সুন্দরগঞ্জে আবারও বন্যার আশঙ্কা : ভাঙন অব্যাহত

দীর্ঘ মেয়াদ বন্যার ধকল কাটতে না কাটতে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বরণকালের ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার পাঁকা রাস্তা, বেশকিছু সংখ্যক দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি আবাদি জমিসহ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানিবৃদ্ধি এবং ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। হে হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার আশঙ্কা করছে চরবাসি। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের, কাশিম বাজার, চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পুটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও ছয় শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে পানিবৃদ্ধি এবং তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে পরে বেসামাল হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পরেছে। বিশেষ করে কাপাসিয়া, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চ-িপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তা নদীর গতিপথ এখন পরিবর্তন হয়েছে। পলি জমে তিস্তার মূলনদী একাধিক শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীতে তীব্র স্র্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের কারণে ভাঙনের ফলে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদী। কথা হয় হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রঞ্জুর সঙ্গে। তিনি বলেন গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার বাড়ির সামন দিয়ে কাশিমবাজার-উলিপুর পাঁকা সড়কটি প্রায় এক কিলোমিটার তিস্তা গিলে খেয়েছে। এছাড়া তার বসতবাড়ি, দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন তিস্তার ভাঙনে চরাঞ্চলবাসী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় তীব্র আকারে নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারনে হরিপুর ইউনিয়নের প্রায় হাজারও বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চরের মানুষ তরিতরকারির আবাদ করে ৬ মাস সংসার চালায়। কিন্তু নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জানান- যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে তিনশত পরিবার ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন নদী ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া নদীভাঙন রোধ করা কোনক্রমে সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে আড়াইশত পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে পাঁচশতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতার জীবন যাপন করছে। শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, গত ২০ দিনের ব্যবধানে ইউনিয়নে লালচামার, পুটিমারি গ্রামের তিনশত পরিবার নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উঠতি ফসলসহ তিনশত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী লুতফুল হাসান জানান, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত পরিবারের তালিকা নিরুপণ করে জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অনেক পরিবারকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান নদীভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। তবে নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর জানান, নদী ভাঙন রোধে হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৯ মহররম ১৪৪২, ০১ আশ্বিন ১৪২৭

সুন্দরগঞ্জে আবারও বন্যার আশঙ্কা : ভাঙন অব্যাহত

আঃ মতিন সরকার, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

image

দীর্ঘ মেয়াদ বন্যার ধকল কাটতে না কাটতে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বরণকালের ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার পাঁকা রাস্তা, বেশকিছু সংখ্যক দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি আবাদি জমিসহ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানিবৃদ্ধি এবং ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসত বাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। হে হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার আশঙ্কা করছে চরবাসি। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের, কাশিম বাজার, চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর পুটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও ছয় শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্যদিকে পানিবৃদ্ধি এবং তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে পরে বেসামাল হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পরেছে। বিশেষ করে কাপাসিয়া, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চ-িপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তা নদীর গতিপথ এখন পরিবর্তন হয়েছে। পলি জমে তিস্তার মূলনদী একাধিক শাখা নদীতে রুপ নিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীতে তীব্র স্র্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের কারণে ভাঙনের ফলে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদী। কথা হয় হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রঞ্জুর সঙ্গে। তিনি বলেন গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার বাড়ির সামন দিয়ে কাশিমবাজার-উলিপুর পাঁকা সড়কটি প্রায় এক কিলোমিটার তিস্তা গিলে খেয়েছে। এছাড়া তার বসতবাড়ি, দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন তিস্তার ভাঙনে চরাঞ্চলবাসী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় তীব্র আকারে নদী ভাঙার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন থেকে দফায় দফায় নদী ভাঙন চলছে। যার কারনে হরিপুর ইউনিয়নের প্রায় হাজারও বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চরের মানুষ তরিতরকারির আবাদ করে ৬ মাস সংসার চালায়। কিন্তু নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় কৃষকরা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জানান- যে হারে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে করে ফের বন্যার সম্ভবনা রয়েছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে তিনশত পরিবার ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন নদী ড্রেজিং এবং খনন করা ছাড়া নদীভাঙন রোধ করা কোনক্রমে সম্ভব নয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তার ইউনিয়নে আড়াইশত পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে পাঁচশতাধিক পরিবার। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতার জীবন যাপন করছে। শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, গত ২০ দিনের ব্যবধানে ইউনিয়নে লালচামার, পুটিমারি গ্রামের তিনশত পরিবার নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এছাড়া উঠতি ফসলসহ তিনশত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী লুতফুল হাসান জানান, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত পরিবারের তালিকা নিরুপণ করে জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অনেক পরিবারকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান নদীভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। তবে নদী সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর জানান, নদী ভাঙন রোধে হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।