স্বাস্থ্যের আরও ৪৫ কোটিপতির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামছে দুদক

গত এক বছর ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪৫ কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবজাল আহমেদসহ ডজনখানেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছে দুদক। এখনও ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- গত শনিবার রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক আবদুল মালেক। দুদক জানায়, ৪৫ জনের মধ্যে ড্রাইভার মালেকসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বিভিন্ন হাসপাতালের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ও তাদের স্ত্রীসহ মোট ২০ জনের নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসব তথ্যের ভিত্তিতে ২০ জনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিসও দিয়েছিল। যার মধ্যে ড্রাইভার মালেক ও তার স্ত্রীর নাম ছিল।

এদিকে গত শনিবার রাতে অবৈধ অস্ত্র এবং জাল টাকাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পদত্যাগী মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের গাড়ি চালক আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে গত রোববার রাজধানীর তুরাগ থানায় অস্ত্র ও জাল টাকা তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে র‌্যাব। রাতেই মালেককে তুরাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। হস্তান্তরের সময় মালেকের কাছে পাওয়া অবৈধ অস্ত্র এবং জাল টাকা আলামত হিসেবে পুলিশের কাছে জমা দেয়া হয়। এসব মামলায় গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানা পুলিশের এসআই। ওই দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবদুল মালেককে ১৪ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের সচিব দিলওয়ার বখত জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করি। ইতোমধ্যে মালেকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। এদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আবদুল মালেক ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় সাতটি প্লট এবং এসব প্লটে চারটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মালেক ও তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে।

দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টচার্য জানান, দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের স্বাক্ষরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনকে সম্পদ বিবরণী ইস্যু করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসব নোটিস পাঠানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী ইস্যু করা হয়েছে এদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি, তার স্ত্রী মিসেস রিফাত আক্তার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, তার স্ত্রী মিসেস কাজিদা আক্তার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মো. আবদুল মালেক, তার স্ত্রী মিসেস নার্গিস বেগম, গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান, তার স্ত্রী বিলকিস রহমান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স মোসা. রেহেনা আক্তার, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক মো. ইমদাদুল হক, তার স্ত্রী মো. উম্মে রুমানা ফেন্সী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুজ্জামান তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন, শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন, তার স্ত্রী মিসেস ফিরোজা বেগম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) কামরুল হাসান, তার স্ত্রী ডা. উম্মে হাবিবা, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রধান (নন মেডিকেল) বর্তমানে বরিশালের পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ মো. আনোয়ার হোসেন। দুদক জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুদুক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এসব নোটিসে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ২৬ এর উপ-ধারা (১) দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে তাদের নিজের এবং তাদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইনের ২৬ (২) উপ-ধারায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুদকের পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে তাদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী সৈয়দ আবজাল আহমেদসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুদকের পক্ষ থেকে ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই ৪৫ জনের মধ্যে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া গাড়ি চালক আবদুল মালেক রয়েছে। মালেকসহ ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীও তাদের স্ত্রী মিলে ২০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নোটিস দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অনুষ্ঠানে যাদের নোটিস দেয়া হয়েছে প্রত্যেকের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আবদুল মালেক অন্য অভিযোগে র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্ত চলছে। আর এখনও যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান হচ্ছে তারা ২১ কার্যদিসব সময় দেয়া হয়েছে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য। সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর আমরা তা অর্জনের উৎস সম্পকে তদন্ত করব। এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। যদিও আমরা ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ থাকার প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের গাড়ি চালক আবদুল মালেক র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর তার বিপুল অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশ করে র‌্যাব। এ বিষয়ে দুদক থেকেই তার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশ করা হয়। র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী জাল টাকার ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের গাড়িচালক আবদুল মালেক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে দুদক এখনও প্রকাশ করেনি আবদুল মালেক এতো সম্পদের মালিক কিভাবে হয়েছেন।

গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আবদুল মালেকই শুধু নয়, এ রকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী আরও যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের যে নিয়ম আছে তাতে তার ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, আরও যারা এ রকম আছে তাদের ব্যাপারেও প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আরও এ রকম আছে, আরও আসবে। আমরা বলব দুর্নীতি করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আমরা কাউকে ছাড়তে চাচ্ছি না। যাদের বিরুদ্ধেই কথা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মালেকের দুর্নীতির বিষয়ে দুদক কাজ করছে ।

আরও খবর
দ্বিতীয় ঢেউ রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার
জাতিসংঘের ভার্চুয়াল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন আজ
ঢাকা-সৌদি ফ্লাইট বাতিল প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
অস্ত্র ও জাল টাকার মামলায় স্বাস্থ্যের ড্রাইভার মালেক রিমান্ডে
আট বছরের শিশু মামলার আসামি আসকের নিন্দা
করোনা : দেশে এন্টিজেন টেস্টের অনুমোদন
করোনায় মৃত্যু ৫ হাজার ছুঁই ছুঁই শনাক্ত সাড়ে ৩ লাখ ছাড়ালো
চিকিৎসক সংকটে বন্ধ গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড
কোভিড-১৯ পরামর্শক কমিটি ও স্বাস্থ্যের ডিজির বৈঠক
পিয়াজের খুচরা বাজার স্থিতিশীল
৪৮ বছর পর গঠিত হচ্ছে পানিসম্পদ অধিদফতর
হতাহত পরিবারের ছয় দাবি : তিতাসের ৮ জনের জামিন

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০২ মহররম ১৪৪২, ০৪ আশ্বিন ১৪২৭

স্বাস্থ্যের আরও ৪৫ কোটিপতির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নামছে দুদক

সাইফ বাবলু

গত এক বছর ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪৫ কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবজাল আহমেদসহ ডজনখানেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছে দুদক। এখনও ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- গত শনিবার রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক আবদুল মালেক। দুদক জানায়, ৪৫ জনের মধ্যে ড্রাইভার মালেকসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বিভিন্ন হাসপাতালের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ও তাদের স্ত্রীসহ মোট ২০ জনের নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসব তথ্যের ভিত্তিতে ২০ জনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিসও দিয়েছিল। যার মধ্যে ড্রাইভার মালেক ও তার স্ত্রীর নাম ছিল।

এদিকে গত শনিবার রাতে অবৈধ অস্ত্র এবং জাল টাকাসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পদত্যাগী মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের গাড়ি চালক আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে গত রোববার রাজধানীর তুরাগ থানায় অস্ত্র ও জাল টাকা তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে র‌্যাব। রাতেই মালেককে তুরাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। হস্তান্তরের সময় মালেকের কাছে পাওয়া অবৈধ অস্ত্র এবং জাল টাকা আলামত হিসেবে পুলিশের কাছে জমা দেয়া হয়। এসব মামলায় গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানা পুলিশের এসআই। ওই দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবদুল মালেককে ১৪ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের সচিব দিলওয়ার বখত জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করি। ইতোমধ্যে মালেকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। এদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আবদুল মালেক ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় সাতটি প্লট এবং এসব প্লটে চারটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এর আগে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মালেক ও তার স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে।

দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টচার্য জানান, দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের স্বাক্ষরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনকে সম্পদ বিবরণী ইস্যু করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এসব নোটিস পাঠানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী ইস্যু করা হয়েছে এদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি, তার স্ত্রী মিসেস রিফাত আক্তার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, তার স্ত্রী মিসেস কাজিদা আক্তার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়ি চালক মো. আবদুল মালেক, তার স্ত্রী মিসেস নার্গিস বেগম, গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান, তার স্ত্রী বিলকিস রহমান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স মোসা. রেহেনা আক্তার, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষক মো. ইমদাদুল হক, তার স্ত্রী মো. উম্মে রুমানা ফেন্সী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুজ্জামান তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন, শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন, তার স্ত্রী মিসেস ফিরোজা বেগম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী (হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা) কামরুল হাসান, তার স্ত্রী ডা. উম্মে হাবিবা, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রধান (নন মেডিকেল) বর্তমানে বরিশালের পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ মো. আনোয়ার হোসেন। দুদক জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুদুক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এসব নোটিসে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ২৬ এর উপ-ধারা (১) দ্বারা অর্পিত ক্ষমতাবলে তাদের নিজের এবং তাদের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী এই আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইনের ২৬ (২) উপ-ধারায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুদকের পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে তাদের মধ্যে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী সৈয়দ আবজাল আহমেদসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুদকের পক্ষ থেকে ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই ৪৫ জনের মধ্যে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া গাড়ি চালক আবদুল মালেক রয়েছে। মালেকসহ ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীও তাদের স্ত্রী মিলে ২০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নোটিস দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক অনুষ্ঠানে যাদের নোটিস দেয়া হয়েছে প্রত্যেকের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আবদুল মালেক অন্য অভিযোগে র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্ত চলছে। আর এখনও যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান হচ্ছে তারা ২১ কার্যদিসব সময় দেয়া হয়েছে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য। সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর আমরা তা অর্জনের উৎস সম্পকে তদন্ত করব। এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। যদিও আমরা ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ২০ জনের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ থাকার প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের গাড়ি চালক আবদুল মালেক র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর তার বিপুল অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশ করে র‌্যাব। এ বিষয়ে দুদক থেকেই তার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশ করা হয়। র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী জাল টাকার ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের গাড়িচালক আবদুল মালেক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে দুদক এখনও প্রকাশ করেনি আবদুল মালেক এতো সম্পদের মালিক কিভাবে হয়েছেন।

গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালক আবদুল মালেকই শুধু নয়, এ রকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী আরও যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের যে নিয়ম আছে তাতে তার ছাড় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, আরও যারা এ রকম আছে তাদের ব্যাপারেও প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আরও এ রকম আছে, আরও আসবে। আমরা বলব দুর্নীতি করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আমরা কাউকে ছাড়তে চাচ্ছি না। যাদের বিরুদ্ধেই কথা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মালেকের দুর্নীতির বিষয়ে দুদক কাজ করছে ।