দ্বিতীয় ঢেউ রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

জোরদার হচ্ছে মোবাইল কোর্ট প্রধানমন্ত্রীর দুই নির্দেশনা

সরকার মাস্ক পরাসহ নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে বাধ্য করতে কঠোর হচ্ছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে-এমন আশঙ্কায় মাস্ক পরা ‘বাধ্যতামূলক’ (নির্দেশনা) কার্যকর করতে মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে আকস্মিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা বসছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ রোধে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মাস্ক না পরা ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানান। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী তার গণভবন কার্যালয় থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বৈঠকে যুক্ত হন।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ এলে মাঠ পর্যায়ে সেটাকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেটার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। পরে বসে বিস্তারিত কর্মসূচি নেব। অনেক দেশেই বিশেষত শীতপ্রধান দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরের শেষ থেকে সেকেন্ড ওয়েভ আসে কিনা সেই প্রিপারেশন রাখতে হবে। ম্যাসিভ যেন প্রিপারেশন থাকে।’

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের পর ক্রমশ বাড়তে থাকে সংক্রমণ। প্রথমদিকে নাগরকিদের বড় অংশের মধ্যেই সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুরসরণের তৎপরতা দেখা গেছে। পর্যায়ক্রমে মাস্ক না পরাসহ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার তৎপরতা বেড়ে যায়।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরলে দু’তিন মাসেই তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ব্যাপকহারে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। এ কারণে বাংলাদেশেও পুনরায় ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশে গতকাল পর্যন্ত তিন লাখ ৫০ হাজার ৬২১ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৪ হাজার ৯৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় দেশে মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় দেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

আগের নির্দেশনা খুব একটা কাজে আসেনি

গত ১০ জুলাই মন্ত্রিসভা করোনা মহামারী মোকাবিলায় বাসার বাইরে সবার জন্য মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবোইল কোর্ট) পরিচালনা করার নির্দেশ দেয়।

ওইদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় জেনারেল আলোচনা হয়েছে যে মানুষকে অন্তত সচেতন থাকতে হবে। এরমধ্যে দেখা গেছে যে, অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতাটা একটু কমে গেছে, সেটা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।’

সংক্রমণ এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে সচিব কমিটিতে আলাপ-আলোচনা করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকেও বলে দিয়েছি যে, এনফোর্সমেন্টে যেতে হবে। একেবারে ম্যাসিভ কোন ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট করে যদি পানিসমেন্ট দেয়া হয়, এই জিনিসটা প্রচার করার জন্য যে আজকে মাস্ক না পরার জন্য বা সেফটি মেজার্স না নেয়ার জন্য এতোগুলো লোককে বাসে, বাজারে বা লঞ্চে পানিসমেন্ট দেয়া হয়েছে।’

মন্ত্রিসভারও ওই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন জেলায় মানুষের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাতে বাধ্য করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও পরস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এ কারণে এবার কঠোরভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করা, জনসম্মুখে সবাইকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, জনসমাগম হয়-এমন স্থানে কঠোরভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে বাধ্য করাতে না পারলে সংক্রমণ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে। তাছাড়া সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশব্যাপী ফুটপাত, রাস্তা-ঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট ও শপিং মল এবং কাঁচাবাজারে মাস্ক ছাড়া মানুষকে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এসব স্থানে মাস্ক ছাড়া মানুষের অংশগ্রহণ ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতির যেকোন সময় অবনতি ঘটতে পারে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল আরও বলেন, ‘আমাদের যেন প্রস্তুতি থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন সেকেন্ড ওয়েভ যদি আসে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যদি সচেতন হই তাহলে আমাদের জন্য এটা সুবিধা হবে। পাশাপাশি তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঠাণ্ডার প্রকোপটা বাড়তে পারে, সেক্ষেত্রে আমাদের লোকজনের নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর বা অ্যাজমাটিক সমস্যা থাকে, সবাই যাতে প্রস্তুতি নেয়। এসবে আক্রান্ত হলে যেন চিকিৎসা করান।’

মোবাইল কোর্ট চলছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হলে সরকার আগের মতো আবার শাটডাউনে যাবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যাওয়া হবে কিনা, মাত্রাটা কেমন হবে আমরা তো জানি না। আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

সংক্রমণ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর দুই নির্দেশনা

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুইটি অনুশাসন দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

অপর নির্দেশনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘ইদানীং দেশের বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের মাস্ক ছাড়া নামাজ পড়তে দেখা যায়। তাই প্রধানমন্ত্রী ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, মাস্ক পরার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। জোহর ও মাগরিব এই দুই ওয়াক্তের সময় যেন সব মুসল্লি মাস্ক পরে নামাজে আসেন তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য সময়ও মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মাস্ক পরায় উৎসাহিত করতে হবে। এই মুসল্লিরাই যেন বাইরের মানুষকে সচেতন করেন সেভাবে উৎসাহিত করতে হবে। এটা রাষ্ট্রীয় কল্যাণকর নির্দেশ।’

সবার মাস্ক ব্যবহার করা দরকার মন্তব্য করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঠাণ্ডা থেকে প্রোটেকশন নিতে হবে। উপসর্গ দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সবাই মিলে ঠিকভাবে মাস্ক যদি ব্যবহার না করি তাহলে কিন্তু মুশকিল। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই তরফ থেকে যদি মাস্ক পরা থাকে তাহলে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ নিরাপদ। আর এক তরফ থেকে মাস্ক থাকলে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ নিরাপদ। মাস্ক যদি না পরে তাহলে কিন্তু কোন কিছুই সফল হবে না। এজন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

সচিব বলেন, ‘সম্প্রতি একটি কাজে এক মার্কেটে গিয়েছিলাম, আমি সেখানে বেশি লোককে মাস্ক পরতে দেখিনি। পরে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি- আমরা ক্রস চেক করব যেকোন দিন, সেই মার্কেটে যদি সবাইকে মাস্ক পরা না দেখি তাহলে ইউ উইল টেক অ্যাকশন।

আরও খবর
জাতিসংঘের ভার্চুয়াল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন আজ
ঢাকা-সৌদি ফ্লাইট বাতিল প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ
স্বাস্থ্যের আরও ৪৫ কোটিপতির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামছে দুদক
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
অস্ত্র ও জাল টাকার মামলায় স্বাস্থ্যের ড্রাইভার মালেক রিমান্ডে
আট বছরের শিশু মামলার আসামি আসকের নিন্দা
করোনা : দেশে এন্টিজেন টেস্টের অনুমোদন
করোনায় মৃত্যু ৫ হাজার ছুঁই ছুঁই শনাক্ত সাড়ে ৩ লাখ ছাড়ালো
চিকিৎসক সংকটে বন্ধ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড
কোভিড-১৯ পরামর্শক কমিটি ও স্বাস্থ্যের ডিজির বৈঠক
পিয়াজের খুচরা বাজার স্থিতিশীল
৪৮ বছর পর গঠিত হচ্ছে পানিসম্পদ অধিদফতর
হতাহত পরিবারের ছয় দাবি : তিতাসের ৮ জনের জামিন

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০২ মহররম ১৪৪২, ০৪ আশ্বিন ১৪২৭

করোনা সংক্রমণ

দ্বিতীয় ঢেউ রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

জোরদার হচ্ছে মোবাইল কোর্ট প্রধানমন্ত্রীর দুই নির্দেশনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সরকার মাস্ক পরাসহ নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে বাধ্য করতে কঠোর হচ্ছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে-এমন আশঙ্কায় মাস্ক পরা ‘বাধ্যতামূলক’ (নির্দেশনা) কার্যকর করতে মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে আকস্মিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা বসছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ রোধে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মাস্ক না পরা ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানান। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী তার গণভবন কার্যালয় থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বৈঠকে যুক্ত হন।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ এলে মাঠ পর্যায়ে সেটাকে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেটার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। পরে বসে বিস্তারিত কর্মসূচি নেব। অনেক দেশেই বিশেষত শীতপ্রধান দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরের শেষ থেকে সেকেন্ড ওয়েভ আসে কিনা সেই প্রিপারেশন রাখতে হবে। ম্যাসিভ যেন প্রিপারেশন থাকে।’

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের পর ক্রমশ বাড়তে থাকে সংক্রমণ। প্রথমদিকে নাগরকিদের বড় অংশের মধ্যেই সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুরসরণের তৎপরতা দেখা গেছে। পর্যায়ক্রমে মাস্ক না পরাসহ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার তৎপরতা বেড়ে যায়।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরলে দু’তিন মাসেই তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ব্যাপকহারে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। এ কারণে বাংলাদেশেও পুনরায় ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশে গতকাল পর্যন্ত তিন লাখ ৫০ হাজার ৬২১ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৪ হাজার ৯৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় দেশে মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ। আর শনাক্ত বিবেচনায় দেশে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

আগের নির্দেশনা খুব একটা কাজে আসেনি

গত ১০ জুলাই মন্ত্রিসভা করোনা মহামারী মোকাবিলায় বাসার বাইরে সবার জন্য মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবোইল কোর্ট) পরিচালনা করার নির্দেশ দেয়।

ওইদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় জেনারেল আলোচনা হয়েছে যে মানুষকে অন্তত সচেতন থাকতে হবে। এরমধ্যে দেখা গেছে যে, অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতাটা একটু কমে গেছে, সেটা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।’

সংক্রমণ এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে সচিব কমিটিতে আলাপ-আলোচনা করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকেও বলে দিয়েছি যে, এনফোর্সমেন্টে যেতে হবে। একেবারে ম্যাসিভ কোন ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট করে যদি পানিসমেন্ট দেয়া হয়, এই জিনিসটা প্রচার করার জন্য যে আজকে মাস্ক না পরার জন্য বা সেফটি মেজার্স না নেয়ার জন্য এতোগুলো লোককে বাসে, বাজারে বা লঞ্চে পানিসমেন্ট দেয়া হয়েছে।’

মন্ত্রিসভারও ওই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন জেলায় মানুষের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাতে বাধ্য করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও পরস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এ কারণে এবার কঠোরভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করা, জনসম্মুখে সবাইকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, জনসমাগম হয়-এমন স্থানে কঠোরভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে বাধ্য করাতে না পারলে সংক্রমণ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে। তাছাড়া সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশব্যাপী ফুটপাত, রাস্তা-ঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট ও শপিং মল এবং কাঁচাবাজারে মাস্ক ছাড়া মানুষকে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এসব স্থানে মাস্ক ছাড়া মানুষের অংশগ্রহণ ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতির যেকোন সময় অবনতি ঘটতে পারে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল আরও বলেন, ‘আমাদের যেন প্রস্তুতি থাকে। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন সেকেন্ড ওয়েভ যদি আসে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যদি সচেতন হই তাহলে আমাদের জন্য এটা সুবিধা হবে। পাশাপাশি তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঠাণ্ডার প্রকোপটা বাড়তে পারে, সেক্ষেত্রে আমাদের লোকজনের নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর বা অ্যাজমাটিক সমস্যা থাকে, সবাই যাতে প্রস্তুতি নেয়। এসবে আক্রান্ত হলে যেন চিকিৎসা করান।’

মোবাইল কোর্ট চলছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হলে সরকার আগের মতো আবার শাটডাউনে যাবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যাওয়া হবে কিনা, মাত্রাটা কেমন হবে আমরা তো জানি না। আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

সংক্রমণ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর দুই নির্দেশনা

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুইটি অনুশাসন দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

অপর নির্দেশনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ‘ইদানীং দেশের বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের মাস্ক ছাড়া নামাজ পড়তে দেখা যায়। তাই প্রধানমন্ত্রী ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, মাস্ক পরার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। জোহর ও মাগরিব এই দুই ওয়াক্তের সময় যেন সব মুসল্লি মাস্ক পরে নামাজে আসেন তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য সময়ও মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মাস্ক পরায় উৎসাহিত করতে হবে। এই মুসল্লিরাই যেন বাইরের মানুষকে সচেতন করেন সেভাবে উৎসাহিত করতে হবে। এটা রাষ্ট্রীয় কল্যাণকর নির্দেশ।’

সবার মাস্ক ব্যবহার করা দরকার মন্তব্য করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঠাণ্ডা থেকে প্রোটেকশন নিতে হবে। উপসর্গ দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সবাই মিলে ঠিকভাবে মাস্ক যদি ব্যবহার না করি তাহলে কিন্তু মুশকিল। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই তরফ থেকে যদি মাস্ক পরা থাকে তাহলে ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ নিরাপদ। আর এক তরফ থেকে মাস্ক থাকলে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ নিরাপদ। মাস্ক যদি না পরে তাহলে কিন্তু কোন কিছুই সফল হবে না। এজন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

সচিব বলেন, ‘সম্প্রতি একটি কাজে এক মার্কেটে গিয়েছিলাম, আমি সেখানে বেশি লোককে মাস্ক পরতে দেখিনি। পরে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি- আমরা ক্রস চেক করব যেকোন দিন, সেই মার্কেটে যদি সবাইকে মাস্ক পরা না দেখি তাহলে ইউ উইল টেক অ্যাকশন।