অর্থনীতি সম্পর্কে এডিবির মূল্যায়ন নিয়ে অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বড় অর্থনীতির অনেক দেশের প্রধান সূচকও নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। তবে রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুদিন ফিরে আসছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে, সরকারের সুচিন্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং উদ্দীপনা ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়নের কারণে করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। তবে এডিবির এই পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না দেশের অর্থনীতিবিদেরা। তারা বলছেন, এডিবির এই পূর্বাভাস একেবারে অবাস্তব ও ভিত্তিহীন। দেশের অর্থনীতি এখনও এমন জায়গায় যায়নি যে এমন প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আর এই সময়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরে থাকবে। সুচিন্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের উদ্দীপনা ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশিত পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান ঝুঁকি হলো দীর্ঘমেয়াদি মহামারী ও বাংলাদেশের রপ্তানির গন্তব্য।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এটা অবাস্তব। কোথা থেকে তারা তথ্য পেয়ে এই প্রতিবেদন করেছে তারাই জানে। তারা বলছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। কিন্তু রেমিট্যান্স বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই সাময়িক। প্রায় এক লাখের মতো কর্মী ফেরত এসেছে। যেসব কর্মী দেশে ফেরত এসেছে তারা তাদের কাছে যা সম্বল ছিল তা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে। তাই রেমিট্যান্সও বাড়ছে। এটা তো স্বাভাবিক বৃদ্ধি নয়। এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। কয়েক মাস পর রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি এতো থাকবে না। তখন কি হবে? এটা হলো প্রথম কারণ। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, যেসব রপ্তানি ক্রয়াদেশ স্থগিত ছিল সেগুলো চালু হয়েছে। সেজন্য রপ্তানিও বাড়ছে। যখন এই ক্রয়াদেশগুলো শেষ হবে তখন তো ফের রপ্তানি কমবে এবং সেটাই হবে প্রকৃত চিত্র। আর বিনিয়োগও তো বাড়ছে না। কাজেই এডিবির এই প্রাক্কলন একেবারেই অবাস্তব।’

যে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আসা করা যাচ্ছে, সেই রেমিট্যান্স পাঠানো কর্মীরা বিদেশে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী। এরমধ্যে পুরুষ কর্মী ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০৬ জন। আর নারী কর্মী ১১ হাজার ৭০৩ জন। মোট ২৮টি দেশ থেকে কর্মীরা দেশে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি ৩৬ হাজার ৫৩৩ জন ফিরেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে কর্মস্থল বন্ধ হওয়ায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বেশির ভাগ কর্মী। এরপরই সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ২৬ হাজার ২০৪ জন। করোনার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশ মালদ্বীপ। দেশটি থেকে ফিরেছেন ৯ হাজার ৩০২ জন। কাজ না থাকায় কাতার, মালয়েশিয়া, ইতালি থেকেও দেশে ফিরেছেন আরও প্রায় ১৫ হাজার কর্মী।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে ২০২১ সালে এই অঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২১ সালে অর্থনীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এর আগে গত জুনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এডিবি। তখন এডিবি জানায়, আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে যাবে বলে আশা করছে এই দাতা সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও একই কথা বলেছেন। তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘এডিবি কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি করেছে তা আমার জানা নেই। তারা গত বছর যে প্রাক্কলন ধরেছিল সেটার উপর ভিত্তি করে বর্তমান প্রাক্কলন ধরেছে, নাকি সরকারের ৫ দশমিক ২ এর উপর ধরছে, তা আমার জানা নেই। এখনও কোন ডাটা নাই, কিছু নাই, এই অবস্থায় কোন ধরনের পূর্বাভাস দেয়া যাবে না। আর রেমিট্যান্সের বিষয় ধরে যদি তারা এমন প্রাক্কলন করে তাহলে তা তো ঠিক হবে না। কারণ রেমিট্যান্স সাস্টেইনেবল না। আর এতো আগে বলাও ঠিক নয়।’

এ প্রসঙ্গে একই কথা বলেছেন, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘না, এই পূর্বাভাস ঠিক নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুড়ে দাঁড়াবে এটা ঠিক। তবে এতো প্রবৃদ্ধি হয়তো হবে না। এটা অবম্ভব। তারা কিভাবে এতো পূর্বাভাস করলো তা বুঝতে পারছি না।’

জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ আরও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দেয় চলতি বছর অনেক দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বাংলাদেশ নিয়েও এসব সংগঠন আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল। সেসব ভবিষ্যৎ বাণীতে বলা হয়েছিল, খুব খারাপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও পড়বে। তবে করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রপ্তানি খাতে সুদিন ফিরে আসায় এই সংস্থাগুলো বলছে, করোনার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও ভালো হবে এই করোনার মধ্যে।

এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, ‘মহামারী থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পেতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য ও মহামারী পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকার উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে। দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সগুলোতে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিদেশি তহবিল সুরক্ষারসহ সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে এই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে। আমরা রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি দেখে আশাবাদী হচ্ছি। আশা করি, পুনরুদ্ধার টেকসই হবে যা প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে সহায়তা করবে।’

একই সঙ্গে এডিবির এই প্রতিবেদনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও খুব আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্সের অবস্থা অত্যন্ত ভালো। গত দুই মাসে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সেই আমাদের ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় আশানুরূপ অবস্থানে আসতে শুরু করেছে। তাই সবকিছু মিলে আশা করা যায়, এ অর্থবছরের প্রাক্কলন ৮ দশমিক ১ বা ৮ দশমিক ২ অর্জিত হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে দেশের মানুষ মহামারীর মধ্যেও মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছে। তারা দেশকে ভালোবেসে কর্ম আগ্রহ দেখিয়েছে বলেই এ অর্জন আসতে যাচ্ছে। বাঙালি জাতি বীরের জাতি। শত বাধা মাড়িয়ে এগিয়ে চলাই এদের স্বভাব। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। করোনার মধ্যে এই অর্জনই সেটার প্রমাণ করে। এডিবির এ প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চলে চীন ও ভারতে পরেই অবস্থান করছে। যেখানে কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের কারও অবস্থান বাংলাদেশের উপরে নয়। এর আগে করোনার নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যেও প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন এডিবি করেছিল, সেখানে অন্যান্য দেশের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ধনাত্মক এবং এশিয়ার মধ্যে সবার উপরে। আশা করা যায়, এ অর্থবছরেও এশিয়ার মধ্যে আমাদের অবস্থান সবার ওপরে থাকবে।’

তবে রেমিট্যান্সে একের পর এক রেকর্ড করেই চলেছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনেই প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে দেখা যায়, এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। ধারণা করা হয়েছিল প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে। কিন্তু মে মাস থেকেই তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এরপর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৬০ কোটি ডলার, যা ছিল একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। তার আগে জুনে মাসে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর আগস্ট মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা। দেশের জিডিপিতে তাদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে আরও দেখা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে ৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু গত বছরের এই ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এই রেমিট্যান্সে ভর করেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এবার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এ নিয়ে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে রিজার্ভে পাঁচবার রেকর্ড হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ পাঁচবার রেকর্ড গড়েছে। গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। এর তিন সপ্তাহ পর সোমবার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।

জানা গেছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনা দেয়ার ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বাড়তে থাকে। তবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনার প্রভাবে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে রেমিট্যান্সের গতি নি¤œমুখী হয়ে পড়ে। রোজার ঈদের মাস মে থেকে আবার ঊর্ধ্বগতি ধারায় ফেরে রেমিট্যান্স এবং কোরবানির ঈদের পরও এই ঊর্ধ্বগতি ধারা বজায় রয়েছে।

আরও খবর
ছয় মাসেও দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র নেই
দায় তিতাস ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর
পিয়াজের দাম কমছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
পিয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় অনুতপ্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকায় বাংলাদেশ হতাশ’
মৃত্যু ৩৬, নতুন শনাক্ত ১,৫৯৩
কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ
চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি
৯৩ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরল ৭২ হাজার
রবিউল জবানবন্দি দেয়নি, ফের রিমান্ডে
অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন চায় রাষ্ট্রপক্ষ
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

অর্থনীতি সম্পর্কে এডিবির মূল্যায়ন নিয়ে অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন

রেজাউল করিম

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বড় অর্থনীতির অনেক দেশের প্রধান সূচকও নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। তবে রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুদিন ফিরে আসছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে, সরকারের সুচিন্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং উদ্দীপনা ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়নের কারণে করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। তবে এডিবির এই পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না দেশের অর্থনীতিবিদেরা। তারা বলছেন, এডিবির এই পূর্বাভাস একেবারে অবাস্তব ও ভিত্তিহীন। দেশের অর্থনীতি এখনও এমন জায়গায় যায়নি যে এমন প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আর এই সময়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরে থাকবে। সুচিন্তিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের উদ্দীপনা ব্যবস্থার দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশিত পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান ঝুঁকি হলো দীর্ঘমেয়াদি মহামারী ও বাংলাদেশের রপ্তানির গন্তব্য।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এটা অবাস্তব। কোথা থেকে তারা তথ্য পেয়ে এই প্রতিবেদন করেছে তারাই জানে। তারা বলছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। কিন্তু রেমিট্যান্স বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই সাময়িক। প্রায় এক লাখের মতো কর্মী ফেরত এসেছে। যেসব কর্মী দেশে ফেরত এসেছে তারা তাদের কাছে যা সম্বল ছিল তা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে। তাই রেমিট্যান্সও বাড়ছে। এটা তো স্বাভাবিক বৃদ্ধি নয়। এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। কয়েক মাস পর রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি এতো থাকবে না। তখন কি হবে? এটা হলো প্রথম কারণ। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, যেসব রপ্তানি ক্রয়াদেশ স্থগিত ছিল সেগুলো চালু হয়েছে। সেজন্য রপ্তানিও বাড়ছে। যখন এই ক্রয়াদেশগুলো শেষ হবে তখন তো ফের রপ্তানি কমবে এবং সেটাই হবে প্রকৃত চিত্র। আর বিনিয়োগও তো বাড়ছে না। কাজেই এডিবির এই প্রাক্কলন একেবারেই অবাস্তব।’

যে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আসা করা যাচ্ছে, সেই রেমিট্যান্স পাঠানো কর্মীরা বিদেশে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী। এরমধ্যে পুরুষ কর্মী ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০৬ জন। আর নারী কর্মী ১১ হাজার ৭০৩ জন। মোট ২৮টি দেশ থেকে কর্মীরা দেশে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি ৩৬ হাজার ৫৩৩ জন ফিরেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে কর্মস্থল বন্ধ হওয়ায় ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বেশির ভাগ কর্মী। এরপরই সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ২৬ হাজার ২০৪ জন। করোনার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশ মালদ্বীপ। দেশটি থেকে ফিরেছেন ৯ হাজার ৩০২ জন। কাজ না থাকায় কাতার, মালয়েশিয়া, ইতালি থেকেও দেশে ফিরেছেন আরও প্রায় ১৫ হাজার কর্মী।

এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে। তবে ২০২১ সালে এই অঞ্চলের অর্থনীতি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২১ সালে অর্থনীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এর আগে গত জুনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল এডিবি। তখন এডিবি জানায়, আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে যাবে বলে আশা করছে এই দাতা সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও একই কথা বলেছেন। তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘এডিবি কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি করেছে তা আমার জানা নেই। তারা গত বছর যে প্রাক্কলন ধরেছিল সেটার উপর ভিত্তি করে বর্তমান প্রাক্কলন ধরেছে, নাকি সরকারের ৫ দশমিক ২ এর উপর ধরছে, তা আমার জানা নেই। এখনও কোন ডাটা নাই, কিছু নাই, এই অবস্থায় কোন ধরনের পূর্বাভাস দেয়া যাবে না। আর রেমিট্যান্সের বিষয় ধরে যদি তারা এমন প্রাক্কলন করে তাহলে তা তো ঠিক হবে না। কারণ রেমিট্যান্স সাস্টেইনেবল না। আর এতো আগে বলাও ঠিক নয়।’

এ প্রসঙ্গে একই কথা বলেছেন, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘না, এই পূর্বাভাস ঠিক নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুড়ে দাঁড়াবে এটা ঠিক। তবে এতো প্রবৃদ্ধি হয়তো হবে না। এটা অবম্ভব। তারা কিভাবে এতো পূর্বাভাস করলো তা বুঝতে পারছি না।’

জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফসহ আরও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দেয় চলতি বছর অনেক দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। বাংলাদেশ নিয়েও এসব সংগঠন আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল। সেসব ভবিষ্যৎ বাণীতে বলা হয়েছিল, খুব খারাপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও পড়বে। তবে করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রপ্তানি খাতে সুদিন ফিরে আসায় এই সংস্থাগুলো বলছে, করোনার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও ভালো হবে এই করোনার মধ্যে।

এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, ‘মহামারী থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পেতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য ও মহামারী পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকার উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে। দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সগুলোতে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য বিদেশি তহবিল সুরক্ষারসহ সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে এই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে। আমরা রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি দেখে আশাবাদী হচ্ছি। আশা করি, পুনরুদ্ধার টেকসই হবে যা প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে সহায়তা করবে।’

একই সঙ্গে এডিবির এই প্রতিবেদনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও খুব আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্সের অবস্থা অত্যন্ত ভালো। গত দুই মাসে শুধুমাত্র রেমিট্যান্সেই আমাদের ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্য পুনরায় আশানুরূপ অবস্থানে আসতে শুরু করেছে। তাই সবকিছু মিলে আশা করা যায়, এ অর্থবছরের প্রাক্কলন ৮ দশমিক ১ বা ৮ দশমিক ২ অর্জিত হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে দেশের মানুষ মহামারীর মধ্যেও মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছে। তারা দেশকে ভালোবেসে কর্ম আগ্রহ দেখিয়েছে বলেই এ অর্জন আসতে যাচ্ছে। বাঙালি জাতি বীরের জাতি। শত বাধা মাড়িয়ে এগিয়ে চলাই এদের স্বভাব। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। করোনার মধ্যে এই অর্জনই সেটার প্রমাণ করে। এডিবির এ প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এ অঞ্চলে চীন ও ভারতে পরেই অবস্থান করছে। যেখানে কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের কারও অবস্থান বাংলাদেশের উপরে নয়। এর আগে করোনার নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যেও প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন এডিবি করেছিল, সেখানে অন্যান্য দেশের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ধনাত্মক এবং এশিয়ার মধ্যে সবার উপরে। আশা করা যায়, এ অর্থবছরেও এশিয়ার মধ্যে আমাদের অবস্থান সবার ওপরে থাকবে।’

তবে রেমিট্যান্সে একের পর এক রেকর্ড করেই চলেছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনেই প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে দেখা যায়, এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। ধারণা করা হয়েছিল প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে। কিন্তু মে মাস থেকেই তা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এরপর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৬০ কোটি ডলার, যা ছিল একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। তার আগে জুনে মাসে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর আগস্ট মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তারা। দেশের জিডিপিতে তাদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে আরও দেখা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে ৯২ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু গত বছরের এই ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এই রেমিট্যান্সে ভর করেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এবার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এ নিয়ে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে রিজার্ভে পাঁচবার রেকর্ড হলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ পাঁচবার রেকর্ড গড়েছে। গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। এর তিন সপ্তাহ পর সোমবার রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।

জানা গেছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনা দেয়ার ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বাড়তে থাকে। তবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনার প্রভাবে গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে রেমিট্যান্সের গতি নি¤œমুখী হয়ে পড়ে। রোজার ঈদের মাস মে থেকে আবার ঊর্ধ্বগতি ধারায় ফেরে রেমিট্যান্স এবং কোরবানির ঈদের পরও এই ঊর্ধ্বগতি ধারা বজায় রয়েছে।