সাবেক ওসি প্রদীপ ও স্ত্রীর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (সাময়িক বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় আসামি চুমকি কারণ ও প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছেন বাদী। দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত দুদকের মামলায় প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।

গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন। এ মামলায় ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জমা দেয়া হয়।

জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের একটি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এই ঘটনার পর গত ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের অভিযোগ উল্লিখিত অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ তাদের মালিকানায় আছে যা তারা সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন।

ওই মামলায় দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপের উপস্থিতিতে শুনানি করে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। এরপর গতকাল দুদক ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করে। একইদিন প্রদীপের পক্ষে জামিন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও কারাগারে তার সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাতের বিষয়ে পৃথক তিনটি আবেদনের ওপর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি হয়েছে।

দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক বলেন, আদালতে প্রদীপের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং কারাগারে তার আইনজীবীদের সাক্ষাতের বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সম্পদ ক্রোকের একটি আবেদন জমা হয়েছে। আদালত সেটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। আবেদনে প্রদীপ ও চুমকির হেফাজতে থাকা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার স্থাবর সম্পদের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে আছে রেজিস্ট্রেশন খরচসহ ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো মাইক্রোবাস, ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো প্রাইভেট কার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখায় রক্ষিত ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা।

একই আবেদনে তিন কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ আছে। এরমধ্যে আছে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা একটি বাড়ি। এর জমির দাম ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ভবনের দাম এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এরপর আছে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমির ওপর সাত লাখ টাকা দামের সেমিপাকা ঘর। কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকায় একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ও উল্লেখ আছে আবেদনে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রেরসমূহ ক্ষতির কারণ আছে। এজন্য এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণপূর্বক দুদকের একজন রিসিভার নিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য এসব সম্পদ অবরুদ্ধকরণের জন্য চট্টগ্রাম সদরের সাব রেজিস্ট্রার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের বিআরটিএ’র উপ-পরিচালকের প্রতি আদেশ জারি করার আবেদন করেছে দুদক।

২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ থেকে চুমকি কারণের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নোটিস পাঠানো হয়। ১২ মে তিনি সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। এতে তিনি ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা স্থাবর এবং ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৪ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে চুমকি কারণের নামে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার স্থাবর এবং ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদের হিসাব উঠে আসে। এ হিসেবে এজাহারে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

প্রদীপ ও ?চুমকির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সম্পদ বিবরণীতে চুমকি কারণ তার বাবার কাছ থেকে দান হিসেবে পাওয়া জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ির তথ্য দেন। দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, চুমকির কারণের বাবা সাবরেজিস্ট্রি দলিলমূলে তাকে বাড়ি দিলে তার অপর দুই ভাই ও এক বোনকে কোন বাড়ি দেননি। অথচ দুই ছেলের নামে উল্লেখযোগ্য কোন সম্পদও নেই। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি প্রদীপ তার ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ গোপন করার অসৎ উদ্দেশে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে বাড়ি নির্মাণ করে পরবর্তীতে তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করিয়ে নিয়ে ভোগদখল করছেন।

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০১ মহররম ১৪৪২, ০৩ আশ্বিন ১৪২৭

সাবেক ওসি প্রদীপ ও স্ত্রীর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (সাময়িক বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় আসামি চুমকি কারণ ও প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছেন বাদী। দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত দুদকের মামলায় প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।

গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন। এ মামলায় ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জমা দেয়া হয়।

জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের একটি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে র‌্যাব। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এই ঘটনার পর গত ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের অভিযোগ উল্লিখিত অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আরও ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ তাদের মালিকানায় আছে যা তারা সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন।

ওই মামলায় দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রদীপের উপস্থিতিতে শুনানি করে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। এরপর গতকাল দুদক ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করে। একইদিন প্রদীপের পক্ষে জামিন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও কারাগারে তার সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাতের বিষয়ে পৃথক তিনটি আবেদনের ওপর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি হয়েছে।

দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক বলেন, আদালতে প্রদীপের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং কারাগারে তার আইনজীবীদের সাক্ষাতের বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সম্পদ ক্রোকের একটি আবেদন জমা হয়েছে। আদালত সেটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। আবেদনে প্রদীপ ও চুমকির হেফাজতে থাকা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার স্থাবর সম্পদের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে আছে রেজিস্ট্রেশন খরচসহ ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো মাইক্রোবাস, ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের একটি পুরনো প্রাইভেট কার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখায় রক্ষিত ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা।

একই আবেদনে তিন কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ আছে। এরমধ্যে আছে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ছয়তলা একটি বাড়ি। এর জমির দাম ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ভবনের দাম এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এরপর আছে নগরীর পাঁচলাইশ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমির ওপর সাত লাখ টাকা দামের সেমিপাকা ঘর। কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকায় একটি ফ্ল্যাটের বিষয়ও উল্লেখ আছে আবেদনে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রেরসমূহ ক্ষতির কারণ আছে। এজন্য এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণপূর্বক দুদকের একজন রিসিভার নিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য এসব সম্পদ অবরুদ্ধকরণের জন্য চট্টগ্রাম সদরের সাব রেজিস্ট্রার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের বিআরটিএ’র উপ-পরিচালকের প্রতি আদেশ জারি করার আবেদন করেছে দুদক।

২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ থেকে চুমকি কারণের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার নোটিস পাঠানো হয়। ১২ মে তিনি সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। এতে তিনি ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা স্থাবর এবং ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৪ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে চুমকি কারণের নামে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার স্থাবর এবং ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদের হিসাব উঠে আসে। এ হিসেবে এজাহারে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

প্রদীপ ও ?চুমকির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সম্পদ বিবরণীতে চুমকি কারণ তার বাবার কাছ থেকে দান হিসেবে পাওয়া জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ির তথ্য দেন। দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, চুমকির কারণের বাবা সাবরেজিস্ট্রি দলিলমূলে তাকে বাড়ি দিলে তার অপর দুই ভাই ও এক বোনকে কোন বাড়ি দেননি। অথচ দুই ছেলের নামে উল্লেখযোগ্য কোন সম্পদও নেই। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি প্রদীপ তার ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ গোপন করার অসৎ উদ্দেশে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে বাড়ি নির্মাণ করে পরবর্তীতে তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করিয়ে নিয়ে ভোগদখল করছেন।