১৩ কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বিস্ফোরক পরিদফতর

জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, প্রতিষ্ঠা করা হবে বিশ্বমানের ল্যাব : নসরুল হামিদ

বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা থেকে জাতীয় সম্পদ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘বিস্ফোরক পরিদফতর’ চলছে মাত্র ১৩ জন কর্মকর্তা দিয়ে। অথচ তাদের কর্মপরিধি দেশজুড়ে। জনসাধারণের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য- যেমনÑএলপি গ্যাস সিলিন্ডার ( দেশে বর্তমানে ২ কোটি ২০ লাখ সিলিন্ডার), এয়ারকন্ডিশন (এসি) ও রেফ্রিজারেটরের (ফ্রিজ) কমপ্রেসারের অনুমোদন এই পরিদফতর থেকেই দেয়া হয়। আবার সবধরনের বিস্ফোরক আমদানি ও মজুদ, সিলিন্ডার আমদানি, গ্যাস ভরা, মজুদ, উচ্চ চাপ গ্যাস লাইনের গ্যাস সঞ্চালনের অনুমোদন, পেট্রোল স্থাপনা, ডিপো, জ্বালানি পরিবহন, পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি মজুদ, সিএনজি ও অটোগ্যাস স্টেশনের অনুমোদন ও পরিদর্শনের দায়িত্বও এই প্রতিষ্ঠানের। দেশজুড়ে এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলে অনিয়ম ও দুর্নীতি যাচাই এবং তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার মতো সক্ষমতা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনস্থ এই প্রতিষ্ঠানটির একেবারেই নেই।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ বিষয়ে গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, বিস্ফোরক পরিদফতরের জনবল কাঠামো বাড়ানোর উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এর অফিসগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। এছাড়া, বিস্ফোরক পরিদফতরের জন্য একটি বিশ্বমানের ল্যাবরেটরিও প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের জন্য আগারগাঁওয়ে ১০ কাঠার একটি প্লটও দেয়া হয়েছে। এই পরিদফতর যেসব আইন ও বিধিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যপরিচালনা করে, সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে আরও যুগোপযোগী করা হবে।

বিস্ফোরক পরিদফতর সূত্র জানায়, এর কাজের মধ্যে আরও রয়েছে সিলিন্ডারে গ্যাস (এলপিজি, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয়া) ভর্তির প্ল্যান্ট অনুমোদন ও পরিদর্শন, সিএনজি কিট ও যন্ত্রপাতি আমদানি, গ্যাসাধার আমদানি, পেট্রোল রিফাইনারি প্ল্যান্টের অনুমোদন, সিলিন্ডার নির্মাণ কারখানা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমোদন ও পরিদর্শন। এছাড়া, পটাশিয়াম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত প্রজ্জ্বলনীয় তরল আমদানি, ক্যালসিয়াম কার্বাইড আমদানি, পটাশিয়াম ক্লোরেট, রেড ফসফরাস, সালফার, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রোসেলুলোজ-সহ শিল্প কারাখানায় ব্যবহার্য বিভিন্ন মৌলিক ও যৌগিক রসায়নিক পদার্থ আমদানির অনুমোদন দেয় বিস্ফোরক পরিদফতর। সাগরে অপেক্ষমাণ পেট্রোলিয়ামবোঝাই জাহাজ বন্দরে ভিড়তেও এই পরিদফতরের লাইসেন্স লাগে। আবার খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে বিস্ফোরক ব্যবহারকারী শুটারদের প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানও এই পরিদফতরের দায়িত্ব। আবার দেশের যেকোন স্থানে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার কারিগরি তদন্ত করাও এই পরিদফতরের কাজ।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ হাজার লাইসেন্স প্রদান করেছে। এরমধ্যে এলজি গ্যাস মজুদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৪শ’র মতো। এই লাইসেন্স ছাড়া এলপি গ্যাসের ব্যবসা করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। তবে দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে গড়ে ১০ জন করে এলপি গ্যাস বিক্রেতা থাকলেও প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী লাইসেন্স ছাড়াই এই বিস্ফোরকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের লাইসেন্সের অধীনে আনা, পরিদফতরের অধীন সব লাইসেন্স নবায়ন, স্থাপনা পুনঃপরিদর্শন, অনুমোদন সবই বিস্ফোরক পরিদফতরের কাজ। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পরিদফতরের অনুমোদিত জনবল কাঠামো ১০৪ জন হলেও বর্তমানে এখানে মোট কর্মরত আছেন ৫০ জন।

বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমতি ছাড়া অবৈধ ও বিপজ্জনকভাবে সিএনজি স্টেশন নির্মাণ, কাভার্ডভ্যানে গুচ্ছ সিলিন্ডার পরিবহন ও গ্যাস বিক্রির অপরাধে সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিকে ৬০ হাজার টাকা অর্থদ- এবং স্টেশনের সব মালামাল জব্দ করে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ নেই এমন এলাকাগুলোতে কাভার্ডভ্যানের ভিতরে রাশি রাশি সিলিন্ডার মজুদ করে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস ভর্তি করা হচ্ছে। পরে এসব ভ্যান বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে জ্বালানি সরবরাহ করছে। এ জ্বালানি দিয়ে রান্না থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ চাহিদাও মেটানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এভাবে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে রেকটিকুলেটেড পদ্ধতিতে এলপিজি সিলিন্ডার মজুদের লাইসেন্স দেয়া হলেও তা নিচ্ছে না বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।

পরিদফতরের একটি সূত্র জানায়, দেশে এসি, ফ্রিজ উৎপাদন ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের কমপ্রেসারের অনুমোদন এখান থেকে নেয়। তবে ওই কমপ্রেসারে কি ধরনে০র গ্যাস ভরা হচ্ছে তা যাচাই করার মতো সময়, সুযোগ ও লোকবল কোনটাই বিস্ফোরক পরিদফতরের নেই। এই সুযোগে কমপ্রেসারে প্রজ্জ্বলনীয় (দাহ্য) গ্যাস ভরতে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান। কারণ দাহ্য গ্যাস দামে অনেক কম, তবে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশনায় বিস্ফোরক পরিদফতর আধুনিক ও শক্তিশালী করতে এর জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি কমিটি দ্রুততম সময়ে নতুন অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন এবং পরিদফতর কর্তৃক প্রশাসিত আইন ও বিধিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার কাজ করছে। সূত্র মতে, নতুন কাঠামোতে ১ হাজার ১১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ রাখা হতে পারে।

সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাবটি এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই নতুন জনবল কাঠামো নিয়ে পুরোদমে কাজে নামতে পারবে এই পরিদফতর।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পাঁচ-ছয় রুমের একটা টিন-শেড ভবনে বর্তমানে চলছে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের কাজ। এখানেই বসেন প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক এবং তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই প্লটে ভবন নির্মাণের মাধ্যমে দ্রুতই পরিদফতর সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

পরিদফতরের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সংবাদকে বলেন, এলপিজি মজুদ এবং বটলিং প্ল্যান্ট, বাল্কে এলপিজি আমদানি, এলপিজি স্থাপনা, প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন, অটোগ্যাস স্টেশন, সিএনজি স্টেশন, পেট্রোল পাম্প, এলপিজি মজুদকরণ ইত্যাদি-এর লাইসেন্স প্রদান, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যে ব্যবহার্য বিস্ফোরক, শিল্প কারখানায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার্য বিপজ্জনক উপাদান, প্রেট্রোলিয়াম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি অতি জরুরিভিত্তিতে আমদানিকরণে বিস্ফোরক পরিদফতর লাইসেন্স, পারমিট এবং অনাপত্তিপত্র প্রদানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সেবা বিস্ফোরক পরিদফতর প্রদান করে থাকে। অতি জরুরিভাবে ব্যবহার্য উক্তরূপ বিপজ্জনক পদার্থসমূহ আমদানি ও ব্যবহারে যাতে কোনরূপ হয়রানির সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য এ অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে কাজ করার জন্য আমাদের পরিদফতরের অনুমোদিত জনবল ১০৪ জন। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণীর পদ ৩১টি, দ্বিতীয় শ্রেণীর ২টি, তৃতীয় শ্রেণীর ৩১টি, চতুর্থ শ্রেণীর ৪৮টি পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫০ জন। এ দিয়েই চলছে পরিদফতর। তিনি বলেন, সারাদেশে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এর দফতর প্রয়োজন। বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা থেকে জাতীয় সম্পদ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে সে হিসেবে অন্তত ৫ হাজার জনবল আমাদের প্রয়োজন।

আরও খবর
ওয়াসার এমডি পদে বিতর্কিতদের পুনর্নিয়োগ না দেয়ার আহ্বান ক্যাবের
ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ
শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে তাই প্রস্তুতি নিন : প্রধানমন্ত্রী
করোনায় একদিনে আরও ২৬ মৃত্যু শনাক্ত ১৫৪৪
করোনা সন্দেহে কেউ এগিয়ে এলো না, রাস্তায় মৃত্যু হলো মুয়াজ্জিনের
ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলার দায় স্বীকার রবিউলের
সাবেক ওসি প্রদীপ ও স্ত্রীর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ
এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে ২০ হাজার মে. টন পিয়াজ
ভারত থেকে আসা অধিকাংশ পিয়াজই পচে গেছে
সাহেদের অস্ত্র মামলার রায় ২৮ সেপ্টেম্বর
অঢেল সম্পদের মালিক স্বাস্থ্যের ড্রাইভার গ্রেফতার

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০১ মহররম ১৪৪২, ০৩ আশ্বিন ১৪২৭

সারাদেশে

১৩ কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বিস্ফোরক পরিদফতর

জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, প্রতিষ্ঠা করা হবে বিশ্বমানের ল্যাব : নসরুল হামিদ

ফয়েজ আহমেদ তুষার |

বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা থেকে জাতীয় সম্পদ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘বিস্ফোরক পরিদফতর’ চলছে মাত্র ১৩ জন কর্মকর্তা দিয়ে। অথচ তাদের কর্মপরিধি দেশজুড়ে। জনসাধারণের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য- যেমনÑএলপি গ্যাস সিলিন্ডার ( দেশে বর্তমানে ২ কোটি ২০ লাখ সিলিন্ডার), এয়ারকন্ডিশন (এসি) ও রেফ্রিজারেটরের (ফ্রিজ) কমপ্রেসারের অনুমোদন এই পরিদফতর থেকেই দেয়া হয়। আবার সবধরনের বিস্ফোরক আমদানি ও মজুদ, সিলিন্ডার আমদানি, গ্যাস ভরা, মজুদ, উচ্চ চাপ গ্যাস লাইনের গ্যাস সঞ্চালনের অনুমোদন, পেট্রোল স্থাপনা, ডিপো, জ্বালানি পরিবহন, পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি মজুদ, সিএনজি ও অটোগ্যাস স্টেশনের অনুমোদন ও পরিদর্শনের দায়িত্বও এই প্রতিষ্ঠানের। দেশজুড়ে এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সামলে অনিয়ম ও দুর্নীতি যাচাই এবং তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার মতো সক্ষমতা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনস্থ এই প্রতিষ্ঠানটির একেবারেই নেই।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ বিষয়ে গতকাল রাতে সংবাদকে বলেন, বিস্ফোরক পরিদফতরের জনবল কাঠামো বাড়ানোর উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এর অফিসগুলোকে শক্তিশালী করা হবে। এছাড়া, বিস্ফোরক পরিদফতরের জন্য একটি বিশ্বমানের ল্যাবরেটরিও প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের জন্য আগারগাঁওয়ে ১০ কাঠার একটি প্লটও দেয়া হয়েছে। এই পরিদফতর যেসব আইন ও বিধিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যপরিচালনা করে, সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে আরও যুগোপযোগী করা হবে।

বিস্ফোরক পরিদফতর সূত্র জানায়, এর কাজের মধ্যে আরও রয়েছে সিলিন্ডারে গ্যাস (এলপিজি, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয়া) ভর্তির প্ল্যান্ট অনুমোদন ও পরিদর্শন, সিএনজি কিট ও যন্ত্রপাতি আমদানি, গ্যাসাধার আমদানি, পেট্রোল রিফাইনারি প্ল্যান্টের অনুমোদন, সিলিন্ডার নির্মাণ কারখানা ও পরীক্ষা কেন্দ্রের অনুমোদন ও পরিদর্শন। এছাড়া, পটাশিয়াম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত প্রজ্জ্বলনীয় তরল আমদানি, ক্যালসিয়াম কার্বাইড আমদানি, পটাশিয়াম ক্লোরেট, রেড ফসফরাস, সালফার, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রোসেলুলোজ-সহ শিল্প কারাখানায় ব্যবহার্য বিভিন্ন মৌলিক ও যৌগিক রসায়নিক পদার্থ আমদানির অনুমোদন দেয় বিস্ফোরক পরিদফতর। সাগরে অপেক্ষমাণ পেট্রোলিয়ামবোঝাই জাহাজ বন্দরে ভিড়তেও এই পরিদফতরের লাইসেন্স লাগে। আবার খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে বিস্ফোরক ব্যবহারকারী শুটারদের প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানও এই পরিদফতরের দায়িত্ব। আবার দেশের যেকোন স্থানে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার কারিগরি তদন্ত করাও এই পরিদফতরের কাজ।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ হাজার লাইসেন্স প্রদান করেছে। এরমধ্যে এলজি গ্যাস মজুদের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৪শ’র মতো। এই লাইসেন্স ছাড়া এলপি গ্যাসের ব্যবসা করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। তবে দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে গড়ে ১০ জন করে এলপি গ্যাস বিক্রেতা থাকলেও প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী লাইসেন্স ছাড়াই এই বিস্ফোরকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের লাইসেন্সের অধীনে আনা, পরিদফতরের অধীন সব লাইসেন্স নবায়ন, স্থাপনা পুনঃপরিদর্শন, অনুমোদন সবই বিস্ফোরক পরিদফতরের কাজ। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পরিদফতরের অনুমোদিত জনবল কাঠামো ১০৪ জন হলেও বর্তমানে এখানে মোট কর্মরত আছেন ৫০ জন।

বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমতি ছাড়া অবৈধ ও বিপজ্জনকভাবে সিএনজি স্টেশন নির্মাণ, কাভার্ডভ্যানে গুচ্ছ সিলিন্ডার পরিবহন ও গ্যাস বিক্রির অপরাধে সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিকে ৬০ হাজার টাকা অর্থদ- এবং স্টেশনের সব মালামাল জব্দ করে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ নেই এমন এলাকাগুলোতে কাভার্ডভ্যানের ভিতরে রাশি রাশি সিলিন্ডার মজুদ করে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস ভর্তি করা হচ্ছে। পরে এসব ভ্যান বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে জ্বালানি সরবরাহ করছে। এ জ্বালানি দিয়ে রান্না থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ চাহিদাও মেটানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এভাবে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে রেকটিকুলেটেড পদ্ধতিতে এলপিজি সিলিন্ডার মজুদের লাইসেন্স দেয়া হলেও তা নিচ্ছে না বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।

পরিদফতরের একটি সূত্র জানায়, দেশে এসি, ফ্রিজ উৎপাদন ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের কমপ্রেসারের অনুমোদন এখান থেকে নেয়। তবে ওই কমপ্রেসারে কি ধরনে০র গ্যাস ভরা হচ্ছে তা যাচাই করার মতো সময়, সুযোগ ও লোকবল কোনটাই বিস্ফোরক পরিদফতরের নেই। এই সুযোগে কমপ্রেসারে প্রজ্জ্বলনীয় (দাহ্য) গ্যাস ভরতে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান। কারণ দাহ্য গ্যাস দামে অনেক কম, তবে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশনায় বিস্ফোরক পরিদফতর আধুনিক ও শক্তিশালী করতে এর জনবল কাঠামো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি কমিটি দ্রুততম সময়ে নতুন অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন এবং পরিদফতর কর্তৃক প্রশাসিত আইন ও বিধিমালা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার কাজ করছে। সূত্র মতে, নতুন কাঠামোতে ১ হাজার ১১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ রাখা হতে পারে।

সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাবটি এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই নতুন জনবল কাঠামো নিয়ে পুরোদমে কাজে নামতে পারবে এই পরিদফতর।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পাঁচ-ছয় রুমের একটা টিন-শেড ভবনে বর্তমানে চলছে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের কাজ। এখানেই বসেন প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক এবং তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই প্লটে ভবন নির্মাণের মাধ্যমে দ্রুতই পরিদফতর সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

পরিদফতরের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সংবাদকে বলেন, এলপিজি মজুদ এবং বটলিং প্ল্যান্ট, বাল্কে এলপিজি আমদানি, এলপিজি স্থাপনা, প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন, অটোগ্যাস স্টেশন, সিএনজি স্টেশন, পেট্রোল পাম্প, এলপিজি মজুদকরণ ইত্যাদি-এর লাইসেন্স প্রদান, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কার্যে ব্যবহার্য বিস্ফোরক, শিল্প কারখানায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার্য বিপজ্জনক উপাদান, প্রেট্রোলিয়াম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি অতি জরুরিভিত্তিতে আমদানিকরণে বিস্ফোরক পরিদফতর লাইসেন্স, পারমিট এবং অনাপত্তিপত্র প্রদানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সেবা বিস্ফোরক পরিদফতর প্রদান করে থাকে। অতি জরুরিভাবে ব্যবহার্য উক্তরূপ বিপজ্জনক পদার্থসমূহ আমদানি ও ব্যবহারে যাতে কোনরূপ হয়রানির সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য এ অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে কাজ করার জন্য আমাদের পরিদফতরের অনুমোদিত জনবল ১০৪ জন। এরমধ্যে প্রথম শ্রেণীর পদ ৩১টি, দ্বিতীয় শ্রেণীর ২টি, তৃতীয় শ্রেণীর ৩১টি, চতুর্থ শ্রেণীর ৪৮টি পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫০ জন। এ দিয়েই চলছে পরিদফতর। তিনি বলেন, সারাদেশে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে এর দফতর প্রয়োজন। বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা থেকে জাতীয় সম্পদ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে সে হিসেবে অন্তত ৫ হাজার জনবল আমাদের প্রয়োজন।