১০ লাখ মানুষের বিপর্যয়ের শঙ্কা

সামসুজ্জামান

এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালুর। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভবদহসংলগ্ন গ্রামের প্রায় ১০ লাখ মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন কমিটি এমনটি শঙ্কা করছেন। এছাড়া সম্প্রতি ৮০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকার যে প্রস্তাব গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগ্রাম কমিটি। সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, ভবদহে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর, সদর, অভয়নগর এবং খুলনার ডুমুরিয়ার দুই শতাধিক গ্রাম ও প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এই জনপদের বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, কবরস্থান, ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হবে। ফলে হাজার হাজার পরিবারকে উদ্বাস্তু হয়ে এলাকা ছাড়া হতে হবে।

গেটের উজান ও ভাটির এলাকায় উত্তরে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত পলি পড়ে একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে। ২১ ভোল্টের গেটের উত্তরে বার বার স্কেভেটর দিয়ে খনন করা হলেও কোন কাজ মূলত হয়নি। সেখানে বর্তমানে পানি আছে এক হাত। গেটের দক্ষিণের অবস্থা আরও খারাপ, সেখানে পাটা দিয়ে মাছ ধরছে মানুষ। ৯ গেটের উত্তর পার্শ্বে পলি পড়ে খেলার মাঠ হয়ে গেছে। ভবদহ কলেজ মোড়ে এখন মাত্র ছয় ইঞ্চি পানি আছে। এদিকে গেটের সবগুলোই পলিতে জমে গেছে। ষোলগাতি এবং খর্ণিয়া ব্রিজ পর্যন্ত পানি আছে মাত্র দুহাত। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে স্কেভেটর দিয়ে পলি কেটে নদীর নাব্যতা কোন রকমেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। পানি নিষ্কাশন কমিটির অভিযোগ, টিআরএম প্রকল্প নস্যাৎ করবার জন্যে একটি কুচক্রি মহল তৎপর। এই চক্রটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিভ্রান্ত করছে। গত চার বছরে মাটি কাটার নামে কোটি কোটি টাকা লুট করেছে এই মহলটি।

১৯৫৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ফসলহানির ঘটনা ঘটে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। এরই মধ্যে মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবর রহমান, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন দক্ষিণাঞ্চলের এ অবস্থার স্থায়ী সমাধানের জন্য। তখনকার পাকিস্তান সরকার পড়ে এক বিব্রতকর অবস্থায়।

১৯৫৯ সালে সি ই এফ (কোস্টাল ইমব্যাকমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল জলোচ্ছ্বাস প্লাবনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষ এবং ফসলহানি রক্ষা করা। একই লক্ষ্যে সৃষ্টি করা হয় ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নামে একটি দপ্তর। এই দুই প্রকল্প মিলে দক্ষিণ অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ব্যাপক জরিপ চালানো হয়। অবশেষে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণের নিম্নাঞ্চলে উঁচু অঞ্চলের অধিক পানির চাপ রোধকল্পে যশোর মণিরামপুর এবং অভয়নগর থানার সঙ্গম স্থলে মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর ভবদহ গ্রামে নির্মাণ করা হয় ‘ভবদহ স্লুইস’ গেট। ২৪ পোল্ডারের ৩০ ভেন্টের এ গেটের সাহায্যে অধিক বর্ষণে নদী এবং উঁচু এলাকার নিম্নাঞ্চলের দিকে ধাবমান স্রোত রোধে গেট আটকে দেয়া হয় এবং খরা মৌসুমে তা আবার খুলে রাখা হয় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য। মূলত ১০ কি. মি. হরি নদী, ভদ্রা নদী ২ কি. মি. তেলিগাতি নদীর ৫ কি. মি. ঘাংরাইলের ১০ কি. মি. এবং হাবরখালী ৪ কি. মি. নদীর পানি মুক্তেশ্বরী হয়ে এ গেট দিয়ে নিষ্কাশিত হতো। এছাড়া মণিরামপুর, অভয়নগর এবং যশোর সদর উপজেলার ১৭০টি গ্রামের ৩৫ হাজার হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভবদহ সøুইস গেট।

কিন্তু গেট দিয়ে নিষ্কাশিত স্রোতের সঙ্গে বাহিত পলির আধিক্য বেশি হওয়ায় পলি পড়ে বন্ধ হতে থাকে গেটের মুখ। ফলশ্রুতিতে বর্ষা মৌসুমে পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে না পারায় পার্র্শ্ববর্তী গ্রাম এবং জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জমি থেকে জলাবদ্ধতার কারণে ফসলি জমিতে লাঙল না দিতে পারায় কৃষকের অর্থনৈতিক মেরুদ- একেবারেই ভেঙে পড়ে। সংঘবদ্ধ হয়ে ফুঁসে উঠতে থাকে মানুষ। ঘেরাও ও পাউবো অফিস ভাঙচুরও হয়। মানববন্ধনের মতো কঠিন প্রতিবাদও করতে থাকে এলাকাবাসী। ‘ভবদহ পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি’ এবং ‘মুক্তেশ্বরী পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি’ নামে দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে এই দুই সংগঠন। পানি বিশেজ্ঞদের কয়েক দফা জরিপের পর স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে চালু করা হয় টি, আর, এম প্রকল্প। ২০০৫ সালে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

টি, আর, এম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) যার অর্থ জোয়ারের পানির পলি পানি স্থিতি করে পলি ভরাট করে জমি সমতল করণ। কিন্তু পাউবোর বিক্ষিপ্ত প্রজেক্টের কারণে দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। টি, আর, এম সংযোগ খাল থেকে ভবদাহ পর্যন্ত কাট পয়েন্ট থেকে ৪ কি. মি. উঁচু হয়ে যাওয়ার ফলে পানির গতি কমে গেছে। কিন্তু এই এলাকা এখনও টি, আর, এম এর আওতায় নেয়া হয়নি। অনতিবিলম্বে এই এলাকা টি, আর, এমভুক্ত না করা হলে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত ঘাংরাইল পর্যন্ত খাল একেবারেই বন্ধ হয়ে ৫৭ বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ঘের মালিকদের কারসাজি এবং দুর্নীতিকেই এলাকার মানুষ এই সংকটের জন্য দায়ী করছেন।

এছাড়া পূর্ব বিল খুকশিয়া দিয়ে টি, আর, এম চালু করা হলেও এর বহির্ভূত ১৩টি মৌজা আড়ুয়া, গিরিধরনগর, কানাইডাংগা, কাঁকবাধাল, ডহরী, কালীচরণপুর, সানতলা, কিসমত সান্তলা, ময়নাপুর, শ্রীরামপুর, মাদ্রা, চেচুড়িয়া, রুদোঘরা এবং দহাকুলা মৌজার অধিগ্রহণ করা প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মালিকরা হয়ে গেছে একেবারেই সর্বস্বান্ত। এই তেরো মৌজার জমিতে পলি ভরাট হতে আরও ২/৩ বছর লাগবে এদিকে এ জমির পরিবর্তে কোন হারিও তারা পায়নি। ফলে এলাকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাছাড়া জমি ফেরত পেতে কাগজপত্রের ঝামেলাও তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিক্ষিপ্ত প্রজেক্টের কারণে গেটের মুখের পলি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। তবে অনতিবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন এবং নতুন টাকা বরাদ্দ না দেয়ার দাবি কমিটির। কারণ এই টাকা ছাড় হয়ে গেলে কাজের কাজ কিছুই হবে না শুধু টাকার হরিলুটে পকেট ভারি হবে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির।

অনতিবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন অ্যাড. আবুবক্কার সিদ্দিকী এবং মহির বিশ্বাস। টি, আর, এম প্রকল্প ছাড়া ভবদহ এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতা এবং ফসলহানি রোধ সম্ভব নয়। যার কিছুটা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কৃষক এখন এককালের জলাবদ্ধ জমিতে লাঙল দিতে পারছে। পুরো সমস্যার সমাধান না হলে দক্ষিণাঞ্চলের অভিশাপখ্যাত ‘ভবদহ সøুইস গেট’ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

এই ক্ষেত্রে দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকের সমস্যা সমাধানই কাম্য। আর তাহলেই কৃষকের মুখে ফুটবে হাসি।

[লেখক : সাংবাদিক/কলামিস্ট]

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৮ মহররম ১৪৪২, ৩০ ভাদ্র ১৪২৭

ভবদহ স্লুইস গেট

১০ লাখ মানুষের বিপর্যয়ের শঙ্কা

সামসুজ্জামান

এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালুর। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে ভবদহসংলগ্ন গ্রামের প্রায় ১০ লাখ মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন কমিটি এমনটি শঙ্কা করছেন। এছাড়া সম্প্রতি ৮০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকার যে প্রস্তাব গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগ্রাম কমিটি। সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, ভবদহে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর, সদর, অভয়নগর এবং খুলনার ডুমুরিয়ার দুই শতাধিক গ্রাম ও প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এই জনপদের বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, কবরস্থান, ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হবে। ফলে হাজার হাজার পরিবারকে উদ্বাস্তু হয়ে এলাকা ছাড়া হতে হবে।

গেটের উজান ও ভাটির এলাকায় উত্তরে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত পলি পড়ে একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে। ২১ ভোল্টের গেটের উত্তরে বার বার স্কেভেটর দিয়ে খনন করা হলেও কোন কাজ মূলত হয়নি। সেখানে বর্তমানে পানি আছে এক হাত। গেটের দক্ষিণের অবস্থা আরও খারাপ, সেখানে পাটা দিয়ে মাছ ধরছে মানুষ। ৯ গেটের উত্তর পার্শ্বে পলি পড়ে খেলার মাঠ হয়ে গেছে। ভবদহ কলেজ মোড়ে এখন মাত্র ছয় ইঞ্চি পানি আছে। এদিকে গেটের সবগুলোই পলিতে জমে গেছে। ষোলগাতি এবং খর্ণিয়া ব্রিজ পর্যন্ত পানি আছে মাত্র দুহাত। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে স্কেভেটর দিয়ে পলি কেটে নদীর নাব্যতা কোন রকমেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। পানি নিষ্কাশন কমিটির অভিযোগ, টিআরএম প্রকল্প নস্যাৎ করবার জন্যে একটি কুচক্রি মহল তৎপর। এই চক্রটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিভ্রান্ত করছে। গত চার বছরে মাটি কাটার নামে কোটি কোটি টাকা লুট করেছে এই মহলটি।

১৯৫৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ফসলহানির ঘটনা ঘটে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। এরই মধ্যে মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবর রহমান, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন দক্ষিণাঞ্চলের এ অবস্থার স্থায়ী সমাধানের জন্য। তখনকার পাকিস্তান সরকার পড়ে এক বিব্রতকর অবস্থায়।

১৯৫৯ সালে সি ই এফ (কোস্টাল ইমব্যাকমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল জলোচ্ছ্বাস প্লাবনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষ এবং ফসলহানি রক্ষা করা। একই লক্ষ্যে সৃষ্টি করা হয় ওয়াপদা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নামে একটি দপ্তর। এই দুই প্রকল্প মিলে দক্ষিণ অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ব্যাপক জরিপ চালানো হয়। অবশেষে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণের নিম্নাঞ্চলে উঁচু অঞ্চলের অধিক পানির চাপ রোধকল্পে যশোর মণিরামপুর এবং অভয়নগর থানার সঙ্গম স্থলে মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর ভবদহ গ্রামে নির্মাণ করা হয় ‘ভবদহ স্লুইস’ গেট। ২৪ পোল্ডারের ৩০ ভেন্টের এ গেটের সাহায্যে অধিক বর্ষণে নদী এবং উঁচু এলাকার নিম্নাঞ্চলের দিকে ধাবমান স্রোত রোধে গেট আটকে দেয়া হয় এবং খরা মৌসুমে তা আবার খুলে রাখা হয় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য। মূলত ১০ কি. মি. হরি নদী, ভদ্রা নদী ২ কি. মি. তেলিগাতি নদীর ৫ কি. মি. ঘাংরাইলের ১০ কি. মি. এবং হাবরখালী ৪ কি. মি. নদীর পানি মুক্তেশ্বরী হয়ে এ গেট দিয়ে নিষ্কাশিত হতো। এছাড়া মণিরামপুর, অভয়নগর এবং যশোর সদর উপজেলার ১৭০টি গ্রামের ৩৫ হাজার হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভবদহ সøুইস গেট।

কিন্তু গেট দিয়ে নিষ্কাশিত স্রোতের সঙ্গে বাহিত পলির আধিক্য বেশি হওয়ায় পলি পড়ে বন্ধ হতে থাকে গেটের মুখ। ফলশ্রুতিতে বর্ষা মৌসুমে পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে না পারায় পার্র্শ্ববর্তী গ্রাম এবং জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। জমি থেকে জলাবদ্ধতার কারণে ফসলি জমিতে লাঙল না দিতে পারায় কৃষকের অর্থনৈতিক মেরুদ- একেবারেই ভেঙে পড়ে। সংঘবদ্ধ হয়ে ফুঁসে উঠতে থাকে মানুষ। ঘেরাও ও পাউবো অফিস ভাঙচুরও হয়। মানববন্ধনের মতো কঠিন প্রতিবাদও করতে থাকে এলাকাবাসী। ‘ভবদহ পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি’ এবং ‘মুক্তেশ্বরী পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি’ নামে দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে এই দুই সংগঠন। পানি বিশেজ্ঞদের কয়েক দফা জরিপের পর স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে চালু করা হয় টি, আর, এম প্রকল্প। ২০০৫ সালে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

টি, আর, এম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) যার অর্থ জোয়ারের পানির পলি পানি স্থিতি করে পলি ভরাট করে জমি সমতল করণ। কিন্তু পাউবোর বিক্ষিপ্ত প্রজেক্টের কারণে দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। টি, আর, এম সংযোগ খাল থেকে ভবদাহ পর্যন্ত কাট পয়েন্ট থেকে ৪ কি. মি. উঁচু হয়ে যাওয়ার ফলে পানির গতি কমে গেছে। কিন্তু এই এলাকা এখনও টি, আর, এম এর আওতায় নেয়া হয়নি। অনতিবিলম্বে এই এলাকা টি, আর, এমভুক্ত না করা হলে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত ঘাংরাইল পর্যন্ত খাল একেবারেই বন্ধ হয়ে ৫৭ বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ঘের মালিকদের কারসাজি এবং দুর্নীতিকেই এলাকার মানুষ এই সংকটের জন্য দায়ী করছেন।

এছাড়া পূর্ব বিল খুকশিয়া দিয়ে টি, আর, এম চালু করা হলেও এর বহির্ভূত ১৩টি মৌজা আড়ুয়া, গিরিধরনগর, কানাইডাংগা, কাঁকবাধাল, ডহরী, কালীচরণপুর, সানতলা, কিসমত সান্তলা, ময়নাপুর, শ্রীরামপুর, মাদ্রা, চেচুড়িয়া, রুদোঘরা এবং দহাকুলা মৌজার অধিগ্রহণ করা প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির মালিকরা হয়ে গেছে একেবারেই সর্বস্বান্ত। এই তেরো মৌজার জমিতে পলি ভরাট হতে আরও ২/৩ বছর লাগবে এদিকে এ জমির পরিবর্তে কোন হারিও তারা পায়নি। ফলে এলাকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাছাড়া জমি ফেরত পেতে কাগজপত্রের ঝামেলাও তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিক্ষিপ্ত প্রজেক্টের কারণে গেটের মুখের পলি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। তবে অনতিবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন এবং নতুন টাকা বরাদ্দ না দেয়ার দাবি কমিটির। কারণ এই টাকা ছাড় হয়ে গেলে কাজের কাজ কিছুই হবে না শুধু টাকার হরিলুটে পকেট ভারি হবে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির।

অনতিবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন অ্যাড. আবুবক্কার সিদ্দিকী এবং মহির বিশ্বাস। টি, আর, এম প্রকল্প ছাড়া ভবদহ এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতা এবং ফসলহানি রোধ সম্ভব নয়। যার কিছুটা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কৃষক এখন এককালের জলাবদ্ধ জমিতে লাঙল দিতে পারছে। পুরো সমস্যার সমাধান না হলে দক্ষিণাঞ্চলের অভিশাপখ্যাত ‘ভবদহ সøুইস গেট’ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

এই ক্ষেত্রে দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকের সমস্যা সমাধানই কাম্য। আর তাহলেই কৃষকের মুখে ফুটবে হাসি।

[লেখক : সাংবাদিক/কলামিস্ট]