কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ

চালক-হেলপার গ্রেফতার

কুমিল্লায় তিশা প্লাস নামে যাত্রীবাহী বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা নগরীতে ফেরা এক তরুণী যাত্রীকে আটকে রেখে গণধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিত তরুণীর চিকিৎসা, ডাক্তারি পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি প্রদানের পর বুধবার রাতে তাকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত বাস চালক আরিফ হোসেন সোহেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার নেউরা গ্রামের শরীফ হোসেনের ছেলে ও হেলপার বাবু শেখ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কামিনারবাগ গ্রামের শেখ ওয়াজেদের ছেলে। তারা দু’জনই সদর দক্ষিণ থানার নোয়াবাড়ি (পদুয়ার বাজার) ও মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় বসবাস করে। এদিকে গতকাল আদালতে উভয়ের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত অপর ধর্ষক বাসের সুপারভাইজার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আটচাইল গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে আলম (৩২) কে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ, মামলার বিবরণ ও ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণী (১৬) কিছুদিন আগে ঢাকার আবদুল্লাহপুরস্থ তার জেঠাতো বোনের বাসায় যায়। গত সোমবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বিকালে জেঠাতো বোনের বাসা থেকে বের হয় এবং আবদুল্লাহপুর হতে লোকাল বাসযোগে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছে। ওই রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হতে তিশা প্লাস পরিবহনের একটি বাসযোগে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে ওই তরুণী বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে তাকে নামিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালে তারা তাকে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে। কিন্তু ওই বাসের চালকসহ তারা তরুণীকে নগরীর শাসনগাছা নামিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে তাকে না নামিয়ে অন্যান্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার পর কৌশলে বাসটি জেলা সদরের অদূরে সদর দক্ষিণ থানাধীন পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের আল-শাকিল হোটেলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে ওই তরুণীকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসের হেলপার বাবু শেখ (২২), চালক আরিফ হোসেন সোহেল (২৬) ও সুপারভাইজার আলম (৩২) তাকে গণধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে গেলে বাসের হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাস হেলপার বাবু শেখের বসতঘরে নিয়ে পুনরায় তারা তাকে ধর্ষণ করে সকাল ৬টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে।

এ ঘটনা পরে ওই তরুণী মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার মাকে জানালে মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে তার মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জানেন এবং ধর্ষকদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে ওইদিন রাতে ৩ ধর্ষকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের অপরাধে মামলা দায়ের করেন। ধর্ষিতার মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। করোনার কারণে ৫ মাস আগে বাড়ি চলে আসে। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে জেঠাতো বোনের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনার শিকার হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসার পর বুধবার রাতে তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। তিনি তার মেয়ের ওপর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এদিকে তিশা প্লাস পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওই গাড়ির মালিক দুলাল হোসেন অপু জানান, ঘটনার পর আমরা তিশা প্লাস গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮) চালক ও হেলপারসহ দুই আসামিকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর বৃহস্পতিবার রাতে জানান, মামলা দায়েরের পর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে চালক বাবু শেখ ও হেলপার আরিফ হোসেন সোহেলকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে উভয়ের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া মামলার ভিকটিম ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সে আদালতে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার অপর আসামি আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

আরও খবর
ছয় মাসেও দেশে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র নেই
দায় তিতাস ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর
পিয়াজের দাম কমছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
পিয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় অনুতপ্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অর্থনীতি সম্পর্কে এডিবির মূল্যায়ন নিয়ে অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন
‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকায় বাংলাদেশ হতাশ’
মৃত্যু ৩৬, নতুন শনাক্ত ১,৫৯৩
চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি
৯৩ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরল ৭২ হাজার
রবিউল জবানবন্দি দেয়নি, ফের রিমান্ডে
অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন চায় রাষ্ট্রপক্ষ
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে তরুণীকে গণধর্ষণ

চালক-হেলপার গ্রেফতার

প্রতিনিধি, কুমিল্লা

কুমিল্লায় তিশা প্লাস নামে যাত্রীবাহী বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা নগরীতে ফেরা এক তরুণী যাত্রীকে আটকে রেখে গণধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিত তরুণীর চিকিৎসা, ডাক্তারি পরীক্ষা ও আদালতে জবানবন্দি প্রদানের পর বুধবার রাতে তাকে তার মায়ের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত বাস চালক আরিফ হোসেন সোহেল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার নেউরা গ্রামের শরীফ হোসেনের ছেলে ও হেলপার বাবু শেখ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কামিনারবাগ গ্রামের শেখ ওয়াজেদের ছেলে। তারা দু’জনই সদর দক্ষিণ থানার নোয়াবাড়ি (পদুয়ার বাজার) ও মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকায় বসবাস করে। এদিকে গতকাল আদালতে উভয়ের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত অপর ধর্ষক বাসের সুপারভাইজার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আটচাইল গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে আলম (৩২) কে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ, মামলার বিবরণ ও ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণী (১৬) কিছুদিন আগে ঢাকার আবদুল্লাহপুরস্থ তার জেঠাতো বোনের বাসায় যায়। গত সোমবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বিকালে জেঠাতো বোনের বাসা থেকে বের হয় এবং আবদুল্লাহপুর হতে লোকাল বাসযোগে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছে। ওই রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হতে তিশা প্লাস পরিবহনের একটি বাসযোগে কুমিল্লা শহরের শাসনগাছার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে ওই তরুণী বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে শাসনগাছা বাস স্টেশনে তাকে নামিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালে তারা তাকে নামিয়ে দেবে এবং এ বিষয়ে টেনশন করতে নিষেধ করে। কিন্তু ওই বাসের চালকসহ তারা তরুণীকে নগরীর শাসনগাছা নামিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে তাকে না নামিয়ে অন্যান্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার পর কৌশলে বাসটি জেলা সদরের অদূরে সদর দক্ষিণ থানাধীন পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের আল-শাকিল হোটেলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে ওই তরুণীকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসের হেলপার বাবু শেখ (২২), চালক আরিফ হোসেন সোহেল (২৬) ও সুপারভাইজার আলম (৩২) তাকে গণধর্ষণ করে। পরে বাসের চালক আরিফ হোসেন সোহেল বাস থেকে নেমে চলে গেলে বাসের হেলপার বাবু শেখ ও সুপারভাইজার আলম তরুণীকে বাস থেকে নামিয়ে পদুয়ার বাজার এলাকায় বাস হেলপার বাবু শেখের বসতঘরে নিয়ে পুনরায় তারা তাকে ধর্ষণ করে সকাল ৬টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বের করে দিয়ে চলে যেতে বলে।

এ ঘটনা পরে ওই তরুণী মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার মাকে জানালে মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে তার মা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছে ঘটনার বিস্তারিত জানেন এবং ধর্ষকদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এ বিষয়ে ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে ওইদিন রাতে ৩ ধর্ষকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় গণধর্ষণের অপরাধে মামলা দায়ের করেন। ধর্ষিতার মা জানান, তার মেয়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। করোনার কারণে ৫ মাস আগে বাড়ি চলে আসে। গত শুক্রবার চাকরির সন্ধানে বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে জেঠাতো বোনের বাসায় ওঠে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনার শিকার হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসার পর বুধবার রাতে তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। তিনি তার মেয়ের ওপর নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এদিকে তিশা প্লাস পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওই গাড়ির মালিক দুলাল হোসেন অপু জানান, ঘটনার পর আমরা তিশা প্লাস গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৯৮) চালক ও হেলপারসহ দুই আসামিকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর বৃহস্পতিবার রাতে জানান, মামলা দায়েরের পর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে চালক বাবু শেখ ও হেলপার আরিফ হোসেন সোহেলকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে উভয়ের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া মামলার ভিকটিম ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং সে আদালতে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার অপর আসামি আলমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।