একার লড়াইয়ে চলে জেলেনি শেফালির ৪ সদস্যের সংসার

জেলে পরিবারের কেউ নয়! সাধারণ ঘরের এক গৃহিনী। স্বপ্ন ছিল আর সব গৃহিনীর মতো ঘরে থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে ঘর সংসার করবে। কিন্তু না! অভাবের তাড়নায় ঘরে থাকতে পারেননি তিনি। গৃহিনী থেকে হয়েছে জেলেনি। নদীতে মাছ ধরে তা বিক্রি করে সংসার চালায়। এ কাজে তার কোন সাহায্যকারী নেই। একাই করে এই কাজ। স্বামীর শারীরিক অসুবিধা থাকায় ভাড়ি কোন কাজ করতে না পারায় জেলেনির কাজ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে রাঙ্গাবালীর শেফালী বেগম।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় দারছিরা নদী। দু’মাথায় বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়ায় মরা নদীতে রুপান্ত?রিত হয়েছে দারছিরা। ওই নদীর পারেই চরগঙ্গা গ্রামের রিয়াজ সরদারের স্ত্রী শেফালী বেগম। বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি হবে। স্বামী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। স্বামী রিয়াজ শারীরিক অসুবিধার কারণে ভারি কোন কাজ করতে না পারায়,বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরে স্ত্রী শেফালী। অভাবের সংসার। কি করবে! বেছে নেয় জেলেনীর কাজ। শুরু হয় জাল ডিঙ্গি নিয়ে নদীতে বিচরণ। বাড়ির পাশে দারছিরা মরা নদীর আগাছা ছাপ করে, তার ফাঁকে ফাঁকে মাছ ধরে যা পায় তা বিক্রি করে চলে শেফালীর সংসার। এ কাজে তার কোন সাহায্যকারী নেই। বৈঠা বাওয়া, জাল পাতা, জাল উঠানো, মাছ বিক্রি সহ সব কাজ একাই করে সে। সকাল বিকেল নদীতে গেলেই দেখা মেলে তার। জানতে পেরে সকাল ৮টার দিকে নদীতে গিয়ে দেখা হয় শেফালীর সঙ্গে। নিত্যদিনের মতো সে তখন জাল উঠানোর কাজে ব্যস্ত। জালে আটকাপরা বিভিন্ন প্রজাতির ছোটছোট মাছ জাল থেকে ছাড়িয়ে নৌকার মধ্যেই নির্দিষ্টস্থানে সংরক্ষণ করছে। ওই অবস্থায় তার কাছে জানতে চাইলে, হাতের কাজ বন্ধ না করেই তিনি বলেন, কি আর করমু, স্বামীর শারীরিক অবস্থা ভাল না। ভারি কোন কাজ করতে পারে না। যতটুকু করে তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হইয়া এই কামে নামছি। সারাদিনে যা পাই তাই দিয়া সংসার চালাই। আমার কোন ভাগীদার নাই। ভাগী লইলে আবার খরচ পোষে না। আমি এখন সব পারি। তাই একলাই করি।

ছেলেমেয়ের কথা জানতে চাইলে শেফালী বলেন, আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ক্লাশ নাইনে পড়ে। তবে ছেলে ও বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন তিনি। ভিজিডি’র চাল পায় কিনা জানতে চাইলে তা স্বীকার করে বলেন, জাইল্লা নামের চাউল পাই। মেম্বরে দেয়। চালানের অভাবে নতুন জাল যোগার করতে পারি না। নতুন জাল অইলে আরও বেশি মাছ পাইতাম। তাতে আমার সংসার আরও ভাল চলত।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

একার লড়াইয়ে চলে জেলেনি শেফালির ৪ সদস্যের সংসার

হাফিজুর রহমান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

image

জেলে পরিবারের কেউ নয়! সাধারণ ঘরের এক গৃহিনী। স্বপ্ন ছিল আর সব গৃহিনীর মতো ঘরে থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে ঘর সংসার করবে। কিন্তু না! অভাবের তাড়নায় ঘরে থাকতে পারেননি তিনি। গৃহিনী থেকে হয়েছে জেলেনি। নদীতে মাছ ধরে তা বিক্রি করে সংসার চালায়। এ কাজে তার কোন সাহায্যকারী নেই। একাই করে এই কাজ। স্বামীর শারীরিক অসুবিধা থাকায় ভাড়ি কোন কাজ করতে না পারায় জেলেনির কাজ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে রাঙ্গাবালীর শেফালী বেগম।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় দারছিরা নদী। দু’মাথায় বাঁধ দিয়ে আটকে দেয়ায় মরা নদীতে রুপান্ত?রিত হয়েছে দারছিরা। ওই নদীর পারেই চরগঙ্গা গ্রামের রিয়াজ সরদারের স্ত্রী শেফালী বেগম। বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি হবে। স্বামী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে ৪ জনের সংসার। স্বামী রিয়াজ শারীরিক অসুবিধার কারণে ভারি কোন কাজ করতে না পারায়,বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরে স্ত্রী শেফালী। অভাবের সংসার। কি করবে! বেছে নেয় জেলেনীর কাজ। শুরু হয় জাল ডিঙ্গি নিয়ে নদীতে বিচরণ। বাড়ির পাশে দারছিরা মরা নদীর আগাছা ছাপ করে, তার ফাঁকে ফাঁকে মাছ ধরে যা পায় তা বিক্রি করে চলে শেফালীর সংসার। এ কাজে তার কোন সাহায্যকারী নেই। বৈঠা বাওয়া, জাল পাতা, জাল উঠানো, মাছ বিক্রি সহ সব কাজ একাই করে সে। সকাল বিকেল নদীতে গেলেই দেখা মেলে তার। জানতে পেরে সকাল ৮টার দিকে নদীতে গিয়ে দেখা হয় শেফালীর সঙ্গে। নিত্যদিনের মতো সে তখন জাল উঠানোর কাজে ব্যস্ত। জালে আটকাপরা বিভিন্ন প্রজাতির ছোটছোট মাছ জাল থেকে ছাড়িয়ে নৌকার মধ্যেই নির্দিষ্টস্থানে সংরক্ষণ করছে। ওই অবস্থায় তার কাছে জানতে চাইলে, হাতের কাজ বন্ধ না করেই তিনি বলেন, কি আর করমু, স্বামীর শারীরিক অবস্থা ভাল না। ভারি কোন কাজ করতে পারে না। যতটুকু করে তাতে সংসার চলে না। বাধ্য হইয়া এই কামে নামছি। সারাদিনে যা পাই তাই দিয়া সংসার চালাই। আমার কোন ভাগীদার নাই। ভাগী লইলে আবার খরচ পোষে না। আমি এখন সব পারি। তাই একলাই করি।

ছেলেমেয়ের কথা জানতে চাইলে শেফালী বলেন, আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ক্লাশ নাইনে পড়ে। তবে ছেলে ও বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন তিনি। ভিজিডি’র চাল পায় কিনা জানতে চাইলে তা স্বীকার করে বলেন, জাইল্লা নামের চাউল পাই। মেম্বরে দেয়। চালানের অভাবে নতুন জাল যোগার করতে পারি না। নতুন জাল অইলে আরও বেশি মাছ পাইতাম। তাতে আমার সংসার আরও ভাল চলত।