অপব্যবহারকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন

সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, চালকের বেতন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছেন তারপরও অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ বিধি অনুযায়ী গাড়ি কেনার পর সরকারি যানবাহন আর ব্যবহার করবেন না সেসব সরকারি কর্মকর্তা যারা ঋণ নিয়েছেন। সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সরকারি গাড়ির অপব্যবহার থামছেই না। এরা শুধু মন্ত্রণালয়ের গাড়িই ব্যবহার করছেন না, পূর্বের মতোই উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়িও ব্যবহার করছেন অনেকে। কিন্তু এই দুর্নীতি রোধ করা কিংবা মনিটরিং করার কেউ নেই। এ বিষয়ে কঠোর নীতিমালা থাকলেও সেটি এখন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। নানা রকম অনুশাসন দিয়ে গেল ১৯ আগস্টও এক দফা সংশোধন করা হয়েছে এ সংক্রান্ত গাড়ি নগদায়ন নীতিমালা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এটি সবার উদ্দেশে জারি করলেও নিজ মন্ত্রণালয়ের অনেকেই তা মানছেন না। কিংবা না মেনেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। ঋণের টাকায় গাড়ি থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে চেপে বসছেন অনেকে।

সরকারি কর্মকর্তাদের এহেন কা-জ্ঞানহীন আচরণ অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে বর্তমান সময়ে গাড়ি-বাড়ি কিংবা ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার প্রশ্নে তাদের অনেকের আগ্রহই যে আকাশচুম্বী সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি নিয়ে নয়ছয় অনেকদিন ধরেই চলছে। বাজেট সীমাবদ্ধতায় যে দেশের অগণিত মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত, সেই দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে, গাড়ি-বাড়ির জন্য নামমাত্র শর্তে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেয়া হয়েছে, বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অতিমাত্রায় বাড়ানো হয়েছে। মহামারীকালে দেশের বেসরকারি খাতের স্বাভাবিক চিত্র যখন কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কর্তন তখনও প্রায় নির্ভাবনায় দিন কাটছে সরকারি কর্মকর্তাদের। মহামারীর সময়ও পদায়নসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এত সুবিধা নিয়েও জনগণের চাহিদা অনুসারে সেবা দিতে ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। জণগণের প্রতি অধিকতর দায়িত্ব পালনের বিধান আরোপ না করে যখন সরকারি কর্মকর্তাদের বাবুগিরির বায়না মেটানো হয় তখন গরিব দেশে এই ‘গাড়ি রোগ’ অস্বাভাবিক নয়।

এই অনাচার কোনভাবেই মেনে নেয়া না। গাড়ি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে। তাদের চাকরি ও সরকারি গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নীতিমালা মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কোন গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কর্মকর্তাদের অতিমাত্রায় সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিভ্রান্তি থেকে সরে আসতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি যারা প্রত্যাশা অনুসারে জনসেবার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের দেয়া সুযোগ-সুবিধা পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।

আমলাদের সরকারি গাড়ি অপব্যবহারের রোগ রয়েছে তা নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তবে যারা এর সুবিধাভোগী তাদের দিয়ে তদন্ত করালে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই যারা নিয়ম লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

সরকারি ঋণে গাড়ি কিনেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছে

অপব্যবহারকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন

সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, চালকের বেতন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছেন তারপরও অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ বিধি অনুযায়ী গাড়ি কেনার পর সরকারি যানবাহন আর ব্যবহার করবেন না সেসব সরকারি কর্মকর্তা যারা ঋণ নিয়েছেন। সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সরকারি গাড়ির অপব্যবহার থামছেই না। এরা শুধু মন্ত্রণালয়ের গাড়িই ব্যবহার করছেন না, পূর্বের মতোই উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়িও ব্যবহার করছেন অনেকে। কিন্তু এই দুর্নীতি রোধ করা কিংবা মনিটরিং করার কেউ নেই। এ বিষয়ে কঠোর নীতিমালা থাকলেও সেটি এখন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে। নানা রকম অনুশাসন দিয়ে গেল ১৯ আগস্টও এক দফা সংশোধন করা হয়েছে এ সংক্রান্ত গাড়ি নগদায়ন নীতিমালা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এটি সবার উদ্দেশে জারি করলেও নিজ মন্ত্রণালয়ের অনেকেই তা মানছেন না। কিংবা না মেনেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। ঋণের টাকায় গাড়ি থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে চেপে বসছেন অনেকে।

সরকারি কর্মকর্তাদের এহেন কা-জ্ঞানহীন আচরণ অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে বর্তমান সময়ে গাড়ি-বাড়ি কিংবা ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার প্রশ্নে তাদের অনেকের আগ্রহই যে আকাশচুম্বী সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি নিয়ে নয়ছয় অনেকদিন ধরেই চলছে। বাজেট সীমাবদ্ধতায় যে দেশের অগণিত মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত, সেই দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে, গাড়ি-বাড়ির জন্য নামমাত্র শর্তে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেয়া হয়েছে, বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অতিমাত্রায় বাড়ানো হয়েছে। মহামারীকালে দেশের বেসরকারি খাতের স্বাভাবিক চিত্র যখন কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কর্তন তখনও প্রায় নির্ভাবনায় দিন কাটছে সরকারি কর্মকর্তাদের। মহামারীর সময়ও পদায়নসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এত সুবিধা নিয়েও জনগণের চাহিদা অনুসারে সেবা দিতে ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। জণগণের প্রতি অধিকতর দায়িত্ব পালনের বিধান আরোপ না করে যখন সরকারি কর্মকর্তাদের বাবুগিরির বায়না মেটানো হয় তখন গরিব দেশে এই ‘গাড়ি রোগ’ অস্বাভাবিক নয়।

এই অনাচার কোনভাবেই মেনে নেয়া না। গাড়ি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে। তাদের চাকরি ও সরকারি গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নীতিমালা মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কোন গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কর্মকর্তাদের অতিমাত্রায় সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিভ্রান্তি থেকে সরে আসতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি যারা প্রত্যাশা অনুসারে জনসেবার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের দেয়া সুযোগ-সুবিধা পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে।

আমলাদের সরকারি গাড়ি অপব্যবহারের রোগ রয়েছে তা নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই একটা তদন্ত হওয়া উচিত। তবে যারা এর সুবিধাভোগী তাদের দিয়ে তদন্ত করালে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই যারা নিয়ম লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।