পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনে ভুল

পিয়ার নির্মাণে ত্রুটি ধরা পড়েছে

পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলের কারণে পিয়ার নির্মাণে ত্রুটি ধরা পড়েছে। রেলসংযোগ প্রকল্পের একটি পিয়ারের উচ্চতা কম হওয়ায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মূল সেতুতে উঠতে বাধাগ্রস্ত হবে। তাই বিষয়টি সমাধানে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, রেল সংযোগ প্রকল্পটি মূলত পদ্মা সেতুর একটি অংশ। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলের কারণে মূল সেতু দিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে। বিষয়টি সমাধানে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালকের একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলে মূল সেতু দিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে। সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে টানা রেললাইনের উচ্চতা কম থাকায় হেডরুম দিয়ে বেশি উচ্চতার যানবাহন সেতুতে ওঠানামা করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমাধানে সেতু ও রেল কর্তৃপক্ষ সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে রেল সংযোগ লাইন নির্মাণ ত্রুটি পেয়ে আপত্তি জানিয়েছে পদ্মা মূল পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। মূল সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, জাজিরা পয়েন্টে নির্মিত রেললাইন যে উচ্চতায় দেয়া হয়েছে, তাতে সংযোগ সড়ক দিয়ে সেতুতে উঠার সময় লরি আটকে যাবে। একটি পিয়ারের কারণে এই সমস্যা হয়েছে। রেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ওটা ঠিক করার জন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, রেল সংযোগ প্রকল্পে পিয়ার নির্মাণে উচ্চতা কম থাকায় মূল সেতুতে যানবাহন উঠতে সমস্যা হতে পারে। এ বিষয়টি রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের আমরা জানিয়েছি। আশা করছি, বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। কারণ সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে রেললাইন হচ্ছে, সেখানে তারা উচ্চতা ও পাশে আদর্শ মাপ মেনে কাজ করছে না। ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতা ও ১৫ দশমিক ৫ মিটার পাশে সেতুর উভয় প্রান্তে রাস্তার উপর থাকার কথা, কিন্তু তারা উচ্চতার চেয়ে কম দিয়েছে। এতে সংযোগ সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হতে পারে। যে মাপ দেয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী তাদের কাজ করার কথা, এর চেয়ে কম উচ্চতা ও পাশে কাজ করলে অবশ্যই তাদের পুনরায় অনুমতি নিয়ে নকশা পাস করিয়ে নিতে হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূত্র জানায়, সমস্যাটা মূল সেতুতে নয়, সমস্যা তৈরি হয়েছে ভায়াডাক্ট বা রেল ও মূল সেতু সংযোগ সড়কে। সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে টানা হচ্ছে রেললাইন। সেখানে উচ্চতা কম করে কাজ করা হচ্ছে। কোন রাস্তায় উপর যদি ফ্লাইওভার করা হয়, আর সেখানে যদি উচ্চতা কম থাকে, তাহলে নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচল সমস্যা হবেই, বড় ট্রাক বা লরি চলাচলে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, জাজিরা পয়েন্টে একটি পিলার কম উচ্চতায় করা হয়েছিল। যেখানে ৫ দশমিক ৭ মিটার করার কথা, সেখানে ৫ দশমিক ৫ মিটার করা হয়েছে। বিষয়টি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই তা সমাধান করা হবে। মূল সেতুর দুই প্রান্তে হরাইজন্টাল (অনুভূমিক) ও ভার্টিক্যাল (উল্লম্ব)-দু’দিকেই ত্রুটি ধরা পড়ে। আন্তর্জাতিকভাবে সড়কপথের হেডরুম স্ট্যান্ডার্ড হল হরাইজন্টাল ১৫ মিটার, ভার্টিক্যাল ৫ দশমিক ৭ মিটার থাকতে হবে। কিন্তু রেল প্রকল্পে ভার্টিক্যাল রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৮ মিটার। যেখানে ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে সেটি সারাতে হলে পুরো প্রকল্পে এর প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে থাকা ১৭৩টি পিলারের মধ্যে ৫০ শতাংশ পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। পিলারের উপর স্থাপিত ১৭৪টি গার্ডারের মধ্যে ২৪টি বসানো হয়ে গেছে। এক হাজার ৬১টি পিলার পাইল শতভাগ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় ২৫ নম্বর পিলার বরাবর ৫ দশমিক ৭ মিটার উঁচু করা কিছুতেই সম্ভব নয়। তবে এর সমাধান করতে হলে স্থাপিত পুরো পিলার, গার্ডার ও পাইল কম-বেশি ভাঙতে হবে। ২০১৫ সালের চূড়ান্ত সমীক্ষায় মূল সেতু ও রেল সংযোগ সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সমন্বয়েই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে মূল পদ্মা সেতুর ভেতরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণকাজ হচ্ছিল। একই সঙ্গে মূল সেতুর দুই প্রান্তে অর্থাৎ রাস্তার উপর দিয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান।

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৭ মহররম ১৪৪২, ২৯ ভাদ্র ১৪২৭

পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনে ভুল

পিয়ার নির্মাণে ত্রুটি ধরা পড়েছে

পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলের কারণে পিয়ার নির্মাণে ত্রুটি ধরা পড়েছে। রেলসংযোগ প্রকল্পের একটি পিয়ারের উচ্চতা কম হওয়ায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মূল সেতুতে উঠতে বাধাগ্রস্ত হবে। তাই বিষয়টি সমাধানে বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, রেল সংযোগ প্রকল্পটি মূলত পদ্মা সেতুর একটি অংশ। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলের কারণে মূল সেতু দিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে। বিষয়টি সমাধানে সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালকের একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ডিজাইনের ভুলে মূল সেতু দিয়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচলে বিঘœ ঘটবে। সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে টানা রেললাইনের উচ্চতা কম থাকায় হেডরুম দিয়ে বেশি উচ্চতার যানবাহন সেতুতে ওঠানামা করতে পারবে না। এ বিষয়ে সমাধানে সেতু ও রেল কর্তৃপক্ষ সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে রেল সংযোগ লাইন নির্মাণ ত্রুটি পেয়ে আপত্তি জানিয়েছে পদ্মা মূল পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। মূল সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, জাজিরা পয়েন্টে নির্মিত রেললাইন যে উচ্চতায় দেয়া হয়েছে, তাতে সংযোগ সড়ক দিয়ে সেতুতে উঠার সময় লরি আটকে যাবে। একটি পিয়ারের কারণে এই সমস্যা হয়েছে। রেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ওটা ঠিক করার জন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, রেল সংযোগ প্রকল্পে পিয়ার নির্মাণে উচ্চতা কম থাকায় মূল সেতুতে যানবাহন উঠতে সমস্যা হতে পারে। এ বিষয়টি রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের আমরা জানিয়েছি। আশা করছি, বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। কারণ সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে রেললাইন হচ্ছে, সেখানে তারা উচ্চতা ও পাশে আদর্শ মাপ মেনে কাজ করছে না। ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতা ও ১৫ দশমিক ৫ মিটার পাশে সেতুর উভয় প্রান্তে রাস্তার উপর থাকার কথা, কিন্তু তারা উচ্চতার চেয়ে কম দিয়েছে। এতে সংযোগ সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হতে পারে। যে মাপ দেয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী তাদের কাজ করার কথা, এর চেয়ে কম উচ্চতা ও পাশে কাজ করলে অবশ্যই তাদের পুনরায় অনুমতি নিয়ে নকশা পাস করিয়ে নিতে হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূত্র জানায়, সমস্যাটা মূল সেতুতে নয়, সমস্যা তৈরি হয়েছে ভায়াডাক্ট বা রেল ও মূল সেতু সংযোগ সড়কে। সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে টানা হচ্ছে রেললাইন। সেখানে উচ্চতা কম করে কাজ করা হচ্ছে। কোন রাস্তায় উপর যদি ফ্লাইওভার করা হয়, আর সেখানে যদি উচ্চতা কম থাকে, তাহলে নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচল সমস্যা হবেই, বড় ট্রাক বা লরি চলাচলে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, জাজিরা পয়েন্টে একটি পিলার কম উচ্চতায় করা হয়েছিল। যেখানে ৫ দশমিক ৭ মিটার করার কথা, সেখানে ৫ দশমিক ৫ মিটার করা হয়েছে। বিষয়টি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই তা সমাধান করা হবে। মূল সেতুর দুই প্রান্তে হরাইজন্টাল (অনুভূমিক) ও ভার্টিক্যাল (উল্লম্ব)-দু’দিকেই ত্রুটি ধরা পড়ে। আন্তর্জাতিকভাবে সড়কপথের হেডরুম স্ট্যান্ডার্ড হল হরাইজন্টাল ১৫ মিটার, ভার্টিক্যাল ৫ দশমিক ৭ মিটার থাকতে হবে। কিন্তু রেল প্রকল্পে ভার্টিক্যাল রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৮ মিটার। যেখানে ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে সেটি সারাতে হলে পুরো প্রকল্পে এর প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে থাকা ১৭৩টি পিলারের মধ্যে ৫০ শতাংশ পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। পিলারের উপর স্থাপিত ১৭৪টি গার্ডারের মধ্যে ২৪টি বসানো হয়ে গেছে। এক হাজার ৬১টি পিলার পাইল শতভাগ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় ২৫ নম্বর পিলার বরাবর ৫ দশমিক ৭ মিটার উঁচু করা কিছুতেই সম্ভব নয়। তবে এর সমাধান করতে হলে স্থাপিত পুরো পিলার, গার্ডার ও পাইল কম-বেশি ভাঙতে হবে। ২০১৫ সালের চূড়ান্ত সমীক্ষায় মূল সেতু ও রেল সংযোগ সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সমন্বয়েই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে মূল পদ্মা সেতুর ভেতরে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণকাজ হচ্ছিল। একই সঙ্গে মূল সেতুর দুই প্রান্তে অর্থাৎ রাস্তার উপর দিয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ চলমান।