সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ কোথায়

সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের আগস্টে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৮৮টি দুর্ঘটনায় ৪৫৯ জন নিহত ও ৬১৮ জন আহত হয়েছেন বলে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ-এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটছে। দুর্ঘটনার সব তথ্য যেহেতু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় না সেহেতু বলা যায় হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি।

অবস্থা এমন যে, মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে সুস্থ অবস্থায় ফিরবে সে নিশ্চয়তা পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কেড়ে নিলেও তা বাস ট্রাক মালিক এবং চালকদের সংবেদনশীলতায় প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে, এমন কথা বলা খুব একটা অমূলক হবে না। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত অপরাধ রোধে যে আইন আছে তাতে অপরাধীর জন্য আপাত কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।

২০১৮ সালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গোটা দেশে যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল তখন সরকার তড়িঘড়ি করে একটি আইন করেছিল। কিন্তু সে আইনের বাস্তবায়ন আর হয়নি। সে বছরই সড়ক আইন করা হয়েছিল। সেটাও কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা শুধু আন্তরিকতার অভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যারা অঙ্গীকার করছে যে, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই অঙ্গীকার পূরণের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো কী আদৌ কোন পদক্ষেপ নিয়েছে?

আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, কী কী পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব- এসবও বহুল আলোচিত বিষয়। অনেক গবেষণা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আছে। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। চালকাদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রথম কাজ। সড়ক ও ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের দিয়ে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলÑ এসব বন্ধ করতে হবে। শুধু দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককেই যেন লাইসেন্স দেয়া হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, এটা একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যা এবং এর সমাধান করতে হবে।

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৯ মহররম ১৪৪২, ০১ আশ্বিন ১৪২৭

সড়ক দুর্ঘটনা একটি গুরুতর জাতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ কোথায়

সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের আগস্টে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৮৮টি দুর্ঘটনায় ৪৫৯ জন নিহত ও ৬১৮ জন আহত হয়েছেন বলে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ-এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটছে। দুর্ঘটনার সব তথ্য যেহেতু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায় না সেহেতু বলা যায় হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি।

অবস্থা এমন যে, মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে সুস্থ অবস্থায় ফিরবে সে নিশ্চয়তা পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কেড়ে নিলেও তা বাস ট্রাক মালিক এবং চালকদের সংবেদনশীলতায় প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে, এমন কথা বলা খুব একটা অমূলক হবে না। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত অপরাধ রোধে যে আইন আছে তাতে অপরাধীর জন্য আপাত কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।

২০১৮ সালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গোটা দেশে যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল তখন সরকার তড়িঘড়ি করে একটি আইন করেছিল। কিন্তু সে আইনের বাস্তবায়ন আর হয়নি। সে বছরই সড়ক আইন করা হয়েছিল। সেটাও কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা শুধু আন্তরিকতার অভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যারা অঙ্গীকার করছে যে, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই অঙ্গীকার পূরণের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো কী আদৌ কোন পদক্ষেপ নিয়েছে?

আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, কী কী পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব- এসবও বহুল আলোচিত বিষয়। অনেক গবেষণা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আছে। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। চালকাদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রথম কাজ। সড়ক ও ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের দিয়ে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলÑ এসব বন্ধ করতে হবে। শুধু দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককেই যেন লাইসেন্স দেয়া হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, এটা একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যা এবং এর সমাধান করতে হবে।