দুর্নীতি জাল-জালিয়াতিতে

অঢেল সম্পদের মালিক স্বাস্থ্যের ড্রাইভার গ্রেফতার

রয়েছে তার দুটি ৭ তলা ও ১০ তলা ভবন, ডেইরি ফার্ম, জাল নোটের ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ ধনকুবের আবজলের পর এইবার ধরা পড়ল আরেক ধনকুবের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের ড্রাইভার। তার বিলাস বহুল বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের তথ্য পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতবাক। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা এই ড্রাইভার। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রাজধানীতে দুইটি সাততলা বাড়ি ও একটি ১০ তলা বিলাসবহুল ভবনসহ বহু সম্পদের মালিক। এ ড্রাইভার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুল শাখায় কর্মরত। অবশেষে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান চালিয়ে তার দুর্নীতি চিহ্নিত করে। এরপর গত শনিবার গভীররাতে তাকে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত থাকলেও সে অবৈধ জাল নোটের ব্যবসা করে আসছে। তার কাছে অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল পাওয়া গেছে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩) এর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকা ব্যবসা, চাঁদাবজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সে তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছে বলে জানা যায়।

গোপন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে যে, অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ এবং তুরাগ থানা এলাকার ত্রাস আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩) বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও অবৈধ অস্ত্রসহ রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ বামনের টেক বাসা নং-৪২, হাজী কমপ্লেক্সের ৭ম তলা ভবনের ৩য় তলায় অবস্থান করছে। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ১ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি জাল নোট, ১টি ল্যাপটপ ও ১টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সে পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার এবং একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী। সে ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করে। বর্তমানে সে প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত আছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন পূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩) এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একটি আনুমানিক হিসাব জানা যায়। তার স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি ৭তলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন আছে। দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়।

এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ড্রাইভার মালেক স্বাস্থ্য শিক্ষা শাখার ড্রাইভার। সেখান থেকে তার সম্পর্কে জানা গেলে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ আবজালসহ অনেকের অনিয়ম নিয়ে এখনও তদন্ত হচ্ছে। তারা রাতারাতি কিভাবে এত সম্পদের মালিক হচ্ছে তা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

এনিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ধনকুব আবজাল ও ঠিকাদারসহ অনেকেই সিন্ডিকেট করে রাতারাতি বহু টাকার মালিক হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনও অনেকের অভিযোগ তদন্ত করছেন।

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০১ মহররম ১৪৪২, ০৩ আশ্বিন ১৪২৭

দুর্নীতি জাল-জালিয়াতিতে

অঢেল সম্পদের মালিক স্বাস্থ্যের ড্রাইভার গ্রেফতার

রয়েছে তার দুটি ৭ তলা ও ১০ তলা ভবন, ডেইরি ফার্ম, জাল নোটের ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র

বাকিবিল্লাহ |

image

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ ধনকুবের আবজলের পর এইবার ধরা পড়ল আরেক ধনকুবের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের ড্রাইভার। তার বিলাস বহুল বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের তথ্য পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতবাক। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা এই ড্রাইভার। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রাজধানীতে দুইটি সাততলা বাড়ি ও একটি ১০ তলা বিলাসবহুল ভবনসহ বহু সম্পদের মালিক। এ ড্রাইভার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুল শাখায় কর্মরত। অবশেষে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান চালিয়ে তার দুর্নীতি চিহ্নিত করে। এরপর গত শনিবার গভীররাতে তাকে রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত থাকলেও সে অবৈধ জাল নোটের ব্যবসা করে আসছে। তার কাছে অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল পাওয়া গেছে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩) এর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকা ব্যবসা, চাঁদাবজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সে তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তার ভয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মনে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং জাল টাকার ব্যবসা করে আসছে বলে জানা যায়।

গোপন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে যে, অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ এবং তুরাগ থানা এলাকার ত্রাস আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩) বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও অবৈধ অস্ত্রসহ রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ বামনের টেক বাসা নং-৪২, হাজী কমপ্লেক্সের ৭ম তলা ভবনের ৩য় তলায় অবস্থান করছে। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ১ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি জাল নোট, ১টি ল্যাপটপ ও ১টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সে পেশায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার এবং একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী। সে ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করে। বর্তমানে সে প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরে কর্মরত আছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল নোট ব্যবসাসহ অস্ত্রের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন পূর্বক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক (৬৩) এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একটি আনুমানিক হিসাব জানা যায়। তার স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি ৭তলা বিলাসবহুল ভবন আছে। ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন আছে। দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়।

এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ড্রাইভার মালেক স্বাস্থ্য শিক্ষা শাখার ড্রাইভার। সেখান থেকে তার সম্পর্কে জানা গেলে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ আবজালসহ অনেকের অনিয়ম নিয়ে এখনও তদন্ত হচ্ছে। তারা রাতারাতি কিভাবে এত সম্পদের মালিক হচ্ছে তা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

এনিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ধনকুব আবজাল ও ঠিকাদারসহ অনেকেই সিন্ডিকেট করে রাতারাতি বহু টাকার মালিক হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখনও অনেকের অভিযোগ তদন্ত করছেন।