জাজিরার চরে পদ্মার ভাঙনে ১৩ বাড়ি বিলীন, ঝুঁকিতে ২ হাজার পরিবার

শরীয়তপুরের জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপারা চরটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী। ওই চরের পাশ দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু । গত ৪ দিন ধরে ওই চরটিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে ১৩টি বসত বাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে চরের দুই হাজার পরিবার ও ৬ হাজার ৬শ ৬৬ বিঘা ফসলি জমি।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপার মৌজায় তিনটি গ্রাম। ওই গ্রামগুলোর চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী। গ্রামগুলোর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর খুটির থেকে চরের দূরত্ব ৩০০ মিটার। সেতুর খুটি (পিয়ার) স্থাপনের জন্য একটি চ্যানেল খনন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কনস্ট্র্রাকশন। আর গ্রামগুলোর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ঢাকা নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত লাইনের খুটি স্থাপনের জন্য ওই প্রান্ত দিয়ে একটি চ্যানেল খনন করা হয়। গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে ¯্রােত বেড়েছে। ওই দুটি চ্যানেলে স্রোত প্রবেশ করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

পদ্মা সেতুর জন্য খনন করা চ্যানেলে ৩৪ নম্বর খুঁটির কাছে আড়াআড়ি বাঁধ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর ওই চ্যানেল মুখে শিবচরের তারপাশা, শাহাবাজ নগর, বটেশ^র মৌজায় দুই কিলোমিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে চ্যানেলের মধ্যে তীব্র স্র্রোত প্রবেশ করছে। স্র্রোতে পাইনপারা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আর বিদ্যুতের খুঁটি নেয়ার জন্য খনন করা চ্যানেলটি পদ্মা নদীর উত্তর কালিকা ও চরভাওর এলাকায় আরাআরি বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। তীব্র স্র্রোতে ওই বাঁধ ভেঙ্গে স্র্রোত প্রবেশ করছে চ্যানেলে। এ কারণে পাইনপারার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙন কবলিত পাইনপারায় আসেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, সেতুর পিয়ার হতে দুই দিকে ৫০০ মিটার জায়গা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের খনন করা চ্যানেলে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ও স্প্যান, স্লাব বসানোর কাজে ব্যবহৃত ক্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৩৪ নম্বর পিয়ারের কাছে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বছর চ্যানেলের প্রবেশ মুখে পদ্মা নদীতে দুই কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্র্রোত বেরে গেছে। এ কারণে কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে ওই বাঁধ অপসারণও করা সম্ভব নয়। অপসারণ করতে গেলে সেতুর কাজ বাঁধাগ্রস্ত হবে। ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

১৯৯৮ সালে পাইনপারা মৌজাটি ভাঙনের কবলে পরে। তখন দুই বছরের ভাঙনে পুরো এলাকটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০৬ সাল থেকে চরটি জেগে উঠতে শুরু করে। পুরো চরটি জেগে উঠলে ২০০৮ সালে ওই চরে মানুষ পুনরায় বসতি গড়তে থাকে। বর্তমানে ওই চরে ২ হাজার পরিবারের বসবাস। আর ফসলি জমি রয়েছে ৬ হাজার ৬৬৬ বিঘা।

ওই চরের মাঝিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আমেনা খাতুন। পদ্মার ভাঙনে চার দফা নিস্ব হয়েছেন। ২০১৪ সালে দুই বিঘা জমি ক্রয় করে পুনরায় চরে বসতি গড়ে তোলেন। সোমবার সেই বসত বাড়িটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।

আমেনা খাতুন বলেন, সারা জীবন পদ্মা নদীই আমাদের সব কিছু কেরে নিয়েছে। যাও বাপ-শ্বশুরের ভিটা ছিল তাও পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করেছে। এই মাটির টানে ৬ বছর আগে পাইনপারার চরে জমি কিনে পুনরায় বসতি গড়েছিলাম। এখন সেই আশ্রয়ও হারালাম। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেব?

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল লতিফ ব্যাপারী বসবাস করেন পাইনপার আহম্মদ মাঝিকান্দি গ্রামে। তার বাড়ির পাশ দিয়ে বিদ্যুত প্রকল্পের চ্যানেল খনন করা হয়েছে। ভাঙনে সোমবার তার বাড়ির একটি অংশ পদ্মায় বিলীন হয়।

ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ ব্যাপারী বলেন, হঠাৎ করে ভাঙনে পাইনপারার ১৩টি বসত বাড়ি বিলীন হয়েছে। চরের ২০০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পরেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ও সেতু বিভাগে আবেদন জমা দিয়েছি।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের জন্য নির্মাণ করা চ্যানেলে স্র্রোত বেরে যাওয়ায় জনবসতিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টির ওপর পাউবো নজর রাখছে। সেতু বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

জাজিরার চরে পদ্মার ভাঙনে ১৩ বাড়ি বিলীন, ঝুঁকিতে ২ হাজার পরিবার

কাজী মনিরুজ্জামান, শরীয়তপুর

image

শরীয়তপুরের জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপারা চরটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী। ওই চরের পাশ দিয়েই নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু । গত ৪ দিন ধরে ওই চরটিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে ১৩টি বসত বাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে চরের দুই হাজার পরিবার ও ৬ হাজার ৬শ ৬৬ বিঘা ফসলি জমি।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপার মৌজায় তিনটি গ্রাম। ওই গ্রামগুলোর চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী। গ্রামগুলোর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর খুটির থেকে চরের দূরত্ব ৩০০ মিটার। সেতুর খুটি (পিয়ার) স্থাপনের জন্য একটি চ্যানেল খনন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কনস্ট্র্রাকশন। আর গ্রামগুলোর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ঢাকা নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত লাইনের খুটি স্থাপনের জন্য ওই প্রান্ত দিয়ে একটি চ্যানেল খনন করা হয়। গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে ¯্রােত বেড়েছে। ওই দুটি চ্যানেলে স্রোত প্রবেশ করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

পদ্মা সেতুর জন্য খনন করা চ্যানেলে ৩৪ নম্বর খুঁটির কাছে আড়াআড়ি বাঁধ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর ওই চ্যানেল মুখে শিবচরের তারপাশা, শাহাবাজ নগর, বটেশ^র মৌজায় দুই কিলোমিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে চ্যানেলের মধ্যে তীব্র স্র্রোত প্রবেশ করছে। স্র্রোতে পাইনপারা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আর বিদ্যুতের খুঁটি নেয়ার জন্য খনন করা চ্যানেলটি পদ্মা নদীর উত্তর কালিকা ও চরভাওর এলাকায় আরাআরি বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। তীব্র স্র্রোতে ওই বাঁধ ভেঙ্গে স্র্রোত প্রবেশ করছে চ্যানেলে। এ কারণে পাইনপারার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙন কবলিত পাইনপারায় আসেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, সেতুর পিয়ার হতে দুই দিকে ৫০০ মিটার জায়গা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের খনন করা চ্যানেলে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ও স্প্যান, স্লাব বসানোর কাজে ব্যবহৃত ক্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৩৪ নম্বর পিয়ারের কাছে বাঁধ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বছর চ্যানেলের প্রবেশ মুখে পদ্মা নদীতে দুই কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্র্রোত বেরে গেছে। এ কারণে কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে ওই বাঁধ অপসারণও করা সম্ভব নয়। অপসারণ করতে গেলে সেতুর কাজ বাঁধাগ্রস্ত হবে। ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

১৯৯৮ সালে পাইনপারা মৌজাটি ভাঙনের কবলে পরে। তখন দুই বছরের ভাঙনে পুরো এলাকটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০৬ সাল থেকে চরটি জেগে উঠতে শুরু করে। পুরো চরটি জেগে উঠলে ২০০৮ সালে ওই চরে মানুষ পুনরায় বসতি গড়তে থাকে। বর্তমানে ওই চরে ২ হাজার পরিবারের বসবাস। আর ফসলি জমি রয়েছে ৬ হাজার ৬৬৬ বিঘা।

ওই চরের মাঝিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আমেনা খাতুন। পদ্মার ভাঙনে চার দফা নিস্ব হয়েছেন। ২০১৪ সালে দুই বিঘা জমি ক্রয় করে পুনরায় চরে বসতি গড়ে তোলেন। সোমবার সেই বসত বাড়িটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।

আমেনা খাতুন বলেন, সারা জীবন পদ্মা নদীই আমাদের সব কিছু কেরে নিয়েছে। যাও বাপ-শ্বশুরের ভিটা ছিল তাও পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করেছে। এই মাটির টানে ৬ বছর আগে পাইনপারার চরে জমি কিনে পুনরায় বসতি গড়েছিলাম। এখন সেই আশ্রয়ও হারালাম। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেব?

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল লতিফ ব্যাপারী বসবাস করেন পাইনপার আহম্মদ মাঝিকান্দি গ্রামে। তার বাড়ির পাশ দিয়ে বিদ্যুত প্রকল্পের চ্যানেল খনন করা হয়েছে। ভাঙনে সোমবার তার বাড়ির একটি অংশ পদ্মায় বিলীন হয়।

ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ ব্যাপারী বলেন, হঠাৎ করে ভাঙনে পাইনপারার ১৩টি বসত বাড়ি বিলীন হয়েছে। চরের ২০০০ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পরেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ও সেতু বিভাগে আবেদন জমা দিয়েছি।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের জন্য নির্মাণ করা চ্যানেলে স্র্রোত বেরে যাওয়ায় জনবসতিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টির ওপর পাউবো নজর রাখছে। সেতু বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।