শেরপুরে দরপত্র ছাড়াই সর. স্কুলের ভবন ভাঙা, গাছ কাটার অভিযোগ

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিলাম ছাড়াই বগুড়ার শেরপুরে গাড়ীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন ভেঙ্গে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি দামি গাছও কেটে নিয়েছেন তিনি। মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিড়গ্রহণের অজুহাত দেখিয়ে গত দুইদিন ধরে সরকারি এই বিদ্যালয়ের গাছ কাটা এবং ভবনের মালামাল লুটের মহোৎসব চলছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও অদৃশ্য কারণে অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের গাড়ীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবনের প্রায় আশিভাগ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক ভাঙ্গার কাজ করছিল। পাশাপাশি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাগানো দামী দামী গাছও কেটে ফেলার কাজ করছিল শ্রমিকরা। এরপর ট্রলিতে তুলে ভেঙ্গে ফেলা ভবনের ইট-রড, টিন-কাঠ, বাঁশ ও গাছের গুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব কোথায় নেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রলি চালক ও শ্রমিকরা জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি মোকাব্বর হোসেনের নির্দেশে এই কাজ করছেন তারা। আর কেটে ফেলা গাছগুলো তারই মালিকানাধীন করাত কলে (ছমিল) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান ওইসব শ্রমিকরা।

এ সময় বিষয়টি সম্পর্কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগমের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিগত ১৯১৪ সালে গাড়িদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গাড়িদহ মৌজায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন ৫১শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজের জন্য এগারো শতক জমি অধিগ্রহণ করায় বিদ্যালয়ের পশ্চিমপাশের প্রধান ফটকসহ একটি একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন ও সেমি পাকা দুইটি ক্লাসরুমসহ সব স্থাপনা সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া বড় বড় সাতটি গাছও কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য গঠিত কমিটির মেয়াদও উর্ত্তীণ হয়ে গেছে। এ কারণে কমিটির কোন বৈঠক ডাকা সম্ভব হয়নি। তাই ভবন ভাঙা ও গাছ কাটার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক। অথচ মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি ও তার লোকজন সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কোন প্রকার নিলাম ছাড়াই গাছ কেটে এবং ভবন ভেঙ্গে মালামালগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাড়িদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একনেতাসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষা অফিসের কর্তাদের যোগসাজশের মাধ্যমে সভাপতি মোকাব্বর হোসেন আড়াই লাখ টাকায় ভেঙ্গে ফেলা ভবনের মালপত্র ও দেড় লাখ টাকায় গাছ গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই দুইদিন ধরে আকস্মিকভাবে স্থাপনা ভেঙ্গে ও গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে অন্তত তিন থেকে চার লাখ টাকা আত্মসাত করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি মোকাব্বর হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তিনি কেবল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ পালন করছেন মাত্র। তাই এই সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন। আপনারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- এই বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. মিনা খাতুন জানান, নিলাম ছাড়াই ওই বিদ্যালয়ের ভবন ভাঙা হলেও ভবনের মালামাল ও কেটে ফেলা গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সভাপতিকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে তার দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, স্কুলের গাছ, ভবন ও ক্লাসরুম নিয়ম অনুযায়ী অপসারণ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি সরকারি সম্পদ লুটপাট করা হলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দাবি করেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

শেরপুরে দরপত্র ছাড়াই সর. স্কুলের ভবন ভাঙা, গাছ কাটার অভিযোগ

প্রতিনিধি, শেরপুর (বগুড়া)

image

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিলাম ছাড়াই বগুড়ার শেরপুরে গাড়ীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন ভেঙ্গে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি দামি গাছও কেটে নিয়েছেন তিনি। মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিড়গ্রহণের অজুহাত দেখিয়ে গত দুইদিন ধরে সরকারি এই বিদ্যালয়ের গাছ কাটা এবং ভবনের মালামাল লুটের মহোৎসব চলছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও অদৃশ্য কারণে অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের গাড়ীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবনের প্রায় আশিভাগ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক ভাঙ্গার কাজ করছিল। পাশাপাশি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাগানো দামী দামী গাছও কেটে ফেলার কাজ করছিল শ্রমিকরা। এরপর ট্রলিতে তুলে ভেঙ্গে ফেলা ভবনের ইট-রড, টিন-কাঠ, বাঁশ ও গাছের গুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব কোথায় নেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রলি চালক ও শ্রমিকরা জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি মোকাব্বর হোসেনের নির্দেশে এই কাজ করছেন তারা। আর কেটে ফেলা গাছগুলো তারই মালিকানাধীন করাত কলে (ছমিল) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান ওইসব শ্রমিকরা।

এ সময় বিষয়টি সম্পর্কে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বেগমের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিগত ১৯১৪ সালে গাড়িদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গাড়িদহ মৌজায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন ৫১শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজের জন্য এগারো শতক জমি অধিগ্রহণ করায় বিদ্যালয়ের পশ্চিমপাশের প্রধান ফটকসহ একটি একতলা বিশিষ্ট পাকা ভবন ও সেমি পাকা দুইটি ক্লাসরুমসহ সব স্থাপনা সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া বড় বড় সাতটি গাছও কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য গঠিত কমিটির মেয়াদও উর্ত্তীণ হয়ে গেছে। এ কারণে কমিটির কোন বৈঠক ডাকা সম্ভব হয়নি। তাই ভবন ভাঙা ও গাছ কাটার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক। অথচ মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি ও তার লোকজন সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কোন প্রকার নিলাম ছাড়াই গাছ কেটে এবং ভবন ভেঙ্গে মালামালগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাড়িদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একনেতাসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ শিক্ষা অফিসের কর্তাদের যোগসাজশের মাধ্যমে সভাপতি মোকাব্বর হোসেন আড়াই লাখ টাকায় ভেঙ্গে ফেলা ভবনের মালপত্র ও দেড় লাখ টাকায় গাছ গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই দুইদিন ধরে আকস্মিকভাবে স্থাপনা ভেঙ্গে ও গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে অন্তত তিন থেকে চার লাখ টাকা আত্মসাত করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে মেয়াদ উর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি মোকাব্বর হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তিনি কেবল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ পালন করছেন মাত্র। তাই এই সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারবেন। আপনারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন- এই বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. মিনা খাতুন জানান, নিলাম ছাড়াই ওই বিদ্যালয়ের ভবন ভাঙা হলেও ভবনের মালামাল ও কেটে ফেলা গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সভাপতিকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে তার দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, স্কুলের গাছ, ভবন ও ক্লাসরুম নিয়ম অনুযায়ী অপসারণ করার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি সরকারি সম্পদ লুটপাট করা হলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দাবি করেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।