হিন্দু নির্যাতনে আর কতকাল দেখব আওয়ামী লীগকে?

রণেশ মৈত্র

বিগত ১৫ সেপ্টেম্বরে দৈনিক ‘সংবাদ’-এর প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামব্যাপী ‘রংপুরের মিঠাপুকুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ চেষ্টা : আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্ব হামলা : নারীসহ আহত ১০ : থানায় মামলা : পুলিশ নিষ্ক্রিয়’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বোধ করছি এবং নির্যাতিত ওই পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এই নির্মম নির্যাতন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংহতি জানিয়ে নিবন্ধটি লিখতে বসেছি।

প্রথমেই খবরটি প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের জন্য উদ্বৃত করছি :

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ইদুলপুর এলাকায় বহু বছর ধরে বসবাস করা ১২টি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুরো জায়গা দখল করার অপচেষ্টায় বাধা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে তার দলবলের হামলায় নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রীর গলা টিপে ধরে হত্যার চেষ্ট করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না বরং উল্টো আসামিরা সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করলেও আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এলাকাবাসী ও পুলিশ এবং নির্যাতিতরা অভিযোগ করেছেÑশত বছর ধরে ১২টি পরিবার মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের জায়গীরহাট উদুলপুর গ্রামে সরকারের ১৮ শতক জমিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। জায়গাটি জায়গীরহাট বাজারসংলগ্ন হওয়ায় লোলুপদৃষ্টি পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনের। বেশ কিছুদিন যাবত ওই স্থানে বসবাসকারী ১২টি হিন্দু পরিবারকে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাবার জন্য নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল তার লোকজন।

বিগত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ইউপি মেম্বর সাজু, এনামুল হক, আবুল কালামসহ অর্ধ-শতাধিক দলবল নিয়ে সেখানে একটি ক্লাবঘর স্থাপন করার সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে সেখানে বসবাসকারী অঞ্জলি মোহান্তসহ অন্যরা বাধা প্রদান করলে আওয়ামী লীগ নেতার লেলিয়ে দেওয়া লোকজন তাকে বেদম মারধর করে। এ সময় তার কন্যা রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তার মাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এলে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন নিজেই মেয়েটির গলা টিপে ধরে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, দফায় দফায়, তাকে মারধোর করে। (পুরো দৃশ্য ভিডিও করা আছে) এ সময় সেখানে অবস্থানরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করা হয়। তারা নারীদের শ্লীলতাহানি করে। পরে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের রক্ষা করে।

এ ঘটনায় অঞ্জলি মোহান্তের স্বামী রহত মোহন্ত বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান হলে বিকেলে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। মামলা নং ৩২ তারিখ ১২.০৯.২০। ধারা ১৪৬/৪৪৮০/৩২৩/৩০৭/৩৫৪ বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইন। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয় বলে বাদী রতন মোহান্ত জানান।

এদিকে মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে মামলা দায়ের করার পর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন প্রকাশ্যেই তাদের ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করছে। তার লোকজন ওই এলাকা থেকে চলে না গেলে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবে ও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘সংবাদ’-এর রংপুর প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদল ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে বসবাসকারী হিন্দু পরিবারগুলো জানায়, তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। অঞ্জলি রানী, সমাপ্তি মোহান্ত, বাবু, দুলালীসহ অন্যরা অভিযোগ করেন যে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে তাদের শত বছর ধরে বসবাস করা স্থান থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্যেই কলেজছাত্রী সমাপ্তি মোহান্তকে মারধোর ও গলা টিপে ধরেছে-এ ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দায়ীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি হামলা চালাতে নয়-তাদের সেভ করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছি ঠিক-কিন্তু এটা নির্যাতন নয় শাসন। আসলে কোন রাজনৈতিক মহল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিভিন্ন অপচেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে স্থানীয় লতিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিন্দু পরিবারগুলো তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন, লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরেও যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু আইনেই সমাধান হবে তবে তাদের ওপর যেন ন্যায়বিচার হয়, সেটা তিনি চান বলে জানান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

রংপুরের সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে চিনি না। ভবিষ্যতেও তার সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ ঘটেবে এমন সম্ভাবনাও দেখছি না। তবে তাকে ধ্যবাদ জানাই যথেষ্ট পরিশ্রম করে, ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে সব দেখে অনেক পরিশ্রম করে এই প্রতিবেদনটি সংবাদ এ পাঠানোর জন্য। এটা যদিও সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে-তবু তিনি তো এড়িয়ে যেতে পারতেনÑতা করেননি অন্য অনেকের মতো।

যা হোক খবরটি খুবই উদ্বেগজনক-বিশেষ করে যারা মানুষকে ভালোবাসেন তাদের কাছে। ১২টি হিন্দু পরিবার মাত্র ১৮ শতক জমিতে বাস করেন। জমিটা সরকারি। আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের না-তিনি এ জমির কেউ নন। সরকারি দল করলেই তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন না।

শত বছরেরও বেশি যে গরিব পরিবারগুলো কষ্টে-সৃষ্টে ওখানে বাস করছেন-কার্যত: এবং আইনত: এ জমির মালিক তারাই। সরকারের উচিত অবিলম্বে ওই জমি ওই পরিবারগুলোর কাছে বিনা মূল্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত বা Permanent Lease দিয়ে দেয়া-যাতে তাদের মালিকানার বৈধতা পায় এবং তারা মালিক হিসেবে বংশ পরম্পরায় নিশ্চিন্তে নির্বিঘেœ সেখানে বসবাস করতে পারেন। অবশ্য যদি সরকার তেমন কিছু ইতোমধ্যেই করে থাকেন তবে তো কথাই নেই।

নেতা হয়ে তোজাম্মেল হোসেন স্বয়ং দলবল নিয়ে গিয়ে সেখানে ওই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং ওই জমিটুকুর মালিকানা, অবৈধ হলেও, প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অসৎ ও বে-আইনি জেনেও একটি ক্লাবের নাম লিখে একটি সাইনবোর্ড লাগাতে গিয়ে ছিলেন। প্রকৃত, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হলে ক্লাব প্রতিষ্ঠার জন্য খানিকটা জমি অন্য কোথাও থেকে কিনে নিয়ে পছন্দমতো ঘর নির্মাণ করে তাতে ক্লাবের সাইনবোর্ড লাগাতেন ইচ্ছে করলে একটি ভালো লাইব্রেরিও স্থাপন করে নতুন প্রজন্মের জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য বই পড়ার ব্যবস্থাও করতে পারতেন। কিন্তু আসলে তো ক্লাব প্রতিষ্ঠা নয়-সাইনবোর্ড লিখিয়ে নিয়েছেন শুধু ওই জমিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবে।

নিবন্ধটি লিখছি আর ভাবছি-আওয়ামী লীগের আজ এ কী দশা? এমন খবর পড়তে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বা মুজিব বর্ষেও। বিস্ময়কর, দুঃখজনক। এই তোজাম্মেল হোসেন নিশ্চয়ই সর্বদা মুজিবকোর্ট পরেন। বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার নামে গলা ফাটান। জয় বাংলাও বলেন সদা-সর্বদা।

কোথায় থাকলো পুলিশের দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যজ্ঞান-যাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বই হলো দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালন। ঘটনার বিবরণ-যা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তা খুঁটিয়ে পড়লে বুঝতে আদৌ কষ্ট হয় না যে ঘটনা ঘটার পর পর তো দূরের কথা পরদিন মামলা দায়ের হওয়ার পরও তারা যাননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া তো দূরের কথা-মামলাই নিতে অস্বীকার করেছিলেন ১২ সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে যখন বাদীপক্ষ জানালো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে-তাদের হস্তক্ষেপে থানার ওসি মামলাটি রেকর্ড করেন বিকেলে। মামলা রেকর্ড করার পরও থানার পুলিশ যাননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে-করেননি আসামিদের গ্রেপ্তার।

অসহ্য। প্রথমে কোন আইনে ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালেন? নাকি আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতার নাম আছে তাই? আইনে আছে না কি যে আওয়ামী লীগের লোক বে-আইনি কাজ করলে, কাউকে হত্যা করতে উদ্যত হলে, কারও বাড়িঘর থেকে শতবর্ষব্যাপী বসবাসকারীদের বলপূর্বক উচ্ছেদ করে বে-আইনি দখল নিতে দলে বলে বসবাসকারীদের মারধর করলে, বে-আইনি জনতা গঠন করে সচেতনভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা গ্রহণ করা যাবে না। মামলা গ্রহণ করা যাবে না বাদীরা হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়েছেন এবং দরিদ্র সে কারণেও?

সহজ সত্য কথা হলো, ওই মামলা নিতে আপত্তি করে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার ওসি মোহাম্মাদ আমীরুজ্জমান তার সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন এবং প্রকারান্তরে আসামিপক্ষকে সহায়তা করেছেন। এ কাজ দ্বারা তিনি তার সরকারি দায়িত্ব পালনেই শুধু অবহেলা দেখাননি-সুস্পষ্টভাবেই তিনি আইনও লঙ্ঘন করেছন। এসবই বিভাগীয় তো বটেই, ফৌজদারি অপরাধও বটে।

তাই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও রংপুর জেলার পুলিশ সুপারের কাছে দাবি জানাবো যেন অবিলম্বে ওই ওসিকে ক্লোজই শুধু নয়-সংশ্লিষ্ট আইনে তার বিরুদ্ধে যেন অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে কারাগারে পাঠানো হয়-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। তাদের কাছে আরও দাবি মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও অভিযোগকারী গরিব ১২টি হিন্দু পরিবারকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।

কোন পথে হাঁটছে আজকের আওয়ামী লীগ-অতীতে যে দলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন, শামসুল হক প্রমুখ গড়েছিলেন ১৯৪৯ সালে, যে দলটি সমগ্র পাকিস্তান আমলজুড়ে বাঙালির লাঞ্ছনা বঞ্চনাকারী এবং সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের অধিকারী, যে দলটি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সেই দলের নেতাকর্মীরা আজ বেমালুম সাম্প্রদায়িক ক্রিয়াকলাপে নির্বিঘেœ লিপ্ত হয়ে পড়ছে, ক্যাসিনো কাণ্ডের মতো এবং বে-আইনি অস্ত্র রাখার ও কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে, ব্যাংক লুট করছে, নারী ধর্ষণ করছে, হিন্দুদের জমি দখল করে মসজিদ নির্মাণ করলেও (যেমনটি নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মসজিদ) দলটির পরিচালনাধীন সরকার নিশ্চুপ থেকে নীরব ভূমিকা পালন করে, হাজার হাজার হিন্দুকে প্রায়শই ভয় দেখিয়ে তাদের নানা রকম হুমকি দিয়ে জোত-জমা ও বাড়িঘর দখল করে বাসিন্দাদের দেশত্যাগে বাধ্য করে, প্রায় সারাটি বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অগণিত মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর প্রভৃতি ঘটলেও সরকার, পুলিশ, এমপি সবাই নীরব-নিথর হয়ে থাকে-অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি বিধান এড়িয়ে চলে?

আদিবাসীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চললেও সরকার নিশ্চুপ থাকে?

যখন নিবন্ধটি লিখছি-ঠিক তখনই টেলিভিশনের পর্দায় দেখছি-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলছেন, ‘দেশের রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। এক স্বাধীনোত্তর ধারা-মুক্তিযুদ্ধের ধারা এবং দুই. ১৯৪৭-এর পাকিস্তানি ধারা।’ এই বক্তব্যের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে তাকেই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আজকের তার দলকে কোন ভাগে ফেলা যাবে? ২০০২ সালে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতাগুলো চিহ্নিত করেও একটি মামলাও দায়ের হলো নাÑএটা থেকে কি বলা যাবে?

বস্তুত: মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ আজ সর্বাধিক বিপদগ্রস্ত।

তাকে পুনরুজ্জীবিত করে পুনরায় বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে ফিরতে আবার নতুন করে একটা মুক্তিযুদ্ধের দরকার।

[লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

raneshmaitra@gmail.com

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৯ মহররম ১৪৪২, ০১ আশ্বিন ১৪২৭

হিন্দু নির্যাতনে আর কতকাল দেখব আওয়ামী লীগকে?

রণেশ মৈত্র

বিগত ১৫ সেপ্টেম্বরে দৈনিক ‘সংবাদ’-এর প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামব্যাপী ‘রংপুরের মিঠাপুকুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ চেষ্টা : আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্ব হামলা : নারীসহ আহত ১০ : থানায় মামলা : পুলিশ নিষ্ক্রিয়’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বোধ করছি এবং নির্যাতিত ওই পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এই নির্মম নির্যাতন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংহতি জানিয়ে নিবন্ধটি লিখতে বসেছি।

প্রথমেই খবরটি প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের জন্য উদ্বৃত করছি :

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট ইদুলপুর এলাকায় বহু বছর ধরে বসবাস করা ১২টি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুরো জায়গা দখল করার অপচেষ্টায় বাধা দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে তার দলবলের হামলায় নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রীর গলা টিপে ধরে হত্যার চেষ্ট করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না বরং উল্টো আসামিরা সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার কথা স্বীকার করলেও আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এলাকাবাসী ও পুলিশ এবং নির্যাতিতরা অভিযোগ করেছেÑশত বছর ধরে ১২টি পরিবার মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের জায়গীরহাট উদুলপুর গ্রামে সরকারের ১৮ শতক জমিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। জায়গাটি জায়গীরহাট বাজারসংলগ্ন হওয়ায় লোলুপদৃষ্টি পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেনের। বেশ কিছুদিন যাবত ওই স্থানে বসবাসকারী ১২টি হিন্দু পরিবারকে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাবার জন্য নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল তার লোকজন।

বিগত ১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ইউপি মেম্বর সাজু, এনামুল হক, আবুল কালামসহ অর্ধ-শতাধিক দলবল নিয়ে সেখানে একটি ক্লাবঘর স্থাপন করার সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে সেখানে বসবাসকারী অঞ্জলি মোহান্তসহ অন্যরা বাধা প্রদান করলে আওয়ামী লীগ নেতার লেলিয়ে দেওয়া লোকজন তাকে বেদম মারধর করে। এ সময় তার কন্যা রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তার মাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এলে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন নিজেই মেয়েটির গলা টিপে ধরে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, দফায় দফায়, তাকে মারধোর করে। (পুরো দৃশ্য ভিডিও করা আছে) এ সময় সেখানে অবস্থানরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাদের মারধর করা হয়। তারা নারীদের শ্লীলতাহানি করে। পরে আশেপাশের লোকজন এসে তাদের রক্ষা করে।

এ ঘটনায় অঞ্জলি মোহান্তের স্বামী রহত মোহন্ত বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান হলে বিকেলে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। মামলা নং ৩২ তারিখ ১২.০৯.২০। ধারা ১৪৬/৪৪৮০/৩২৩/৩০৭/৩৫৪ বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইন। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয় বলে বাদী রতন মোহান্ত জানান।

এদিকে মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে মামলা দায়ের করার পর আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন প্রকাশ্যেই তাদের ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করছে। তার লোকজন ওই এলাকা থেকে চলে না গেলে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবে ও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‘সংবাদ’-এর রংপুর প্রতিনিধি লিয়াকত আলী বাদল ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে বসবাসকারী হিন্দু পরিবারগুলো জানায়, তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। অঞ্জলি রানী, সমাপ্তি মোহান্ত, বাবু, দুলালীসহ অন্যরা অভিযোগ করেন যে আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেন সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে তাদের শত বছর ধরে বসবাস করা স্থান থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্যেই কলেজছাত্রী সমাপ্তি মোহান্তকে মারধোর ও গলা টিপে ধরেছে-এ ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দায়ীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি হামলা চালাতে নয়-তাদের সেভ করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের ওপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছি ঠিক-কিন্তু এটা নির্যাতন নয় শাসন। আসলে কোন রাজনৈতিক মহল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বিভিন্ন অপচেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে স্থানীয় লতিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিন্দু পরিবারগুলো তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন, লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরেও যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু আইনেই সমাধান হবে তবে তাদের ওপর যেন ন্যায়বিচার হয়, সেটা তিনি চান বলে জানান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

রংপুরের সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে চিনি না। ভবিষ্যতেও তার সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ ঘটেবে এমন সম্ভাবনাও দেখছি না। তবে তাকে ধ্যবাদ জানাই যথেষ্ট পরিশ্রম করে, ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে সব দেখে অনেক পরিশ্রম করে এই প্রতিবেদনটি সংবাদ এ পাঠানোর জন্য। এটা যদিও সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে-তবু তিনি তো এড়িয়ে যেতে পারতেনÑতা করেননি অন্য অনেকের মতো।

যা হোক খবরটি খুবই উদ্বেগজনক-বিশেষ করে যারা মানুষকে ভালোবাসেন তাদের কাছে। ১২টি হিন্দু পরিবার মাত্র ১৮ শতক জমিতে বাস করেন। জমিটা সরকারি। আওয়ামী লীগ নেতা তোজাম্মেল হোসেনের না-তিনি এ জমির কেউ নন। সরকারি দল করলেই তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন না।

শত বছরেরও বেশি যে গরিব পরিবারগুলো কষ্টে-সৃষ্টে ওখানে বাস করছেন-কার্যত: এবং আইনত: এ জমির মালিক তারাই। সরকারের উচিত অবিলম্বে ওই জমি ওই পরিবারগুলোর কাছে বিনা মূল্যে স্থায়ী বন্দোবস্ত বা Permanent Lease দিয়ে দেয়া-যাতে তাদের মালিকানার বৈধতা পায় এবং তারা মালিক হিসেবে বংশ পরম্পরায় নিশ্চিন্তে নির্বিঘেœ সেখানে বসবাস করতে পারেন। অবশ্য যদি সরকার তেমন কিছু ইতোমধ্যেই করে থাকেন তবে তো কথাই নেই।

নেতা হয়ে তোজাম্মেল হোসেন স্বয়ং দলবল নিয়ে গিয়ে সেখানে ওই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং ওই জমিটুকুর মালিকানা, অবৈধ হলেও, প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অসৎ ও বে-আইনি জেনেও একটি ক্লাবের নাম লিখে একটি সাইনবোর্ড লাগাতে গিয়ে ছিলেন। প্রকৃত, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা হলে ক্লাব প্রতিষ্ঠার জন্য খানিকটা জমি অন্য কোথাও থেকে কিনে নিয়ে পছন্দমতো ঘর নির্মাণ করে তাতে ক্লাবের সাইনবোর্ড লাগাতেন ইচ্ছে করলে একটি ভালো লাইব্রেরিও স্থাপন করে নতুন প্রজন্মের জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য বই পড়ার ব্যবস্থাও করতে পারতেন। কিন্তু আসলে তো ক্লাব প্রতিষ্ঠা নয়-সাইনবোর্ড লিখিয়ে নিয়েছেন শুধু ওই জমিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবে।

নিবন্ধটি লিখছি আর ভাবছি-আওয়ামী লীগের আজ এ কী দশা? এমন খবর পড়তে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বা মুজিব বর্ষেও। বিস্ময়কর, দুঃখজনক। এই তোজাম্মেল হোসেন নিশ্চয়ই সর্বদা মুজিবকোর্ট পরেন। বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার নামে গলা ফাটান। জয় বাংলাও বলেন সদা-সর্বদা।

কোথায় থাকলো পুলিশের দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যজ্ঞান-যাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বই হলো দুষ্টের দমন-শিষ্টের পালন। ঘটনার বিবরণ-যা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তা খুঁটিয়ে পড়লে বুঝতে আদৌ কষ্ট হয় না যে ঘটনা ঘটার পর পর তো দূরের কথা পরদিন মামলা দায়ের হওয়ার পরও তারা যাননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া তো দূরের কথা-মামলাই নিতে অস্বীকার করেছিলেন ১২ সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে যখন বাদীপক্ষ জানালো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে-তাদের হস্তক্ষেপে থানার ওসি মামলাটি রেকর্ড করেন বিকেলে। মামলা রেকর্ড করার পরও থানার পুলিশ যাননি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে-করেননি আসামিদের গ্রেপ্তার।

অসহ্য। প্রথমে কোন আইনে ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালেন? নাকি আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতার নাম আছে তাই? আইনে আছে না কি যে আওয়ামী লীগের লোক বে-আইনি কাজ করলে, কাউকে হত্যা করতে উদ্যত হলে, কারও বাড়িঘর থেকে শতবর্ষব্যাপী বসবাসকারীদের বলপূর্বক উচ্ছেদ করে বে-আইনি দখল নিতে দলে বলে বসবাসকারীদের মারধর করলে, বে-আইনি জনতা গঠন করে সচেতনভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা গ্রহণ করা যাবে না। মামলা গ্রহণ করা যাবে না বাদীরা হিন্দুর ঘরে জন্ম নিয়েছেন এবং দরিদ্র সে কারণেও?

সহজ সত্য কথা হলো, ওই মামলা নিতে আপত্তি করে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার ওসি মোহাম্মাদ আমীরুজ্জমান তার সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন এবং প্রকারান্তরে আসামিপক্ষকে সহায়তা করেছেন। এ কাজ দ্বারা তিনি তার সরকারি দায়িত্ব পালনেই শুধু অবহেলা দেখাননি-সুস্পষ্টভাবেই তিনি আইনও লঙ্ঘন করেছন। এসবই বিভাগীয় তো বটেই, ফৌজদারি অপরাধও বটে।

তাই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও রংপুর জেলার পুলিশ সুপারের কাছে দাবি জানাবো যেন অবিলম্বে ওই ওসিকে ক্লোজই শুধু নয়-সংশ্লিষ্ট আইনে তার বিরুদ্ধে যেন অবিলম্বে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে কারাগারে পাঠানো হয়-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। তাদের কাছে আরও দাবি মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও অভিযোগকারী গরিব ১২টি হিন্দু পরিবারকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।

কোন পথে হাঁটছে আজকের আওয়ামী লীগ-অতীতে যে দলটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন, শামসুল হক প্রমুখ গড়েছিলেন ১৯৪৯ সালে, যে দলটি সমগ্র পাকিস্তান আমলজুড়ে বাঙালির লাঞ্ছনা বঞ্চনাকারী এবং সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের অধিকারী, যে দলটি ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সেই দলের নেতাকর্মীরা আজ বেমালুম সাম্প্রদায়িক ক্রিয়াকলাপে নির্বিঘেœ লিপ্ত হয়ে পড়ছে, ক্যাসিনো কাণ্ডের মতো এবং বে-আইনি অস্ত্র রাখার ও কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে, ব্যাংক লুট করছে, নারী ধর্ষণ করছে, হিন্দুদের জমি দখল করে মসজিদ নির্মাণ করলেও (যেমনটি নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মসজিদ) দলটির পরিচালনাধীন সরকার নিশ্চুপ থেকে নীরব ভূমিকা পালন করে, হাজার হাজার হিন্দুকে প্রায়শই ভয় দেখিয়ে তাদের নানা রকম হুমকি দিয়ে জোত-জমা ও বাড়িঘর দখল করে বাসিন্দাদের দেশত্যাগে বাধ্য করে, প্রায় সারাটি বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অগণিত মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর প্রভৃতি ঘটলেও সরকার, পুলিশ, এমপি সবাই নীরব-নিথর হয়ে থাকে-অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি বিধান এড়িয়ে চলে?

আদিবাসীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চললেও সরকার নিশ্চুপ থাকে?

যখন নিবন্ধটি লিখছি-ঠিক তখনই টেলিভিশনের পর্দায় দেখছি-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলছেন, ‘দেশের রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। এক স্বাধীনোত্তর ধারা-মুক্তিযুদ্ধের ধারা এবং দুই. ১৯৪৭-এর পাকিস্তানি ধারা।’ এই বক্তব্যের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করে তাকেই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আজকের তার দলকে কোন ভাগে ফেলা যাবে? ২০০২ সালে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতাগুলো চিহ্নিত করেও একটি মামলাও দায়ের হলো নাÑএটা থেকে কি বলা যাবে?

বস্তুত: মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ আজ সর্বাধিক বিপদগ্রস্ত।

তাকে পুনরুজ্জীবিত করে পুনরায় বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে ফিরতে আবার নতুন করে একটা মুক্তিযুদ্ধের দরকার।

[লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

raneshmaitra@gmail.com