যথাসময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো। এক-দুটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলেও বেশিরভাগই প্রকল্প চলছে ধীরগতিতে। পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর এই প্রকল্পগুলো বর্তমান সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প। এরমধ্যে দাতা সংস্থার অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি। তিন দফা ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে এক দফা। দফায় দফায় ব্যয় ও সময় বাড়ানো হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি তেমন নেই। তাই করোনা মহামারীর পরে প্রকল্পের বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশে^ একটা ধাক্কা খেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টসহ সব বড় বড় প্রকল্পে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্প করোনা মোকাবিলায় যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করার কারণে বাস্তবায়নের গতি অনেকটা পিছিয়ে পড়বে। তাই যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মেগা প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি হয়। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দীর্ঘায়িত হলে ব্যয় অনেকটা বেড়ে যায়। তাই করোনা পরবর্তীতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারের নিবিড় নজরধারী করার পরামর্শ দেন তিনি।
১.পদ্মা বহুমুখী সেতু : ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এরমধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ ৭৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০০৭ সালে রেলপথ ছাড়া একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে রেলপথ যুক্ত করে প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় দ্বিগুণের বেশি। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের সময় ২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৪ পিয়ারের পাইলিং সমস্যা নতুন ডিজাইনে চূড়ান্ত করতে অনেক সময় চলে যায়ণ। তাই নির্মাণ সময় ১ বছর বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ১ বছর ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২১ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু করোনা ও নদী ভাঙনের কারণে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কম হওয়ায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।
২. মেট্রোরেল : রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণ করা হচ্ছে এই মেট্রোরেল-৬ প্রকল্প। এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)। একটি ট্রেনের ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। প্রাথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত পিয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর কমলাপুর অংশের ফিজিরিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। ৮টি প্যাকেজে নির্র্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পটি।
৩. পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প : পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত দুই অংশে রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ঢাকা-গেন্ডারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইন, লুপ, সাইডিং ও ওয়াই-কানেকশনসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। রেলপথটি নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রকল্পের অর্থায়নে করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এরমধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ। বাকি ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ টাকা ব্যয় হয়ে সরকারি ফান্ড থেকে। ২০১৬ সালের প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের সময় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু গত এপ্রিলে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে এবং ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রস্তাব অনুমোদন দেয় একনেক সভা। তবে প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন বেড়েছে, কমেছে চীনা ঋণ সহায়তা। মূল প্রকল্পে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ব্যয়বৃদ্ধির এই প্রকল্পটিতে সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চীন সরকার জি-টু-জি পদ্ধতিতে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। যা আগে ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি হয়। এর দুই বছর আগে কমার্শিয়াল চুক্তি হয়েছিল। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি।
৪. দোহাজারী থেকে গুনদুম রেলপথ নির্মাণ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। এ প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এখন হচ্ছে না। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি আর গুনধুম পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। ওই বছরই ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয় প্রকল্পটি। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তা আদৌ শেষ হবে কিনা, সংশয় কর্মকর্তাদের। ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার এডিবির ঋণে প্রকল্পটি দুই ধাপে বাস্তবায়ন হবে। মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
৫. পায়রা সমুদ্রবন্দর : পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এই মেগা প্রজেক্টটি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে মধ্যমেয়াদি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পটির অনুমোদিত সময় ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পরে ২ হাজার ২২২ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদনের সময় মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। পরে ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালে জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ‘পায়রা বন্দর অধ্যাদেশ ২০১৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। একই বছর ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম লক্ষ্যমাত্রা- বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনয়ন ও লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা। দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা- আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরে অন্তত একটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি বাল্ক টার্মিনাল প্রস্তুত করা এবং তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা- পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে (২০২৩ সাল) ধাপে ধাপে বন্দরের অন্যান্য আনুষঙ্গিক পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গড়ে তোলা। পূর্ণাঙ্গ বন্দর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়।
৬. সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর : ২০০৯ সালে এ প্রকল্পের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সম্ভাব্যতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত অর্থায়নের জন্য সহযোগী কোন দেশ বা সংস্থা পাওয়া যায়নি। সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী দেশ বা সংস্থা খুঁজছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও চীন এ বন্দর নির্মাণে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় সর্বশেষ প্রকল্পটির তেমন অগ্রগতি নেই বলে নৌ-মন্ত্রণলয়ের সূত্র জানায়।
৭. এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প, যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওট) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি। কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫০০ এমএমসিএফডি (দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং এক্সিলারেট এনার্জির মধ্যে ইমপ্লিমেনটেশন এগ্রিমেন্ট এবং পেট্রোবাংলা ও ইউবিএলের মধ্যে টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি হয়। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যেই এ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে এই টার্মিনাল। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছর পর টার্মিনালটি কোন বিনিময় মূল্য ছাড়া পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
৮. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়। শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সরকার মনে করে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া। ২০১০ সালের ২১ মে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়। বাংলাদেশ আর রুশ ফেডারেশনের মধ্যে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক একটি চুক্তি মস্কোতে স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রূপপুরে দুই হাজার চারশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় এটমস্ট্র এক্সপোর্ট নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি লাইফটাইম ৬০ বছর, যা পরবর্তীতে ১০০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। জানা গেছে, বিশ্বের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই রাশিয়া তার সর্বশেষ মডেলের আধুনিকায়ন করে। আর তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। শুরু থেকে এ বছর জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আর্থিক বিবেচনায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
৯. মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) : মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট নামে রামপালের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের আরেকটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। সুন্দরবন সংলগ্ন হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদের প্রথম দিকে পরিবেশবাদী এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শুরুই করা যাচ্ছিল না। তবে এখন অনেকটা নীরবে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। শুরু থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অনেক বাধা পেরিয়ে প্রকল্পটি প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করতে রাতদিন কাজ চলছে।
১০. মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্টা সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পটি জাইকার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রীয় ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)’। প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট অনুমোদন হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২৭ জুলাই ২০১৭ তে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা। মাতারবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর এই বিদ্যুকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে জাপান সরকারের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া গেছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে সাত হাজার ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ, নগরায়নের কাজ চলছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে। এছাড়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার আশা করছে সরকার।
বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৭ মহররম ১৪৪২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৭
ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ ফয়েজ আহমেদ তুষার
যথাসময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো। এক-দুটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন হলেও বেশিরভাগই প্রকল্প চলছে ধীরগতিতে। পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর এই প্রকল্পগুলো বর্তমান সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প। এরমধ্যে দাতা সংস্থার অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি। তিন দফা ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়েছে এক দফা। দফায় দফায় ব্যয় ও সময় বাড়ানো হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি তেমন নেই। তাই করোনা মহামারীর পরে প্রকল্পের বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশে^ একটা ধাক্কা খেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টসহ সব বড় বড় প্রকল্পে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্প করোনা মোকাবিলায় যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করার কারণে বাস্তবায়নের গতি অনেকটা পিছিয়ে পড়বে। তাই যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মেগা প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি হয়। জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দীর্ঘায়িত হলে ব্যয় অনেকটা বেড়ে যায়। তাই করোনা পরবর্তীতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারের নিবিড় নজরধারী করার পরামর্শ দেন তিনি।
১.পদ্মা বহুমুখী সেতু : ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এরমধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ ৭৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০০৭ সালে রেলপথ ছাড়া একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে রেলপথ যুক্ত করে প্রথম দফায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় দ্বিগুণের বেশি। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণের টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। ১ শতাংশ হারে সুদসহ ৩৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের সময় ২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৪ পিয়ারের পাইলিং সমস্যা নতুন ডিজাইনে চূড়ান্ত করতে অনেক সময় চলে যায়ণ। তাই নির্মাণ সময় ১ বছর বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ১ বছর ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২১ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু করোনা ও নদী ভাঙনের কারণে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কম হওয়ায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানায়।
২. মেট্রোরেল : রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নির্মাণ করা হচ্ছে এই মেট্রোরেল-৬ প্রকল্প। এ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)। একটি ট্রেনের ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। প্রাথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত পিয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর কমলাপুর অংশের ফিজিরিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। ৮টি প্যাকেজে নির্র্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পটি।
৩. পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প : পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত দুই অংশে রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন, ঢাকা-গেন্ডারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ডাবল লাইন, লুপ, সাইডিং ও ওয়াই-কানেকশনসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। রেলপথটি নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৫৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রকল্পের অর্থায়নে করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এরমধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ। বাকি ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ টাকা ব্যয় হয়ে সরকারি ফান্ড থেকে। ২০১৬ সালের প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের সময় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু গত এপ্রিলে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪ হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে এবং ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রস্তাব অনুমোদন দেয় একনেক সভা। তবে প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন বেড়েছে, কমেছে চীনা ঋণ সহায়তা। মূল প্রকল্পে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ব্যয়বৃদ্ধির এই প্রকল্পটিতে সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চীন সরকার জি-টু-জি পদ্ধতিতে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। যা আগে ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণচুক্তি হয়। এর দুই বছর আগে কমার্শিয়াল চুক্তি হয়েছিল। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি।
৪. দোহাজারী থেকে গুনদুম রেলপথ নির্মাণ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। এ প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে রামু থেকে গুনধুম পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এখন হচ্ছে না। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি আর গুনধুম পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ৬ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। ওই বছরই ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয় প্রকল্পটি। মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তা আদৌ শেষ হবে কিনা, সংশয় কর্মকর্তাদের। ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার এডিবির ঋণে প্রকল্পটি দুই ধাপে বাস্তবায়ন হবে। মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
৫. পায়রা সমুদ্রবন্দর : পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এই মেগা প্রজেক্টটি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বর্তমানে মধ্যমেয়াদি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পটির অনুমোদিত সময় ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পরে ২ হাজার ২২২ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদনের সময় মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। পরে ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালে জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ‘পায়রা বন্দর অধ্যাদেশ ২০১৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। একই বছর ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালি জেলার কলাপাড়া উপজেলায় লালুয়া ইউনিয়নে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম লক্ষ্যমাত্রা- বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজ আনয়ন ও লাইটার জাহাজের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা। দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা- আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরে অন্তত একটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি বাল্ক টার্মিনাল প্রস্তুত করা এবং তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা- পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে (২০২৩ সাল) ধাপে ধাপে বন্দরের অন্যান্য আনুষঙ্গিক পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গড়ে তোলা। পূর্ণাঙ্গ বন্দর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়।
৬. সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর : ২০০৯ সালে এ প্রকল্পের অর্থনৈতিক ও কারিগরি সম্ভাব্যতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত অর্থায়নের জন্য সহযোগী কোন দেশ বা সংস্থা পাওয়া যায়নি। সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী দেশ বা সংস্থা খুঁজছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও চীন এ বন্দর নির্মাণে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় সর্বশেষ প্রকল্পটির তেমন অগ্রগতি নেই বলে নৌ-মন্ত্রণলয়ের সূত্র জানায়।
৭. এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প, যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওট) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি। কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫০০ এমএমসিএফডি (দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং এক্সিলারেট এনার্জির মধ্যে ইমপ্লিমেনটেশন এগ্রিমেন্ট এবং পেট্রোবাংলা ও ইউবিএলের মধ্যে টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি হয়। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যেই এ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে এই টার্মিনাল। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছর পর টার্মিনালটি কোন বিনিময় মূল্য ছাড়া পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
৮. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়। শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সরকার মনে করে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া। ২০১০ সালের ২১ মে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়। বাংলাদেশ আর রুশ ফেডারেশনের মধ্যে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিষয়ক একটি চুক্তি মস্কোতে স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রূপপুরে দুই হাজার চারশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় এটমস্ট্র এক্সপোর্ট নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি লাইফটাইম ৬০ বছর, যা পরবর্তীতে ১০০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। জানা গেছে, বিশ্বের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই রাশিয়া তার সর্বশেষ মডেলের আধুনিকায়ন করে। আর তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। শুরু থেকে এ বছর জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আর্থিক বিবেচনায় এটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
৯. মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) : মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট নামে রামপালের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের আরেকটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। সুন্দরবন সংলগ্ন হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদের প্রথম দিকে পরিবেশবাদী এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শুরুই করা যাচ্ছিল না। তবে এখন অনেকটা নীরবে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। শুরু থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অনেক বাধা পেরিয়ে প্রকল্পটি প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ করতে রাতদিন কাজ চলছে।
১০. মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্টা সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প : কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পটি জাইকার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাষ্ট্রীয় ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)’। প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট অনুমোদন হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২৭ জুলাই ২০১৭ তে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা। মাতারবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর এই বিদ্যুকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে জাপান সরকারের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া গেছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে সাত হাজার ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ, নগরায়নের কাজ চলছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে। এছাড়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার আশা করছে সরকার।