শ্রেণী কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে নতুন ১২ হাজার ৫১৯টি শিক্ষকের (ক্যাডার) পদ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি কলেজে ১৬ হাজার শিক্ষকের পদ রয়েছে। নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা প্রশাসনের সবচেয়ে বৃহৎ সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) দুর্নীতির লাগাম টানা ও সেবার মান বাড়াতে সংস্থাটিতে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের তিনটি পদসহ ৩য় গ্রেডের ১০১টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে, যা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালকের তিন পদই হবে ২য় গ্রেডের, অতিরিক্ত সচিব সমমর্যাদার। আর শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ৯৮টি ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি হচ্ছে, যেগুলোতে পদোন্নতি সাপেক্ষে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা পদায়ন পাবেন। আর অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদগুলোতে অধ্যাপক ছাড়াও সরকারের অতিরিক্ত সচিবদের পদায়নের সুযোগ থাকছে বলে শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মাউশি’র মহাপরিচালকের (ডিজি) পদটি ১ম গ্রেডের। কিন্তু বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ১ম গ্রেডের কোন অধ্যাপক না থাকায় ডিজি পদের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৩য় গ্রেডের একজন অধ্যাপক। ওই পদে এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমান মহাপরিচালকের কোন পদোন্নতি হয়নি। মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুককে নিয়মিত দফতরে পাওয়া যায় না বলে শিক্ষক সংগঠনগুলো প্রায়ই অভিযোগ করছেন, এ কারণে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা ওই কর্মকর্তার ওপর খুব একটা সন্তুষ্ট নয় বলেও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তিনজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, মাউশি মহাপরিচালকের বিশাল কর্মপরিধি থাকলেও অধিকাংশ সময় তাকে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের প্রটোকলে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। নানা মহলের তদবিরে তিনি প্রায়ই সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণে ব্যস্ত থাকেন। এ ব্যস্ততার কারণে মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ পান না সাধারণ শিক্ষকরা। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদ সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি’র পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘তিনটি এডিজি’র (অতিরিক্ত মহাপরিচালক) পদ সৃষ্টির বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে। এডিজি’র তিনটি পদ হলো- ‘পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং প্রশাসন ও অর্থ’। আমি যতটুকু জানি, ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়েছে, এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হবে।’
সাড়ে ১২ হাজার ক্যাডার পদ সৃষ্টির বিষয়ে মাউশি পরিচালক আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে কিছু কুয়োরি (তথ্যাদি চাওয়া) চেয়েছে। আমরা সেগুলো প্রস্তুত করছি। কোন সমস্যা বা জটিলতা নেই।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পদ সৃষ্টি সংক্রান্ত নথিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের লক্ষ্যে তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বর্তমানে একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ছয়জন পরিচালক (অধ্যাপক) মাউশি পরিচালনা করছেন।
জানা গেছে, সরকার ২০১৫ সালে নবম পে স্কেল (বেতন কাঠামো) বাস্তবায়ন করলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া কয়েকটি ক্যাডারে নির্দিষ্ট কিছু পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া রোধ হয়। ওই পে স্কেলে বেতনভাতা বাড়লেও কয়েকটি ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘মর্যাদা’ বাড়েনি, ক্ষেত্রবিশেষ মর্যাদার অবমাননাও ঘটেছে। যদিও প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির সোপানে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়নি।
নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপকরা ৪-গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন গ্রেড আপগ্রেডেশন (পদমর্যাদা বৃদ্ধি) থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই অসন্তোষ নিরসনের লক্ষেই শিক্ষা ক্যাডারে ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী আরও জানান, সর্বশেষ পে স্কেল হওয়ার পর শিক্ষা ক্যাডারের অবনমন হয়েছিল। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল, আন্দোলন হয়েছিল। এক পর্যায়ে শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি হয়েছিল। এই দুটি কমিটির প্রতিবেদনেই শিক্ষা ক্যাডারে ৪২৯টি ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টির সুপারিশ ছিল, কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৯৮টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছে।
২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩০টি শীর্ষ পদকে গ্রেড-১ এবং ২০টি পদকে গ্রেড-২ তে উন্নীত করে সরকার। ওই তালিকা অনুযায়ী, মাউশি ডিজি পদটি গ্রেড-১ এর পদ। প্রশাসনে গ্রেড-১ সচিব এবং গ্রেড-২ অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার পদ।
প্রায় ছয় বছর আগে মাউশি’র ডিজি পদটি গ্রেড-১ এ উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ৫/৬ জন অধ্যাপক ওই পদে দায়িত্ব পালন করলেও ওই সংস্থার প্রধান হিসেবে একমাত্র প্রফেসর ফাহিমা খাতুন গ্রেড-১ অর্জন করে অবসর গ্রহণ করেন। অন্যরা গ্রেড-৩ পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন। এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
৩২৯ সরকারি কলেজে সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টি :
মাউশি’র অধীনে নতুন ও পুরোনোসহ বর্তমানে ৩২৯টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে বর্তমানে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের ১৫ হাজার ৯৯৫টি পদ রয়েছে। কিন্তু পদ ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নতুন সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার।
নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোর বিদ্যমান প্যাটার্ন ও জনবল কাঠামো অনুসারেই নতুন ১২ হাজার ৫১৯টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে। সব কটিই ক্যাডার পদ। নতুন সৃষ্ট পদগুলোর মধ্যে প্রভাষক, সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকের পদ রয়েছে। পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষাই হবে সবচেয়ে বৃহৎ ক্যাডার। বর্তমানে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২২ হাজার সদস্য রয়েছেন।’
মাউশি’র অধীনে বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং অনার্স ও মাস্টার্স কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে নতুন জাতীয়করণ হওয়া ৩০৩টি কলেজেও রয়েছে। পৃথক অধিদফতর প্রতিষ্ঠা হওয়ায় মাদ্রাসার এমপিও ও তদারকির কার্যক্রম এখন আর মাউশি দেখভাল করে না।
এদিকে মাউশি’তে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম, বয়স ও নানা বিষয় সংশোধন করাতেও বিভিন্ন স্তরে ঘুষ দিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতি স্তরে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গুণতে হয় বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অভিযোগ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে মাউশি অধিদফতর পর্যন্ত- কমপক্ষে পাঁচ স্তরে এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ দিতে হয় শিক্ষকদের।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া ও অনুমোদনহীন বিষয়ের শিক্ষক, ভুয়া সনদধারী ও বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকলেও এমপিও পাচ্ছেন শিক্ষকরা। দুর্নীতি ও ঘুষ কমানোর নামে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি মাঠ পর্যায়ে ছেড়ে দেয়া হলেও এসব কাজে ঘুষ, দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭
রাকিব উদ্দিন
শ্রেণী কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে নতুন ১২ হাজার ৫১৯টি শিক্ষকের (ক্যাডার) পদ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে সরকারি কলেজে ১৬ হাজার শিক্ষকের পদ রয়েছে। নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা প্রশাসনের সবচেয়ে বৃহৎ সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) দুর্নীতির লাগাম টানা ও সেবার মান বাড়াতে সংস্থাটিতে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের তিনটি পদসহ ৩য় গ্রেডের ১০১টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে, যা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালকের তিন পদই হবে ২য় গ্রেডের, অতিরিক্ত সচিব সমমর্যাদার। আর শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ৯৮টি ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি হচ্ছে, যেগুলোতে পদোন্নতি সাপেক্ষে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা পদায়ন পাবেন। আর অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদগুলোতে অধ্যাপক ছাড়াও সরকারের অতিরিক্ত সচিবদের পদায়নের সুযোগ থাকছে বলে শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মাউশি’র মহাপরিচালকের (ডিজি) পদটি ১ম গ্রেডের। কিন্তু বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ১ম গ্রেডের কোন অধ্যাপক না থাকায় ডিজি পদের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৩য় গ্রেডের একজন অধ্যাপক। ওই পদে এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমান মহাপরিচালকের কোন পদোন্নতি হয়নি। মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুককে নিয়মিত দফতরে পাওয়া যায় না বলে শিক্ষক সংগঠনগুলো প্রায়ই অভিযোগ করছেন, এ কারণে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা ওই কর্মকর্তার ওপর খুব একটা সন্তুষ্ট নয় বলেও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তিনজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানান, মাউশি মহাপরিচালকের বিশাল কর্মপরিধি থাকলেও অধিকাংশ সময় তাকে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের প্রটোকলে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। নানা মহলের তদবিরে তিনি প্রায়ই সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণে ব্যস্ত থাকেন। এ ব্যস্ততার কারণে মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ পান না সাধারণ শিক্ষকরা। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদ সৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি’র পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘তিনটি এডিজি’র (অতিরিক্ত মহাপরিচালক) পদ সৃষ্টির বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে। এডিজি’র তিনটি পদ হলো- ‘পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং প্রশাসন ও অর্থ’। আমি যতটুকু জানি, ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়েছে, এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই পদ সৃষ্টির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হবে।’
সাড়ে ১২ হাজার ক্যাডার পদ সৃষ্টির বিষয়ে মাউশি পরিচালক আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে কিছু কুয়োরি (তথ্যাদি চাওয়া) চেয়েছে। আমরা সেগুলো প্রস্তুত করছি। কোন সমস্যা বা জটিলতা নেই।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পদ সৃষ্টি সংক্রান্ত নথিপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের লক্ষ্যে তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বর্তমানে একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ছয়জন পরিচালক (অধ্যাপক) মাউশি পরিচালনা করছেন।
জানা গেছে, সরকার ২০১৫ সালে নবম পে স্কেল (বেতন কাঠামো) বাস্তবায়ন করলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া কয়েকটি ক্যাডারে নির্দিষ্ট কিছু পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া রোধ হয়। ওই পে স্কেলে বেতনভাতা বাড়লেও কয়েকটি ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘মর্যাদা’ বাড়েনি, ক্ষেত্রবিশেষ মর্যাদার অবমাননাও ঘটেছে। যদিও প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতির সোপানে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়নি।
নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের আগে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের মাধ্যমে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপকরা ৪-গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন গ্রেড আপগ্রেডেশন (পদমর্যাদা বৃদ্ধি) থেকে বঞ্চিত হওয়ায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই অসন্তোষ নিরসনের লক্ষেই শিক্ষা ক্যাডারে ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী আরও জানান, সর্বশেষ পে স্কেল হওয়ার পর শিক্ষা ক্যাডারের অবনমন হয়েছিল। এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল, আন্দোলন হয়েছিল। এক পর্যায়ে শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি হয়েছিল। এই দুটি কমিটির প্রতিবেদনেই শিক্ষা ক্যাডারে ৪২৯টি ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টির সুপারিশ ছিল, কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৯৮টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছে।
২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩০টি শীর্ষ পদকে গ্রেড-১ এবং ২০টি পদকে গ্রেড-২ তে উন্নীত করে সরকার। ওই তালিকা অনুযায়ী, মাউশি ডিজি পদটি গ্রেড-১ এর পদ। প্রশাসনে গ্রেড-১ সচিব এবং গ্রেড-২ অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার পদ।
প্রায় ছয় বছর আগে মাউশি’র ডিজি পদটি গ্রেড-১ এ উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ৫/৬ জন অধ্যাপক ওই পদে দায়িত্ব পালন করলেও ওই সংস্থার প্রধান হিসেবে একমাত্র প্রফেসর ফাহিমা খাতুন গ্রেড-১ অর্জন করে অবসর গ্রহণ করেন। অন্যরা গ্রেড-৩ পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন। এ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
৩২৯ সরকারি কলেজে সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টি :
মাউশি’র অধীনে নতুন ও পুরোনোসহ বর্তমানে ৩২৯টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে বর্তমানে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের ১৫ হাজার ৯৯৫টি পদ রয়েছে। কিন্তু পদ ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নতুন সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার।
নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোর বিদ্যমান প্যাটার্ন ও জনবল কাঠামো অনুসারেই নতুন ১২ হাজার ৫১৯টি পদ সৃষ্টি হচ্ছে। সব কটিই ক্যাডার পদ। নতুন সৃষ্ট পদগুলোর মধ্যে প্রভাষক, সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকের পদ রয়েছে। পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শিক্ষাই হবে সবচেয়ে বৃহৎ ক্যাডার। বর্তমানে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২২ হাজার সদস্য রয়েছেন।’
মাউশি’র অধীনে বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং অনার্স ও মাস্টার্স কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে নতুন জাতীয়করণ হওয়া ৩০৩টি কলেজেও রয়েছে। পৃথক অধিদফতর প্রতিষ্ঠা হওয়ায় মাদ্রাসার এমপিও ও তদারকির কার্যক্রম এখন আর মাউশি দেখভাল করে না।
এদিকে মাউশি’তে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে হয়রানি, ঘুষ-দুর্নীতি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম, বয়স ও নানা বিষয় সংশোধন করাতেও বিভিন্ন স্তরে ঘুষ দিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতি স্তরে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গুণতে হয় বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অভিযোগ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে মাউশি অধিদফতর পর্যন্ত- কমপক্ষে পাঁচ স্তরে এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ দিতে হয় শিক্ষকদের।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া ও অনুমোদনহীন বিষয়ের শিক্ষক, ভুয়া সনদধারী ও বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকলেও এমপিও পাচ্ছেন শিক্ষকরা। দুর্নীতি ও ঘুষ কমানোর নামে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি মাঠ পর্যায়ে ছেড়ে দেয়া হলেও এসব কাজে ঘুষ, দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তি আরও বেড়েছে।