পুকুর-খাল-বিল-জলাশয় ছাড়া

‘বায়োফ্লক’ মাছ চাষে সফল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র

নওগাঁর রানীনগরে সামিউল আলম খান তুষার নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে এক অনন্য দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছে। বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন তিনি। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে কোন পুকুর, খাল-বিল কিংবা নদী-নালার প্রয়োজন হবে না। বরং বাড়ির পাশের খলিয়ানে অথবা উঠানে ইট-সিমেন্ট দিয়ে ট্যাংকি তৈরি করে অল্প জায়গায় সারা বছরে মাছ চাষ করা যাবে। এমনকি গৃহবধূরা পরিবারের কাজের পাশাপাশি নিজ বাড়িতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারবেন। সামিউল আলম তুষার নিজ এলাকাসহ দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখছে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে। নতুন করে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করতে গিয়ে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।

এমন সঙ্কটকালীন সময়ে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রযুক্তির নতুন সম্ভাবনা বয়ে এনেছে। জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল খান পাড়া গ্রামের মাহবুর আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে সামিউল আলম খান তুষার। ডিজিটাল প্রযুক্তির বদৌলতে ইউটিউবে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাবেক এক মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় তিন দিনের বুনিয়াদি প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষন শেষে চাকরির পিছনে না দৌড়ে বাবা মাহবুবুর আলমের সহযোগীতায় পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের লক্ষে স্বল্প পরিসরে নিজ বাড়িতে প্রথম এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে। বাড়ির পাশের খলিয়ানে ২০১৯সালের শেষের দিকে দু’টি ট্যাংকিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করে পরীক্ষামূলকভাবে শিং মাছের চাষ শুরু করে এবং পরবর্তি সময়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তুষার। সামিউল তুষার বলেন, খুব সহজেই যে কেউ অল্প পূজিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। এমনকি গৃহবধূরা প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবারের কাজের পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন।

আগামীতে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমি আরও বড় পরিসরে এই প্রকল্পকে বিস্তৃত করতে চাই। চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে মাছের জন্য খাবার খুব কম দিতে হয়। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছের মলমূত্র এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে তা পুনরায় মাছকে খাওয়ানো যায়। এতে খাবারের খরচ অনেক কমে যায়। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় জানান, বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক। তবে আমাদের দেশে এর প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি। সামিউল ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেছে। আমরা তুষারকে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে আসছি। যে কেউ এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। তবে আগামীতে এই পদ্ধতি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে আমি আশাবাদী।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

পুকুর-খাল-বিল-জলাশয় ছাড়া

‘বায়োফ্লক’ মাছ চাষে সফল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র

জেলা বার্তা পরিবেশক, নওগাঁ

image

নওগাঁর রানীনগরে সামিউল আলম খান তুষার নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে এক অনন্য দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছে। বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন তিনি। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে কোন পুকুর, খাল-বিল কিংবা নদী-নালার প্রয়োজন হবে না। বরং বাড়ির পাশের খলিয়ানে অথবা উঠানে ইট-সিমেন্ট দিয়ে ট্যাংকি তৈরি করে অল্প জায়গায় সারা বছরে মাছ চাষ করা যাবে। এমনকি গৃহবধূরা পরিবারের কাজের পাশাপাশি নিজ বাড়িতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারবেন। সামিউল আলম তুষার নিজ এলাকাসহ দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখছে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে। নতুন করে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করতে গিয়ে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।

এমন সঙ্কটকালীন সময়ে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রযুক্তির নতুন সম্ভাবনা বয়ে এনেছে। জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল খান পাড়া গ্রামের মাহবুর আলম খানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে সামিউল আলম খান তুষার। ডিজিটাল প্রযুক্তির বদৌলতে ইউটিউবে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাবেক এক মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় তিন দিনের বুনিয়াদি প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষন শেষে চাকরির পিছনে না দৌড়ে বাবা মাহবুবুর আলমের সহযোগীতায় পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের লক্ষে স্বল্প পরিসরে নিজ বাড়িতে প্রথম এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করে। বাড়ির পাশের খলিয়ানে ২০১৯সালের শেষের দিকে দু’টি ট্যাংকিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করে পরীক্ষামূলকভাবে শিং মাছের চাষ শুরু করে এবং পরবর্তি সময়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তুষার। সামিউল তুষার বলেন, খুব সহজেই যে কেউ অল্প পূজিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। এমনকি গৃহবধূরা প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবারের কাজের পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন।

আগামীতে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমি আরও বড় পরিসরে এই প্রকল্পকে বিস্তৃত করতে চাই। চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে মাছের জন্য খাবার খুব কম দিতে হয়। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছের মলমূত্র এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে তা পুনরায় মাছকে খাওয়ানো যায়। এতে খাবারের খরচ অনেক কমে যায়। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় জানান, বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক। তবে আমাদের দেশে এর প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি। সামিউল ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেছে। আমরা তুষারকে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে আসছি। যে কেউ এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। তবে আগামীতে এই পদ্ধতি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে আমি আশাবাদী।