যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার) বাতিল করতে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্যের ডিও লেটার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম স্কুলে এসে জালিয়াতির বিষয়টি উদ্ঘাটন করে। সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ‘ডিও লেটারটি সঠিক নয়’ বলে খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠককে নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে ‘ওই ডিও লেটার তিনি দেননি’ এমন একটি প্রত্যয়নও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিভা রাণী পাঠক। এই স্কুলের ১১ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জাল-জালিয়াতি তদন্তের মধ্যে এমপি’র ডিও জালিয়াতি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্কুলের সভাপতিসহ স্থানীয় একটি জালিয়াত চক্র এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।
১৯৯৭ সালে যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা বিরাজ করছে। স্কুলটি গতবছর তালিকাভুক্ত হলেও এমপিও’তে নাম ওঠেনি কোন শিক্ষক-কর্মচারীর। স্থাপিত হওয়ার পর এখানে ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আজগর আলীসহ চার শিক্ষক-কর্মচারীকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। পরে ‘জালিয়াতি ও নিয়োগ বাণিজ্য’ করে বাকি ৭ শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে আরও নতুন ১১ জনের নাম যুক্ত করে ১৮ জনের তালিকা এমপিও’ভুক্তির জন্য প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি শিক্ষা অধিদফতরের একাধিক তদন্ত কমিটি তদন্ত করে ওই ১১ জনের জাল-জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, জালিয়াতচক্র যখন ওই ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বৈধ করতে পারেনি, তখন তারা এমপিও বাতিলের ষড়যন্ত্র শুরু করে। সভাপতি এসএম আকরাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে চক্রটি গত ৬ জুলাই যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ’র একটি ডিও লেটার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর দাখিল করে।
উপানুষ্ঠানিক : পত্র নং-কে এন এ/য/৫৬২ স্মারকের এই ডিও লেটারে বলা হয়, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা যশোর-৩ এর সদর উপজেলাধীন বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে স্থাপিত হয়ে ২০০৪ সালে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি পায়। তারপর বিদ্যালয়টি শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সরকার কর্তৃক ২০১৯ সালের নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও করার চাহিত শর্তপূরণ না থাকা সত্ত্বেও ভুলবশত : প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষক কর্মচারীর নাম এমপিও ভুক্তির জন্য আবেদন করে নাই। বিধায় এমপিও ভুক্তির আদেশটি বাতিল করত : তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর সুপারিশ করছি।’
এর প্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর বিষয়টি তদন্তের জন্য খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠককে নির্দেশ দেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে অভিযোগ তদন্তে এসে নিভা রাণী পাঠক যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ’র সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক জানান, সংসদ সদস্য তাকে নিশ্চিত করেছেন স্কুল’র এমপিও বাতিলের জন্য তিনি কোন ডিও লেটার দেননি। এ সময় তিনি ওই ডিও লেটার সঠিক নয়-এই মর্মে প্রত্যয়নও দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, বলরামপুর স্কুলে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ আগস্ট তিনি তদন্তে এসেছিলেন। এর আগে এ সংক্রান্ত আরও দুটি তদন্ত হয়েছে। দুটি তদন্ত কমিটিই ভুয়া নিয়োগ ও এমপিও’ভুক্তি নিয়ে জাল-জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। দুই কমিটিই ১৮ জনের তালিকার মধ্যে ৭ জনকে বৈধ শিক্ষক-কর্মচারী বলে রিপোর্ট দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট স্কুল পরিদর্শন করে তিনি (নিভা রাণী পাঠক) বৈধ ৭ জনকে এমপিওভুক্তি এবং যাদের এমপিও-নিয়োগ নিয়ে মামলা রয়েছে; আদালতের রায় সাপেক্ষে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত দেন। সব প্রতিবেদনই অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এখন তিনিই এই স্কুলের এমপিওভুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
বলরামপুর স্কুলের এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার) বাতিল করতে ডিও লেটার জালিয়াতি নিয়ে কথা হয় যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ’র সঙ্গে। তিনি জানান, তদন্ত কমিটিকে তিনি নিশ্চিত করেছেন ওই ডিও লেটারটি সঠিক নয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও তিনি দিয়েছেন। তবে এই জালিয়াতি কারা করেছে তা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান।
এমপি’র ডিও লেটার জালিয়াতি নিয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য স্কুলের সভাপতি এসএম আকরাম বিশ্বাসের ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০২ মহররম ১৪৪২, ০৪ আশ্বিন ১৪২৭
যশোর অফিস
যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার) বাতিল করতে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্যের ডিও লেটার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম স্কুলে এসে জালিয়াতির বিষয়টি উদ্ঘাটন করে। সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ‘ডিও লেটারটি সঠিক নয়’ বলে খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠককে নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে ‘ওই ডিও লেটার তিনি দেননি’ এমন একটি প্রত্যয়নও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিভা রাণী পাঠক। এই স্কুলের ১১ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জাল-জালিয়াতি তদন্তের মধ্যে এমপি’র ডিও জালিয়াতি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্কুলের সভাপতিসহ স্থানীয় একটি জালিয়াত চক্র এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।
১৯৯৭ সালে যশোর সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা বিরাজ করছে। স্কুলটি গতবছর তালিকাভুক্ত হলেও এমপিও’তে নাম ওঠেনি কোন শিক্ষক-কর্মচারীর। স্থাপিত হওয়ার পর এখানে ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আজগর আলীসহ চার শিক্ষক-কর্মচারীকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর বরখাস্ত করা হয়। পরে ‘জালিয়াতি ও নিয়োগ বাণিজ্য’ করে বাকি ৭ শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে আরও নতুন ১১ জনের নাম যুক্ত করে ১৮ জনের তালিকা এমপিও’ভুক্তির জন্য প্রেরণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি শিক্ষা অধিদফতরের একাধিক তদন্ত কমিটি তদন্ত করে ওই ১১ জনের জাল-জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, জালিয়াতচক্র যখন ওই ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বৈধ করতে পারেনি, তখন তারা এমপিও বাতিলের ষড়যন্ত্র শুরু করে। সভাপতি এসএম আকরাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে চক্রটি গত ৬ জুলাই যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ’র একটি ডিও লেটার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর দাখিল করে।
উপানুষ্ঠানিক : পত্র নং-কে এন এ/য/৫৬২ স্মারকের এই ডিও লেটারে বলা হয়, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা যশোর-৩ এর সদর উপজেলাধীন বলরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে স্থাপিত হয়ে ২০০৪ সালে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি পায়। তারপর বিদ্যালয়টি শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সরকার কর্তৃক ২০১৯ সালের নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও করার চাহিত শর্তপূরণ না থাকা সত্ত্বেও ভুলবশত : প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষক কর্মচারীর নাম এমপিও ভুক্তির জন্য আবেদন করে নাই। বিধায় এমপিও ভুক্তির আদেশটি বাতিল করত : তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর সুপারিশ করছি।’
এর প্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর বিষয়টি তদন্তের জন্য খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠককে নির্দেশ দেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে অভিযোগ তদন্তে এসে নিভা রাণী পাঠক যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ’র সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
খুলনা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা উপ-পরিচালক নিভা রাণী পাঠক জানান, সংসদ সদস্য তাকে নিশ্চিত করেছেন স্কুল’র এমপিও বাতিলের জন্য তিনি কোন ডিও লেটার দেননি। এ সময় তিনি ওই ডিও লেটার সঠিক নয়-এই মর্মে প্রত্যয়নও দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, বলরামপুর স্কুলে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ আগস্ট তিনি তদন্তে এসেছিলেন। এর আগে এ সংক্রান্ত আরও দুটি তদন্ত হয়েছে। দুটি তদন্ত কমিটিই ভুয়া নিয়োগ ও এমপিও’ভুক্তি নিয়ে জাল-জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। দুই কমিটিই ১৮ জনের তালিকার মধ্যে ৭ জনকে বৈধ শিক্ষক-কর্মচারী বলে রিপোর্ট দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট স্কুল পরিদর্শন করে তিনি (নিভা রাণী পাঠক) বৈধ ৭ জনকে এমপিওভুক্তি এবং যাদের এমপিও-নিয়োগ নিয়ে মামলা রয়েছে; আদালতের রায় সাপেক্ষে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত দেন। সব প্রতিবেদনই অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে। এখন তিনিই এই স্কুলের এমপিওভুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
বলরামপুর স্কুলের এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার) বাতিল করতে ডিও লেটার জালিয়াতি নিয়ে কথা হয় যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ’র সঙ্গে। তিনি জানান, তদন্ত কমিটিকে তিনি নিশ্চিত করেছেন ওই ডিও লেটারটি সঠিক নয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও তিনি দিয়েছেন। তবে এই জালিয়াতি কারা করেছে তা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান।
এমপি’র ডিও লেটার জালিয়াতি নিয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য স্কুলের সভাপতি এসএম আকরাম বিশ্বাসের ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।