জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন ইয়োশিহিদে সুগা

শেখ হাসিনার অভিনন্দন

গতকাল জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা। দীর্ঘ আট বছর পর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ চলাকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর হাল ধরতে হবে তাকে। অসুস্থতার কারণে গত ২৮ আগস্ট অ্যাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর জাপানের ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় অংশীদার রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতা নির্বাচিত হন সুগা। গতকাল জাপানের পার্লামেন্ট এবং সরকার প্রধান হিসেবে ৭১ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদকে বেছে নেয়। অ্যাবের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত সুগা তার পূর্বসূরির নীতিতেই দেশ চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একইদিন অ্যাবে তার মন্ত্রিপরিষদের শেষ বৈঠকও সম্পন্ন করেছেন। এরপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৮ বছর ক্ষমতা থাকাকালে যা যা অর্জন করেছেন তার জন্য তিনি গর্বিত। জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা অ্যাবে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন। জাপানের পার্লামেন্ট ডায়েটের নিম্নকক্ষে প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার ভোটে সুগা ৪৬২টি ভোটের মধ্যে ৩১৪ জনের সমর্থন পেয়ে জাপানের ৯৯তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সুগা বলেন, তিনি শিনজো অ্যাবের করা ‘অ্যাবেনোমিক্স’ নীতি ধরে রাখবেন। দেশের অর্থনীতিকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সুগা পার্লামেন্টে সহজেই জিতবেন বলে আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় সুগা এখন তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বেছে নেবেন। পরে জাপানের রাজপ্রাসাদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজা নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়োগকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে টোকিও হোসেই নামক এক নৈশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক করা ইয়োশিহিদে সুগার জন্ম হয় এক কৃষক পরিবারে। নিজের উপার্জিত অর্থে পড়াশুনা করা সুগা ১৯৮৬ সালে এলডিপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে কানাজাওয়া প্রদেশ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শিনজো অ্যাবের নেতৃত্বাধীন সরকারের পুরো সময়জুড়ে মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্ব থাকা সুগা সরকারের নীতিনির্ধারকের ভূমিকায়ও ছিলেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুগা শিনজো অ্যাবের রেখে যাওয়া প্রধানমন্ত্রিত্বের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ পূরণ করবেন।

শেখ হাসিনার অভিনন্দন 

বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ লাভের জন্য ইয়োশিহিদে সুগাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন যে, তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল এক অভিনন্দন বার্তার মাধ্যমে নতুন জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

শেখ হাসিনা বার্তায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনার নিয়োগের জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার (ইয়োশিহিদে সুগা) নির্বাচন আপনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দৃঢ়তা এবং আপনার ওপর ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জাপানের জনগণের আস্থার প্রতিফলন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্গে লড়াই এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিশীলতা আনার মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য বজায় রাখার যে প্রতিশ্রুতি আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা মূল্যায়নের মহতী মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ জাপানের বন্ধুপ্রতিম জনগণের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাপানের জনগণের কল্যাণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি আপনার ইতিবাচক মনোভাব সম্পর্কিত দূরদর্শী নীতিমালা বাস্তবায়ন করাকেও খুবই মূল্যবান মনে করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও জাপান একটি বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব এবং জোরালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে।

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গত দশকে আমাদের উভয় সরকার দুই দেশের পারস্পরিক উন্নয়নমূলক উদ্যোগকে শক্তিশালীকরণ ও উন্নয়নে একটি সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের আওতায় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়েছে।’

জাপানের অব্যাহত সহায়তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একই সঙ্গে আমি আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের অধীনেও এর চলমানতা আশা করছি।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অধিকতর সম্পৃক্ততার জন্য আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নতুন জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে সম্ভাব্য স্বল্পতম ও সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সুখ এবং জাপানের বন্ধুপ্রতিম জনগণের অবিচ্ছিন্ন শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৭ মহররম ১৪৪২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৭

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন ইয়োশিহিদে সুগা

শেখ হাসিনার অভিনন্দন

সংবাদ ডেস্ক |

গতকাল জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা। দীর্ঘ আট বছর পর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ চলাকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর হাল ধরতে হবে তাকে। অসুস্থতার কারণে গত ২৮ আগস্ট অ্যাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর জাপানের ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় অংশীদার রক্ষণশীল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতা নির্বাচিত হন সুগা। গতকাল জাপানের পার্লামেন্ট এবং সরকার প্রধান হিসেবে ৭১ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদকে বেছে নেয়। অ্যাবের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত সুগা তার পূর্বসূরির নীতিতেই দেশ চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একইদিন অ্যাবে তার মন্ত্রিপরিষদের শেষ বৈঠকও সম্পন্ন করেছেন। এরপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৮ বছর ক্ষমতা থাকাকালে যা যা অর্জন করেছেন তার জন্য তিনি গর্বিত। জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা অ্যাবে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন। জাপানের পার্লামেন্ট ডায়েটের নিম্নকক্ষে প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার ভোটে সুগা ৪৬২টি ভোটের মধ্যে ৩১৪ জনের সমর্থন পেয়ে জাপানের ৯৯তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সুগা বলেন, তিনি শিনজো অ্যাবের করা ‘অ্যাবেনোমিক্স’ নীতি ধরে রাখবেন। দেশের অর্থনীতিকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সুগা পার্লামেন্টে সহজেই জিতবেন বলে আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় সুগা এখন তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বেছে নেবেন। পরে জাপানের রাজপ্রাসাদে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজা নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের নিয়োগকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে টোকিও হোসেই নামক এক নৈশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক করা ইয়োশিহিদে সুগার জন্ম হয় এক কৃষক পরিবারে। নিজের উপার্জিত অর্থে পড়াশুনা করা সুগা ১৯৮৬ সালে এলডিপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে কানাজাওয়া প্রদেশ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শিনজো অ্যাবের নেতৃত্বাধীন সরকারের পুরো সময়জুড়ে মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্ব থাকা সুগা সরকারের নীতিনির্ধারকের ভূমিকায়ও ছিলেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুগা শিনজো অ্যাবের রেখে যাওয়া প্রধানমন্ত্রিত্বের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ পূরণ করবেন।

শেখ হাসিনার অভিনন্দন 

বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ লাভের জন্য ইয়োশিহিদে সুগাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন যে, তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল এক অভিনন্দন বার্তার মাধ্যমে নতুন জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

শেখ হাসিনা বার্তায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনার নিয়োগের জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার (ইয়োশিহিদে সুগা) নির্বাচন আপনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দৃঢ়তা এবং আপনার ওপর ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জাপানের জনগণের আস্থার প্রতিফলন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্গে লড়াই এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতিশীলতা আনার মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য বজায় রাখার যে প্রতিশ্রুতি আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা মূল্যায়নের মহতী মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ জাপানের বন্ধুপ্রতিম জনগণের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাপানের জনগণের কল্যাণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি আপনার ইতিবাচক মনোভাব সম্পর্কিত দূরদর্শী নীতিমালা বাস্তবায়ন করাকেও খুবই মূল্যবান মনে করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও জাপান একটি বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব এবং জোরালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে।

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে গত দশকে আমাদের উভয় সরকার দুই দেশের পারস্পরিক উন্নয়নমূলক উদ্যোগকে শক্তিশালীকরণ ও উন্নয়নে একটি সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের আওতায় অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়েছে।’

জাপানের অব্যাহত সহায়তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একই সঙ্গে আমি আপনার সুযোগ্য নেতৃত্বের অধীনেও এর চলমানতা আশা করছি।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অধিকতর সম্পৃক্ততার জন্য আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নতুন জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে সম্ভাব্য স্বল্পতম ও সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সুখ এবং জাপানের বন্ধুপ্রতিম জনগণের অবিচ্ছিন্ন শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।