চকরিয়ায় সীমানা পিলার তুলে ফেলে সওজের জায়গা দখল

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার স্টেশনের একটু উত্তরে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোটি টাকা মূল্যের জায়গা জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোররাতে বদরখালী সমিতির সভাপতি নুরুল আলম সিকদারের ছেলে সরওয়ার আলম সিকদারের নেতৃত্বে একটি চক্র টিনের ঘেরা দিয়ে সরকারি উল্লেখিত জায়গা দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে এক রাতের মধ্যে কোটি টাকার জায়গা দখলের ঘটনাটি ঘটলেও সরকারি সম্পদ উদ্ধারে সড়ক বিভাগের লোকজনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। প্রতিনিয়ত দখল-বেদখলের ঘটনায় সঙ্কোচিত হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। তাতে চরমভাবে বিঘœ সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে চারলেনে উন্নীত মহাসড়ক কাজে।

বিষয়টি জানানো হলে কক্সবাজার সড়ক জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমা বলেছেন, আমাদের অধিগ্রহণকৃত জায়গা কেউ দখল করবে, তার সুযোগ নেই। ঘটনার বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই সরকারি জায়গা উদ্ধারে এ্যাকশনে যাব। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এখনই চকরিয়া উপবিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। জানা গেছে, লক্ষ্যারচর মৌজার বিএস ৩৪নং খতিয়ানের বিএস ২৭৭৭ দাগের ২৭ শতক জায়গার আগের মালিক স্থানীয় মৃত ফকির মোহাম্মদ। ১৯৯৪-৯৫ সালে ১৬নং অধিগ্রহণ মামলামূলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার স্টেশনের একটু উত্তরে ফকির মোহাম্মদের উল্লেখিত ২৭ শতক জায়গা থেকে ২৩ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করে নিয়েছেন। ওইসময় জায়গার ক্ষতিপূরণ বাবদ ফকির মোহাম্মদের ওয়ারিশ তার ছেলে আকবর আহমদ (দুই মেয়ে মোস্তাফা খাতুন ও ফরিদা খাতুন পক্ষে) সরকার থেকে অধিগ্রহণকৃত ২৩ শতক জায়গার ক্ষতিপূরণের টাকাও বুঝে নিয়েছেন। এরপর উল্লেখিত জায়গায় খুটি স্থাপন করে সড়ক বিভাগ যথারীতি অনুকূলে নিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণের বিষয়টি গোপন রেখে ১১ বছর পর ২০০৬ সালে বদরখালী সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদারের ছেলে সরওয়ার সিকদার কৌশলে জায়গা মালিকদের কাছ থেকে নতুন করে জমির কিছু অংশ ক্রয় করেছেন। কিন্তু ২৭ শতক জায়গার মধ্যে মূল মালিকের অনুকূলে মাত্র চারশতক জায়গা থাকলেও সরওয়ার সিকদার দীর্ঘদিন ধরে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

এলাকাবাসী জানান, সর্বশেষ বুধবার ভোররাতে অভিযুক্ত সরওয়ার সিকদারের নেতৃত্বে একটি দখলবাজ চক্র রাতের আঁধারে টিনের ঘেরা দিয়ে সরকারি উল্লেখিত ২৭ শতক জায়গা ছাড়াও পাশের আরও অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলে নিয়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছরওয়ার আলম সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, টাকা দিয়ে তিনি ব্যক্তিগত মালিকদের কাছ থেকে খতিয়ানভুক্ত জমি কিনেছেন। সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোন জমি তিনি দখল করেনি।

এদিকে রাতের আঁধারে কোটি টাকা দামের সরকারি অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলের ঘটনায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। বিষয়টির আলোকে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমার নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) ও সহকারী প্রকৌশলীসহ সওজের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে সড়ক বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু আহসান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তাফা বলেন, মহাসড়কের মাঝখান থেকে দুইপাশের ৭৫ ফুট করে দেড়শত ফুট আমাদের (সওজ) জমি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে অধিগ্রহণকৃত জমি দখলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িতরা ৭৫ ফুট সীমানা দাগে বসানো সওজের পিলারও তুলে নিয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৯ মহররম ১৪৪২, ০১ আশ্বিন ১৪২৭

চকরিয়ায় সীমানা পিলার তুলে ফেলে সওজের জায়গা দখল

প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার)

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার স্টেশনের একটু উত্তরে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোটি টাকা মূল্যের জায়গা জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভোররাতে বদরখালী সমিতির সভাপতি নুরুল আলম সিকদারের ছেলে সরওয়ার আলম সিকদারের নেতৃত্বে একটি চক্র টিনের ঘেরা দিয়ে সরকারি উল্লেখিত জায়গা দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে এক রাতের মধ্যে কোটি টাকার জায়গা দখলের ঘটনাটি ঘটলেও সরকারি সম্পদ উদ্ধারে সড়ক বিভাগের লোকজনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী। প্রতিনিয়ত দখল-বেদখলের ঘটনায় সঙ্কোচিত হয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। তাতে চরমভাবে বিঘœ সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে চারলেনে উন্নীত মহাসড়ক কাজে।

বিষয়টি জানানো হলে কক্সবাজার সড়ক জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমা বলেছেন, আমাদের অধিগ্রহণকৃত জায়গা কেউ দখল করবে, তার সুযোগ নেই। ঘটনার বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই সরকারি জায়গা উদ্ধারে এ্যাকশনে যাব। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এখনই চকরিয়া উপবিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। জানা গেছে, লক্ষ্যারচর মৌজার বিএস ৩৪নং খতিয়ানের বিএস ২৭৭৭ দাগের ২৭ শতক জায়গার আগের মালিক স্থানীয় মৃত ফকির মোহাম্মদ। ১৯৯৪-৯৫ সালে ১৬নং অধিগ্রহণ মামলামূলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চকরিয়া উপজেলার জিদ্দাবাজার স্টেশনের একটু উত্তরে ফকির মোহাম্মদের উল্লেখিত ২৭ শতক জায়গা থেকে ২৩ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করে নিয়েছেন। ওইসময় জায়গার ক্ষতিপূরণ বাবদ ফকির মোহাম্মদের ওয়ারিশ তার ছেলে আকবর আহমদ (দুই মেয়ে মোস্তাফা খাতুন ও ফরিদা খাতুন পক্ষে) সরকার থেকে অধিগ্রহণকৃত ২৩ শতক জায়গার ক্ষতিপূরণের টাকাও বুঝে নিয়েছেন। এরপর উল্লেখিত জায়গায় খুটি স্থাপন করে সড়ক বিভাগ যথারীতি অনুকূলে নিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণের বিষয়টি গোপন রেখে ১১ বছর পর ২০০৬ সালে বদরখালী সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদারের ছেলে সরওয়ার সিকদার কৌশলে জায়গা মালিকদের কাছ থেকে নতুন করে জমির কিছু অংশ ক্রয় করেছেন। কিন্তু ২৭ শতক জায়গার মধ্যে মূল মালিকের অনুকূলে মাত্র চারশতক জায়গা থাকলেও সরওয়ার সিকদার দীর্ঘদিন ধরে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

এলাকাবাসী জানান, সর্বশেষ বুধবার ভোররাতে অভিযুক্ত সরওয়ার সিকদারের নেতৃত্বে একটি দখলবাজ চক্র রাতের আঁধারে টিনের ঘেরা দিয়ে সরকারি উল্লেখিত ২৭ শতক জায়গা ছাড়াও পাশের আরও অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলে নিয়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছরওয়ার আলম সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, টাকা দিয়ে তিনি ব্যক্তিগত মালিকদের কাছ থেকে খতিয়ানভুক্ত জমি কিনেছেন। সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত কোন জমি তিনি দখল করেনি।

এদিকে রাতের আঁধারে কোটি টাকা দামের সরকারি অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখলের ঘটনায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। বিষয়টির আলোকে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু কুমার চাকমার নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) ও সহকারী প্রকৌশলীসহ সওজের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে সড়ক বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু আহসান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তাফা বলেন, মহাসড়কের মাঝখান থেকে দুইপাশের ৭৫ ফুট করে দেড়শত ফুট আমাদের (সওজ) জমি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে অধিগ্রহণকৃত জমি দখলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনায় জড়িতরা ৭৫ ফুট সীমানা দাগে বসানো সওজের পিলারও তুলে নিয়েছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।