নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ

তিতাসের ৮ কর্মকর্তা কর্মচারী গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণের মামলায় তিতাসের সাময়িক বরখাস্ত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক বাবুল হোসেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেনÑ তিতাস গ্যাস কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা জোনের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া, ওয়েল্ডার ইসমাইল প্রধান। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে তিতাস।

গতকাল দুুপুরে নারায়ণগঞ্জে সিআইডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিতাসের বরখাস্ত হওয়া ওই আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান, সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান। ডিআইজি বলেন, ‘তিতাস, বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় মসজিদ কমিটির অবহেলা আছে কিনা সেই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়া অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি। সেসবের ভিত্তিতে তিতাসের স্থানীয় যে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন তাদের মধ্যে ৮ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এই তদন্ত কাজ চলাকালে আরও যে ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

গ্রেফতারের পর গতকাল বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ওই আটজনকে আদালতে পাঠায় সিআইডি। পরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বাবুল হোসেন সংবাদকে জানান, তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইতোমধ্যে বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র জব্দ তালিকায় সংযুক্ত ও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে। ঘটনার পর টানা তিন দিন মসজিদের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাসের গ্যাস লাইনের পাইপে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে তিতাস ছাড়াও ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণ

তিতাসের ৮ কর্মকর্তা কর্মচারী গ্রেফতার

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

image

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণের মামলায় তিতাসের সাময়িক বরখাস্ত ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক বাবুল হোসেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেনÑ তিতাস গ্যাস কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা জোনের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া, ওয়েল্ডার ইসমাইল প্রধান। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে তিতাস।

গতকাল দুুপুরে নারায়ণগঞ্জে সিআইডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিতাসের বরখাস্ত হওয়া ওই আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান, সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান। ডিআইজি বলেন, ‘তিতাস, বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় মসজিদ কমিটির অবহেলা আছে কিনা সেই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। আমরা বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়া অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি। সেসবের ভিত্তিতে তিতাসের স্থানীয় যে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন তাদের মধ্যে ৮ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এই তদন্ত কাজ চলাকালে আরও যে ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

গ্রেফতারের পর গতকাল বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ওই আটজনকে আদালতে পাঠায় সিআইডি। পরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বাবুল হোসেন সংবাদকে জানান, তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস কর্মকর্তাসহ মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইতোমধ্যে বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র জব্দ তালিকায় সংযুক্ত ও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বায়তুস সালাহ জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে উৎসারিত আগুন এবং তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হওয়া গ্যাস থেকে বিস্ফোরণটি হয়েছে। ঘটনার পর টানা তিন দিন মসজিদের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির পর তিতাসের গ্যাস লাইনের পাইপে ছয়টি লিকেজ পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে তিতাস ছাড়াও ডিপিডিসি ও মসজিদ কমিটির অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে।