ছয় মাসেও দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র নেই

করোনা নিয়ন্ত্রণহীন, হালছাড়া নৌকার মতো ভেসে চলেছে : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মৃত্যুর হারের তুলনায় করোনা শনাক্ত হচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান সঠিক নয় : বিএমএ মহাসচিব

দেশে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে কম, মৃত্যুর হিসাবে উপসর্গ নিয়ে মৃতদের সংখ্যা নেই। সরকারি হিসেবে গত এক মাসে প্রায় সাড়ে ৯শ’ মানুষ করোনায় মারা গেছেন। আর এক মাসে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার। শনাক্তের হারে অন্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার বাংলাদেশে বেশি। সেজন্য দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এটি বলতে নারাজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষার অভাবে শনাক্ত ও মৃত্যুর হারের সঠিক সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত বুধবার দেশে দেড় মাসে সর্বনি¤œ একদিনে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে আর গতকাল চব্বিশ ঘণ্টায় ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবারের তুলনায় গতকাল ১৫ জন মানুষের মৃত্যু বেশি হয়েছে। এ দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও এক হাজার ৫৯৩ জন। সব মিলে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৯ জনের। আর মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ জন। আগের তুলনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা কমানোর ফলে শনাক্তের হার কমছে কিন্তু মৃত্যুর হার বাড়ছে। এ থেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা নমুনা পরীক্ষা বাড়লে শনাক্ত বেশি হবে। সেই ক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে। সেখানে কোনভাবেই বলা যাবে না যে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের ছয় মাস নয়দিন পেরোলেও এখনও সব জেলায় নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র (ল্যাব) চালু করতে পারেনি সরকার। বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৬টি জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র চালু আছে। পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকা ৩৮ জেলায় রোগী শনাক্তের পরিমাণ কম। নমুনা পরীক্ষা এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। ফলে জনসংখ্যা অনুপাতে পরীক্ষার দিক থেকে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সরকারের করোনাবিষয়ক পুরো কার্যক্রমেই একটা গাছাড়া, ঢিলেঢালাভাব দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেনি। পরীক্ষা কম হওয়ায় সন্দেহভাজন অনেক রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে ঢাকা বাদে ৫ জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে দুটি ও গাজীপুরে চারটি কেন্দ্র রয়েছে। কিশোরগঞ্জ ও ফরিদপুরে একটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ৬টি পরীক্ষাকেন্দ্র। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম ছাড়া ৭টি জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া ও নড়াইলে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সিলেট বিভাগের দুটি পরীক্ষাকেন্দ্রই সিলেট জেলায় অবস্থিত। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে রংপুর ও দিনাজপুরে পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও বগুড়ায় দুটি করে এবং সিরাজগঞ্জে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ ও জামালপুরে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জন্য বরিশাল ও ভোলায় পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে।

গত ১৮ জুন করোনাবিষয়ক নিয়মিত বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ে আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু হবে। সেদিন দেশের ৪৩ জেলায় করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল না। এরপর আড়াই মাসের বেশি সময় পার হলেও নতুন করে মাত্র ৫ জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র চালু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা অনেক দিন ধরেই দেশে দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার কথা বলছেন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। জুন মাসে দৈনিক ১৭ থেকে ১৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু গত ৩ জুলাই থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক সিদ্ধান্তের কারণে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমতে থাকে। এখন দৈনিক ১১ থেকে ১৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

করোনা নিয়ে নিয়মিত তথ্য দেয়া ওয়েবসাইট ওয়াল্ডোমিটারস পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ ২৩টি দেশে দুই লক্ষাধিক কোভিড-১৯ শনাক্ত রোগী রয়েছে। আক্রান্তের এই শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার দিক থেকে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৮ হাজার ৫৯ জনের পরীক্ষা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনা মৃত্যু গত ১৪ সেপ্টম্বর চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৮তম অবস্থানে। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন কমবেশি ৩০ জন মানুষ করোনা আক্রান্তে মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে।

বাংলাদেশে গত ছয় মাসে করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ, তার ঠিক ১০ দিন পর প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কথা জানায়, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী মৃত্যুর পর ২০ এপ্রিল ১০০ জনের মৃত্যু হয়, ৯ মে ২০০ জন, ২৫ মে ৫০০ জন, ১০ জুন এক হাজার জন, ২১ জুন এক হাজার ৫০০ জন, ৩ জুলাই ২ হাজার জন, ১৭ জুলাই ২ হাজার ৫০০ জন, ২৮ জুলাই তিন হাজার জন, ১২ আগস্ট পৌঁছায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, ৭ সেপ্টম্বর সাড়ে চার হাজার ছাড়ায় এবং সর্বশেষ গতকাল ১২ সেপ্টম্বর ৩১ জনের মৃত্যুতে সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৭৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে সময় লেগেছে : প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ২ মাস ৭ দিনের মাথায় ৫০০ জন। ১৬ দিনের মাথায় ১০০০ জন, ১২ দিনের ১৫০০ জন, ১৩ দিনে ২০০০ জন, ১২ দিনে ২৫০০ জন, ১১ দিনে ৩০০০ জন, ১৫ দিনে ৩৫০০ জন, ১৩ দিনে ৪০০০ জন এবং সর্বশেষ ১৭ দিনের মাথায় ৭০২ জন করোনায় মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৫৯ জন।

প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণার পরপরই নিয়মিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের চার মাসের মাথায় ১৮ জুন ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন মানুষ শনাক্ত হয়। পরবর্তী এক মাসের মাথায় ১৮ জুলাই দুই লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হন। ২৬ আগস্টে ৩ লাখ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গতকাল দেশে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ জন।

অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। অনেকেই টেস্টের ব্যাপারটিকে খুবই হেলাফেলা করছেন, টেস্ট করাচ্ছেন না। কাজেই টেস্ট বাধ্যতামূলক এবং সবাইকে অবশ্যই করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে পরীক্ষা করাতে হবে। এখানে কোন ভুল করলে তার মাসুল আমাদের দিতে হবে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর সবাইকে নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেই। বরংচো নমুনা পরীক্ষায় মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে ফি নির্ধারণ করেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে মানুষের মাঝে অবহেলা রয়েছে, জনসাধারণের মাঝে অবহেলা দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে গা-ছাড়া ভাব। হাটেবাজারে, পরিবহনে, ফেরিঘাট, শপিংমল, জনসমাগমস্থলে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে- মনে হচ্ছে দেশে কোন করোনাই নেই। এই অবহেলা করোনা সংক্রমণ নতুন করে ঝুঁকিতে নিয়ে যেতে পারে। আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন। সংক্রমণের ধারাবাহিকতা এখনও ক্রমহ্রাসমান ধারায় নামছে না।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর যে হিসেবে দিচ্ছে সেটি সঠিক নয়। কারণ দেখা যাচ্ছে, একই মানুষ দু’তিন বার করোনার নমুনা পরীক্ষা করছেন। সেই সংখ্যাও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নমুনা পরীক্ষায় আসছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের করোনাবিষয়ক পুরো কার্যক্রমেই একটা গাছাড়া, ঢিলেঢালাভাব দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেনি। পরামর্শক কমিটি পরীক্ষা বাড়ানোর সুপারিশ করলেও পরীক্ষার সংখ্যা কমানো হয়েছে। পরীক্ষা কম হওয়ায় সন্দেহভাজন অনেক রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

দেশে করোনা সত্যি নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলছেন, বাংলাদেশে করোনার বিস্তার ও ব্যাপকতা বোঝানোর জন্য যে জরিপ হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। ফলে এখন করোনার সঠিক চিত্র বলার মতো কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ আমাদের নেই। এছাড়া সারাদেশে করোনা নমুনা পরীক্ষা যে সংখ্যক হওয়া দরকার তাও হচ্ছে না। এই অবস্থাতে দেশে করোনা আছে কিংবা নেই সেটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে করোনার অবস্থা সমান্তরাল। প্রতিদিন মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, প্রতিদিন বেশকিছু মানুষ মারা যাচ্ছেন। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেরিয়ে পড়েছেন, সতর্ক নেই ঢিলেঢালা ভাব। সব মিলে বাংলাদেশে এখন আর করোনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নেই। করোনাভাইরাস নিজের মতো চলছে যেকোন সময় সংক্রমণ বেড়েও যেতে পারে। দেশে করোনা চিত্রের প্রকৃত ম্যাপ এখন করা হয়নি।

করোনা সংক্রমণের শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ছিল না। করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারেনি। এখন করোনা হালছাড়া নৌকার মতো ভেসে চলছে। যখন করোনা পরীক্ষা করার জন্য মানুষ আগ্রহ ছিল তখন নমুনা পরীক্ষা ফি আরোপ করে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তিতে মানুষ আর করোনা নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

দেশে করোনার অবস্থা সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সারোয়ার আলী সংবাদকে বলেন, সরকারি হিসেবে দেশে করোনা সংক্রমণ কমেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার কম বাংলাদেশে। কিন্তু করোনা উপসর্গ নিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের সংখ্যা সরকারের তালিকার মধ্যে নেই। সুতরাং করোনা মৃত্যুর সংখ্যা একটু বেশি হবে বলে আমার ধারণা। এছাড়া দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এই কথা বলার সময় এখনও আসেনি। বিশ্বের কোন দেশই এ মুহূর্তে বলতে পারবে না, যে তাদের দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এই বিষয়ে তার কাছে হয় তো সুর্নিদিষ্ট তথ্য আছে।

আরও খবর
দায় তিতাস ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর
পিয়াজের দাম কমছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
পিয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় অনুতপ্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অর্থনীতি সম্পর্কে এডিবির মূল্যায়ন নিয়ে অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন
‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকায় বাংলাদেশ হতাশ’
মৃত্যু ৩৬, নতুন শনাক্ত ১,৫৯৩
কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ
চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি
৯৩ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরল ৭২ হাজার
রবিউল জবানবন্দি দেয়নি, ফের রিমান্ডে
অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন চায় রাষ্ট্রপক্ষ
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

ছয় মাসেও দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র নেই

করোনা নিয়ন্ত্রণহীন, হালছাড়া নৌকার মতো ভেসে চলেছে : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মৃত্যুর হারের তুলনায় করোনা শনাক্ত হচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান সঠিক নয় : বিএমএ মহাসচিব

ফারুক আলম

দেশে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে কম, মৃত্যুর হিসাবে উপসর্গ নিয়ে মৃতদের সংখ্যা নেই। সরকারি হিসেবে গত এক মাসে প্রায় সাড়ে ৯শ’ মানুষ করোনায় মারা গেছেন। আর এক মাসে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার। শনাক্তের হারে অন্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার বাংলাদেশে বেশি। সেজন্য দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এটি বলতে নারাজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষার অভাবে শনাক্ত ও মৃত্যুর হারের সঠিক সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত বুধবার দেশে দেড় মাসে সর্বনি¤œ একদিনে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে আর গতকাল চব্বিশ ঘণ্টায় ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবারের তুলনায় গতকাল ১৫ জন মানুষের মৃত্যু বেশি হয়েছে। এ দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও এক হাজার ৫৯৩ জন। সব মিলে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৯ জনের। আর মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ জন। আগের তুলনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা কমানোর ফলে শনাক্তের হার কমছে কিন্তু মৃত্যুর হার বাড়ছে। এ থেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা নমুনা পরীক্ষা বাড়লে শনাক্ত বেশি হবে। সেই ক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে। সেখানে কোনভাবেই বলা যাবে না যে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের ছয় মাস নয়দিন পেরোলেও এখনও সব জেলায় নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র (ল্যাব) চালু করতে পারেনি সরকার। বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৬টি জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র চালু আছে। পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকা ৩৮ জেলায় রোগী শনাক্তের পরিমাণ কম। নমুনা পরীক্ষা এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। ফলে জনসংখ্যা অনুপাতে পরীক্ষার দিক থেকে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সরকারের করোনাবিষয়ক পুরো কার্যক্রমেই একটা গাছাড়া, ঢিলেঢালাভাব দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেনি। পরীক্ষা কম হওয়ায় সন্দেহভাজন অনেক রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার মধ্যে ঢাকা বাদে ৫ জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে দুটি ও গাজীপুরে চারটি কেন্দ্র রয়েছে। কিশোরগঞ্জ ও ফরিদপুরে একটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ৬টি পরীক্ষাকেন্দ্র। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম ছাড়া ৭টি জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া ও নড়াইলে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। সিলেট বিভাগের দুটি পরীক্ষাকেন্দ্রই সিলেট জেলায় অবস্থিত। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে রংপুর ও দিনাজপুরে পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও বগুড়ায় দুটি করে এবং সিরাজগঞ্জে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ ও জামালপুরে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জন্য বরিশাল ও ভোলায় পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে।

গত ১৮ জুন করোনাবিষয়ক নিয়মিত বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ে আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু হবে। সেদিন দেশের ৪৩ জেলায় করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল না। এরপর আড়াই মাসের বেশি সময় পার হলেও নতুন করে মাত্র ৫ জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র চালু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা অনেক দিন ধরেই দেশে দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার কথা বলছেন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। জুন মাসে দৈনিক ১৭ থেকে ১৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু গত ৩ জুলাই থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক সিদ্ধান্তের কারণে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমতে থাকে। এখন দৈনিক ১১ থেকে ১৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

করোনা নিয়ে নিয়মিত তথ্য দেয়া ওয়েবসাইট ওয়াল্ডোমিটারস পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ ২৩টি দেশে দুই লক্ষাধিক কোভিড-১৯ শনাক্ত রোগী রয়েছে। আক্রান্তের এই শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার দিক থেকে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ৮ হাজার ৫৯ জনের পরীক্ষা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনা মৃত্যু গত ১৪ সেপ্টম্বর চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৮তম অবস্থানে। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন কমবেশি ৩০ জন মানুষ করোনা আক্রান্তে মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে।

বাংলাদেশে গত ছয় মাসে করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ, তার ঠিক ১০ দিন পর প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু কথা জানায়, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী মৃত্যুর পর ২০ এপ্রিল ১০০ জনের মৃত্যু হয়, ৯ মে ২০০ জন, ২৫ মে ৫০০ জন, ১০ জুন এক হাজার জন, ২১ জুন এক হাজার ৫০০ জন, ৩ জুলাই ২ হাজার জন, ১৭ জুলাই ২ হাজার ৫০০ জন, ২৮ জুলাই তিন হাজার জন, ১২ আগস্ট পৌঁছায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু। তারপর ১৩ দিনের মাথায় ২৫ আগস্ট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, ৭ সেপ্টম্বর সাড়ে চার হাজার ছাড়ায় এবং সর্বশেষ গতকাল ১২ সেপ্টম্বর ৩১ জনের মৃত্যুতে সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৭৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে সময় লেগেছে : প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ২ মাস ৭ দিনের মাথায় ৫০০ জন। ১৬ দিনের মাথায় ১০০০ জন, ১২ দিনের ১৫০০ জন, ১৩ দিনে ২০০০ জন, ১২ দিনে ২৫০০ জন, ১১ দিনে ৩০০০ জন, ১৫ দিনে ৩৫০০ জন, ১৩ দিনে ৪০০০ জন এবং সর্বশেষ ১৭ দিনের মাথায় ৭০২ জন করোনায় মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৫৯ জন।

প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণার পরপরই নিয়মিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের চার মাসের মাথায় ১৮ জুন ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন মানুষ শনাক্ত হয়। পরবর্তী এক মাসের মাথায় ১৮ জুলাই দুই লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হন। ২৬ আগস্টে ৩ লাখ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গতকাল দেশে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ জন।

অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে। অনেকেই টেস্টের ব্যাপারটিকে খুবই হেলাফেলা করছেন, টেস্ট করাচ্ছেন না। কাজেই টেস্ট বাধ্যতামূলক এবং সবাইকে অবশ্যই করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে পরীক্ষা করাতে হবে। এখানে কোন ভুল করলে তার মাসুল আমাদের দিতে হবে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর সবাইকে নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেই। বরংচো নমুনা পরীক্ষায় মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে ফি নির্ধারণ করেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে মানুষের মাঝে অবহেলা রয়েছে, জনসাধারণের মাঝে অবহেলা দেখা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে গা-ছাড়া ভাব। হাটেবাজারে, পরিবহনে, ফেরিঘাট, শপিংমল, জনসমাগমস্থলে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে- মনে হচ্ছে দেশে কোন করোনাই নেই। এই অবহেলা করোনা সংক্রমণ নতুন করে ঝুঁকিতে নিয়ে যেতে পারে। আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন। সংক্রমণের ধারাবাহিকতা এখনও ক্রমহ্রাসমান ধারায় নামছে না।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সংবাদকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর যে হিসেবে দিচ্ছে সেটি সঠিক নয়। কারণ দেখা যাচ্ছে, একই মানুষ দু’তিন বার করোনার নমুনা পরীক্ষা করছেন। সেই সংখ্যাও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নমুনা পরীক্ষায় আসছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের করোনাবিষয়ক পুরো কার্যক্রমেই একটা গাছাড়া, ঢিলেঢালাভাব দেখা যাচ্ছে। পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেনি। পরামর্শক কমিটি পরীক্ষা বাড়ানোর সুপারিশ করলেও পরীক্ষার সংখ্যা কমানো হয়েছে। পরীক্ষা কম হওয়ায় সন্দেহভাজন অনেক রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

দেশে করোনা সত্যি নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিনা এ বিষয়ে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদকে বলছেন, বাংলাদেশে করোনার বিস্তার ও ব্যাপকতা বোঝানোর জন্য যে জরিপ হওয়া দরকার তা হচ্ছে না। ফলে এখন করোনার সঠিক চিত্র বলার মতো কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ আমাদের নেই। এছাড়া সারাদেশে করোনা নমুনা পরীক্ষা যে সংখ্যক হওয়া দরকার তাও হচ্ছে না। এই অবস্থাতে দেশে করোনা আছে কিংবা নেই সেটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে করোনার অবস্থা সমান্তরাল। প্রতিদিন মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, প্রতিদিন বেশকিছু মানুষ মারা যাচ্ছেন। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেরিয়ে পড়েছেন, সতর্ক নেই ঢিলেঢালা ভাব। সব মিলে বাংলাদেশে এখন আর করোনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নেই। করোনাভাইরাস নিজের মতো চলছে যেকোন সময় সংক্রমণ বেড়েও যেতে পারে। দেশে করোনা চিত্রের প্রকৃত ম্যাপ এখন করা হয়নি।

করোনা সংক্রমণের শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ছিল না। করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারেনি। এখন করোনা হালছাড়া নৌকার মতো ভেসে চলছে। যখন করোনা পরীক্ষা করার জন্য মানুষ আগ্রহ ছিল তখন নমুনা পরীক্ষা ফি আরোপ করে নিরুৎসাহী করা হয়েছে। হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তিতে মানুষ আর করোনা নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

দেশে করোনার অবস্থা সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সারোয়ার আলী সংবাদকে বলেন, সরকারি হিসেবে দেশে করোনা সংক্রমণ কমেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার কম বাংলাদেশে। কিন্তু করোনা উপসর্গ নিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের সংখ্যা সরকারের তালিকার মধ্যে নেই। সুতরাং করোনা মৃত্যুর সংখ্যা একটু বেশি হবে বলে আমার ধারণা। এছাড়া দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এই কথা বলার সময় এখনও আসেনি। বিশ্বের কোন দেশই এ মুহূর্তে বলতে পারবে না, যে তাদের দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এই বিষয়ে তার কাছে হয় তো সুর্নিদিষ্ট তথ্য আছে।