মামলার জট ও দরিদ্রদের আইনি সহায়তা

বাবুল রবিদাস

মানুষ সামাজিক জীব। আদিকাল থেকে মানুষেরা অধিক নিরাপত্তার কারণে একত্রে বসবাস শুরু করে। একত্রে বসবাস করতে করতে মানুষ অজান্তেই দ্বন্দ্বকলহের মধ্যে জড়িয়ে পরে। দুই বা ততধিক ব্যক্তি বা পক্ষগণের মধ্যে কোন বিষয়ে বিরোধ বা মতভেদ দেখা দিলে বিবাদ-কলহের সৃষ্টি হয়। বিরোধের এ অবস্থাকে বিবাদ বা কলহ বলা হয়।

কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হলে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে নি¤œলিখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১। উত্তেজনা : উত্তেজনার সময় পক্ষদ্বয়ের মধ্যে ভালো-মন্দ বিচার করার কোন জ্ঞান থাকে না। এ সময় উভয়পক্ষেরই মেজাজ খিটখিটে হয়। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি। ২। অবিশ্বাস : বিবাদ কলহের সৃষ্টি হলে দু’পক্ষ পরস্পর পরস্পরের মধ্যে মারাত্মক অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। ৩। যোগাযোগ বন্ধ : বিরোধের ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা-বার্তা তথা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ৪। প্রতিশোধ স্পৃহা : দু’পক্ষের মধ্যে বৈরিতা মনোভাব গড়ে ওঠে ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মেতে ওঠে। ৫। আবেগপ্রবণতা : আবেগ মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। তেমনি কলহ-বিবাদ-এর ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে দূরে নিয়ে যায়। ফলে সংসারের প্রতি উদাসিন হয়ে পড়ে ৬। সময় অপচয় : বিরোধের কারণে বিভিন্ন জায়গায় উভয়পক্ষ যাওয়ায় সময় অপচয় করে। পরিবারের প্রতি সময় দিতে পারে না। ৭। অর্থনৈতিক ক্ষতি : উভয়ের আর্থিক ক্ষতির কারণ ঘটে।

উপরোক্ত অবস্থা থেকে উভয়পক্ষকে কীভাবে মুক্তি দেয়া যেতে পারে? কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হলে সর্ব প্রথম মনে রাখতে হবে উভয়পক্ষই সমাধান চায়।

ইতিপূর্বে আমাদের দেশের জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটির ওপরে। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে কলহ-বিবাদ বা সমস্যাও বৃদ্ধি হচ্ছে। সমস্যার সমাধান দ্রুত হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে গত ইং ২২/০৬/১৮ এবং ১৬/০১/২০১৯ তারিখের উভয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সূত্রে জানা যায়– দেশের সব আদালতে (সুপ্রিম কোর্টসহ) বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৮৯৮টি। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৬টি। ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৯টি মামলার মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৩ লাখ ৯০ হাজার ২০৯টি এবং অন্যান্য মামলার সংখ্যা ৮৬ হাজার ৯১৩টি। এই বিপুলসংখ্যক মামলার বিপরীতে দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে এখন বিচারক আছেন মাত্র ১ হাজার ৭০০ জন। আর সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি আছেন ১০২ জন।

মামলার ভারে জর্জরিত আদালতের কার্য তালিকায় প্রতিদিনই জমা হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। মামলার জট বা মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা দারুণভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রিটিশ কর্তৃক তৈরিকৃত আইনের পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর সময় লেগে যাচ্ছে। দীর্ঘ বৎসর পর অনেক মামলাতে যখন বিচার পাওয়া যায়, তখন ন্যায়বিচারের আর প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। অনেক সময় বাদী বা বিবাদী মারা যায়।

এমতাবস্থায়, আদালতগুলো থেকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দিকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে আদালতের ভাষায় বলা হয় Alternative dispute resolution সংক্ষেপে ADR. ভালো বাংলা ভাষা হলো– সালিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে আদালতের বাহিরে মীমাংসা করা। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যা পরিলক্ষিত হয় তা হলো– ১। সামাজিক সম্প্রীতি, সহৃদয়তা এবং সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে, ২। সামাজিক শ্রেণী বিভক্তির অবসান ঘটায়, ৩। ভবিষ্যৎ বিরোধ এড়ানো সম্ভব হয়, ৪। মানুষ হিসাবে সম-মর্যাদার অধিকার গ্রহণে সহায়তা করে, ৫। ব্যক্তির মন থেকে হিংসা দূর করে ব্যক্তিকে সহমর্মী করে তোলে, ৬। মুনষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা দূর করে, ৭। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়ন করে, ৮। সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে, ৯। দ্রুত সমাধানে পৌঁছানো যায়, ১০। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়, ১১। দীর্ঘ বৈরিতা এড়ানো সম্ভব হয়, ১২। ভবিষ্যৎ শান্তি স্থাপনের পর সুফল বয়ে আনে, ১৩। উভয়পক্ষরই জিত হয়।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে এত সুবিধা সত্ত্বেও কোন কোন সময় সুফল অর্জন পাওয়া যায় না। আদালতের সিদ্ধান্তকেই মানুষ বেশি প্রাধান্য দেয়। এমতাবস্থায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা আদালতর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে– বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত আইনই ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত। মামলা মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত আইনগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। তাই পুরাতন আইনগুলোকে সংশোধন করা আবশ্যক। এতে যদি কারও স্বার্থের আঘাত ঘটে তবুও রাষ্ট্রকে জনগণের দিকে তাকিয়ে আইন সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতেই হবে। যেমন– ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন বা অর্ডিন্যান্স অ্যাক্ট পাস করা হয়েছিল ও এখন পর্যন্ত বলবৎ আছে। আইনটি গ্রহণযোগ্য। ওইরূপ আরও কিছু আইন প্রবর্তন করা আবশ্যক।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ হচ্ছে ভারত। ভারতের আদালতের নজিরগুলোকেও আমলে গ্রহণ করা যেতে পারে। ভারতের দেওয়ানি মামলার অবিস্মরণীয় সংশোধন হয়েছে। সেখানে জমি জমার মামলাগুলোতে যে আরজি ও জবাব আদালতে দাখিল করা হয়। ঐগুলোই সাক্ষী হিসেবে গৃৃৃহীত হয়। বাহিরের সাক্ষী যদি কোর্টে আনা হয়, তাহলে তার বক্তব্য এফিডেভিট আকারে কোর্টে ফটোকপিসহ দাখিল করা হয়। ফটোকপি অপর পক্ষ পেয়ে তার ওপর জেরা সম্পন্ন করেন। উভয়পক্ষের দ্রুত সাক্ষী শেষ হয়। বহু জেরাও হয় না। আদালতের পার্শ্বে কম্পিউটারম্যান থাকে তিনি বিচারকের কথাগুলো দ্রুত লিখে ফেলেন ও প্রিন্ট করে আদালতের স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এভাবেই ভারতে দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাদীকে আরজির সব বিবরণ আদালতে মুখস্ত বলতে হয় এবং বিবাদীকে জবাবের সমস্ত অংশ মুখস্ত বলতে হয়। বাহিরের সাক্ষী আসলে তাকেও সমস্ত কথা আরজি বা জবাবের সমর্থনে বলতে হয় ও জেরা হয়। ফলে বহু সময় লাগে। এর ফলে মামলা মোকদ্দমা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পুরোনো মামলার জট বেঁধে যায়। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশের মানুষ দ্রুত মুক্তি চায়। মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্য সরকারে পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে পত্র-পত্রিকার খবরে পাওয়া যায়। যেমন- বিগত ইং ১১/০৭/১৮ তারিখের দৈনিক সংবাদ পত্রিকার খবরের শিরোনাম ছিল– ‘মামলা জট নিরসনে জাস্টিস অডিট সিস্টেম চালু করা হবে– আইনমন্ত্রী।’ আরও জানা যায়– বিগত ইং ০৭/০৭/১৮ তারিখের দৈনিক সমকাল পত্রিকার খবের জানা যায় যে ‘৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি খসড়া প্রস্তাব।’ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন এবং বিগত ইং ১৬/০৪/১৮ তারিখের ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকার শিারোনাম ছিল- ‘বিচার ব্যবস্থা জনকল্যাণমূলক নয়।’

এছাড়া বিগত ইং ৩০/০৭/১৮ এবং ২৮/০৪/২০১৯ তারিখের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ এবং ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার খবরে জানা যায়– বিচারক কম বলে দ্রুত বাড়ছে মামলার জট– প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন যে, বর্তমান দেশের আদালতসমূহে ৩৪ লাখ মামলা বিচারাধীন। এই পরিমাণ মামলার বিপরীতে বিচারক রয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬৪৭ জন। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তিন কোটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। তবে এর বিপরীতে বিচারক রয়েছেন ২৩ হাজার জন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ১০ লাখ লোকের বিপরীতে ১০ জন বিচারক রয়েছেন। কিন্তু আমেরিকায় প্রতি ১০ লাখে বিচারক রয়েছেন ১০৭ জন। কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন এবং ভারতে ১৮ জন। ভারতে একজন বিচারকের বিপরীতে ১ হাজার ৩৫০টি মামলা বিচারাধীন এবং ওই বিচারক বছরে ৫১৬টি মামলা নিষ্পত্তি করছেন। আর বাংলাদেশে একজন বিচারকের বিপরীতে ২ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন বিচারক বছরে নিষ্পত্তি করছেন ৭০০ মামলা। বিগত ইং ০৪/০৩/২০১৯ তারিখের ‘দৈনিক প্রথম আলো’র সম্পাদকীয় আলোচনাতে জানা যায়– যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের জরিপ মতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৩টি দেশের মধ্যে ১০২তম।

তবে আশার কথা এই যে, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ:। আদালত প্রাঙ্গণ বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি আইন ও বিধির সংস্কার হচ্ছে আস্তে-ধীরে হলেও সময় চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। কয়েকটি এনজিও তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য। এতে অল্পবিস্তর কাজও হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে উপকৃত হচ্ছে বিচারপ্রার্থী। এর পাশাপাশি হতদরিদ্র ও অসহায়দের আইনি সেবা দিতে ২০০০ সালে গঠিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। সাম্প্রতিক সংস্থাটি সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি গরিব সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষ করে সারা দেশের কারাগারগুলোতে যেসব অসহায় বন্দী, যাদের মাধ্যে নারী-পুরুষ উভয় আছেন, দীর্ঘ ৫/৭/১০ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাভোগ করছেন, তাদের জন্য দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মুক্তি অথবা জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসহায় কারাভোগী এবং তাদের পরিবার-পরিজন উপকৃত হয়েছেন। তবে এটি একটি নিয়মিত ও অব্যাহত প্রক্রিয়া, যা লিগ্যাল এইড কমিটিকে চলমান রাখতে হবে, যাতে করে গরিব-অসহায় মানুষদের সুবিচার সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। লিগ্যাল এইডের তথ্যানুযায়ী সরকারি খরচে গত ১০ বছরে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে [দৈনিক সমকাল, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ইং]। যেমন– জয়পুরহাট-এ লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে চুন্ডা হেমরম (৬৫), পিতাঃ মৃত- খান্ডে হেমরম, সাং ও পো. পুরানাপৈল, থানা ও জেলা : জয়পুরহাট শ্মশানের সম্পত্তি মামলার মাধ্যমে উদ্ধার করে তা জনসাধারণ এখন ব্যবহার করছে। তারা আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। বর্তমানে শ্মশানে বিনা বাধায় দাহ বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিগত ইং ০৭ সেপ্টেম্বর/২০২০ তারিখের দৈনিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শিরনাম ছিল, ‘বিচার বিলম্বিত হলে বিচার বিভাগের ওপর আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়– আইনমন্ত্রী।’ অপরদিকে ১৪ সেপ্টেম্বর/২০২০ তারিখের ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার শিরনাম ছিল– ‘ন্যায়বিচার পেলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে– আইনমন্ত্রী।’

উপরোক্ত পর্যালোচনায় আমরা বলতে পারি যে, মাননীয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, Justice delayed, Justice denied ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বিলম্ব মানেই ন্যায়বিচারকে প্রাপ্তিতে অস্বীকার। দ্রুত আইন সংশোধন, অধিক বিচারক নিয়োগ, এজলাস বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ করা অতীব জরুরি। এ অবস্থায় সরকার বিচার কার্যে সহযোগিতা করবেন, দ্রুত বিচার ব্যবস্থাপনায় নজর দিবেন, সমস্যার সমাধান করবেন বলে সবার প্রত্যাশা। জানা যায় যে, ভারতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী), দলিত ও বঞ্চিত লোকদের আইনি সহায়তার জন্য বেতনভুক্ত স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করেছে। তদ্রুপ আমাদেরও করা উচিত। তাহলে লিগ্যাল এইডের সুফল ও পূর্ণাঙ্গতা জনগণ ভোগ করবে বলে মনে করি।

লেখক : সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ

জয়পুরহাট জেলা শাখা,

আইনবিষয়ক সম্পাদক

বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)]

babulrabidash@gmail.com

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৩০ মহররম ১৪৪২, ০২ আশ্বিন ১৪২৭

মামলার জট ও দরিদ্রদের আইনি সহায়তা

বাবুল রবিদাস

মানুষ সামাজিক জীব। আদিকাল থেকে মানুষেরা অধিক নিরাপত্তার কারণে একত্রে বসবাস শুরু করে। একত্রে বসবাস করতে করতে মানুষ অজান্তেই দ্বন্দ্বকলহের মধ্যে জড়িয়ে পরে। দুই বা ততধিক ব্যক্তি বা পক্ষগণের মধ্যে কোন বিষয়ে বিরোধ বা মতভেদ দেখা দিলে বিবাদ-কলহের সৃষ্টি হয়। বিরোধের এ অবস্থাকে বিবাদ বা কলহ বলা হয়।

কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হলে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে নি¤œলিখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১। উত্তেজনা : উত্তেজনার সময় পক্ষদ্বয়ের মধ্যে ভালো-মন্দ বিচার করার কোন জ্ঞান থাকে না। এ সময় উভয়পক্ষেরই মেজাজ খিটখিটে হয়। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি। ২। অবিশ্বাস : বিবাদ কলহের সৃষ্টি হলে দু’পক্ষ পরস্পর পরস্পরের মধ্যে মারাত্মক অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। ৩। যোগাযোগ বন্ধ : বিরোধের ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা-বার্তা তথা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ৪। প্রতিশোধ স্পৃহা : দু’পক্ষের মধ্যে বৈরিতা মনোভাব গড়ে ওঠে ও প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মেতে ওঠে। ৫। আবেগপ্রবণতা : আবেগ মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। তেমনি কলহ-বিবাদ-এর ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে দূরে নিয়ে যায়। ফলে সংসারের প্রতি উদাসিন হয়ে পড়ে ৬। সময় অপচয় : বিরোধের কারণে বিভিন্ন জায়গায় উভয়পক্ষ যাওয়ায় সময় অপচয় করে। পরিবারের প্রতি সময় দিতে পারে না। ৭। অর্থনৈতিক ক্ষতি : উভয়ের আর্থিক ক্ষতির কারণ ঘটে।

উপরোক্ত অবস্থা থেকে উভয়পক্ষকে কীভাবে মুক্তি দেয়া যেতে পারে? কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হলে সর্ব প্রথম মনে রাখতে হবে উভয়পক্ষই সমাধান চায়।

ইতিপূর্বে আমাদের দেশের জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটির ওপরে। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে কলহ-বিবাদ বা সমস্যাও বৃদ্ধি হচ্ছে। সমস্যার সমাধান দ্রুত হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে গত ইং ২২/০৬/১৮ এবং ১৬/০১/২০১৯ তারিখের উভয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সূত্রে জানা যায়– দেশের সব আদালতে (সুপ্রিম কোর্টসহ) বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৮৯৮টি। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৬টি। ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৯টি মামলার মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৩ লাখ ৯০ হাজার ২০৯টি এবং অন্যান্য মামলার সংখ্যা ৮৬ হাজার ৯১৩টি। এই বিপুলসংখ্যক মামলার বিপরীতে দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে এখন বিচারক আছেন মাত্র ১ হাজার ৭০০ জন। আর সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি আছেন ১০২ জন।

মামলার ভারে জর্জরিত আদালতের কার্য তালিকায় প্রতিদিনই জমা হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। মামলার জট বা মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা দারুণভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রিটিশ কর্তৃক তৈরিকৃত আইনের পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর সময় লেগে যাচ্ছে। দীর্ঘ বৎসর পর অনেক মামলাতে যখন বিচার পাওয়া যায়, তখন ন্যায়বিচারের আর প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। অনেক সময় বাদী বা বিবাদী মারা যায়।

এমতাবস্থায়, আদালতগুলো থেকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দিকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে আদালতের ভাষায় বলা হয় Alternative dispute resolution সংক্ষেপে ADR. ভালো বাংলা ভাষা হলো– সালিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে আদালতের বাহিরে মীমাংসা করা। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যা পরিলক্ষিত হয় তা হলো– ১। সামাজিক সম্প্রীতি, সহৃদয়তা এবং সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে, ২। সামাজিক শ্রেণী বিভক্তির অবসান ঘটায়, ৩। ভবিষ্যৎ বিরোধ এড়ানো সম্ভব হয়, ৪। মানুষ হিসাবে সম-মর্যাদার অধিকার গ্রহণে সহায়তা করে, ৫। ব্যক্তির মন থেকে হিংসা দূর করে ব্যক্তিকে সহমর্মী করে তোলে, ৬। মুনষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা দূর করে, ৭। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়ন করে, ৮। সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে, ৯। দ্রুত সমাধানে পৌঁছানো যায়, ১০। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়, ১১। দীর্ঘ বৈরিতা এড়ানো সম্ভব হয়, ১২। ভবিষ্যৎ শান্তি স্থাপনের পর সুফল বয়ে আনে, ১৩। উভয়পক্ষরই জিত হয়।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে এত সুবিধা সত্ত্বেও কোন কোন সময় সুফল অর্জন পাওয়া যায় না। আদালতের সিদ্ধান্তকেই মানুষ বেশি প্রাধান্য দেয়। এমতাবস্থায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা আদালতর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে– বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত আইনই ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত। মামলা মোকদ্দমা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত আইনগুলো সংশোধন করা প্রয়োজন। মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। তাই পুরাতন আইনগুলোকে সংশোধন করা আবশ্যক। এতে যদি কারও স্বার্থের আঘাত ঘটে তবুও রাষ্ট্রকে জনগণের দিকে তাকিয়ে আইন সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতেই হবে। যেমন– ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন বা অর্ডিন্যান্স অ্যাক্ট পাস করা হয়েছিল ও এখন পর্যন্ত বলবৎ আছে। আইনটি গ্রহণযোগ্য। ওইরূপ আরও কিছু আইন প্রবর্তন করা আবশ্যক।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ হচ্ছে ভারত। ভারতের আদালতের নজিরগুলোকেও আমলে গ্রহণ করা যেতে পারে। ভারতের দেওয়ানি মামলার অবিস্মরণীয় সংশোধন হয়েছে। সেখানে জমি জমার মামলাগুলোতে যে আরজি ও জবাব আদালতে দাখিল করা হয়। ঐগুলোই সাক্ষী হিসেবে গৃৃৃহীত হয়। বাহিরের সাক্ষী যদি কোর্টে আনা হয়, তাহলে তার বক্তব্য এফিডেভিট আকারে কোর্টে ফটোকপিসহ দাখিল করা হয়। ফটোকপি অপর পক্ষ পেয়ে তার ওপর জেরা সম্পন্ন করেন। উভয়পক্ষের দ্রুত সাক্ষী শেষ হয়। বহু জেরাও হয় না। আদালতের পার্শ্বে কম্পিউটারম্যান থাকে তিনি বিচারকের কথাগুলো দ্রুত লিখে ফেলেন ও প্রিন্ট করে আদালতের স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এভাবেই ভারতে দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাদীকে আরজির সব বিবরণ আদালতে মুখস্ত বলতে হয় এবং বিবাদীকে জবাবের সমস্ত অংশ মুখস্ত বলতে হয়। বাহিরের সাক্ষী আসলে তাকেও সমস্ত কথা আরজি বা জবাবের সমর্থনে বলতে হয় ও জেরা হয়। ফলে বহু সময় লাগে। এর ফলে মামলা মোকদ্দমা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পুরোনো মামলার জট বেঁধে যায়। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশের মানুষ দ্রুত মুক্তি চায়। মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের জন্য সরকারে পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে মর্মে পত্র-পত্রিকার খবরে পাওয়া যায়। যেমন- বিগত ইং ১১/০৭/১৮ তারিখের দৈনিক সংবাদ পত্রিকার খবরের শিরোনাম ছিল– ‘মামলা জট নিরসনে জাস্টিস অডিট সিস্টেম চালু করা হবে– আইনমন্ত্রী।’ আরও জানা যায়– বিগত ইং ০৭/০৭/১৮ তারিখের দৈনিক সমকাল পত্রিকার খবের জানা যায় যে ‘৫ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি খসড়া প্রস্তাব।’ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন এবং বিগত ইং ১৬/০৪/১৮ তারিখের ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকার শিারোনাম ছিল- ‘বিচার ব্যবস্থা জনকল্যাণমূলক নয়।’

এছাড়া বিগত ইং ৩০/০৭/১৮ এবং ২৮/০৪/২০১৯ তারিখের ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ এবং ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার খবরে জানা যায়– বিচারক কম বলে দ্রুত বাড়ছে মামলার জট– প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন যে, বর্তমান দেশের আদালতসমূহে ৩৪ লাখ মামলা বিচারাধীন। এই পরিমাণ মামলার বিপরীতে বিচারক রয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬৪৭ জন। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তিন কোটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। তবে এর বিপরীতে বিচারক রয়েছেন ২৩ হাজার জন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ১০ লাখ লোকের বিপরীতে ১০ জন বিচারক রয়েছেন। কিন্তু আমেরিকায় প্রতি ১০ লাখে বিচারক রয়েছেন ১০৭ জন। কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন এবং ভারতে ১৮ জন। ভারতে একজন বিচারকের বিপরীতে ১ হাজার ৩৫০টি মামলা বিচারাধীন এবং ওই বিচারক বছরে ৫১৬টি মামলা নিষ্পত্তি করছেন। আর বাংলাদেশে একজন বিচারকের বিপরীতে ২ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের একজন বিচারক বছরে নিষ্পত্তি করছেন ৭০০ মামলা। বিগত ইং ০৪/০৩/২০১৯ তারিখের ‘দৈনিক প্রথম আলো’র সম্পাদকীয় আলোচনাতে জানা যায়– যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের জরিপ মতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৩টি দেশের মধ্যে ১০২তম।

তবে আশার কথা এই যে, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ:। আদালত প্রাঙ্গণ বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, সর্বোপরি আইন ও বিধির সংস্কার হচ্ছে আস্তে-ধীরে হলেও সময় চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। কয়েকটি এনজিও তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করছে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য। এতে অল্পবিস্তর কাজও হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। অপরাধীর শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাচ্ছে। যার ফলে উপকৃত হচ্ছে বিচারপ্রার্থী। এর পাশাপাশি হতদরিদ্র ও অসহায়দের আইনি সেবা দিতে ২০০০ সালে গঠিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। সাম্প্রতিক সংস্থাটি সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পাশাপাশি গরিব সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষ করে সারা দেশের কারাগারগুলোতে যেসব অসহায় বন্দী, যাদের মাধ্যে নারী-পুরুষ উভয় আছেন, দীর্ঘ ৫/৭/১০ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাভোগ করছেন, তাদের জন্য দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মুক্তি অথবা জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসহায় কারাভোগী এবং তাদের পরিবার-পরিজন উপকৃত হয়েছেন। তবে এটি একটি নিয়মিত ও অব্যাহত প্রক্রিয়া, যা লিগ্যাল এইড কমিটিকে চলমান রাখতে হবে, যাতে করে গরিব-অসহায় মানুষদের সুবিচার সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। লিগ্যাল এইডের তথ্যানুযায়ী সরকারি খরচে গত ১০ বছরে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে [দৈনিক সমকাল, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ইং]। যেমন– জয়পুরহাট-এ লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে চুন্ডা হেমরম (৬৫), পিতাঃ মৃত- খান্ডে হেমরম, সাং ও পো. পুরানাপৈল, থানা ও জেলা : জয়পুরহাট শ্মশানের সম্পত্তি মামলার মাধ্যমে উদ্ধার করে তা জনসাধারণ এখন ব্যবহার করছে। তারা আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের। বর্তমানে শ্মশানে বিনা বাধায় দাহ বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিগত ইং ০৭ সেপ্টেম্বর/২০২০ তারিখের দৈনিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শিরনাম ছিল, ‘বিচার বিলম্বিত হলে বিচার বিভাগের ওপর আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়– আইনমন্ত্রী।’ অপরদিকে ১৪ সেপ্টেম্বর/২০২০ তারিখের ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ পত্রিকার শিরনাম ছিল– ‘ন্যায়বিচার পেলে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে– আইনমন্ত্রী।’

উপরোক্ত পর্যালোচনায় আমরা বলতে পারি যে, মাননীয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, Justice delayed, Justice denied ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বিলম্ব মানেই ন্যায়বিচারকে প্রাপ্তিতে অস্বীকার। দ্রুত আইন সংশোধন, অধিক বিচারক নিয়োগ, এজলাস বৃদ্ধি, জনবল নিয়োগ করা অতীব জরুরি। এ অবস্থায় সরকার বিচার কার্যে সহযোগিতা করবেন, দ্রুত বিচার ব্যবস্থাপনায় নজর দিবেন, সমস্যার সমাধান করবেন বলে সবার প্রত্যাশা। জানা যায় যে, ভারতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী), দলিত ও বঞ্চিত লোকদের আইনি সহায়তার জন্য বেতনভুক্ত স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করেছে। তদ্রুপ আমাদেরও করা উচিত। তাহলে লিগ্যাল এইডের সুফল ও পূর্ণাঙ্গতা জনগণ ভোগ করবে বলে মনে করি।

লেখক : সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ

জয়পুরহাট জেলা শাখা,

আইনবিষয়ক সম্পাদক

বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)]

babulrabidash@gmail.com