দগ্ধ আরও ২ জন চলে গেলেন

মৃত্যু সংখ্যা ৩৩

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে গ্যাস লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘গতকাল ভোর ৫টায় মারা যান আবদুল আজিজ (৪০)। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে মো. ফরিদ (৫৫) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। হাসপাতালে ভর্তি বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।’

আবদুল আজিজ নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার মনু মিয়ার ছেলে। তার আবু সাঈদ (১৬) ও সামিয়া (১০) নামে দুই সন্তান রয়েছে। দু’জনই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। মসজিদের বিপরীত পাশে প্রায় দশ ফুট দূরত্বে ছিল আবদুল আজিজের লন্ড্রির দোকান। সেদিন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে। বিস্ফোরণের পর মসজিদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা আগুনের স্ফুলিঙ্গে দগ্ধ হয় আজিজ। তার শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

নিহত মো. ফরিদের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আসিয়ান ডাঙ্গরী গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে। বিস্ফোরণের ঘটনায় শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে বার্ন ইউনিটের আইসিইউয়ের ২০ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

ফরিদের স্ত্রী রিনা বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার আগের দিন নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মেয়ে খাদিজার বাসায় বেড়াতে আসেন ফরিদ। বিস্ফোরণের রাতে তিনি ওই মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ৪২ জন দগ্ধ হন। গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন মারা গেছেন। বর্তমানে আইসিইউতে কেনান (২৪), সিফাত (১৮) ও আমজাদ (৩৭) নামের আরও ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় দগ্ধ মামুন (২৩) নামে এক পোশাক শ্রমিক হাসপাতাল থেকে জীবিত ফিরেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে। ঘটনার পর টানা তিনদিন মসজিদের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাসের গ্যাস লাইনের পাইপে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে তিতাস ছাড়াও ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। শনি তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

দগ্ধ আরও ২ জন চলে গেলেন

মৃত্যু সংখ্যা ৩৩

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে গ্যাস লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘গতকাল ভোর ৫টায় মারা যান আবদুল আজিজ (৪০)। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে মো. ফরিদ (৫৫) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। হাসপাতালে ভর্তি বাকি তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।’

আবদুল আজিজ নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার মনু মিয়ার ছেলে। তার আবু সাঈদ (১৬) ও সামিয়া (১০) নামে দুই সন্তান রয়েছে। দু’জনই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। মসজিদের বিপরীত পাশে প্রায় দশ ফুট দূরত্বে ছিল আবদুল আজিজের লন্ড্রির দোকান। সেদিন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে। বিস্ফোরণের পর মসজিদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা আগুনের স্ফুলিঙ্গে দগ্ধ হয় আজিজ। তার শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

নিহত মো. ফরিদের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আসিয়ান ডাঙ্গরী গ্রামে। সে ওই গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে। বিস্ফোরণের ঘটনায় শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে বার্ন ইউনিটের আইসিইউয়ের ২০ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

ফরিদের স্ত্রী রিনা বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার আগের দিন নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মেয়ে খাদিজার বাসায় বেড়াতে আসেন ফরিদ। বিস্ফোরণের রাতে তিনি ওই মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ৪২ জন দগ্ধ হন। গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন মারা গেছেন। বর্তমানে আইসিইউতে কেনান (২৪), সিফাত (১৮) ও আমজাদ (৩৭) নামের আরও ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় দগ্ধ মামুন (২৩) নামে এক পোশাক শ্রমিক হাসপাতাল থেকে জীবিত ফিরেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে। ঘটনার পর টানা তিনদিন মসজিদের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাসের গ্যাস লাইনের পাইপে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে তিতাস ছাড়াও ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। শনি তিতাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।