত্তোলন করতেই হয়। তবে কাকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এটা বলতে তিনি রাজি হননি।

তবে দামোদরপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। কারণ দু’দিন আগে আশরাফুল ও এনামুলের বিরুদ্ধে বালু বিক্রির অভিযোগ পেয়ে আমার অফিস সহায়ক আবদুর রাজ্জাককে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি যদি আমার নাম করে তাদের কাছে টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে আমি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, এলাকার লোকজনের অসচেতনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। আমার অফিসিয়াল অনেক কাজ থাকে। শুধুমাত্র বালু নিয়ে পড়ে থাকলে কি চলবে?