যে কোন ব্রান্ডের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনে দক্ষ ওরা

কোন স্বীকৃত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করেনি ওরা। এমনকিও স্কুলের গন্ডি পেরোইনি। স্বশিক্ষিত এসব যুবক মাত্র ২ মিনিটেই পাল্টে দিতে পারে যেকোন ব্রান্ডের মোবাইল ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্টেশন ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর। এ দক্ষতার জন্য ওদেরকে কোন প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে হয়নি। মোবাইল মেরামতের কাজ করতে করতে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন ও যেকোন ধরনের লক খোলার বিদ্যা অর্জন করেছে ওরা। আর এ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্রসহ ছিনতাইকারী ও চোরের গ্রুপের সঙ্গে মিলে পরিবর্তন করে দিচ্ছে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই নম্বর। মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেফতার করে এমন ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকতারা বলছেন, কোন মোবাইল কোম্পানি তাদের নিজস্ব ব্রান্ডের মোবাইলের সিকিউরিটির জন্য একটি আইএমইআই নম্বর দিয়ে থাকে। কোন কারণে মোবাইল চুরি হলে অথবা ছিনতাই হলে কিংবা হারিয়ে গেলে আইএমইআই নম্বার দিয়ে ওই মোবাইল অন্য কে ব্যবহার করে তা বের করা সম্ভব। এমনকি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে অভিযোগ করলে আইএমআই নম্বর দিয়ে মোবাইলের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব অথবা মোবাইলটি লক করে দেয়াও সম্ভব। এর ফলে ওই মোবাইলটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু সংঘবদ্ধ চক্র যে কাজটি করে তা হলে চুরি, ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পাল্টে ফেলে। মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে এরা দ্রুত আইএমইআই নম্বর পরিবর্তণ করে মোবাইলে রিসেট করে দেয়। এর ফলে ওই মোবাইলে থাকবে না আগের কোন রেকর্ড। এর ফলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল থেকে অপরাধী শনাক্ত করবে পারবে না পুলিশ। জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কোন মোবাইলের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে অপরাধ ঘটনায় তাহলে কেবল আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করলেই ওই অপরাধী বিষয়ে কোন তথ্য মিলবে না। চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো দ্রুত আইএমইআই নম্বর পরির্তন করে ফেলায় সেগুলো উদ্ধার করাও দুষ্কর।

গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডির ঢাকা মেট্টো পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দারের তত্ত্বাবধায়নে একটি টিম এ অভিযান চালায়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. মুরাদ খান (২৩), মো. লাভলু হোসেন, মো. আল আমীন ওরফে অনিক (২২), মো. বশির আলম শুভ (৩০), মো. অ. মালেক (৩০), মো. তামিম (২০), মো. শাহ আলম (৩৬), স্বপন (৩৪), মো. জাহাঙ্গির আলম (২৬), মো. ইমাম হোসেন (২২), মো. আরিফ (৩৪), মো. আল আমিন (২০)। গ্রেফতারকৃত চক্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চুরি, ছিনতাই হওয়ার পর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা বিপুল পরিমাণ মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের টুলস- সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মুরাদ ও লাভলু হাসান চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল কিনে লক খোলা ও আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য আল আমিন অনিক, বশির আলম শুভ এবং মিম টেলিকমের মালিক মো. আবদুল মালেকের কাছে দিত। তারা এগুলোর নম্বর পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট দামে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করতেন। খুনী, শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ভয়ঙ্কর অপরাধীরাও এসব মোবাইল নিতো এদের কাছ থেকে।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, গ্রেফতার হওয়া চক্রটি খুব বেশি লেখা পড়া জানে না। সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। কিন্তু মোবাইল প্রযুক্তিতে এরা খুবই দক্ষ। শুধু আইএমইআই নম্বরই নয় যেকোন মোবাইলের কান্ট্রিলকসহ যেকোন ধরনের লক খুলে ফেলতে পারে। এছাড়া আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা এতের মুহূর্তের বিষয়। মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে যেকোন ব্রান্ডের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর ওই ডিভাইস ব্যবহার করে পরিবর্তন করে ফেলে। অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার জানান, রাজধানীর পাতাল মার্কেটসহ বিভিন্ন বড় বড় সপিংমলগুলোতে নামিদামি ব্রান্ডের মোবাইল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইলের সফটওয়্যার সার্ভিসিংয়ের জন্য কারিগর রয়েছে। এসব কারিগরদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র, চোর, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন পেশাদার অপরাধীদের হয়ে কাজ করে। এ চক্রের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতদের কাছে চুরি ও ছিনতাই বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইলগুলো আসে। তখন এরা দ্রুত বিশেষ টুলস ব্যবহার করে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। পরিবর্তন করা এসব মোবাইল পেশাদার অপরাধী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আবার বিক্রি করা হয়। এসব মোবাইল ব্যবহার করে খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঘটে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় কোন জঙ্গি গোষ্টি যদি আইএমইআই নম্বর পরিবর্তিত মোবাইল ব্যবহার করে কোন নাশকতা ঘটায় সেক্ষেত্রে তাদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন। গ্রেফতারকৃত চক্রটি সাইফুল ও সোহেল নামে দু’জনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যান্ডের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার জন্য মোবাইলগুলো পেত। সাইফুল ও সোহেল অপরাধী চক্রের সদস্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো সাইফুল ও সোহেলই এদের কাছে নিয়ে আসত। এর বাইরে অন্য কোন লোক আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য গেলে এরা কাজ করতো না। এতে পুরো বিষয়টি ক্লিয়ার যে এরা সংঘবদ্ধ চক্রের হয়ে কাজ করত।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য জেড থ্রি এক্স নামে একটি ডিভাইস আছে। এটি অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। গুলিস্তান মাতাল মার্কেটের মাসুদ টেলিকম এবং কবির টেলিকমসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এসব অবৈধ ডিভাইস বিক্রি করে।

সিআইডি সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব মোবাইল ফিরে পেতে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলাও করে। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মোবাইল উদ্ধার করতে পারে না। এর মূল কারণ অপরাধী চক্র মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের পর পরই এসব চক্রের সহয়তা নিয়ে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলে। এসব মোবাইল তারা বিক্রি করে। এসব মোবাইল ব্যবহার করে ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্র বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে।

সিআইডির কমকর্তা জানান, রাজধানীর বসুন্ধরা, মোতালেব প্লাজাসহ বেশকিছু বড় বড় সপিংমলে মোবাইলের দোকান বা শো রুম রয়েছে। বিভিন্ন ব্রান্ডের বা কোম্পানির শোরুমে তাদের নিজস্ব মোবাইল বিক্রি হয়। এসব শোরুম বা দোকানের সঙ্গে মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে দক্ষ অনেক কারিগর রয়েছে। এরা মোবাইলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এসব অপরাধ করছে। এমন একাধিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরপূর্বে সিআইডি এমন একাধিক চক্র গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ডিবি র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটও এসব চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে।

আরও খবর
মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা
ঢাবির প্রথম পূর্ণাঙ্গ মাস্টার প্ল্যান অনুমোদন
পিয়াজের আড়তে অভিযান : ৭২ হাজার টাকা জরিমানা
চলছে না ফেরি : ঘাটে আটকে আছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক
রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দেয়ায় বরখাস্ত আতর আলী
বিএনপি নেতা ও আ’লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে নারীর চুল কেটে নির্যাতনের অভিযোগ
পুলিশের প্রথম সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালু
স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় ধর্ষকের যাবজ্জীবন
সাবরিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চলছে সাক্ষ্য
চট্টগ্রামে প্রতারক চক্র সক্রিয় চাকরির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
জঙ্গি সম্পৃক্ততা রাজধানীতে দুইজন গ্রেফতার

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

গ্রেফতার ১২ সদস্যের দেয়া তথ্য

যে কোন ব্রান্ডের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনে দক্ষ ওরা

সাইফ বাবলু

কোন স্বীকৃত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করেনি ওরা। এমনকিও স্কুলের গন্ডি পেরোইনি। স্বশিক্ষিত এসব যুবক মাত্র ২ মিনিটেই পাল্টে দিতে পারে যেকোন ব্রান্ডের মোবাইল ফোনের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্টেশন ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নম্বর। এ দক্ষতার জন্য ওদেরকে কোন প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে হয়নি। মোবাইল মেরামতের কাজ করতে করতে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন ও যেকোন ধরনের লক খোলার বিদ্যা অর্জন করেছে ওরা। আর এ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্রসহ ছিনতাইকারী ও চোরের গ্রুপের সঙ্গে মিলে পরিবর্তন করে দিচ্ছে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই নম্বর। মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেফতার করে এমন ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকতারা বলছেন, কোন মোবাইল কোম্পানি তাদের নিজস্ব ব্রান্ডের মোবাইলের সিকিউরিটির জন্য একটি আইএমইআই নম্বর দিয়ে থাকে। কোন কারণে মোবাইল চুরি হলে অথবা ছিনতাই হলে কিংবা হারিয়ে গেলে আইএমইআই নম্বার দিয়ে ওই মোবাইল অন্য কে ব্যবহার করে তা বের করা সম্ভব। এমনকি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে অভিযোগ করলে আইএমআই নম্বর দিয়ে মোবাইলের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব অথবা মোবাইলটি লক করে দেয়াও সম্ভব। এর ফলে ওই মোবাইলটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু সংঘবদ্ধ চক্র যে কাজটি করে তা হলে চুরি, ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পাল্টে ফেলে। মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে এরা দ্রুত আইএমইআই নম্বর পরিবর্তণ করে মোবাইলে রিসেট করে দেয়। এর ফলে ওই মোবাইলে থাকবে না আগের কোন রেকর্ড। এর ফলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল থেকে অপরাধী শনাক্ত করবে পারবে না পুলিশ। জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কোন মোবাইলের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে অপরাধ ঘটনায় তাহলে কেবল আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করলেই ওই অপরাধী বিষয়ে কোন তথ্য মিলবে না। চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো দ্রুত আইএমইআই নম্বর পরির্তন করে ফেলায় সেগুলো উদ্ধার করাও দুষ্কর।

গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডির ঢাকা মেট্টো পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দারের তত্ত্বাবধায়নে একটি টিম এ অভিযান চালায়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. মুরাদ খান (২৩), মো. লাভলু হোসেন, মো. আল আমীন ওরফে অনিক (২২), মো. বশির আলম শুভ (৩০), মো. অ. মালেক (৩০), মো. তামিম (২০), মো. শাহ আলম (৩৬), স্বপন (৩৪), মো. জাহাঙ্গির আলম (২৬), মো. ইমাম হোসেন (২২), মো. আরিফ (৩৪), মো. আল আমিন (২০)। গ্রেফতারকৃত চক্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চুরি, ছিনতাই হওয়ার পর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা বিপুল পরিমাণ মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের টুলস- সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

সিআইডি জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মুরাদ ও লাভলু হাসান চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল কিনে লক খোলা ও আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য আল আমিন অনিক, বশির আলম শুভ এবং মিম টেলিকমের মালিক মো. আবদুল মালেকের কাছে দিত। তারা এগুলোর নম্বর পরিবর্তন করে নির্দিষ্ট দামে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করতেন। খুনী, শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ভয়ঙ্কর অপরাধীরাও এসব মোবাইল নিতো এদের কাছ থেকে।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, গ্রেফতার হওয়া চক্রটি খুব বেশি লেখা পড়া জানে না। সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। কিন্তু মোবাইল প্রযুক্তিতে এরা খুবই দক্ষ। শুধু আইএমইআই নম্বরই নয় যেকোন মোবাইলের কান্ট্রিলকসহ যেকোন ধরনের লক খুলে ফেলতে পারে। এছাড়া আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা এতের মুহূর্তের বিষয়। মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে যেকোন ব্রান্ডের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর ওই ডিভাইস ব্যবহার করে পরিবর্তন করে ফেলে। অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার জানান, রাজধানীর পাতাল মার্কেটসহ বিভিন্ন বড় বড় সপিংমলগুলোতে নামিদামি ব্রান্ডের মোবাইল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইলের সফটওয়্যার সার্ভিসিংয়ের জন্য কারিগর রয়েছে। এসব কারিগরদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র, চোর, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন পেশাদার অপরাধীদের হয়ে কাজ করে। এ চক্রের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতদের কাছে চুরি ও ছিনতাই বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইলগুলো আসে। তখন এরা দ্রুত বিশেষ টুলস ব্যবহার করে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। পরিবর্তন করা এসব মোবাইল পেশাদার অপরাধী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আবার বিক্রি করা হয়। এসব মোবাইল ব্যবহার করে খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঘটে। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় কোন জঙ্গি গোষ্টি যদি আইএমইআই নম্বর পরিবর্তিত মোবাইল ব্যবহার করে কোন নাশকতা ঘটায় সেক্ষেত্রে তাদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন। গ্রেফতারকৃত চক্রটি সাইফুল ও সোহেল নামে দু’জনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যান্ডের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার জন্য মোবাইলগুলো পেত। সাইফুল ও সোহেল অপরাধী চক্রের সদস্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো সাইফুল ও সোহেলই এদের কাছে নিয়ে আসত। এর বাইরে অন্য কোন লোক আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য গেলে এরা কাজ করতো না। এতে পুরো বিষয়টি ক্লিয়ার যে এরা সংঘবদ্ধ চক্রের হয়ে কাজ করত।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য জেড থ্রি এক্স নামে একটি ডিভাইস আছে। এটি অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। গুলিস্তান মাতাল মার্কেটের মাসুদ টেলিকম এবং কবির টেলিকমসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান এসব অবৈধ ডিভাইস বিক্রি করে।

সিআইডি সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব মোবাইল ফিরে পেতে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলাও করে। কিন্তু মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ মোবাইল উদ্ধার করতে পারে না। এর মূল কারণ অপরাধী চক্র মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের পর পরই এসব চক্রের সহয়তা নিয়ে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলে। এসব মোবাইল তারা বিক্রি করে। এসব মোবাইল ব্যবহার করে ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্র বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে।

সিআইডির কমকর্তা জানান, রাজধানীর বসুন্ধরা, মোতালেব প্লাজাসহ বেশকিছু বড় বড় সপিংমলে মোবাইলের দোকান বা শো রুম রয়েছে। বিভিন্ন ব্রান্ডের বা কোম্পানির শোরুমে তাদের নিজস্ব মোবাইল বিক্রি হয়। এসব শোরুম বা দোকানের সঙ্গে মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে দক্ষ অনেক কারিগর রয়েছে। এরা মোবাইলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এসব অপরাধ করছে। এমন একাধিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরপূর্বে সিআইডি এমন একাধিক চক্র গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ডিবি র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটও এসব চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে।