শিক্ষা দিবস আজ

আজ মহান ‘শিক্ষা দিবস’। এবার করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষা দিবস পালন হচ্ছে। এরপরও সীমিত পরিসরে শিক্ষক সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করছে। দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষার মানের বিষয়টি সামনে আনছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। তারা বলেন, দেশে শিক্ষার সম্প্রসারণ, শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও দেশব্যাপী শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানোন্নয়ন হয়নি। শিক্ষার মান নিয়ে সন্তোষ্ট নন দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নেয়ার লক্ষ্যেই সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রবর্তন করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে বহুল প্রত্যাশিত শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই শিক্ষানীতির আলোকে দেশে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও দুই মন্ত্রণালয়ের ভিন্নমত এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই আইন করতে পারছে না সরকার। আইন না থাকায় শিক্ষায় অনেক ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সংকোচনমূলক শিক্ষানীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন ১৭ সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানি শাসকদের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ অনেকেই। সেই আত্মত্যাগীদের স্মরণ করতেই এই দিনটিকে পালন করা হয় শিক্ষা দিবস হিসেবে।

শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবির প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’র যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৬২’শ শিক্ষা আন্দোলনের পর থেকে দেশে বেশ কয়েকটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন হলেও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে কোনটিই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা যায়, তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তার ক্ষমতা দখলের দুই মাসের মাথায় ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এসএম শরীফের নেতৃত্বে গঠন করেন শরীফ কমিশন খ্যাত শিক্ষা কমিশন। পরের বছরে ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট কমিশনের পেশ করা প্রতিবেদনের প্রস্তাবনা ছিল শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবনাই শুধু ছিল না, ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনে উচ্চশিক্ষা ধনিশ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া ‘শরীফ কমিশন’র শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ‘অল পার্টি স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি’ দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয় পেটুয়া পুলিশ বাহিনী। এরই একপর্যায়ে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহ প্রমুখ শহীদ হন। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতি বছর এ দিনটিকে ‘মহান শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

শিক্ষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি :

শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সরকার ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ-স্বাশিপ’র পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকাল সাড়ে তিনটায় আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সাবেক শিক্ষা সচিব ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন স্বাশিপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৭ মহররম ১৪৪২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৭

শিক্ষা দিবস আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

আজ মহান ‘শিক্ষা দিবস’। এবার করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষা দিবস পালন হচ্ছে। এরপরও সীমিত পরিসরে শিক্ষক সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করছে। দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষার মানের বিষয়টি সামনে আনছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। তারা বলেন, দেশে শিক্ষার সম্প্রসারণ, শিক্ষকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও দেশব্যাপী শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানোন্নয়ন হয়নি। শিক্ষার মান নিয়ে সন্তোষ্ট নন দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নেয়ার লক্ষ্যেই সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রবর্তন করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে বহুল প্রত্যাশিত শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই শিক্ষানীতির আলোকে দেশে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও দুই মন্ত্রণালয়ের ভিন্নমত এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এই আইন করতে পারছে না সরকার। আইন না থাকায় শিক্ষায় অনেক ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সংকোচনমূলক শিক্ষানীতির প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন ১৭ সেপ্টেম্বর। পাকিস্তানি শাসকদের শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ অনেকেই। সেই আত্মত্যাগীদের স্মরণ করতেই এই দিনটিকে পালন করা হয় শিক্ষা দিবস হিসেবে।

শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবির প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক ‘শিক্ষা দিবস’র যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৬২’শ শিক্ষা আন্দোলনের পর থেকে দেশে বেশ কয়েকটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন হলেও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে কোনটিই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা যায়, তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তার ক্ষমতা দখলের দুই মাসের মাথায় ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এসএম শরীফের নেতৃত্বে গঠন করেন শরীফ কমিশন খ্যাত শিক্ষা কমিশন। পরের বছরে ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট কমিশনের পেশ করা প্রতিবেদনের প্রস্তাবনা ছিল শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবনাই শুধু ছিল না, ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনে উচ্চশিক্ষা ধনিশ্রেণীর জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া ‘শরীফ কমিশন’র শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ‘অল পার্টি স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি’ দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয় পেটুয়া পুলিশ বাহিনী। এরই একপর্যায়ে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহ প্রমুখ শহীদ হন। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতি বছর এ দিনটিকে ‘মহান শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

শিক্ষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি :

শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সরকার ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ-স্বাশিপ’র পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকাল সাড়ে তিনটায় আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র চেয়ারম্যান প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সাবেক শিক্ষা সচিব ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন স্বাশিপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।