বন্ধ করুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত দুই বছরে দেশে মামলা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। আইনের ২৫ ও ২৯ ধারায় বেশিরভাগ মামলা করা হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৮ ধারার সঙ্গে উল্লিখিত দুটি ধারার সামঞ্জস্য রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া বেশিরভাগ মামলাই আদালতে খারিজ হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে মামলার কারণে হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তির আইনি প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে গত শনিবার একটি জাতীয় দৈনিক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কণ্ঠরোধের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বুদ্ধিবৃত্তিক নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। এ আইনে শুধু মামলাই হচ্ছে না, নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনও মিলছে না অনেক সময়। সরকারের সমালোচনা বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অভিযোগে যথেচ্ছ মামলা হচ্ছে। বেশিরভাগ মামলাই করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। মামলা হতে দেরি হলেও মামলায় গ্রেফতার করতে বা রিমান্ডে নিতে দেরি হয় না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আইনের ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য। একটি গোষ্ঠী আইনের এ সুযোগই গ্রহণ করছে। অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেলে বা এ নিয়ে যে কোন মাধ্যমে মত প্রকাশ করলেই মামলা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কোন পোস্টে লাইক দিলে বা কমেন্ট করলেও মামলার আসামি হতে হচ্ছে। আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেছেন, মামলা করার অধিকার সবারই আছে। আমরা জানতে চাইব, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের আগে জেল-জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার মানুষের আছে কিনা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের সমালোচনা করা বা স্বাধীন মত প্রকাশ করা নাগরিকদের অধিকারের পর্যায়ে পড়ে কিনা। আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইব যে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন কোন আইন বা ধারা থাকা উচিত কিনা যা নাগরিকদের মত প্রকাশে বিঘ্নে ঘটায় বা মত প্রকাশের জন্য খ—গ হস্ত হয়।

আমরা দেশে এমন কোন আইন চাই না যা স্বাধীন মত প্রকাশের সংবিধান বর্ণিত অধিকারকে হরণ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল বা সংস্কার করতে হবে। বিনা পরোয়ানায় পুলিশকে গ্রেফতারের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা রহিত করতে হবে। মামলা জামিনযোগ্য হতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এ বিষয়ে আমরা অতীতেও লিখেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। এ আইনের যারা অপব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

বন্ধ করুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত দুই বছরে দেশে মামলা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। আইনের ২৫ ও ২৯ ধারায় বেশিরভাগ মামলা করা হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৮ ধারার সঙ্গে উল্লিখিত দুটি ধারার সামঞ্জস্য রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া বেশিরভাগ মামলাই আদালতে খারিজ হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে মামলার কারণে হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তির আইনি প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে গত শনিবার একটি জাতীয় দৈনিক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কণ্ঠরোধের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বুদ্ধিবৃত্তিক নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। এ আইনে শুধু মামলাই হচ্ছে না, নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির জামিনও মিলছে না অনেক সময়। সরকারের সমালোচনা বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অভিযোগে যথেচ্ছ মামলা হচ্ছে। বেশিরভাগ মামলাই করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। মামলা হতে দেরি হলেও মামলায় গ্রেফতার করতে বা রিমান্ডে নিতে দেরি হয় না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আইনের ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য। একটি গোষ্ঠী আইনের এ সুযোগই গ্রহণ করছে। অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেলে বা এ নিয়ে যে কোন মাধ্যমে মত প্রকাশ করলেই মামলা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কোন পোস্টে লাইক দিলে বা কমেন্ট করলেও মামলার আসামি হতে হচ্ছে। আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেছেন, মামলা করার অধিকার সবারই আছে। আমরা জানতে চাইব, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের আগে জেল-জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার মানুষের আছে কিনা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের সমালোচনা করা বা স্বাধীন মত প্রকাশ করা নাগরিকদের অধিকারের পর্যায়ে পড়ে কিনা। আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইব যে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন কোন আইন বা ধারা থাকা উচিত কিনা যা নাগরিকদের মত প্রকাশে বিঘ্নে ঘটায় বা মত প্রকাশের জন্য খ—গ হস্ত হয়।

আমরা দেশে এমন কোন আইন চাই না যা স্বাধীন মত প্রকাশের সংবিধান বর্ণিত অধিকারকে হরণ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল বা সংস্কার করতে হবে। বিনা পরোয়ানায় পুলিশকে গ্রেফতারের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা রহিত করতে হবে। মামলা জামিনযোগ্য হতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এ বিষয়ে আমরা অতীতেও লিখেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। এ আইনের যারা অপব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।